21 February, 2019

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহিদদের প্রতি
গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।
মোঃ আমিনুর ইসলাম রিপন
বেংদহ পাতাইর,কিচক,শিবগঞ্জ,বগুড়া

20 February, 2019

জিপি সিমের ব্যালেন্স ট্রান্সফার করার নিয়ম Gp Sim Balance transfer

জিপি সিমের ব্যালেন্স ট্রান্সফার করার নিয়ম
Gp Sim Balance transfer 

কিচক উম্মে হাবিবা রা মহিলা মাদ্রাসা

কিচক উম্মে হাবিবা রা মহিলা মাদ্রাসা
স্থাপিতঃ-২০০৮ ইং
ডাকঘরঃ কিচক, উপজেলাঃ শিবগঞ্জ, জেলাঃ বগুড়া
মোঃ রিপন মিয়া বেংদহ পাতাইর,কিচক,শিবগঞ্জ,বগুড়া

07 February, 2019

মেঘ গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে যাক

“ইনান ! তুই আমাকে খোঁচাচ্ছিস কেন ?” অমিত আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল ।

আমি ওর চেয়েও আরেক ধাপ নিচু গলায় ফিসফিস করলাম, “ওহে গর্দভ ! আমি খোঁচাচ্ছি না । তোর গায়ে গাছের ডালের খোঁচা লেগেছে ।”

“ ও ! হে হে !”

“হাসি বন্ধ কর ! পাহারাদার শুনে ফেললে তোর হাসি বের করে দেবে !”



সাথে সাথে অমিত হাসি থামিয়ে দিল । ভাল ছেলে । আমার সব কথা শোনে !



“কিন্তু ইনান, আমরা যে এই বাগানের আম চুরি করবো, তাহলে বাগানের মালিককে ক্ষতিপূরণ দেবে কে !”



গাধাটা একটা ভাল কথা বলেছে ! এটা অবশ্য বেশ চিন্তার বিষয় ! আমি অন্ধকারেই আমার মাথাটা একটু চুলকে নিলাম ।



“একটা কাজ করা যায় !”, অমিত বলল । “চাচা মিয়ার মোবাইলে আমরা চুরি করা আমের যে দাম হবে, তার সমপরিমাণ টাকা ফ্লেক্সি করে দিতে পারি !”

আমি মাথা নাড়লাম । “চাচা মিয়ার কোন মোবাইল নেই ।”

অমিত হাল ছাড়লনা । “তাহলে একটা কাজ করা যায় । তুই বললি না যে উনি একটু চোখে কম দেখে ? আমরা দৌড় দিয়ে যেয়ে ওনার লুঙ্গির ভেতর টাকা গুঁজে দিয়ে আসব ! উনি বুঝতেই পারবেনা !”

আমি এবার বড়ই হতাশ বোধ করলাম । অমিতটার মাথায় আর বুদ্ধি হলনা । বললাম, “আরে ছাগল ! আমরা ওনার লুঙ্গির ভেতর টাকা গুঁজে দিতে গেলে যদি ওনার লুঙ্গি খুলে যায় ! এই বুড়ো বয়সে কি তুই ওনার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করবি !”

“তাইতো !” অমিত এই পরিকল্পনাও বাতিল করে দিল ।



আমরা আম চুরি ফেলে রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবতে লাগলাম, কিভাবে আম চুরির ক্ষতি পোষানো যায় !



এদিকে আমাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে করতে কখন যে আমবাগানের পাহারাদার আমাদের এইদিকে চলে এসেছে, তা আমরা খেয়ালই করিনাই ! হঠাৎ অমিত আমাকে ঠেলা দিয়ে বলে উঠলো, “এই দ্যাখ দ্যাখ ! বাগানের মধ্যে দিয়ে মোটরসাইকেল আসছে !”

আমি সেদিকে তাকিয়েই প্রমাদ গুনলাম । “ওরে ছাগলা ওটা মোটরসাইকেল না ! পাহারাদারের টর্চ লাইট ! শিগগির পালা ! ধরতে পারলে খবর আছে !”



সুতরাং দে ছুট । আমরা এক ছুটে বাড়ি ! আম চুরির মিশন অতি করুণভাবে ধূলিসাৎ হয়ে গেল !



বাড়ি মানে দাদার বাড়ি । আমি আর অমিত কয়েকদিনের জন্য গ্রামে বেড়াতে এসেছি । অমিত কখনো গ্রামে আসেনি । তাই আমাকে অনেক দিন ধরেই বলছিল যে তোর দাদার বাড়ি তো গ্রামে । আমাকে একটু সময় করে নিয়ে যাবি । গ্রাম দেখার আমার খুব শখ ।



এসেছি দুইদিন হল । আর এই দুইদিনে আমরা দুই বন্ধু আমাদের বাঁদরামির চূড়ান্ত নিদর্শন দেখে নিজেরাই বারবার অবাক হয়ে যাচ্ছি ! তবে সমস্যা নেই । যেরকম মজা আমরা এখন করছি, সেটা জীবনেও করিনি ! অবশ্য জিতুকে খুব মিস করছি । বেচারার জ্বর আসার আর সময় পেলনা ! ও আসলে আরও বেশি মজা হত ।



রাতে খাওয়া শেষ করে অমিত ঘুমিয়ে পড়ল । ওর নাকি খুব ঘুম পাচ্ছে । আমার এত তাড়াতাড়ি ঘুম আসবেনা । তাই বাইরের বারান্দায় এসে বসলাম । আমার দাদার বাড়িটা অনেক বড় । পুরনো আমলের দোতালা বাড়ি । বাড়ির দোতালার বারান্দায় বসলে গাছপালার উপর দিয়ে বেশ খানিকটা দূরে শান্ত নদীটা দেখা যায় । খুব সুন্দর নদীটা । সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে শেষ বিকেলে সূর্য ডোবার সময় । লালচে আলোতে । আর রাতের বেলা । আর আকাশে চাঁদ থাকলে তো কথাই নেই !



কালচে নীল আকাশটা তে চাঁদটা চুপ করে ঝুলে থাকে । আর তার অসম্ভব রকম মায়াবী আলো ছড়িয়ে থাকে চারদিকে ! যখন শীতকাল থাকে, তখন চারপাশটা কুয়াশাতে ঢেকে থাকে । মাঝে মাঝে অল্প অল্প বাতাস গায়ে একটু কাপন ধরিয়ে দিয়ে যায় । কুয়াশার স্তর একটু হালকা হয় । চাঁদের আলোয় অস্পষ্ট ভাবে দেখা যায় ফসলের ক্ষেতগুলো । তার ওপাশে নদী । কুয়াশা মোড়া নদী । অদ্ভুত সুন্দর ! যে সৌন্দর্যের কোন সংজ্ঞা নেই !



এদিকে রাতের নীরবতা ভাঙতে ওস্তাদ শেয়ালগুলো তো আছেই ! তাদের হুক্কা হুয়া চলে থেমে থেমে । আমি চুপ করে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে থাকি । আর চারপাশে তাকিয়ে স্নিগ্ধতার সংজ্ঞা খুঁজি । মায়াময়তার সংজ্ঞা খুঁজি । খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি যে, এই অপরুপ সৌন্দর্য, অদ্ভুত নিস্তব্ধতাকে অনুভব করে নিতে হয় । এর মাঝেই খুঁজে নিতে হয় নিজের ক্ষুদ্র অস্তিত্বকে ! আমি তাকিয়ে থাকি আর নিজেকে বারবার খুঁজে পেতে চেষ্টা করি ।



এখন গরমকাল । তাই কুয়াশা নেই । সেজন্য নদীটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । আমি বসে আছি । সামনে তাকিয়ে দেখছি আর সবকিছুকে অনুভব করার চেষ্টা করছি । কিন্তু চুপচাপ আর কতক্ষণ বসে থাকা যায় ! তাই নিজেই নিজের মনের সাথে কথা বলা শুরু করলাম । মানে মন আমার সাথে কথা বলা শুরু করল । যখন আমার কিছু করার থাকেনা তখন আমি এই কাজটা করি ।

“ভাই আছেন কেমন ?”

“এইতো ভাই । দিনকাল কেটে যাচ্ছে একরকম ।”

 “খুব ভাল কথা । আচ্ছা ভাই ! একটা প্রশ্ন করি ?”

“জি করুন ।”

“আপনি কি জীবনে প্রেম করবেন না ?”

“ওরে পাগল মন ! প্রেম করিস না রে প্রেম করিস না !”

“আরে আমি আপনাকে এই কথা জিজ্ঞেস করলেই আপনি এই একই উত্তর বারবার দেন কেন ? ভাই আপনি কি প্রেমে বিফল দেবদাস জাতীয় কিছু নাকি ?”

“ধুর ! কি যে বলেন ! প্রেমই তো করলাম না জীবনে, দেবদাস হব কিভাবে ?”

“তাইতো তাইতো । আচ্ছা ওই যে অনিমা ! ওই মেয়েটা আপনাকে এত পছন্দ করে, এত ভালোবাসে ! তবুও আপনি তাকে গ্রহণ করেননা কেন !”

“হা হা । আরে ভাই ! তেল আর জল কি কখনো একসাথে মেশে !”

“কি যে বলেন ! মেয়েটা এত্ত সুন্দর ! ইউনিভার্সিটির সব ছেলে ওর জন্য পাগল । আর সেই মেয়ে পাগল আপনার জন্য । কিন্তু আপনি তাকে পাত্তাই দেননা ! এটা কি ঠিক !”

“ভাই রে ! সুন্দর হলেই কি সব হয়ে যায় নাকি ! ও হল বড়লোক বাবার মডার্ন মেয়ে । আমার সাথে ওর অনেক পার্থক্য ।”

“কেন ? আপনার বাবা কি বড়লোক না ? আপনি কি আধুনিক ছেলে না ?”

“আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি । আমি টাকা পয়সা বা স্মার্টনেসের কথা বলছিনা । আমাদের মূল্যবোধ এক না । আমাদের চিন্তাধারা একরকম না । আমাদের মনমানসিকতার মধ্যে বিস্তর ফারাক । আমাদের মধ্যে কখনই এইধরনের সম্পর্ক সম্ভব নয় ।”

“উফফ ! আপনার এত গম্ভীর কথাবার্তা আমি বুঝিনা ভাই । তবে আমার একটা কথা মনে হচ্ছে বারবার । আমার ধারনা আগামী কালকে এই গ্রামে অনিমার আগমন ঘটবে ।”

“কি বলেন ! অনিমা এখানে আসবে কেন !”

“আপনি ভুলে যাচ্ছেন । কাল অনিমার জন্মদিন । আর ও আপনার প্রতি যেরকম সিরিয়াস ! আমি নিশ্চিত যে কাল ও আপনাকে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে খুঁজবে এবং খুঁজে পাবেনা । আর তারপর ও যদি জানতে পারে আপনি কোথায় আছেন, তাহলে নির্ঘাত সাথে সাথে এখানে রওনা দিয়ে দেবে !”



কথাটা মোটামুটি সত্যি ! আমার জন্য অনিমার পাগলামি নতুন কিছু নয় । বিশেষ করে তার প্রত্যেক জন্মদিনে আমাকে একবার না দেখলেই নয় ! ও যদি সত্যিই কাল এখানে চলে আসে, তাহলে অবাক হবার কিছুই নেই !



আমি যথেষ্ট পরিমান চিন্তিত হয়ে ঘুমাতে গেলাম ।



অবশ্য চিন্তার বৃক্ষ বেশিদূর ডালপালা মেলতে পারলনা । মানে মেলে দেয়ার সুযোগ পেলনা আর কি ! পরদিন বিকেলের মুখেই যখন অনিমাদের প্রাডোটা সদম্ভে গ্রামের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসলো কিছুটা ইতস্তত ভাব নিয়ে, আমি মানে মানে বুঝে নিলাম আজ আমার সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে !



পুকুরের ধারে আমি আর অমিত বসে ছিলাম । মাছ ধরার জন্য বড়শির ছিপটা মাত্র ফেলেছি, এইসময় অমিতের খোঁচা খেয়ে ফিরে তাকালাম । কালো রঙের জীপ টা দেখেই আমি স্যান্ডেল না পরেই দিলাম ঝেড়ে দৌড় ! খালি পায়ে ! কিন্তু বিধিবাম ! দৌড়ালে কি হবে ! এই পোড়া কপালে সুখ বেশি সয় না ! আমি দৌড় দেয়ার আগেই অনিমা আমাকে দেখে ফেলেছে । খানিক পর খেয়াল হল আমি অদ্ভুত এক দৃশ্যের জন্ম দিয়েছি !



গ্রামের রাস্তা দিয়ে পড়িমরি করে ছুটছে একটা যুবক ! তার পা দুটো খালি আর চোখে মুখে আতঙ্ক ! পেছনে ছুটছে অসম্ভব সুন্দর এক তরুণী ! তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে ধরতে পারলে খেয়ে ফেলবে !



এবারে যথারীতি পোড়া কপালের জোরে সিনেমাটিকভাবে আমি আছাড় খেলাম । এবং ডাকাত গোছের মেয়েটা দুই লাফে আমাকে ধরে ফেলল !



“আমি কি বাঘ ভালুক না গরিলা ! তুমি আমাকে দেখে এভাবে হাঁদারামের মত পালালে কেন ?” হাপাতে হাপাতে বলল অনিমা ।

আমি চুপ করে থাকলাম ।

“এই ! কথা বল !”

আমি কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলামনা । হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে উঠে হঠাৎ করেই কেন যেন আমার খুব রাগ হতে লাগলো ।

“ইনান, আজকে আমার জন্মদিন ! আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি আর তুমি আমাকে দেখে পালাচ্ছ !”

এবার আমি কথা বললাম । কেন যেন আমার প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল । “আমি তোমার সাথে যাব কেন ! তোমার জন্মদিন তো আমার কি ! আমি তোমাকে কতদিন বলেছি যে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক সম্ভব না ? তারপরও তুমি আমার পিছু ছাড়না কেন !”

অনিমাও এবার রেগে গেল । “এই ছেলে । তোমার এত অহংকার কিসের ! এত দম্ভ কিসের ! আমার মধ্যে কি নেই যে তুমি আমাকে গ্রহণ করবেনা ! বল ?”



আমি এবার অনিমার হাত ধরে টান দিলাম । ওকে টেনে নিয়ে চললাম নদীর দিকে । বুঝলাম ও ব্যথা পাচ্ছে কিন্তু ও টু শব্দটুকুও করলনা ।



“এদিকে এসো ! এখানে দাঁড়াও । এবার ওইদিকে তাকাও তো । কি দেখতে পাচ্ছ ?”

অনিমা সেদিকে তাকাল । “নদী দেখতে পাচ্ছি । আর নদীর ধারে একটা সৌধ ।”

আমি কথা বলে উঠলাম । হঠাৎ করেই আমার কণ্ঠস্বর কেমন যেন দৃপ্ত হয়ে উঠেছে !

“হ্যাঁ সৌধ ! ভাল করে দেখো । তুমি জানতে চাইলে না আমার কিসের এত অহংকার ? ওই সৌধটা আমার অহংকার ! বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এরকম হাজারো সৌধ আমার অহংকার ! ওটা আমার দাদার স্মৃতিসৌধ ! আমার দাদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন । এই দেশকে স্বাধীন করতে প্রান দিয়েছেন ! ভাবতে পার একটা দেশের জন্য প্রান দেয়া কতটা বড় ব্যাপার ! ওনার মত লাখ লাখ মানুষ প্রান দিয়েছেন বলেই আজকে আমি তুমি এইখানে, এই স্বাধীন দেশে দাড়িয়ে আছি । মন খুলে কথা বলতে পারছি !”

আমি বলতে থাকি, “তুমি জানো ? আমার বাবাও একজন মুক্তিযোদ্ধা ! সেই অতটুকু বয়সে ছোট্ট বুকে অসীম সাহস নিয়ে উনি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে বাঁচানোর জন্য ! দেশের প্রতি কতোখানি ভালবাসা থাকলে এটা সম্ভব একবার ভেবে দেখো ! কিন্তু ওই অতটুকু ছেলেটাও রক্ষা পায়নি অসভ্য রাজাকারগুলোর হাত থেকে ! ওরা আমার বাবার একটা হাত কেটে নেয় ! কিসের অপরাধে ? দেশকে রক্ষা করতে ঝাপিয়ে পড়ার অপরাধে ! সেই থেকে আমার বাবা এক হাত নিয়ে বড় হয়েছেন !”

“অনিমা, এবার তুমি বুঝতে পারছ আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ? তুমি কি একবারও আমাদের দেশটাকে নিয়ে ভেবেছ ? নাকি ডুবে থেকেছ অর্থ বিত্ত, প্রাচুর্য আর পশ্চিমা সংস্কৃতি নিয়ে ! আমি তোমাকে দেখেছি, রাস্তার এতিম একটা শিশুর গায়ে হাত তুলতে, শুধুমাত্র একটু খাবার চাওয়ার অপরাধে ! সেদিনই আমার হিসেব মেলানো হয়ে গেছে !”



“দেখো অনিমা, আমার দাদার মত অসংখ্য মানুষ প্রান দিয়েছেন, আমার বাবা ছোট্ট বয়স থেকে হাত হারানোর যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন কি স্বাধীন দেশে অনাথ শিশুরা এইভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে বলে !  মানুষের হাতে মার খাবে বলে ! আর সেখানে রাজাকারদের গাড়িতে উড়বে স্বাধীন দেশের পতাকা ! তরুন প্রজন্ম দেশের কথা ভুলে মেতে থাকবে বিদেশের সংস্কৃতি নিয়ে ! এটা কি সত্যিই অদ্ভুত না ? এর জবাব কি আমরা দিতে পারব ?”



সেদিন আমার কণ্ঠস্বরের দৃপ্ততা, বলিষ্ঠতা আমাকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল প্রতি মুহূর্তে ।



অনিমা কোন কথা বলেনি ।



দিনের নিয়মে দিন কেটে যাচ্ছে । আমরা কয়েকজন বন্ধু একটা সংগঠন খুলেছি । আমাদের উদ্দেশ্য তরুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু পারা যায় জানানো । কয়েকদিন পর একটা অনুষ্ঠান আছে আমাদের সংগঠনের । এখানে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অভিজ্ঞতা শোনাবেন ।



অনিমার মধ্যে আজকাল কেমন যেন একটা পরিবর্তন খেয়াল করি । মেয়েটা জিনস টিশার্ট ছেড়ে এখন বাঙালি পোশাক পড়ে । কি যে সুন্দর লাগে ওকে এই পোশাকগুলোতে ! আবার নিয়ম করে ও পথশিশুদের খাবার আর জামাকাপড় দেয় । আর আমাকে দেখলেই একটা লাজুক হাসি দেয় ! হাসিটাও না একেবারে শতভাগ বাঙ্গালী হাসি !



আর আমি ? আমার যে কি হয়েছে ! আজকাল সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মিষ্টি সুবাস পাই ! অঝোর বৃষ্টি কিংবা জানালার ফাক গলে আসা শেষ বিকেলের রোদের মাঝেও আমি কেন যেন ভালোবাসা খুঁজতে থাকি !



আমার মন আমাকে খোঁচা দেয়, “ আরে ভাইজান ! এসব কি দেখছি গো !”

আমি চুপ থেকে একটু হাসি দিই ।

মন আমাকে চোখ টেপে ! “চালিয়ে যান ভাই ! আমি আছি আপনার সাথে !”



আমাদের আকাশের মেঘ সবে কাটতে শুরু করেছে । ওই তো ! আমি ঝলমলে সূর্যটা দেখতে পাচ্ছি । ওটা আর বেশি দূরে নেই ।

ভালোবাসায় সাতার কাটি

আজ সকাল বেলায় ঘুম ভেঙেই আমার বিড়ালটার কথা খুব মনে পড়ে গেল।কতদিন দেখিনা

বিড়ালটাকে।নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে ভাবছেন,ভালোবাসার গল্প লিখতে গিয়ে বিড়াল নিয়ে কেন

বকবক করছি!কি করব বলেন!আমার ভালোবাসার গল্পের পুরোটা জুড়েই যে আমার বিড়ালটা!আমার

প্রাণের বিড়াল!!!



যাকগে,খুলেই বলি।বিড়ালের নাম হল নুহা।আমি অবশ্য তাকে গুহা বলেই

ক্ষ্যাপাই।ভাবছেন,এত কিছু থাকতে(ময়না পাখি,জান,প্রান,টুনটুনি...)তাকে বিড়াল কেন

ডাকি!প্রথমত,তার চেহারাটা এতটাই আদুরে আর মায়ামায়া যে ওকে দেখলেই আমার বিড়ালের কথা

মনে পড়ে।দ্বিতীয়ত,বিড়ালের মতই ও ময়লা সহ্য করতে পারেনা।ওর সাথে দেখা করতে গেলেই ও

নাক কুঁচকে বলবে,’উহ!শার্টটা কতদিন ধোয়া হয়নি বলতো!শেভ করনি কেন?’

আর মজার ব্যাপার হল,ওর চোখের কালার ব্ল্যাক না।পুরা বিড়ালের চোখ,ক্যাটস আই

যাকে বলে আর কি।এতগুলা বৈশিষ্ট্য থাকার পর তাকে বিড়াল না ডাকাই হত অন্যায়!এখন কথা

হচ্ছে,বিড়ালটাকে ভয়াবহ মিস করছি।তাকে ফোন করছিনা কেন ভাবছেন?কি করে করি?আমার এখানে

ভোর ৬টা মানে ওর ওখানে(আমার বিড়ালটা মেলবোর্নে) রাত ২টা।আমার ঘুম কাতুরে বিড়ালটা

হয়তো অঘোরে ঘুমাচ্ছে।ঘুমাক।সেই ফাঁকে আপনাদের আমার বিড়ালটার গল্প শোনাই।

নুহাকে প্রথম দেখি IUT(Islamic University of

Technology)এর গেটের সামনে।সাদা ফ্রকপরা বাচ্চা একটা মেয়ে।কার জন্য যেন ওয়েট

করছে।একটু পরপর ফোন দিচ্ছে আর ঘড়ি দেখছে।যেহেতু আমরা সম্পূর্ণভাবেই নারী বিবর্জিত,তাই এখানে কেউ এভাবে দাঁড়িয়ে

থাকলে আমরা নজর দিইনা,কে জানে কোন বড়ভাইয়ের কে!কিন্তু নুহার কথা আলাদা।চোখ ফেরান

মুশকিল।একটুপর যিনি বের হয়ে নুহার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসলেন,তাকে দেখে

পুরা চুপসে গেলাম আমি।রাকিব ভাই!আমাদের অতি প্রিয় বড়ভাই।কথা বলতে বলতে আমাদের দিকে

চোখ পড়ল উনার।হাত নেড়ে ডাকলেন,ওই রায়ান,এদিকে আয়।

খাইছে!সাদাফ্রকের সুন্দরীর দিকে

তাকানোর জন্য কপালে কোন খারাপি আছে কে জানে!

-জী রাকিব ভাই!

-কিরে কি করস ওইখানে খাড়াইয়া?

-না ভাই কিছু না।টিউশনিতে যাবতো।তাই

রিকশা খুজতেছি।আপনি যাবেন না আজকে?

-না,আজকে আমার ছাত্রী নিজেই চলে আসছে।

বলেই উনি নুহার দিকে তাকিয়ে বললেন,নুহা

এ হল রায়ান।ইলেকট্রনিক্স এর বস।মনে মনে ভীষণ কৃতজ্ঞ হলাম রাকিব ভাইয়ের

প্রতি।না,না।এইজন্য না যে,উনি আমাকে এতবড় কমপ্লিমেন্ট দিলেন।কৃতজ্ঞতা এই কারনে যে

উনি নুহার বয়ফ্রেন্ড না।এভাবেই পরিচয় হল এই গ্রহের সবচেয়ে অসাধারন মেয়েটার

সাথে।রাকিব ভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম,তার এই ছাত্রী অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট।ইন্টার

ফার্স্টইয়ার,রাজউক কলেজ।আজকে আসছিলো ভাইয়ের পেনড্রাইভ নিতে।(ভাগ্যিস

আসছিলো)



।টুকটাক কথার পর রাকিব ভাই ওকে বললেন,ঠিক আছে নুহা,কালকে আমি আসব।চল বাসে

তুলে দেই তোমাকে।রায়ান তো ওদিক দিয়েই যাবি,ওকে তুলে দিতে পারবি না?

নুহা সামনে না থাকলে পা ছুঁয়ে সালাম

করতাম ভাইয়ের।বললাম,জী ভাই,পারব।

নুহা বলল,আমি নিজেই পারব ভাইয়া।

রাকিব ভাই বললেন,আরে না না।এই রায়ান

যা।

বাসে তুলে দিয়ে নিজেও উঠে পড়লাম।চোখ

কপালে তুলে ও বলল,আপনি টিউশনিতে যাবেন না ভাইয়া?

-হ্যাঁ,উত্তরায় একটা স্টুডেন্ট আছে

আমার।

মুচকি হাসল মেয়েটা,ও!কয় নাম্বারে?

মনে মনে বললাম,তুমি যেখানে নামবা।মুখে

বললাম,এইতো জসিমুদ্দিনে।

-আরে আমার বাসাও তো ওখানে।চলেন,আমাদের

বাসা হয়ে যাবেন।

পারলে তো তখনি যাই।কিন্তু এত

হ্যাংলামি ঠিক হবেনা ভেবে বললাম,না না আরেকদিন।

-আসবেন কিন্তু ভাইয়া।

নামার আগে ভয়ে ভয়ে জানতে

চাইলাম,ফেসবুক আইডি কি তোমার?

-আপনি রাকিব

ভাইয়াকে সাজেস্ট করতে বলে দিয়েন।

রাতে রাকিব ভাই ধরলেন আমাকে,কিরে

হারামি?আমার ছাত্রীরে নাকি বাসা পর্যন্ত নিয়ে গেছিস?

-ভাই,আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে না?একটু

সাজেস্ট করেন না!

-ঠিক আছে,করলাম নাহয়।মেয়েটা কিন্তু

আসলেই ভাল রায়ান।বুঝে শুনে আগাস।

-জি ভাই।

অ্যাড করলাম।মাঝে মাঝে চ্যাট হত নুহার

সাথে।একদিন রাকিব ভাই বলল,কিরে যাবি নাকি!নুহার স্কলারশিপ ট্রিট।তোকে নিয়ে যেতে

বলল।আমি,নুহা,রাকিব ভাই,নুহার ফ্রেন্ডরা খুবই এনজয় করলাম।

এরপর থেকে রেগুলার চ্যাট

হত।বুঝতাম,বুকের ভেতর নুহার জায়গাটা আস্তে আস্তে বেড়েই যাচ্ছে।খুব ভাল করে বুঝলাম

যখন ওর টেস্ট পরীক্ষার আগে একাউন্ট ডিএকটিভ করে দিল।অস্থির লাগত খুব।ওকে একটা মেইল

করলাম কি ভীষণ মিস করছি জানিয়ে।আর সাহস করে সেল নাম্বারটাও চাইলাম।টানা তিন দিন

অপেক্ষার পর ফোনে একটা মেসেজ পেলাম,’নুহা’।



বিকালে ফোন দিলাম।পরীক্ষা কেমন হল জানতে

চাইলাম।বললাম,মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে জ্বালাব।

কথা হত,প্রায় প্রতিদিনই।কতভাবে আমার

ফিলিংসটা ওকে বোঝাতে চাইতাম।দুষ্টুমি করে এড়িয়ে যেত।অবশেষে ঠিক করলাম ভ্যালেন্টাইন

ডেতে বলেই ফেলব।জানতে চাইলাম কোচিং কখন শেষ হয়।তারপর যেন একটা মিনিট দেয় আমাকে।জানতাম,মুখে

বলতে গেলে হয় তোতলা হয়ে যাব,নয়ত সেন্সলেস হয়ে পড়ব।একটা পেন্সিলবক্স কিনলাম,তার

ভেতর আধফোঁটা একটা লালগোলাপ রেখে একটা নোট লিখলাম,’নুহা,তুমি তো খুব পড়তে

ভালবাস।আমি যদি একটা বই হয়ে তোমাকে আজীবন পড়তে দিতে চাই,পড়বে তুমি?তোমার জন্য কখনো

পুরনো হবেনা বইটা।‘

হাসবেন না প্লিজ।আমি বেরসিক

ইঞ্জিনিয়ার মানুষ।কবিত্ব আসেনা আমার।;(

যাকগে,ও বের হবার পর বক্সটা হাতে

ধরিয়ে বললাম,তোমার পরীক্ষায় কাজে লাগবে।ওকে হতভম্ব রেখে পালিয়ে বাঁচলাম।রাতে ফোন

দিতেও সাহস হলনা।দুরুদুরু বুকে ভাবছি,কিজানি হয়!সাড়ে নয়টার দিকে ফোন দিল।ধরে কি

বলব ভাবতে ভাবতে কেটে গেল।একটু পর মেসেজ,’আমার কিছু বলার ছিল,ভিতুর ডিম’।

দোয়া দরুদ

পড়ে ফোন দিলাম।ওর প্রশ্ন,বইটা পুরনো হবেনা মানলাম,যদি দুর্বোধ্য হয় কখনো?

আমি বললাম,তুমি তো পুরা ডিকশনারি

মুখস্ত জানো।

তারপর?আমার বিড়ালটা আমাকে এত  ভালবাসে কিভাবে আমি ভেবেই পাইনা।আমার

শ্বশুরমশাই অবশ্য ভিলেনের মত HSCএর পর ওকে

আপুর কাছে মেলবোর্ন পাঠিয়ে দিলেন।তাতে কি?ইয়াহু,ফেসবুক,স্কাইপ আছে না?

এয়ারপোর্টে ওকে সি অফ করতে গিয়ে

কিছুতেই চোখদুটো কথা শুনছিল না।আমার বিড়ালটা এক কোনায় টেনে নিয়ে গুনগুন করে গাইল,’চোখের

জলে ঢেউ দিওনা,চোখটা প্রেমের নদী,ভালোবাসায় সাঁতার কেটো পার তুমি যদি’......

আমি সাঁতরে যাচ্ছি।

ফোন বাজছে।আমার বিড়ালটা জাগলো বোধহয়।

আজো তোমায় ভালোবাসি

" তোমার কি সেদিনের কথা মনে আছে, যেদিন তুমি আমাকে কোচিংএ ক্লাস থেকে বের করে বলেছিলে " তুমি আমাকে এই ধরনের এস.এম.এস দাও কেন? আমাকে যখন তখন কল কর কেন? তোমাকে না বলেছি আমার আর এক জনের সাথে রিলেশন আছে, আর কখনো এগুলি করবেনা " উত্তরে আমি বলেছিলাম " আমি তোমার সাথে রিলেশন কোরতে যাব কেন, আমি ওই ধরনের এস.এম.এস আমার সব বন্ধুদের কাছেই পাঠাই " আমি ওদিন মিথ্যে বলেছিলাম। ওদিন আমার আত্মসম্মানের কাছে আমার ভাললাগা হেরে গিয়েছিল। তুমি কি জান, আসলে তোমাকে আমি অনেক লাইক করতাম। জান তোমাকে দেখারপর থেকে আমার কোচিংএ যাওয়ার উদ্দেশ্য হয়ে দাড়িয়েছিল তোমাকে বারবার অতৃপ্ত চোখে দেখা......।



কোচিংএর সামনে যতবার দারিয়েছিলাম স্যারদের কাছ থেকে প্রবলেম সলভ করার নাম করে অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার আরালে, শুধু তোমাকে একটু বেশি সময় ধরে দেখব বলে । তোমার কী মনে আছে, সবাই কোচিংএর মডেল টেস্ট না দিয়ে চলে যেত। কিন্তু তুমি দিতে বলে তোমাকে সঙ্গ দিতে আমি থাকতাম। প্রশ্নের উত্তর না লিখে আরা চোখে তোমাকে দেখতাম। কোন প্রশ্নের উত্তর না পারলে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে.... খুব চেষ্টা করতাম উত্তর দিতে। কিন্তু আমি সে সময়ের জন্য তোমার মাঝে আমার জানা উত্তর গুলো হারিয়ে ফেলতাম। তুমি কী জান? কলেজে পরীক্ষা শেষ করে এক ঘণ্টা দেরি করে কোচিংএ যেতাম পরাশুনায় সিরিয়াস ছিলাম বলে নয়........... তোমাকে অন্তত এক পলক দেখব বলে। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে বলতাম ইমপরটেন্ট ক্লাস আছে...... কিন্তু তুমিই যে ছিলে আমার সে ইমপরটেন্ট ক্লাস। তোমাকেতো বলেছি, তোমাদের বাড়ির গলিতে একবার কাজে গিয়েছিলাম। আসলে কোন কাজে নয়, তোমাকে দেখব বলেও নয়.... শুধু তোমার অস্তিত্বকে অনুভব করতে। আরো কাছথেকে,,, আরো গভীর ভাবে। তোমারকি মনে আছে সেদিন মালা কেনার কথা। ওদিন একসাথে কেটালগ থেকে মালা দেখার ছলনায় প্রাণভরে তোমার চুলের ঘ্রাণ নিয়েছিলাম। ইচ্ছে করেছিল তোমার স্বর্নলতিকার মত চুল গুলো ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু আমার সে সাহস বা অধীকার কোনটিই যে ছিলনা।......... তুমি কী কখনো বুঝতে পেরেছিলে আমার সে অনুভূতির কথা ??????? আজকে আর না পারলেও আমার কোন দুঃখ থাকবেনা। আজ আমি আমার আত্তসম্মানের উপরে আমার ভাললাগাকে মূল্য দিয়েছি। আমার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করেছি....... কষ্ট হলেও এই ভেবে সান্তনা পাবযে........" love is all about taking chances, Even if it hurts "... " I have hurted myself by my own fault. But i never ever hurt you and i will not .""""""""""" কখনো ভালবাসার অভাববোধ করলে আমাকে স্মরন করো। আমার অতৃপ্ত ভালবাসা তোমাকেই খুজে ফিরবে। আদর করে স্পর্শ করলেই জীবন্ত হয়ে তোমাকে বলবে "আজো তোমায় ভালবাসি" সে আগের মতই। ভাল থেকো............... বাইরে বৃষ্টি পরছে। ইচ্ছে করছে বৃষ্টি পানি দিয়ে আমার চোখের জল গুলো মুছে দিতে। কিন্তু ভয় হয়.... যদি তোমার স্মৃতি গুলো বৃষ্টির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। থাকনা আমার চোখের জলের সাথেই...........

শেষ চিঠি

প্রিয় ক অথবা খ অথবা অন্যকিছু



আগষ্টের ২২ তারিখের কথা মনে আছে?হুমম ২০০৮ সালের কথাই বলছি।আমি সকালে ঘুমাচ্ছিলাম,তুই আমাকে ভোর ৫টায় ফোন দিয়ে বললি “শুধু একবার বল,তাহলে আমি পালিয়ে চলে আসবো” আমি বলদের মত বলে বসলাম “তোকে আমি পরে ফোন দিব”।



তারপর কি হল আমার মনে নেই।ঘুম থেকে উঠলাম ১২টায়।নিয়ম অনুযায়ী সিগারেট ধরিয়ে তোকে ফোন দিলাম।তুই ধরলিনা।গোসল করে এসে আবার ফোন দিলাম ধরলিনা।আবার দিলাম তাও ধরলিনা।হঠাৎ আমার বুকটা যেন কেঁপ উঠল।আমার মনে পড়ে গেল আজ তোর বিয়ে।অথচ আমি কত বোকা বিয়েটা দুপুরে নাকি রাতে তাই জানিনা।



ভাত খেলাম,গতকাল টিউশনিতে যাইনি।তাই আজ যেতে হবে।সিগেরেট ধরিয়ে গেলাম টিউশনিতে। আমার ছাত্রটা ভীষন ফাজিল বলে স্যার আপনার কি মন খারাপ? আমি জানি আমার মন খারাপ না।বরং কিছুটা মুক্তির স্বাদ অনুভব করছি। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।কি যেন হচ্ছে আমার।আমি জানি তোর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে।হুমম ঝগড়া হয়েছে। তোকে একটা ছেলের সাথে দেখেছে আমার বন্ধু।তুই অস্বীকার করেছিস।পরে আবার স্বীকার করেছিলি।তুই আমার কাছে মাফ চেয়েছিলি।কিন্তু আমি মহৎ হয়ে তোকে ক্ষমা করতে পারিনি।এরপর তোর বিয়ে ঠিক হল।আমি বললাম করে ফেল,আমি আমার মত করে খুজে নিব। খুজে নিশ্চয় নিব।নীলা মিলা একজন আমার জীবনে আসবে নিশ্চয়।



সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় হাজিরা দিলাম।আজ আর সিগারেটকে বিড়ি বললাম না,সিগারেটই বললাম।অংশ নিলাম না ক্লাসের শ্যামার শরীর বিষয়ক আলোচনায়,এমনকি একটুও হাসলাম না অশ্লীল জোকস শুনে।রাস্তায় সুন্দরী নারীরাও আজ আমার বাজে দৃষ্টি থেকে বেঁচে গেল।



১২ টায় বাসায় ফিরলাম।ঘরের দরজা বন্ধ করে কম্পিউটারে যখন গান ছাড়লাম তখন মনে হল আচ্ছা তুই এখন কি করছিসরে? বাসর রাতে স্বামীর শরীরের পুজা করছিস বুঝি? না না তা কিভাবে হবে? তুইতো বলেছিলি “আমার শরীর তোর নামে দলিল করা,কেউ ছুতে পারবেনা”আমি বলেছিলাম কেউ যদি অবৈধ দখল নেয়? তুই খু্ব হাসছিলি।আমি হাসলাম।এখনো হাসছি।মনে মনে ভাবছিলাম একবার যদি সুযোগ পেতাম তাহলে তোকে মাফ করে দিতাম।বলতাম “যা সব ভুলে গেছি,চলে আয় আমার কাছে”



কিভাবে যেন রাতটা কেটে গেল।সকালে নাস্তা না করেই ক্যাম্পাসে দৌড় দিলাম।মুন্নীকে (যাকে তুই সবচে বেশী সন্দেহ করতি) দিয়ে তোর নম্বরে ফোন করালাম।তোর মা ধরেছিল।তারপর তোর স্বামীর নম্বর জোগাড় করে মুন্নীকে দিয়ে ফোন করালাম।একবার কণ্ঠ শুনতে চেয়েছিলাম।তু্‌ই আমার সাথে কথা বলেছিল,না আসলে কেদেছিলি।আমি কি কেঁদেছিলাম।জানিনা।তবে আজ কেন জানি জানতে মন চাচ্ছে।

সেদিনের পর আর কখনো তোর সাথে কথা হয়নি।আমি চেষ্টা করেছিলাম।তুই শক্ত হাতে আমাকে দমন করেছিলি।



তোর চলে যাওয়াতে আমার কোন কিছু বদলায়নি।ঘুম থেকে উঠে ঠিকমতই ব্রাশ করি, আড্ডাবাজি করি,ঘুমাই।তবে ঘুম ভাঙ্গানি চুমুটা আর পাওয়া হয়না।খুব ভোরে ক্লাস  থাকলে কেউ হয়ত ফোন দিয়ে বলেনা “ওই উঠ,এত ঘুমাস ক্যান”।



তুই বলেছিলি যে ঠোটে সিগারেট খাস ওই ঠোটে আমাকে চুমু খেতে পারবিনা।আসলেই পারি নারে।এখনো সিগারেট ছাড়তে পারিনি।তুই থাকলে হয়ত চুমুর লোভে ছেড়ে দিতাম।তোকে ক্ষমা করার সময়টুকু দিলিনা। আমি কি ক্ষমাপ্রার্থী? না না আমি ক্ষমা প্রার্থী হব কেন? আমি অপরাধ করেছি নাকি?



তুই একজনের বৌ ভাবতেই আমার হাসি আসে।এইতো সেদিন একসাথে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে দুজন দুজায়গায় ভর্তি হলাম।পিচ্চি একটা মেয়ে তুই,সংসার চালাস কিভাবে? বাদ দে সেসব কথা।আচ্ছা বলতো তোর স্বামী কি আমার মত সিগারেট খায়? চুমু খেতে দিস? আমার দলিলটা কোথায় রেখেছিস?বেদখল না দলিল অন্য নামে হস্তান্তর করেছিস?



এ চিঠি তোর কাছে আমার লিখা শেষ চিঠি।আর কখনই লিখবোনা তোর অধ্যায় এখানেই শেষ করবো।আচ্ছা আমার চিঠিগুলো কোথায়রে? প্রতিদিন একটা করে চিঠি দেয়ার নিয়ম  ছিল। প্রায় সময় আমি দিতে পারতাম না। এ নিয়ে আমার সাথে কত অভিমান তোর? আমি ছিলাম ভীষন অলস।চিঠি লিখেতে আলসেমী লাগত।আজ আর আলসেমী লাগছে না।ইচ্ছে হচ্ছে লিখতে থাকি।তুই বলেছিলি “বাসর রাতে চিঠি নিয়ে ঢুকবি নইলে রুম থেকে বাইর ঘরে করে দিব” আমি বলেছিলাম “বাসর রাতে তোরে আমি একটা উপন্যাস সাইজের চিঠি দিব,পড়তে পড়তে রাত কেটে যাবে,আদর করার সময় পাবিনা” তুই কেবল নাক উল্টিয়ে ভেংচি কেটেছিলি।আচ্ছা তোর স্বামী কি তোকে চিঠি দেয়?



তুই জানিস মাঝে মাঝে তোর দেয়া চিঠিগুলোর সাথে কথা বলি। তোর লিখা গোটা গোটা হরফের শব্দগুলো আমার সাথে জমিয়ে প্রেম করে। এটা কি পরকীয়া??



ভাল থাকিস। আমিও ভাল থাকবো।শেষ চিঠির একটা সমস্যা আছে।চিঠি শেষ হতে চায় না।তবুও ভাল থাকিস।



ইতি

তোর গ অথবা ম অথবা কেউ না।

তুমি আছো নীরবে

"এই ছবি প্রিন্ট করা যাবে? কেমনে?" তার কথার উত্তরে অতি উৎসাহে বললাম, "যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে। যে কোন কালার ল্যাব-এ বললেই হয়ে যাবে।" উনি বললেন, "এই লুবনা, ছবি গুলো প্রিন্ট করে... ... ..."

আব্বা আমার তোলা ছবি প্রিন্ট করাতে চাচ্ছেন, এইটা স্বপ্ন না তো? যদ্দুর বুঝি আমার ঐ ছবি তোলার নেশা তার খুব একটা পছন্দ না। ফার্স্ট সেমিস্টার শেষে আমি যখন বেশ ভারী একটা GPA নিয়ে রাজবাড়ী তার কাছে গেলাম, তখন কোনো এক ভোরে তিনি আমাকে বলেছিলেন, "ছবি তুলবি না কেন? মাঝে মধ্যে তুল্লি। যখন কিছু হইলো কিংবা কোথাও গেলি। ল' টা ভালো করে শেষ কর। এই সব ফটোগ্রাফি কি? মানুষ কি বলে?" আমি বললাম, "আমার রেসাল্ট তো ভালোই হইসে। আমার ডিপার্টমেন্টের সব চেয়ে বেশি GPA আমার।" তারপরেও তাকে খুব একটা ভরসা পেতে দেখলাম না। আমি মেনে নিলাম আমার এই ফটোগ্রাফির ধ্যান ধারনা তার পছন্দ না।

আর আজ একি শুনি? গ্রামের বাড়ীতে প্রথম বারের মত আমার DSLR ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ায় উঠনে উঠেই কিছু র‍্যানডম ক্লিক করেছিলাম। আর আব্বা অই গুলো প্রিন্ট করাতে চাচ্ছেন?!! উনি কোনো দিনও আমার তোলা কোন ছবি দেখেন নাই। আমি মেনে নিয়েছিলাম, উনার কাছে ফটোগ্রাফি মানে শুধু মানুষের ছবি তোলা, আর কিছু না। উনি ফটোগ্রাফি বুঝেন না।

সেই আব্বা গ্রামে গিয়ে আমার তোলা সব... একদম সব ছবি প্রিন্ট করানোর কথা বলছেন। বলাই বাহুল্য, এর আগে হাজার হাজার ছবি তুল্লেও কোন দিন একটা ছবিও প্রিন্ট করানো হয় নাই। আমার ভেতরে একটা চাঁপা অহংকার ও ভালোলাগা এক সাথে কাজ করছিল।

শেষমেশ আমাকে অবাক করে দিয়ে কয়েক দিন পরেই একদিন দেখলাম কয়েক বান্ডেল ছবি নিয়ে বসার ঘরে সবাই দেখছে। একি!! সব যে আমার তোলা অই র‍্যানডম ক্যাপচার গুলো!!! আব্বা কি করে পারলো কয়েক হাজার টাকা দিয়ে এইগুলো সব প্রিন্ট করাতে? আমি ভিতরে ভিতরে সুখে মরে যাচ্ছিলাম।




আব্বা, আমি আজ কষ্টে মরে যাচ্ছি আব্বা। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আব্বা। দম বন্ধ হয়ে আসছে আব্বা। তুমি ফিরে না আসার যেই অমোঘ দেশেই যাও না কেন, তুমি আটকে পড়ে আছো আমার কষ্ট, উপলব্ধি, কান্না, কিংবা হারিয়ে ফেলা যে কোনও স্মৃতি... সব কিছুতেই। আব্বা, আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি। সবচেয়ে বেশি।
পুনশ্চঃ ছবিটি কোরবানির ঈদ'২০১০-এর। পরিবারের সবাই আগেই দাদা বাড়ীতে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম ঈদের ঠিক আগের দিন। বরাবরের মতই বেশ সাজ সাজ রব। খুব মজা করে ছবি তুলছিলাম। উঠনে আমার দুই বোন একবার মা'কে ধরে একবার আব্বাকে ধরে অদ্ভুত অদ্ভুত পোজ দিচ্ছিলো। আব্বা বড় ঘরের চৌ-কাঠে বসতেই এই ছবিটা তোলা।

পুনশ্চ ২- কোন পোজ দিয়ে না- ন্যাচারালি। উনি পোজ বড় খারাপ দিতেন।

কয়েক দিন হলো আপনাদের গ্রুপ থেকে ভালবাসার গল্প পড়ছি। বেশ লাগে সুখ আর দুঃখের সংমিশ্রণ গুলো। এর মধ্যেই আর কয়েকটা স্বাভাবিকতার মধ্যেই চলে গেলো আমার আব্বা। উন্মাদের মত হাতড়ে ফিরছি তার প্রত্যেকটা স্মৃতি। আটাচমেন্টে যে লেখাটা পাঠালাম তা হয়তো গুন বিচারে গল্পের মর্যাদা পাবে না তবু সন্তুষ্টি এই মাত্র লিখাটা শত ভাগ সত্যি। খাদহীন স্মৃতি হাতড়ে লিখা। গ্রুপের সব গল্পই যেখানে একটি গতানুগতিক ও নির্দিষ্ট সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে লিখা সেখানে আমার আব্বার অনুপস্থিতি সংক্রান্ত আমার শুন্যতার যন্ত্রনা জায়গা পাবে কিনা জানি না। তবু এই জন্যই মেইল করছি যদি এই গ্রুপ মারফত কেউ লিখাটা পড়ে আব্বার জন্যও দোয়া করেন।

সাথীর জন্য ২২ গোলাপ

একেই বলে কাকডাকা ভোর। ছোট্ট মফস্বল শহরটায় বাস থেকে এসময়েই নামলো সাগর। মোটেই তার আসার কথা না। সাগর চায়ও না বাসার কেউ দেখে ফেলুক। কিছুসময় থেকেই আবার বাসে উঠতে হবে। পরীক্ষা চলছে, ঢাকায় ফিরে পড়তে বসতে হবে। ফাইনাল পরীক্ষা।

হুট করে হল থেকে বেড়িয়ে এক কাপড়ে রাতের বাসে উঠার পরিকল্পনা সন্ধ্যা বেলায়ও মাথায় ছিল না। তারপরেও চলে আসলো সাগর। জীবনে কিছুটা পাগলামি থাকতেই হয়। তবে পরীক্ষার আগের দিন এ ধরণের পাগলামি করাটা যে ঠিক হচ্ছে সেটাও সে বোঝে।



এতো ভোরে কোথাও ফুল পাবার কথা না। ছোট্ট এই মফস্বল শহরটা তার হাতের তালুর মতো চেনা। সাগর জানে এখন কোথাও ফুল পাবে না। কিন্তু ফুল লাগবেই। গুনে গুনে ২২টা গোলাপ। উপায় একমাত্র থানার পাশে মনিরদের বাড়ি। এই বড়িটাতেই সব সময় গোলাপ ফুটে থাকে। তবে চাইলেই পাওয়া যাবে না। পুরো বাড়ি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। ঢুকতে পারাটা সহজ না। সাগরের আর কোনো উপায় নেই। এতো ভোরে কেউ থাকবে না এটাই একমাত্র ভরসা।

কাঁটাতার টপকে বাগানে ঢোকা সহজ না। পায়ে কেডস, তাই খানিকটা সুবিধাই হলো। সমস্যা হাত নিয়ে। যে কোনো সময় কাঁটাতারের খোঁচা খাওয়ার আশঙ্কা। উঠেছিল ভাল ভাবেই, নামতে গিয়েই যত বিপত্তি। লাফ দিতে গিয়ে তর্জনিটা কাঁটাতারে লেগে কেটে গেল অনেকখানি। রক্ত ঝড়ছে, পকেট থেকে রুমালটা বের করে কোনোরকম আঙুলটা পেচিয়ে বাগানে ঢুকে পড়লো। গুনে গুনে ২২টা গোলাপ তুললো সাগর। তুলতে গিয়ে গোলাপের কাঁটার খোঁচা খেলো আরও কয়েকটা। হাতে কোনো রকম গোলাপগুলো ধরে আবার কাঁটাতার টপকে বের হল সাগর।



এখন সমস্যা হচ্ছে এতো ভোরে সাথীকে পাওয়া। দরজায় টোকা দেওয়া যাবে না। সাগর চায়ও না ও এসেছে এটা অন্য কেউ জানুক। এই আসাটা কেবল সাথীর জন্য। সাথীদের বাসার সামনে এক চিলতে জায়গা আছে। সেখানে যেতেই অবাক হলো সাগর। সাথী দাঁড়ানো। সাগর ঠিক সামনে যেয়ে ২২টা গোলাপ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো ‘শুভ জন্মদিন সাথী’।

সাথী ফুলগুলো নিয়ে বললো, কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমি আসবে। তাই তো দাঁড়িয়েছিলাম।

তখনই সাথীর চোখ পড়লো সাগরের হাতের দিকে। রক্ত পড়ছে, অনেক রক্ত।



-রক্ত কেন? হাত কাঁটলো কি ভাবে?

সাগর কেবল হাসলো। তার সেই বিখ্যাত হাসি, যা সাথী মুগ্ধ হয়ে দেখে। আজ আর সাথী হাসি দেখে ভুললো না, ‘তোমার না কাল পরীক্ষা? এই হাত দিয়ে কেমনে কলম ধরবে? পরীক্ষা কিভাবে দেবে? কিভাবে কাঁটলো।’

-তোমার জন্য গোলাপ আনতে গিয়েই তো-

-পরীক্ষা দিবা কিভাবে?

আবারও হাসলো সাগর।



এইটুক পড়েই হো হো করে হেসে দিল সাথী। বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে কেবল বলতে পারলো, ‘চাপাবাজ’।

তারপর আবার হি হি করে হাসি। এই এক দোষ সাথীর, একবার হাসা শুরু করলে থামানো মুশকিল।

আমি বললাম, ‘এতো হাসির কি হলো?’

-হাসবো না। এতো মিথ্যা কি করে লেখো।?

-মিথ্যা কৈ লিখলাম।

-মিথ্যা না, আমার মোটেই জন্মদিন ছিল না। হলের সামনে মেয়েটা শেষবেলায় ১০টাকায় সবকটা গোলাপ ফুল বিক্রি করতে চাইলো, সেই ফুল তুমি কিনে দিয়েছিলে। তাও যদি ফুলগুলো তাজা থাকতো।

-কেন আঙুল তো কেঁটেছিল? আর আমার পরীক্ষাও ছিল। জানো আমার কলম ধরতে কষ্ট হয়েছে, খেতে গিয়েও কষ্ট হয়েছে।

-আবার চাপা। তেমন কোনো পরীক্ষা ছিল না। ক্লাশ টেস্ট টাইপ, ফাইনালেও যোগ হবে না। তাছাড়া, ফুলটা দেওয়ার সময় সামান্য একটু আঁচর লেগেছিল। রক্তও পড়েনি। দেখি দেখি আঙুলটা।



সাথী আমার হাতটা টেনে নিল। তন্ন তন্ন করে খুঁজে আমিও কাটা জায়গাটা খুঁজে পেলাম না।

হাতটা ধরে রেখেই সাথী বললো, এতো মিথ্যা কথা যে কিভাবে লেখো। আজব!

স্বপ্ন ভাঙ্গন

নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে । কেন এতোদিন বুঝতে পারলোনা ? কেন এতোদিন

বোকার মত একটা মরীচিকার পেছনে ছুটল ? নাহ , আসলেই একটা গাধা সে । সাতপাচ

ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হল কাব্য । প্রমিতির সাথে break-up হয়েছে গত

পরশুদিন । তাই কাল সারাদিন বাসা থেকে বের হয়নি । এখনো জ্বরটা ছাড়েনি

ঠিকমত । তবু বের হয়েছে সে । না , আর ভুল করে বসে থাকা যায়না । এই চারটা

মাস অনেক কষ্ট দিয়েছে সাফা কে ।

আর নয় । এখন যদি সাফার কাছে নিজের দোষ না



স্বীকার করা হয় , তবে সেটা খুবই বড় অপরাধ এবং নিঃসন্দেহে ভুল হবে । আর

ভুল করতে চায়না কাব্য । অনেক হয়েছে । আজ আর একটা বিহিত করতেই হবে । ভেবেই

বাসা থেকে বের হয়েছে কাব্য । মা দেখে বলেছেন না যেতে । কিন্তু এখন সে কথা

শোনার সময় নেই । এক মুহুর্তেরও অনেক দাম এখন । কোনমতে ফ্রেশ হয়েই সাফার

দেয়া শার্টটা পরে বের হল কাব্য ।



রাস্তায় কোন রিকশা পাওয়া গেলোনা । গরম ও পরেছে আজকে । ভাবতে ভাবতে মেইন

রোডে চলে আসল কাব্য । দূরে দেখা গেল এক রিকশাওয়ালা নিজের রিকশায় বসে চোখ

বুজে পড়ে আছে ।

-মামা , যাবা নাকি ?

-(চোখ খুলে বিরক্তির স্বরে)না মামা , মুড নাই ।

-মামা , নিয়ে যাওনা । না গেলে অনেক ঝামেলা হইয়া যাইব । চল মামা…………চল

       সোবাহান মিয়ার মনটা আজকে এম্নিতেই একটু বেশিমাত্রার খারাপ । সকালে উঠেই

আম্মার কান্নাকাটি দেখেছে সে । সেই একটাই প্রলাপ তার-“আমার পোলাডা , কি

দোষ করছিল হ্যায় ? পোলাডার বিয়া না দেইখা মরতেও পারমুনা । ওরে আল্লাহ ,

তুমি এমন করলা ? ” ধুর , এক কথা শুনতে কত ভালো লাগে ? তাই কিছু না খেয়েই

বের হয়ে আসল সোবাহান । গ্যারেজে গিয়ে দেখে মহাজন জোরে হাক ছাড়ছেন

“সোবাহানডা গেল কই ? বিয়াশাদি কি আমরা করিনাই ? আমার বিয়ার লাইগা ২৫ খান

মাইয়া দেহাইসিল আমার মায় । আমি কি কামাই দিসিলাম ? নাহ । আর এই পোলাডা……”

আস্তে করে মহাজনের সামনে গিয়ে রিকশাটা নিয়ে বেরিয়ে পরল সোবাহান । কিছু

বলার নেই তার । মনে অশান্তি লেগে আছে । মহাজনকে দোষ দিয়ে লাভ কি ? সে তো

বলবেই । রিকশাটা নিয়েই সোজা বাবলা গাছটার নিচে আসল সোবাহান । এই গাছটা

তার অনেক প্রিয় । দুপুরে হয়রান হয়ে গেলে সে এখানে এসে বিশ্রাম নেয় । আজকে

সকাল সকালই চলে আসল । রিকশা চালানোর মুড নেই এখন । একপাশে সাইড করে রেখে

নিজেই আধশোয়া হয়ে থাকল । চোখ বুজে পড়ে থাকলে ভাল লাগে তার । মনে হয় এই

দুনিয়াতে আর কেউ নাই । শুধু সোবাহান আর তার লক্ষী হবু বউ আমেনা । কিন্তু

আজ আমেনাকে ভাবতে গিয়ে ঘেন্না চলে আসছে । মনে খালি একটাই প্রশ্ন আসতে

থাকল “ আমেনা , তুমি এইডা করতে দিলা কেমনে ? তোমার বাপরে ঠেকাইতে পারলানা

? কেমনে করলা এইডা তুমি ? ”

       বেশিক্ষন ভাবতে পারলোনা সোবাহান । তার আগেই একটা ছেলে এসে অনুরোধ করতে

থাকল । সোবাহান ভালো মানুষ । মানুষের উপর কথা বলতে কষ্ট হয় তার । তবু বলল

“না মামা , মুড নাই”।



তাও ছেলেটা আবার মিনতি করল । নাহ , সোবাহানের ভাল

লাগছেনা আর । ছেলেটাকে জোরে একটা না বলতে গিয়েও থেমে গেল । কি যেন আছে

তার আকুতিতে । কিছু না বলেই নেমে পড়ল সোবাহান । ছেলেটা অনেক খুশি হয়ছে

বলে মনে হল , কিন্তু সেটা তার শুকনো মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই । কথা না

বাড়িয়ে রিকশা টানা শুরু করল সোবাহান ।

এত tension এর মধ্যেও শার্টটা পড়তে ভোলেনি কাব্য । ভুলবে কি করে ? সাফা

তো আর কোন সাধারন মেয়ে নয় , সেই বাচ্চাকাল থেকে বন্ধু তারা । আসলে বন্ধু

বললে সাফাকে ছোট করা হবে । সাফাই ছিল তার সব । যে কোন কাজ তারা একসাথে

করত । নতুন মুভি বের হলে দুজনের সেটা একসাথে দেখা চাই । কোন কন্সার্টে

গেলে পাশাপাশি টিকেট দুটো তাদের হওয়া চাই । ঈদে একজন কাল ড্রেস কিনলে

আরেকজনেরও কাল ড্রেস চাই । কিন্তু হঠাৎ করে কি হয়ে গেল সাত মাস আগে

স্কুলে নতুন মেয়েটা আসাতে । মেয়েটার নাম প্রমিতি । ক্লাস নাইনের

top-ranked সুন্দরীদের তালিকায় সাফার সাথে তারও নাম উঠল । কিছুদিনের

মধ্যেই সে সাফার অনেক ভাল বন্ধু হয়ে গেল । আর কাব্য ? কিভাবে যেন

প্রমিতির প্রেমে পাগল । কোথাও গেলে এখন তিনজন একসাথে যায় । এভাবেই

প্রমিতির সাথে কাব্যর ভাল সম্পর্ক হতে থাকে । ব্যাপারটা সাফা বুঝত ,

কিন্তু কিছু বলত না । আর কাব্য , গাধার মত সাফার সামনেই প্রমিতির যত রকম

প্রশংসা করতে ব্যস্ত । আস্তে আস্তে সাফা চুপ হয়ে যেতে থাকল । কাব্য সেটা

খেয়াল করলেও তেমন একটা মাথায় নিতোনা । তার মাথায় তখন প্রমিতি আর প্রিমিতি

। রাত জেগে প্রমিতির সাথে কথা বলা , টিফিনের সময় প্রমিতির সাথে বসা ,

স্কুল শেষে প্রমিতিকে নিয়ে বের হওয়া , এসব চলতে থাকল । সাফা এসব দেখতে

দেখতে এক্সময় চুপ হয়ে গেল । সে শুধু একা একা থাকে আর নিরবে চোখের পানি

ফেলে । কিভাবে বোঝাবে সে কাব্যকে চায় ? অসহায় সাফা তাই কাব্যর সাথে মেশা

বন্ধ করে দেয় । শুধু ক্লাসে যায় আর বাসায় ফেরে । কাব্য সাফাকে কোথাও

যাবার আগে ডাকে , কিন্তু সাফা কোনভাবে কেটে পড়ে । ব্যাপারটা ক্লাসে সবাই

খেয়াল করল । কারন কাব্য-সাফা জুটি তাদের কাছে ছিল একটা আদর্শ । কিন্তু সে

বন্ধনে ভাঙ্গন দেখে অনেকেই সহ্য করতে পারলোনা । একদিন কয়েকজন বন্ধু মিলে

কাব্যকে ডেকে বলল সব । কথাগুলো শুনে কাব্য যে ব্যবহার করল সেটা কেউ আশা

করেনি । তখনি সবার বোঝা হয়ে গিয়েছে , কাব্য আর আগের মত নেই । তিন মাসে

কাব্য পালটে গেছে ।



এদিকে কাব্য এসব শুনে হুট করেই প্রমিতির সাথে রিলেশন শুরু করল । তার

উদ্দেশ্য বন্ধুদের দেখিয়ে দেয়া – সে ভাল আছে । কথাটা সাফার কানে গেল ।

সাফা আগে থেকেই খারাপ কিছুর জন্য তৈরি ছিল । তবু খবরটা বড়সড় একটা ধাক্কা

দিল মেয়েটাকে । বাসায় গিয়ে অনেক্ষন কাদল সাফা । কিন্তু তবু সে কাব্যকে

ভুলতে পারছেনা । কাব্যকে ভুলতেই হবে । নইলে সাফার বেচে থাকা কষ্টকর হয়ে

যাবে । এই ভেবে সে স্কুলে আসা বন্ধ করে দ্দিল । আর এদিকে কাব্য প্রমিতিকে

নিয়ে ব্যস্ত । ব্যস্ততা খুব বেশিদিন যায়নি , তার আগেই কাব্য টের পাওয়া

শুরু করল সাফা আর প্রমিতির মাঝে ব্যবধান । প্রমিতি আর আগের মত নেই , সে

এখন কাব্যর সবকথায় খুত ধরে , খবরদারি ফলাতে চায় । সাফার মত নয় সে , বরং

কিছুটা উল্টোই । এভাবে চার মাস কেটে গেছে । হঠাৎ গত পরশুদিন কি একটা বিষয়

নিয়ে কাব্যর সাথে প্রমিতির সাথে ঝগড়া হচ্ছিল । এক পর্যায়ে প্রমিতি বলে

ওঠে “ এত যখন সমস্যা তোমার , তাহলে আমার সাথে রিলেশন করেছ কেন ? যাও ,

সাফার কাছে যাও ! ” কথাটা কাব্যর খুব লেগেছিল ,কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল

প্রমিতি ঠিকই বলেছে । আসলেই ভুল ছিল এতদিন । কথাটা ভেবে কাব্য সোজা

প্রমিতিকে বলে এসেছে “ আমাকে ভুলে যাও।” তারপর সোজা বাসায় । টানা একদিন

বাসা থেকে বের হয়নি কাব্য । এর মাঝে প্রমিতি একবারের জন্যেও ফোন দেয়নি ।

বন্ধুর কাছ থেকে জানা গেল প্রমিতি সবাইকে বলেছে কাব্যর সাথে যা ছিল সব

ছিল মিথ্যা । শুনে কিছুটা খুশিই হল কাব্য । রাতে সাফার কথা ভেবে

দীর্ঘশ্বাস ফেলল । নাহ , অনেক ভুল করেছে সে । আর নয় । এই ভেবেই সকাল সকাল

সাফার বাসা দিকে রওনা দিয়েছে কাব্য ।

সোবাহান মিয়া রিকশা চালাচ্ছে আর ভাবছে । আমেনা তার এলাকার মতিন চাচার

মেয়ে । আমেনাকে তার অনেক ভাল লাগে । আমেনাও সোবাহানকে পছন্দ করে ।

শুক্রবার হলেই তারা হলে সিনেমা দেখতে যায় । সবকিছুই ভালমত যাচ্ছিল ।

সোবাহানের মা ছেলেকে বিয়ে দেবার জন্য ভাবছিলেন । তখন সে আমেনার কথা খুলে

বলে । সোবাহানে মাও আমেনাকে আগে থেকেই পছন্দ করেন । তাই ছেলের মুখের কথা

শুনে তিনি আমেনার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠান । কিন্তু আমেনার বাবা প্রথমে

সায় দিলেও পরে বেকে বসেন । তার একটাই কথা “ পোলার ভিটা আছে বুঝলাম ,

কিন্তু শুধু ভিটা থাকলেই কি চলব ? জমিরেরও তো বাপের ভিটা আছে , তাইলে

তফাৎ কি হইল ? সোবাহানের কি জমিরের মতন দুইডা রিশকা আছে ? অর নিজের তো

এহন একখান রিশকাও নাই । আমার মাইয়ারে আমি ক্যান দিমু ?” কথাটা ভাবে আর

ক্ষনে ক্ষনে দু;খ পায় সোবাহান “ হায়রে দুনিয়া , ভালোবাসার দাম কি উইডা

গেছে আসমানে?” প্রতিদিন সকালে মায়ের এক প্যাচাল ভালো লাগেনা তার । কিছু

একটা বিহিত করতেই হবে । আমেনাকে ছাড়া বাচবেনা সে । ভাবতে ভাবতে রাতে ঘুম

হয়না সোবাহানের । আবার সকালে মায়ের কান্নাকাটি শুনে সোবাহান সিদ্ধান্ত

নিয়ে ফেলে আমেনাকে তার চাই ই চাই । হয় আমেনা তার হবে , না হয় মরবে সে ।

রিকশা চালাতে চালাতে মাথায় একটা বুদ্ধি আসে । আচ্ছা , আমেনাকে নিয়ে

পালিয়ে গেলে কেমন হয় ? মা তো রাজি আছেনই , আমেনা রাজি থাকলেই হল । কাল

সকালেই গার্মেন্টস-এ যাবার কথা বলে আমেনা আর মাকে নিয়ে দেশের বাড়ি চলে

যাবে সোবাহান । আর আসবেনা ঢাকায় । আমেনাকে পেলে তার আর কিছু চাওয়ার নেই ।

কথাটা ভাবে আর মনে মনে হাসে সে । সকাল থেকে এই প্রথম হাসল সোবাহান ।

রিকশাও এখন সিগনালে আটকা পড়ে আছে । কাব্য হঠাৎ খেয়াল করে সে রিকশাওয়ালাকে

বলেইনি কোথায় যাবে । আর রিকশাওালাটাও কেমন ? সেও জিজ্ঞেস করেনি । যাক ,

তবু ঠিক রাস্তায়ই আছে । আচ্ছা , সিগনালটা পার হোক । তারপর বলা যাবে ।

কাব্যর খুব তাড়া । সাফা কি বাসায় আছে নাকি নেই ? ও থাকবে তো ? কাব্যকে

দেখে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকবেনা তো ? হুমম………তারমানে বাসায় গিয়েই আগে সরি

বলতে হবে । শুধু খালি হাতে বললে তো হবেনা । ফুল লাগবে , ফুল । ওই তো

রাস্তার ওপাড়ে ফুলের দোকান ।

ট্রাফিক পুলিশ সিগনাল ছেড়ে দেয় । সবার আগে সোবাহান রিকশা ছোটায় ।

কাব্যর মাথায় এখন শুধু সাফাকে পাওয়ার ইচ্ছা ।

সোবাহানের মাথায় এখন শুধু আমেনাকে পাওয়ার ইছা ।



দুজনের কেউই তাই খেয়াল করেনি বাম পাশ থেকে ওদের দিকে ছুটে আসা সিগনাল

অমান্য করা ট্রাকটিকে………………………



       (মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলা করা বোধহয় লেখকের কাজ । আমি এখনও সে পর্যায়ের

খেলোয়াড় হইনি । তবু এখানে বড় একটা সাহসের কাজ করে ফেললাম । শেষ লাইনটার

আগ পর্যন্ত সব কিছু ভালই ছিল । কিন্তু লাইনটা না লিখে পারলাম না । আমি

দু;খিত । গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা হারিয়েছি তারেক মাসুদসহ আরো কয়েকজনকে

। তাদের সবারই সপ্ন ছিল , আশা ছিল , কারো হয়ত ছোট্ট একটা সংসার ছিল ,

সদ্য হাটতে শেখা শিশু ছিল । কিন্তু নিয়তি তাদের ছাড়েনি । এখানের নিয়তির

দোষ দেবার আগে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে । সবার মত আমার মনেও একটাই প্রশ্ন

“ আর কতদিন আমরা নিজের পায়ে কুড়াল মারব ? ” গল্পটি তাদেরকে উৎসর্গ করছি ,

যাদের মুখগুলো আমাদের অসতর্কতার ফলে হারিয়ে গেছে । তাদের কাছে আমরা ঋণী

আজীবন । তারেক মাসুদ , আমাদের ক্ষমা করুন । )

সুখের স্বপ্নে দুঃখের শেষ

রাত ২টা বাজে।আজ পূর্নিমা রাত।ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠল দৃষা।দেখল ওর চোখ ভর্তি পানি।আর এক ফোটা পানি ওর গাল দিয়ে গড়ে পড়ছে।ওর বুঝতে আর বাকি রইল না যে আজও ফাহাদ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে।তারপর ও ঘুমানোর চেষ্টা করল।কিন্তু ওর আর ঘুম ধরলো না।তখন দৃষা জানালা খুলে চাঁদের দিকে তাকাল।আর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল ২.১৫  বাজছে।ওর ফাহাদ এর কথা মনে হল।মনে হল কত না রাত এইভাবে ফাহাদ এর সাথে কথা

 বলে কাটিয়েছে।মনে হল ফাহাদ এর ছোট ছোট সেই সব কথা।দৃষা ভাব্তে লাগল ফাহাদ এখনও কি রাত জাগে।দৃষা মনে মনে বলল  এখন  মনে হয়  ফাহাদ ওর GF এর  সাথে  ফোনে এ /mssenger এ কথা বলছে।দৃষা ভাবতে লাগল ফাহাদ এর সাথে তার পরিচয় এর কথা।

আজব একটা দিন ছিল। না দৃষা ফাহাদ কে চিনত্ কখনও।কিভাবে যেন হঠাত করেই কাকতালীয় ভাবে পরিচয় হল।কিভাবে  যেন দৃষা ফাহাদ এর বন্ধু হয়ে গেল।ফাহাদ এর সাথে সারাক্ষন সব সময়  কথা বলত।একবার ফাহাদ এর  ফোন নষ্ট হয়ে যায়।ফাহাদ তখন দৃষা সাথে কথা বলার জন্য ওর বন্ধুর ফোন

 নিয়েছিল।তার পর কি, ফাহাদ যখন কষ্টে ছিল দৃষা ফাহাদ এর পাশে ছিল ।কখনই দৃষা ফাহাদ কে একা  রাখে নি।কারণ ফাহাদ কে যে সে খুব ভালবাসে।ফাহাদ বিষয় টা জানত।আর একদিন ফাহাদ নিজেই দৃষা কে বলল যে ফাহাদ তাকে খুব ভালবাসে।সে দিন থেকে দৃষা আর ফাহাদ এর ভালবাসার যাত্রা শুরু।কিন্তু এত সুখ কি দৃষা'র ভাগ্যে থাকে।দৃষা এর মনে পড়ল ফাহাদ এর জন্ম দিন টার কথা।কত শত ঝামেলা পার করে দৃষা ফাহাদ এর

 জন্যে গিফট বানিয়েছিল নিজের হাত এ।দৃষা ভাবল ফাহাদ এর GFও কি ফাহাদ কে এমন গিফট দেয়?।

দৃষার মনে হল সেই দিন টার কথা,ফাহাদ আর সাথে প্রথম কোথাও বেড়াতে যাওয়ার দিন তার কথা।সেই দিন দৃষা কি না রাগ করেছিল ফাহাদ এর ওপর। ফাহাদ এর সাথে অনেক দিন ধরে বেড়াতে যাওয়ার প্লান করেছিল, আর  সকালে ফাহাদ বলে যে আজ তার বন্ধুরা হটাত্‍ করে বেড়াতে যেতে ঠিক করছে আর ওর যেতেই হবে। আজ যাওয়া হবে না।শুনে দৃষা কি না রাগ করল।কিন্তু পরে ফাহাদ ওকে নিয়ে গিয়েছিল বেড়াতে।সেই দিন প্রথম

 দৃষা ফাহাদ এর ঘাড়ে মাথা রেখেছিল।দৃষা কত না স্বপ্ন

 দেখেছিল,ফাহাদ কে নিয়ে।ওদের ছোট্ট একটা সংসার হবে,সেখানে তাদের ভালবাসাই সংসার টা ভরে যাবে।জীবনের সব সমস্যা সব ঝামেলা সে সহ্য করবে শেষ করবে, ফাহাদ এর হাত টা ধরে।ফাহাদ এর হাত টা ধরে সে তার সারা জীবন চলবা।ফাহাদ এর ভালবাসার জন্য সে সব সহ্য করবে।সারাজীবন ফাহাদ এর পাশে থাকবে।দৃষা ভাবল যখনি ফাহাদ এর দৃষা দরকার ছিল দৃষা ফাহাদ এর পাশে ছিল।সে আজও ফাহাদ এর পাশে থাকতে চায়।কিন্তু

 আজ যে ফাহাদ নিজের পাশে দৃষা কে রাখ্তে চায় না।দৃষা ভাবল সে ফাহাদ এর কাছে এমন কি বা চেয়ে ছিল।

শুধু চেয়ে ছিল যে ফাহাদ এই অবুঝ দৃষা কে সব্সময়ই যেন বুঝাক্,এই অবুঝ টার পাশে থাক্,এই পাগলী দৃষা টা কে যেন ভালবাসে,দৃষা টা কে যেন সামলায়্,হ্যাঁ দৃষা তো পাগল কিন্তু শুধু ফাহাদ এর জন্যে যে।দৃষা যে সম্পূর্ন ভাবে ফাহাদ এর উপর নির্ভর ছিল।দৃষা শুধুই যে চাইত ফাহাদ যেন দৃষার ভুল হলে বা না বুঝলে তা শুধরায় দেয় যেন বুঝায় দেয়।কিন্তু এটা কি দৃষা অনেক বেশি চাওয়া ছিল।দৃষা ভুল করলে  বা না

 বুঝলে

 তা শুধরে না দিয়ে ফাহাদ দৃষা কে যে সারাজীবন এর জন্য শাস্তি দিয়ে গেল।

ফাহাদ এর বা দোষ কি।এটা মনে হয় দৃষারি প্রাপ্য ছিল।এটাই দৃষা ভাগ্যে ছিল।দৃষা মনে মনে বলল "আচ্ছা এখনও কি ফাহাদ এর রাগ আগের মত আছে?ফাহাদ এর GF টা কি ফাহাদ এর রাগ সামলাতে পারে?আচ্ছা ফাহাদ এর Gf টা কেমন হইছে?নিশ্চয় দৃষা থেকে সম্পূর্ন আলাদা।একদম  perfect যেমন টা ফাহাদ চায়্।ফাহাদ এর Gf মনে হয় খুব lucky কারন ফাহাদ তাকে মনে হয় খুব ভালবাসে।আচ্ছা ফাহাদ কি ভাল আছে?।দৃষা চায় না যে ফাহাদ একটুও

 কষ্ট পাক।তাই তো সে কোন দিন ফাহাদ কে কষ্ট দেয় নি।অর আজ কেও ফাহাদ কে যে কষ্ট দিবে তাকে সারবে না দৃষা।আজ অনেক অনেক দিন হল ফাহাদ দৃষা কে ছেড়ে চলে গেছে।তাও আজও ফাহাদ এর সব স্মৃতিগুলা দৃষা পরিস্কার মনে আছে।দৃষা ফাহাদ এর সাথে আর যোগাযোগ'ও করে নি কারন ফাহাদ তা চায় না।দৃষা জানে যে ফাহাদ আর ফিরবে না।তাও দৃষা আজও ফাহাদ কে ভালবাসে।কারন দৃষা জানে যে পৃথিবীতে কিছু মানুষ জন্মে

 যাদের ভাগ্যে ভালবাসা থাকে না।যাদের ভালবাসা যায় না।যারা শুধু ভালবাসতে জানে।দিতে জানে।পেতে জানে না।আর দৃষা তাদেরই এক জন্।

এইসব কথা আর ফাহাদ এর সেই ছোট ছোট কথা ভাব্তে ভাব্তে দৃষা নিজেকে আবিষ্কার করল চোখ ভর্তি অশ্রু তে।ততক্ষনে পূর্নিমার চাঁদ টা আরও উজ্জ্বল হয়ে গেছিল।দৃষা চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে, ফাহাদ এর উদ্দেশ্যে চাঁদ টা কে দৃষা বলল ' তুমি যার সাথেই থাক খুব ভাল থেকো,তোমার খুশিতেই আমি খুশি,কিন্তু কেন জানি আজও আমি তোমায়কেই ভালবাসি।সময় বদলেছে আমি বদলেছি সবার জন্যে কিন্তু আসলে যে আমি

 সেখানেই

 আছি।আজও তোমার আছি, তোমাকেই খুব ভালবাসি।তোমার পথ চেয়ে বসে আছি''।নিজের অজান্তেই দৃষা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,তার চোখ হতে কয়েক ফোটা অশ্রু গাল দিয়ে গরে পরল,আর  চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বলল..''I LOVE YOU,I NEED YOU,PLEASE COME BACK IN MY LIFE,I JST LOVE YOU''(সত্য কাহিনী অবলম্বনে)

ওগো বিদেশিনী

জীবনে এতখানি surprised  হব কখনও ভাবি নি............।

আমি ক্লারার সামনে দাড়িয়ে আছি.........! এই আট বছরে অনেকটাই অপরিবর্তিত আছে ও। মুখের সেই উজ্জ্বলতা......পরিপাটী সোনালি চুল......নীলাভ মায়াভরা দুটো চোখ......আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় লাল হয়ে থাকা খাড়া নাক......

একগাল হেসে খুব স্বাভাবিকভাবে বলল, “কেমন আছ?”

কিছু বলতে পারি নি। হাসিটা কৃত্তিম ছিল কিনা বুঝি নি তবে ওর স্বাভাবিকতা আমাকে হতবম্ব করে দেয়। এতোগুলো বছর পর ওকে এইখানে দেখে ধাতস্ত হতে কিছুটা সময় নেই। ও বুঝে । তাই একটু পড়ে আবার জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছ রুদ্র?”

-“এইতো আছি। আর তুমি?”     কিছুটা স্বাভাবিক হই।

-আমিও আছি।

প্রায় ১৩ বছর আগের কথাগুলো মনে পড়ে যায়। মিনেসোটায় গিয়েছিলাম গ্র্যাজুয়েশন করতে। ক্লাসমেট হিসেবে পেয়েছিলাম ক্লারা মিশেল কে।

আমাদের প্রথম কথা হয় লাইব্রেরীতে। একই বইয়ে হাত পড়ে যায় আমাদের......।

আমাকে বলে জানো “একই বইয়ে হাত পরলে কি করতে হয়?” আমি বলি, “না”। “একসাথে নোট করতে হয়” -ও ঠোট চাপা হাসি হেসে বলে। এরপর থেকে আমরা একসাথে নোট করতে বসি কিন্তু ও কিছুই করে না। আমিই সব করি আর ও একটু পরপর ফিসফিস করে কথা বলে যেত। আমার যে খুব একটা খারাপ লাগত তা না......বরং পাশে একজন শ্বেত সুন্দরীর উপস্থিতি আমাকে রোমাঞ্চিত করত। ওর বকবকানির গণ্ডি লাইব্রেরী পেরিয়ে চলে যায় মাঠে। আমরা ক্লাস শেষে বা off hour এ মাঠে বসে গল্প করতাম। ওর ঠাশ ঠাশ করে বলা ইংরেজির কিছু কিছু যখন না বুঝে হাবার মত ওর দিকে চেয়ে থাকতাম কিংবা যখন বিদঘুটে টাইপের দু একটা বাংলা শব্দ বলতাম তখন ও হেসে কুটিকুটি হয়ে যেত......।

সে হাসি যে সে হাসি না.........যেকোনো ছেলেকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় সেই হাসি। আমাদের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে।

 holiday গুলোতে আমরা প্রায়ই চলে যেতাম মিনেসোটার ভিতরে কোনো গ্রামে, মাঝে মাঝে চলে যেতাম প্রধান শহরে.........।

সারা দিন ঘুরে সন্ধ্যার দিকে ফিরতাম ডরমিটরিতে।



প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় যখন বের হওয়াও মুশকিল ছিল তখনও নিজের চেয়ে বেশী ওজনের কাপড় পড়ে বের হতাম, শুধু ওর জন্য.........। কারণ ও বরফ খুব ভালবাসে। বাচ্চাদের মতো বরফ নিয়ে খেলত ও। আমি ঠাণ্ডা লাগিয়ে রুমে ফিরতাম আর ও সন্ধ্যায় ফ্লাস্ক ভর্তি গরম সুপ নিয়ে চলে আসত ডরমের নিচে.........।   ওর প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম অনেক আগেই, কিন্তু নিজের conservative family background’ র কথা চিন্তা করে মনটাকে আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু মন নিয়ন্ত্রনে মনুষ্য জাতি বড়ই কাচা......তাই শেষ রক্ষা হয় নি।

এরকমই এক বরফ পড়া দিনে যখন ওর জন্য বের হই...........ঠান্ডায় জবুথবু আমার দিকে ও একদৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে...... কিছুক্ষণপর আমাকে হতবম্ব করে দিয়ে বলে, “রুদ্র, তুমি বোঝ না যে তুমি আমাকে ভালবাস?” আমি কিছু বলি না............চুপ থাকি।

“তাহলে কিছু বলোনা কেন?”-বলেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে......।

কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে, “I love you” আমিও এতদিনের জমে থাকা সকল অনুভুতিগুলোকে একত্র করে কাঙ্গালের মত বলে উঠি, “আমিও তোমাকে ভালবাসি।’’



 আমদের প্রথম চুম্বন হয়...।



 এরপরের দিনগুলো সম্ভবত আমাদের জীবনের সেরা দিন ছিল।



 Graduation এর শেষ দিকে হঠাৎ বাংলাদেশে থেকে খবর পাই যে বাবাকে hospitalize করা হয়েছে। দেশে যাই। বাবা আমাকে oxygen mask এর ভেতর থেকেই জিজ্ঞেস করে, “বাবা, ওখানে আবার কোন বিদেশীনির প্রেমে পড়িস নি তো?”  আমি মিথ্যা হাসি হাসি...। কারন বুঝতে পেরেছিলাম যে তখন ক্লারার কথা বললে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে। বাবা তার শেষ বেলায় তার একমাত্র পুত্রের বউ দেখে যেতে চান......।

আমার মাথায় যেন বাজ পড়ে......।

কথায় আছে না, life is stranger than fiction. তাই টের পেলাম। “উঠ ছেড়া তোর বিয়ে” এর মতো আমারও এক রাতেই বিয়ে হয়ে গেল। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে সব কিছু ঘটে যায়।



এরপর ফাইনালের পরীক্ষার জন্য USA ফিরি তবে ক্লারাকে কিছু জানাইনি।



আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়। আমি ক্লারাকে বলে ফেলি সব। ক্ষমা চাই ওর কাছে। খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন যে ও খুব শান্ত ছিল তখন। শুধু একভাবে তাকিয়ে শুনছিল আমার কথাগুলো। যেন এরকম কিছু শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিল ও। একটা বারও প্রতিবাদ করে নি। অভিমান করে নি। জানি না কেন করেনি, হয়ত প্রচন্ড অভিমানী বলে কিংবা ঘটনার আকস্মিকতায় প্রচন্ড shocked  হয়ে। ভেবেছিলাম আমাকে চিট ভাববে; খুব কাদবে কিন্তু কাদে নি।

এর পর ক্লারা ওর মা’র কাছে বোস্টনে চলে যায়।



বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান এক কোম্পানীতে খুব বড় পোস্টে চাকরি করছি এখন। অফিস থেকে জানাল যে International Telecommunication Seminar এর জন্য আমাকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ডেনমার্কে যেতে হবে । বউ-বাচ্চা নিয়ে কখনও কোথাও যেতে পারি না তাই ওদের নিয়েই ডেনমার্ক চলে আসি...। Conference শেষ তাই দেশের সবার জন্য কিছু গিফট আর চকলেট কিনতে একটা সুপার শপে ঢুকি আর তখনি দেখা ক্লারার সাথে।



ক্লারার কথায় তন্দ্রা ভাঙ্গে আমার......।

-ডেনমার্কে কি করছ?

-একটা সেমিনারে এসেছিলাম।

-আর তুমি এখানে যে?

-এখন এখানেই আছি.........ভালো Job offer পেয়েছিলাম তাই চলে এসেছি।

-USA ছেড়েছো কবে?

-প্রায় ৫ বছর......

হঠাৎ কি যেন হল, জিজ্ঞেস করে বসলাম, “বিয়ে করেছ?”

-নাহ..................তোমার গিফটেই এত ভালবাসা আছে যে আর কাওকে ভালবাসতে পারিনি.....।

বলেই গেমবয় খেলায় বুদ এক ছয়/সাত বছর বয়সী ছেলেকে কাছে টেনে নিল......

হতবাক হয়ে দেখতে লাগলাম গেম খেলায় ব্যস্ত ছেলেটাকে.....................ওর মুখে আমার মুখাবয়ব খুজতে থাকলাম যেন.........পেলাম তার চেয়েও বেশীকিছু...।

এ যে আমারই কার্বন কপি......!!  গায়ের রঙ  ক্লারার মত হলেও...... চোখ,নাক সবই তো আমার মতো ! তবে মা’র মত ওর চেহারায় একটা আভিজাত্য রয়েছে.....।



আট বছর আগে যখন বাংলাদেশে ফিরে আসব তার সাত দিন আগে ক্লারার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। ও সেদিন আমাকে বলেছিল, “চলে যাবার আগে আমাকে একটা উপহার দেবে...............?”

আমি সেদিন ওকে না করতে পারি নি। ঐদিনও যদি ক্লারা একবারের জন্যও আমাকে সবকিছু ছেড়েছুড়ে  ওর কাছে থেকে যেতে বলতো তাহলে হয়ত তাই করতাম।



-ওকে ছুয়ে দেখবেনা একটু......?

ক্লারার কথায় আবার আমার চিন্তায় ছেদ পড়ল।

-আমি ছেলেটার মাথায় হাত বুলাই কিন্তু একটু বিরক্ত হয় বলে মনে হয়.........আমি হাত সরিয়ে নেই।

ক্লারা একটু নিচু হয়ে ওকে বলে, “baby, remember……… I told u about an angel…….it’s him…….!!”

এবার ও একটু মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়.........আর ক্লারার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, “he’s not an angel……..He looks like a man……” বলেই আবার গেমসে মনোযোগ দেয়। কথাটা শুনে আমার হাসি পায়।

 ক্লারাও হাল ছেড়ে দেয়।

“কি নাম রেখেছ?’’  জিজ্ঞেস করি।

-আমরা যেটা ঠিক করেছিলাম।

-রাইয়ান...??

-হ্যা......তবে এখানে সবাই ওকে রায়ান বলেই ডাকে।



 এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা........আমি বলি, “যখন যোগাযোগ করতে চেয়েছি তখন response কর নি কেন?”

-তুমি অযথা কষ্ট পাবে বলে.........



-জিজ্ঞেস করলে না আমার জীবন কেমন চলছে? -ওকে বললাম।

-সুন্দরী স্ত্রী আর দুটো সন্তান নিয়ে ভালই তো আছো......

অবাক হয়ে বললাম, এত খবর রাখ??

নির্জীব হাসি হাসল। “তবে এখন আর খবর রাখি না........ইচ্ছে করে না।”

খুব ঠান্ডা স্বরের একটা উত্তর পেলাম।



ভাবলাম আর কথা বাড়ানো ঠিক হবে না...............।। আজ রাতেই বাংলাদেশের flight...... রাত বাড়ছে, হোটেলে ওরা একা, ফিরতে হবে........।

যাবার আগে জীবনের প্রথম নারীটাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু সেই অধিকারের অস্তিত্ব কতটুকুই বা অবশিষ্ট আছে সেই ব্যাপারে আমি সন্দিহান।

 কিছুই কেনা হল না। বের হওয়ার আগে শুধু বললাম, “কিছু বলবে?”

-না......।

শুভ কামনা.........ভাল থেকো......।

গলার কাছে কিছু কথা এসে আটকে যায়......।

তাই কিছু আর বলতে পারিনা । ছেলেটার মাথায় আর একবার হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যাই। খুব দুর্বল মানুষ আমি তাই একবারও পেছন ফিরে তাকাতে সাহস পাই না........।

বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা......জোর কদমে হেটে যাচ্ছি............ ক্লারার অভিমানী ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ঠান্ডাটা যেন আরো বেশী লাগছে............ হিম শীতল মনটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না । কিন্তু ক্লারা !! এত শক্তি কোথা থেকে পায় মেয়েটা.........!!

শীত ও একটি ভালোবাসার গল্প

জীবনে এতখানি surprised  হব কখনও ভাবি নি............।

আমি ক্লারার সামনে দাড়িয়ে আছি.........! এই আট বছরে অনেকটাই অপরিবর্তিত আছে ও। মুখের সেই উজ্জ্বলতা......পরিপাটী সোনালি চুল......নীলাভ মায়াভরা দুটো চোখ......আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় লাল হয়ে থাকা খাড়া নাক......

একগাল হেসে খুব স্বাভাবিকভাবে বলল, “কেমন আছ?”

কিছু বলতে পারি নি। হাসিটা কৃত্তিম ছিল কিনা বুঝি নি তবে ওর স্বাভাবিকতা আমাকে হতবম্ব করে দেয়। এতোগুলো বছর পর ওকে এইখানে দেখে ধাতস্ত হতে কিছুটা সময় নেই। ও বুঝে । তাই একটু পড়ে আবার জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছ রুদ্র?”

-“এইতো আছি। আর তুমি?”     কিছুটা স্বাভাবিক হই।

-আমিও আছি।

প্রায় ১৩ বছর আগের কথাগুলো মনে পড়ে যায়। মিনেসোটায় গিয়েছিলাম গ্র্যাজুয়েশন করতে। ক্লাসমেট হিসেবে পেয়েছিলাম ক্লারা মিশেল কে।

আমাদের প্রথম কথা হয় লাইব্রেরীতে। একই বইয়ে হাত পড়ে যায় আমাদের......।

আমাকে বলে জানো “একই বইয়ে হাত পরলে কি করতে হয়?” আমি বলি, “না”। “একসাথে নোট করতে হয়” -ও ঠোট চাপা হাসি হেসে বলে। এরপর থেকে আমরা একসাথে নোট করতে বসি কিন্তু ও কিছুই করে না। আমিই সব করি আর ও একটু পরপর ফিসফিস করে কথা বলে যেত। আমার যে খুব একটা খারাপ লাগত তা না......বরং পাশে একজন শ্বেত সুন্দরীর উপস্থিতি আমাকে রোমাঞ্চিত করত। ওর বকবকানির গণ্ডি লাইব্রেরী পেরিয়ে চলে যায় মাঠে। আমরা ক্লাস শেষে বা off hour এ মাঠে বসে গল্প করতাম। ওর ঠাশ ঠাশ করে বলা ইংরেজির কিছু কিছু যখন না বুঝে হাবার মত ওর দিকে চেয়ে থাকতাম কিংবা যখন বিদঘুটে টাইপের দু একটা বাংলা শব্দ বলতাম তখন ও হেসে কুটিকুটি হয়ে যেত......।

সে হাসি যে সে হাসি না.........যেকোনো ছেলেকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় সেই হাসি। আমাদের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে।

 holiday গুলোতে আমরা প্রায়ই চলে যেতাম মিনেসোটার ভিতরে কোনো গ্রামে, মাঝে মাঝে চলে যেতাম প্রধান শহরে.........।

সারা দিন ঘুরে সন্ধ্যার দিকে ফিরতাম ডরমিটরিতে।



প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় যখন বের হওয়াও মুশকিল ছিল তখনও নিজের চেয়ে বেশী ওজনের কাপড় পড়ে বের হতাম, শুধু ওর জন্য.........। কারণ ও বরফ খুব ভালবাসে। বাচ্চাদের মতো বরফ নিয়ে খেলত ও। আমি ঠাণ্ডা লাগিয়ে রুমে ফিরতাম আর ও সন্ধ্যায় ফ্লাস্ক ভর্তি গরম সুপ নিয়ে চলে আসত ডরমের নিচে.........।   ওর প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম অনেক আগেই, কিন্তু নিজের conservative family background’ র কথা চিন্তা করে মনটাকে আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু মন নিয়ন্ত্রনে মনুষ্য জাতি বড়ই কাচা......তাই শেষ রক্ষা হয় নি।

এরকমই এক বরফ পড়া দিনে যখন ওর জন্য বের হই...........ঠান্ডায় জবুথবু আমার দিকে ও একদৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে...... কিছুক্ষণপর আমাকে হতবম্ব করে দিয়ে বলে, “রুদ্র, তুমি বোঝ না যে তুমি আমাকে ভালবাস?” আমি কিছু বলি না............চুপ থাকি।

“তাহলে কিছু বলোনা কেন?”-বলেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে......।

কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে, “I love you” আমিও এতদিনের জমে থাকা সকল অনুভুতিগুলোকে একত্র করে কাঙ্গালের মত বলে উঠি, “আমিও তোমাকে ভালবাসি।’’



 আমদের প্রথম চুম্বন হয়...।



 এরপরের দিনগুলো সম্ভবত আমাদের জীবনের সেরা দিন ছিল।



 Graduation এর শেষ দিকে হঠাৎ বাংলাদেশে থেকে খবর পাই যে বাবাকে hospitalize করা হয়েছে। দেশে যাই। বাবা আমাকে oxygen mask এর ভেতর থেকেই জিজ্ঞেস করে, “বাবা, ওখানে আবার কোন বিদেশীনির প্রেমে পড়িস নি তো?”  আমি মিথ্যা হাসি হাসি...। কারন বুঝতে পেরেছিলাম যে তখন ক্লারার কথা বললে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে। বাবা তার শেষ বেলায় তার একমাত্র পুত্রের বউ দেখে যেতে চান......।

আমার মাথায় যেন বাজ পড়ে......।

কথায় আছে না, life is stranger than fiction. তাই টের পেলাম। “উঠ ছেড়া তোর বিয়ে” এর মতো আমারও এক রাতেই বিয়ে হয়ে গেল। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে সব কিছু ঘটে যায়।



এরপর ফাইনালের পরীক্ষার জন্য USA ফিরি তবে ক্লারাকে কিছু জানাইনি।



আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়। আমি ক্লারাকে বলে ফেলি সব। ক্ষমা চাই ওর কাছে। খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন যে ও খুব শান্ত ছিল তখন। শুধু একভাবে তাকিয়ে শুনছিল আমার কথাগুলো। যেন এরকম কিছু শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিল ও। একটা বারও প্রতিবাদ করে নি। অভিমান করে নি। জানি না কেন করেনি, হয়ত প্রচন্ড অভিমানী বলে কিংবা ঘটনার আকস্মিকতায় প্রচন্ড shocked  হয়ে। ভেবেছিলাম আমাকে চিট ভাববে; খুব কাদবে কিন্তু কাদে নি।

এর পর ক্লারা ওর মা’র কাছে বোস্টনে চলে যায়।



বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান এক কোম্পানীতে খুব বড় পোস্টে চাকরি করছি এখন। অফিস থেকে জানাল যে International Telecommunication Seminar এর জন্য আমাকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ডেনমার্কে যেতে হবে । বউ-বাচ্চা নিয়ে কখনও কোথাও যেতে পারি না তাই ওদের নিয়েই ডেনমার্ক চলে আসি...। Conference শেষ তাই দেশের সবার জন্য কিছু গিফট আর চকলেট কিনতে একটা সুপার শপে ঢুকি আর তখনি দেখা ক্লারার সাথে।



ক্লারার কথায় তন্দ্রা ভাঙ্গে আমার......।

-ডেনমার্কে কি করছ?

-একটা সেমিনারে এসেছিলাম।

-আর তুমি এখানে যে?

-এখন এখানেই আছি.........ভালো Job offer পেয়েছিলাম তাই চলে এসেছি।

-USA ছেড়েছো কবে?

-প্রায় ৫ বছর......

হঠাৎ কি যেন হল, জিজ্ঞেস করে বসলাম, “বিয়ে করেছ?”

-নাহ..................তোমার গিফটেই এত ভালবাসা আছে যে আর কাওকে ভালবাসতে পারিনি.....।

বলেই গেমবয় খেলায় বুদ এক ছয়/সাত বছর বয়সী ছেলেকে কাছে টেনে নিল......

হতবাক হয়ে দেখতে লাগলাম গেম খেলায় ব্যস্ত ছেলেটাকে.....................ওর মুখে আমার মুখাবয়ব খুজতে থাকলাম যেন.........পেলাম তার চেয়েও বেশীকিছু...।

এ যে আমারই কার্বন কপি......!!  গায়ের রঙ  ক্লারার মত হলেও...... চোখ,নাক সবই তো আমার মতো ! তবে মা’র মত ওর চেহারায় একটা আভিজাত্য রয়েছে.....।



আট বছর আগে যখন বাংলাদেশে ফিরে আসব তার সাত দিন আগে ক্লারার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। ও সেদিন আমাকে বলেছিল, “চলে যাবার আগে আমাকে একটা উপহার দেবে...............?”

আমি সেদিন ওকে না করতে পারি নি। ঐদিনও যদি ক্লারা একবারের জন্যও আমাকে সবকিছু ছেড়েছুড়ে  ওর কাছে থেকে যেতে বলতো তাহলে হয়ত তাই করতাম।



-ওকে ছুয়ে দেখবেনা একটু......?

ক্লারার কথায় আবার আমার চিন্তায় ছেদ পড়ল।

-আমি ছেলেটার মাথায় হাত বুলাই কিন্তু একটু বিরক্ত হয় বলে মনে হয়.........আমি হাত সরিয়ে নেই।

ক্লারা একটু নিচু হয়ে ওকে বলে, “baby, remember……… I told u about an angel…….it’s him…….!!”

এবার ও একটু মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়.........আর ক্লারার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, “he’s not an angel……..He looks like a man……” বলেই আবার গেমসে মনোযোগ দেয়। কথাটা শুনে আমার হাসি পায়।

 ক্লারাও হাল ছেড়ে দেয়।

“কি নাম রেখেছ?’’  জিজ্ঞেস করি।

-আমরা যেটা ঠিক করেছিলাম।

-রাইয়ান...??

-হ্যা......তবে এখানে সবাই ওকে রায়ান বলেই ডাকে।



 এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা........আমি বলি, “যখন যোগাযোগ করতে চেয়েছি তখন response কর নি কেন?”

-তুমি অযথা কষ্ট পাবে বলে.........



-জিজ্ঞেস করলে না আমার জীবন কেমন চলছে? -ওকে বললাম।

-সুন্দরী স্ত্রী আর দুটো সন্তান নিয়ে ভালই তো আছো......

অবাক হয়ে বললাম, এত খবর রাখ??

নির্জীব হাসি হাসল। “তবে এখন আর খবর রাখি না........ইচ্ছে করে না।”

খুব ঠান্ডা স্বরের একটা উত্তর পেলাম।



ভাবলাম আর কথা বাড়ানো ঠিক হবে না...............।। আজ রাতেই বাংলাদেশের flight...... রাত বাড়ছে, হোটেলে ওরা একা, ফিরতে হবে........।

যাবার আগে জীবনের প্রথম নারীটাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু সেই অধিকারের অস্তিত্ব কতটুকুই বা অবশিষ্ট আছে সেই ব্যাপারে আমি সন্দিহান।

 কিছুই কেনা হল না। বের হওয়ার আগে শুধু বললাম, “কিছু বলবে?”

-না......।

শুভ কামনা.........ভাল থেকো......।

গলার কাছে কিছু কথা এসে আটকে যায়......।

তাই কিছু আর বলতে পারিনা । ছেলেটার মাথায় আর একবার হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যাই। খুব দুর্বল মানুষ আমি তাই একবারও পেছন ফিরে তাকাতে সাহস পাই না........।

বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা......জোর কদমে হেটে যাচ্ছি............ ক্লারার অভিমানী ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ঠান্ডাটা যেন আরো বেশী লাগছে............ হিম শীতল মনটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না । কিন্তু ক্লারা !! এত শক্তি কোথা থেকে পায় মেয়েটা.........!!

06 February, 2019

আম চাষ পদ্ধতি


যেভাবে করবেন আমবাগান

বাড়ছে আমের চাষ। মানসম্পন্ন আম ফলাতে তাই দরকার আধুনিক উত্পাদন কৌশল। আম চাষিদের জানা দরকার কীভাবে জমি নির্বাচন, রোপণ দূরত্ব, গর্ত তৈরি ও সার প্রয়োগ, রোপণ প্রণালী, রোপণের সময়, জাত নির্বাচন, চারা নির্বাচন, চারা রোপণ ও চারার পরিচর্যা করতে হয়। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে দেশের সব জেলাতে সব জাতের আম হয় না। আমের জন্য মাটির অম্লতা দরকার ৫.৫-৭.০। অনেক সময় দেখা যায় পাহাড়ি ও বরিশাল বিভাগের অনেক জেলাতে ফজলী, ল্যাংড়া, খিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতগুলো ভাল হয়। সুতরাং কাঙ্ক্ষিত জাতটি নির্বাচিত জায়গায় হবে কিনা তা বিবেচনায় রাখতে হবে। গভীর, সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ মাটি আম চাষের জন্য ভাল। বর্ষায় পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছামুক্ত করতে হবে। রোপণ দূরত্ব নির্ভর করে আমের জাতের উপর। দ্রুত বর্ধনশীল আমের জাত বা বড় আকৃতির গাছ হলে সাধারণত ১২ মিটার বা প্রায় ৪০ ফুট দূরত্বে লাগাতে হবে। এই দূরত্বে গাছ লাগালে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৯টি গাছ লাগানো যাবে। মধ্যম আকৃতির গাছ হলে ১০ মিটার বা ৩৫ ফুট দূরত্বে লাগানো যাবে এবং দূরত্ব অনুসরণ করলে এক বিঘা জমিতে ১৩টি গাছ লাগানো যাবে। খাটো আকৃতির জাত যেমন- বারি আম-৩ (আম্রপলি) হলে ৬-৮ মিটার দূরত্বে লাগানো যাবে এবং এ দূরত্ব অনুসরণ করলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০-২৭টি গাছ লাগানো যাবে। জাতভেদে আম গাছের রোপণ দূরত্ব ৬×৬ মিটার; ১০×১০ মিটার এবং ১২×১২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্গাকার, আয়তাকার, ত্রিভুজাকার বা ষড়ভুজাকার যে প্রণালীতে চারা রোপণ করা হোক না কেন, গাছ লাগানোর স্থানটি চিহ্নিত করে বর্ষা শুরুর আগেই সেখানে গর্ত করতে হবে। সাধারণত মে-জুন মাসে ৭৫-১০০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় গর্ত করতে হবে। গর্ত করার সময় গর্তের উপরের অর্ধেক অংশের মাটি একপাশে এবং নিচের অংশের মাটি অন্যপাশে রাখতে হবে। গর্ত থেকে মাটি উঠানোর পর ১০ দিন পর্যন্ত গর্তটিকে রোদে শুকাতে হবে। এরপর প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গাম জিংক সালফেট এবং ১০ গ্রাম বোরিক এসিড উপরের অংশের মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি ওলোট-পালোট করে গর্ত ভরাট করতে হবে। গর্ত ভরাটের সময় উপরের অর্ধেক অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট না হলে প্রয়োজনে পাশ থেকে উপরের মাটি গর্তে দিতে হবে। তবে গর্তের নিচের অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করা যাবে না। সুস্থ-সবল ও রোগমুক্ত চারা রোপণ করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়। রোপণের জন্য ৪-৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ২-৩টি ডাল বিশিষ্ট চারা নির্বাচন করতে হবে। ২-৩ বছর বয়সী ফাটল/ভিনিয়ার কলমের চারা বাগানে লাগানোর জন্য ভাল। গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর পুনরায় গর্তের মাটি ভালভাবে উলোট-পালোট করে গর্তের মাঝখানে চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে তারপর চারদিকে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া সমান্য চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার বলটি যেন ভেঙে না যায় এবং চারা গোড়াটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাটির নিচে ঢুকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রোপণের পর চারাটি খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। বিকেল বেলায় চারা/কলম রোপণ করা ভাল। রোপণের পর বৃষ্টি না থাকলে কয়েকদিন সেচ দিতে হবে। গাছে নতুন পাতা বের হলে পাতাকাটা উইভিল পোকা আক্রমণ করতে পারে। কচি পাতার নিচের পিঠে মধ্যশিরার উভয়পাশে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে। পরে স্ত্রী পোকা ডিমপাড়া পাতাটির বোঁটার কাছাকাছি কেঁটে দেয়। শেষে গাছটি পাতাশূন্য হয়ে যায়। কর্তিত কচি পাতা মাটি থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে কচি পাতা বের হওয়ার ৬ দিন এবং ১২ দিন পর প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন অথবা যেকোনো কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় সেপ্র করলে পোকার আক্রমণ হয় না। বাজারজাত করার জন্য কোন জাতের আমের চাহিদা বেশি, গুণগতমান ভাল এবং বাজারমূল্য বেশি তা জানা দরকার। আমাদের দেশে বেশ কিছু উত্কৃষ্ট মানের আমের জাত (ল্যাংড়া, খিরসাপাত, হিমসাগর, ফজলী, গোপাল ভোগ ও বোম্বাই) রয়েছে। যেগুলো রঙিন না হলেও স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেশি। কিন্তু এ জাতগুলো বিদেশে রফতানি করে তেমন মুনাফা পাওয়া যাবে না। কারণ বিদেশের বাজারে রঙিন ও হালকা মিষ্টি আমের চাহিদা বেশি। এর জন্য বারি আম-২ এবং বারি আম-৭ জাত দু’টি উপযুক্ত। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতি বছর ফল দিতে সক্ষম এমন কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। জাতগুলো হলো বারি আম-১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮। এ জাতের চারা দিয়ে বাগান করলে ভাল ফলনের পাশাপাশি লাভবান হওয়া যায়। এগ্রোবাংলা ডটকম

আম বাগানের আগাম পরিচর্যা

বাংলাদেশে যে ৭০টি ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় তার মধ্যে আম অন্যতম। মোট ফল চাষের ৪০ ভাগ জমিতে আম চাষ হলেও দিনদিন এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে ফলনের তারতম্য দেখা যায়। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে আমের ফলন অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে একটু যত্নবান হলে ফলন কয়েকগুণ বাড়ানো যায়। আর তাই যত্ন নিতে হবে আম সংগ্রহের পর থেকেই। রোগাক্রান্ত ও মরা ডালপালা একটু ভাল অংশসহ কেটে ফেলতে হবে মৌসুমের পর। ডালপালা এমনভাবে ছাটাই করতে হবে যেন গাছের ভেতর পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে। গাছের ভেতরমুখি ডালে সাধারণত ফুলফল হয় না, তাই এ ধরনের ডাল কেটে ফেলতে হবে। বর্ষাকালে কাটা অংশগুলো থেকে নতুন কুশি গজাবে এবং পরের বছরে ওই নতুন কুশিগুলোতে ফুল আসবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে- ডগার বয়স ৫ থেকে ৬ মাস না হলে ওই ডগায় সাধারণত ফুল আসে না। আগামী বছরে একটি গাছে কী পরিমাণ ফলন আসতে পারে তা আগস্ট মাসেই ধারনা পাওয়া যায়। এ সময়ের মধ্যে গাছে যত বেশি নতুন ডগা গজাবে ততই ভাল। আমবাগানে সার প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি গাছে বছরে কি পরিমাণ সার দিতে হবে তা নির্ভর করে মাটির গুণাগুণের উপর। গাছ বাড়ার সাথে সাথে সারের চাহিদাও বাড়তে থাকে। বছর অনুযায়ী সারের পরিমাণ দেয়া হল- গোবর সার দিতে হবে রোপণের ১ বছর পর ২০, রোপণের ২ বছর পর ২৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১২৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে ইউরিয়া রোপণের ১ বছর পর ২৫০, রোপণের ২ বছর পর ৩৭৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১২৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২৭৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। টিএসপি রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ২০০, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১০০ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২১৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। এমপি রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ২০০, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১০০ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জিপসাম রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ১৭৫, প্রতিবছর বাড়াতে হবে ৭৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১৬০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জিংক সালফেট রোপণের ১ বছর পর ১০, রোপণের ২ বছর পর ১৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১১০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। বোরিক এসিড রোপণের ১ বছর পর ৫, রোপণের ২ বছর পর ৭, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ২ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। সব সার দু’কিস্তিতে প্রয়োগ করা ভাল। প্রথম অর্ধেক বর্ষার আগে এবং বাকিটা আশ্বিন মাসে অর্থাত্ বর্ষার পরে। যদি কোনো আমচাষি প্রথম কিস্তির সার প্রয়োগ না করেন তবে দ্বিতীয় কিস্তির সময় চাহিদার পুরো সারটাই প্রয়োগ করতে হবে। অনেক আমচাষি বাগানের ফজলি ও আশ্বিনা আম সংগ্রহ করার পর সার প্রয়োগ করেন যা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। ফলন্ত গাছে গুঁড়ি থেকে ২-৩ মিটার দূরত্বে ৩০ সে.মি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সে.মি. গভীর করে চক্রাকার নালা কেটে তার ভেতর রাসায়নিক ও জৈব সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অথবা দুপুরবেলা যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় সার ছিটিয়ে কোঁদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাধারণত আমগাছে ফল আসার পর গাছগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে গাছের প্রয়োজন হয় খাদ্যের। সার দেয়ার পর বর্ষা শুরু হলে গাছ তার প্রয়োজনীয় খাদ্য মাটি থেকে নিতে পারে। আমবাগানে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে মাটিতে রস থাকলে সেচের দরকার হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, আমগাছে পরিবর্তিত বেসিন পদ্ধতিতে অর্থাত্ গাছের গোড়ার চারদিকে এক মিটার জায়গা সামান্য উঁচু রেখে দুপুরবেলা যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় একটি থালার মত করে বেসিন তৈরি করে সেচ দিলে পানির পরিমাণ কম লাগে এবং বেশির ভাগ পানি গাছ গ্রহণ করতে পারে। বেসিন পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হল গাছের গোড়া পরিষ্কার থাকে ফলে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচ দেয়ার পর জায়গাটি কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিলে মাটিতে একমাস পর্যন্ত রস থাকবে। তবে আমগাছে ফুল আসার একমাস আগে সেচ না দেয়াই ভাল। এ সময় সেচ দিলে গাছে নতুন পাতা বের হবে এতে মুকুলের সংখ্যা কমে গিয়ে ফলন কমে আসবে। আমবাগানে জৈব পদার্থের ঘাটতি থাকলে ধৈঞ্চার চাষ করতে হবে। এতে বাগানে জৈব পদার্থসহ অন্যান্য সার যোগ হলে মাটির উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমগাছে ২/৩ ধরনের পরগাছা দেখা যায়। ছোট গাছের চেয়ে বড় গাছে পরগাছার আক্রমণ বেশি হয়। পরগাছার বীজ আমগাছের ডালে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে থাকে এবং ডাল থেকে প্রয়োজনীয় পানি, খাদ্যরস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি শোষণ করে বেঁচে থাকে। পরগাছার কোনো শেকড় থাকে না। শেকড়ের মত এক ধরনের হস্টোরিয়া তৈরি করে। ডাল থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। বর্ষাকালে পরগাছার বীজ বেশি বিস্তার লাভ করে। আক্রান্ত ডাল পরগাছার গোড়াসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা স্থানে রোগের আক্রমণ যাতে না হয় তার জন্য বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। পরগাছায় ফুল ফল আসার আগেই এ কাজটি করতে হবে। আমগাছে শতভাগ মুকুল আসা ভাল না। এতে ফলন ব্যাহত হয়। তাই শতভাগ মুকুলায়িত আমগাছের চারদিক থেকে ৫০% মুকুল ফোটার আগেই ভেঙে দিতে হবে। এতে ভাঙা অংশে নতুন কুশি গজাবে এবং পরবর্তী বছরে ওই সব ডগায় ফুল আসবে, আম আসবে। উপরোক্ত বিষয়সমূহে নজর দিলে অবশ্যই প্রতিবছর আমের ভাল ফলন পাওয়া যাবে। আম চাষি লাভবান হবেন। লেখক: কৃষিবিদ মো. শরফ উদ্দিন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ঈশ্বরদী, পাবনা এগ্রোবাংলা ডটকম

বাড়ির আঙিনায়ও আমের চাষ করা যায়

জ্যৈষ্ঠ মাস হচ্ছে বাংলাদেশের মধুমাস। আর এই মধুমাসের মধুফল হল আম। এই আমকে ঘিরে হয়েছে বাঙালির অনেক ঐতিহ্য এবং নানা ধরনের খাবার। ইদানীং কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী এই ঐতিহ্যকে নষ্ট করে ফেলছে। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন-কার্বামাইড ইথাইল, ইথিলিন এবং বিভিন্ন প্রকার হরমোন দিয়ে অপরিপকস্ফ ফলকে পাকিয়ে বাজারজাত করছে, যা মানুষের দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এতে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, ক্ষুদা মন্দা, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে। এছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন জমি কমে যাওয়ায় ফল গাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। বাঙালিদের এই ঐতিহ্যবাহী ফলকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ রহিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ফলগাছ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও বাণিজ্যিকভাবে চাষোপযোগী বিভিন্ন উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রকৃতির আমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও বছরে দুই থেকে তিনবার ফলনশীল, পলিঅ্যামব্রায়োনিক, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিক আমসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এফটিআইপি বাউ আম-১ (শ্রাবণী) : শ্রাবণী একটি নিয়মিত ফলধারণকারী নাবী জাতের আম। ফলের আকার মাঝারি ও কিঞ্চিত্ লম্বা। পাকা ফলের ত্বকের রং গাঢ় হলুদ, শাঁসের রং কমলাভ লাল, সুস্বাদু, রসালো ও মিষ্টি। খোসা সামান্য মোটা ও আঁটি পাতলা। এটি একটি মাঝারি বামন জাতের গাছ। বাংলাদেশের সবগুলো এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোনে উত্পাদনযোগ্য। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ফুল আসে এবং জুলাই মাসের শেষের দিকে ফল পাকতে শুরু করে। সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি উত্তম। ফুল আসা থেকে ফল পরিপকস্ফ হতে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। হেক্সাগোনাল রোপণ পদ্ধতি উত্তম। ৫-৭ মিটার – ৫-৭ মিটার রোপণ দূরত্বে প্রতি হেক্টর ৩০০-৩৫০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণকাল থেকে ফল পেতে প্রায় এক বছর সয়ম লাগে। ফলে মাঝে মাঝে হালকা অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা যায়। এফটিআইপি বাউ আম-২ (সিন্দুরী) :এটি নিয়মিত ফলধারণকারী ও বামন প্রকৃতির জাত। ফল আকারে ছোট ও গোলাকৃতি। গাছে থোকায় থোকায় আম ধরে। কাঁচা আম সবুজাভ সিঁদুরে রংয়ের হয়ে থাকে। পাকলে সিঁদুরে হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। রসালো এবং টক-মিষ্টি। শাঁসে কোনো আঁশ নেই। আমের আঁটি পাতলা কাগজের মতো। তাই এ জাতকে বীজবিহীন আম বলে। বাংলাদেশের সবগুলো এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোনে উত্পাদনযোগ্য। উর্বর দোআঁশ মাটি এ ফল চাষের জন্য উত্তম। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সব মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। ৫-৭ মিটার – ৫-৭ মিটার রোপণ দূরত্বে প্রতি হেক্টর ৩০০-৩৫০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণের পর প্রথম বছর থেকে ফল পাওয়া যায়, তবে গাছের মজবুত কাঠামো তৈরির জন্য প্রথম বছর মুকুল আসার পর মুকুল ভেঙ্গে দিতে হবে। এই আমে ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে থাকে।এফটিআইপি বাউ আম-৩ (ডায়াবেটিক) : জুন মাসের শেষের দিকে এই জাতের পাকা ফল পাওয়া যায় । ফুল আসা থেকে শুরু করে পরিপকস্ফ হতে ৫-৭ মাস সময় লাগে । ফলের আকার মাঝারি ও লম্বাটে প্রকৃতির । ফলের গড় ওজন ৫৫ গ্রাম । পাকা ফলের রং হলুদাভ । ফলে রসের পরিমাণ কম কিন্তু আঁশের পরিমাণ বেশি। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা এ ফল খেতে পারে। এটি নিয়মিত ফলধারণকারী ও বামন প্রকৃতির জাত। গাছে প্রতি বছরই প্রধানত ২ বার ফুল ও ফল ধরে। প্রথমবার জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং দ্বিতীয় বার মে-জুন মাসে ফুল আসে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে উত্পন্ন ফুল হতেই মুখ্য উত্পাদন পাওয়া যায় । সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি এ আম চাষের জন্য উত্তম । দীর্ঘ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, তবে খরা মৌসুমে সেচ প্রদান করতে হবে । ৫-৭ মিটর দূরে দূরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৩৫০টি চারা রোপণ করা যায় । রোপণকাল থেকে ফল পেতে প্রায় একবছর সময় লাগে । এফটিআইপি বাউ আম-৪: এটি নিয়মিত ফল ধারণকারী জনপ্রিয় একটি জাত। জুন মাসের দিকে এই জাতের ফল পাকা শুরু হয় আর ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ক হতে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। পাকা ফলের ত্বকের রঙ হালকা সবুজ। শাঁসের রঙ কমলা, সুগন্ধযুক্ত, রসালো এবং বেশ মিষ্টি। শাঁসে কোনো আঁশ নেই। খোসা পাতলা এবং আঁটি খুবই ছোট (ফলের ৯.৭৬%)। এ জাতের আম সারা বছর লাগানো যায়। বোঁটা শক্ত হওয়ায় ঝড়ো হাওয়াতে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ৭-৮ মিটার দূরে দূরে প্রতি হেক্টরে ২০০-২২০টি চারা রোপণ করা যায়।এফটিআইপি বাউ আম-৬ (পলিএ্যাম্বব্রায়নী): গাছ বামন আকৃতির এবং নাবী জাত। পাঁচ বছরের একটি গাছ হতে গড়ে ১০০-৩০০টি ফল পাওয়া যায়। একটি বীজ হতে গড়ে ৫-৮টি চারা পাওয়া যায়, এর মধ্যে একটি চারা জাইগোটিক বাকিগুলো নিউসেলাস। প্রতি বছরই ফল পাওয়া যায়। অর্ধেক ড্রামে বাড়ির ছাদেও চাষ করা যায়। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পরিপক্ক হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি উত্তম। পাঁচ বছরের একটি গাছ হতে ৩০-৪০ কেজি ফলন পাওয়া যায় এবং বছর প্রতি ২০-৩০ কেজি করে বাড়তে থাকে। পূর্ণবয়স্ক গাছে ২৫-৩০ টন/হেক্টরে ফল পাওয়া যায়। এই আমগাছ বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদন এবং পলিএ্যাম্বব্রায়নী হওয়ায় নার্সারিতে চারা উৎপাদন করার জন্য উত্তম। এফটিআইপি বাউ আম-৯ (সৌখিন চৌফলা): জাতটি নিয়মিত ফলধারণকারী। এটি একটি বামন জাতের গাছ। বছরে ৩-৪ বার ফল দেয়। এটি সৌখিন ফল চাষিদের জন্য, যা ছাদে বা টবে চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবেও লাগানো যায়। পলিব্যাগে চারা থাকলে সারা বছর গাছ লাগানো যায়। সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি উত্তম। ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ক হতে প্রায় পাঁচ মাস সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ৭০০-৮০০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণকাল থেকে ফল পেতে ছয় মাস সময় লাগে।এফটিআইপি বাউ আম-১০ (সৌখিন-২): এটি একটি মাঝারি বামন জাত। সারা বছর জাতটি লাগানো যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং মে-জুন মাসে ফল পরিপক্ক হয়। আবার জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আসে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে। রোপণকাল থেকে ফল পেতে এক বছর সময় লাগে। তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায় না। প্রথম বছর ১০-১৫টি এবং দ্বিতীয় বছরে ৩০-৫০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এই জাতের গাছ বাণিজ্যিকভাবে লাগানো ঠিক হবে না। তবে বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে লাগানোর জন্য উত্তম। উল্লেখ্য, বাউ আমের চারা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারসহ দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে পাওয়া যায়।

থাই আম চাষের পদ্ধতি

থাইল্যান্ডে চাষ করা আমের জাত এ দেশে থাই আম নামে পরিচিত। তবে কোনো থাই আমের জন্ম থাইল্যান্ডে নয়। আমের আদি নিবাস এই ভারতীয় উপমহাদেশেই। থাইল্যান্ড আমের কিছু আদি জাত নিয়ে গবেষণা করে উন্নত অনেক জাত উদ্ভাবন করেছে। সেসব জাতের মধ্যে বেশ কিছু জাত তারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করছে। কিছু কিছু জাত অন্য দেশের মাটিতেও চাষ করা হচ্ছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে বেশ কিছু জাতের আম এ দেশে এসেছে। জাতগুলো হলো চুকানন, মিয়াচাও, মোহাচনক, নাম ডক মাই, নাম ডক মাই মান, নাম ডক মাই ৪, উমরন, থাই কাঁচামিঠা প্রভৃতি। এসব জাতের মধ্যে এ দেশে নাম ডক মাই জাতটি পাকা আম হিসেবে এবং থাই কাঁচামিঠা জাতটি কাঁচা আম হিসেবে খাওয়ার জন্য অনেকের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। নাম ডক মাই জাতটি এ দেশে বিভিন্ন নার্সারিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিতি পেলেও জাতটি আসলে একই। বৃক্ষমেলাসহ বিভিন্ন নার্সারিতে এখন নাম ডক মাই জাতের আমের চারা পাওয়া যাচ্ছে।নাম ডক মাই জাতের বৈশিষ্ট্য : এ জাতের আম কাঁচা ও পাকা দুই অবস্খাতেই খাওয়া যায়। গাছ মাঝারি আকৃতির, ঘন পত্রপল্লববিশিষ্ট, গাছের গড়ন খাড়া। নতুন পাতা হালকা সবুজ রঙের, বয়স বাড়ার সাথে সাথে গাঢ় সবুজ হয়ে যায়। ছয় বছরের একটা গাছ ছয় মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কলমের চারা লাগানোর পরের বছর থেকেই গাছে মুকুল আসে ও ফল ধরে। চারার গাছে ফল ধরতে চার থেকে পাঁচ বছর লেগে যায়। এ জাতের ফল লম্বাটে, একটু বাঁকানো, অগ্রভাগ ক্রমেই সরু ও ভোঁতা। কাঁচা আমের রঙ সবুজ, কিন্তু পাকার পর খোসা পুরোপুরি হলুদ হয়ে যায়। একটি আমের গড় ওজন ৩০০ গ্রাম, সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রামের মধ্যে আমের ওজন হয়ে থাকে। এ জাতের আম প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার লম্বা ও ছয় সেন্টিমিটার চওড়া। পাকার পর শাঁসের রঙ হয় হলুদ ও নরম। শাঁস খুবই মিষ্টি ও আঁশবিহীন। তবে খোসার কাছে শাঁস নরম হতে হতে আঁটির কাছের শাঁস অনেক সময় বেশি নরম হয়ে জেলি বা কাদার মতো হয়ে যায়। আমের ওজনের চার ভাগের তিন ভাগই শাঁস, এক ভাগ খোসা ও আঁটি। খোসা বেশ পাতলা। পাকার পর আম থেকে মৃদু মিষ্টি ঘ্রাণ বের হয়। এ জাতের আমের বীজ বহুভ্রূণী বা পলিঅ্যামব্রায়নি প্রকৃতির। সচরাচর একটা আমের আঁটি থেকে একটা চারাই হয়। কিন্তু এ জাতের আমের একটি আঁটি থেকে অনেকগুলো চারা হয়। প্রায় সব জাতের আমেরই আঁটি থেকে গজানো চারায় মাতৃগুণ হুবহু এক না থাকলেও নাম ডক মাই জাতের আঁটি থেকে গজানো চারায় মাতৃগুণ একই থাকে এবং সে চারার গাছে ধরা আমগুলোর বৈশিষ্ট্যও হয় একই। চাষাবাদ : বাড়ির আঙিনায়, ছাদে ড্রামে, পুকুরপাড়ে, বাণিজ্যিক বাগানে নাম ডক মাই জাতের আমগাছ লাগানো যায়। বসতবাড়িতে শখ করে দু-একটা গাছ লাগানো যেতে পারে। তবে কেউ যদি দু-এক হেক্টর জমিতেও এ জাতের বাণিজ্যিক বাগান গড়তে চান তো সে ক্ষেত্রে আম্রপালি আমের চেয়ে লাভ কম হবে না। এ জাতের আমের গাছ লাগানোর জন্য চাই উঁচু জমি, যেখানে বন্যা বা বৃষ্টির পানি আটকে থাকে না। বেলে, বেলে দোআঁশ ও উপকূলের লোনা মাটি ছাড়া যেকোনো মাটিতে নাম ডক মাই জাতের আম চাষ করা যেতে পারে। চাষ করা যায় লাল মাটি ও পাহাড়েও। তবে দো-আঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। এরূপ মাটিতে জৈবসার ব্যবহার করে চাষ করলে গাছের বাড়বাড়তি ও ফলন ভালো হয়। কলমের গাছ লাগালে অতি ঘন পদ্ধতিতে দূরত্ব কম দিয়ে চারা লাগানো যায়। পরে পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত সেসব গাছ থেকে ফল পাওয়ার পর দুই গাছের মাঝখান থেকে একটা গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলা যায়। এতে প্রথম তিন থেকে চার বছরে একই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় দ্বিগুণ লাভ হতে পারে। কাটার পর বাকি গাছগুলো স্খায়ীভাবে রেখে ভালো করে যত্ন নিলে সেসব গাছ পূর্ণ হয়ে ওঠে। সাধারণত এ জাতের চারা বা কলম লাগানোর জন্য চার থেকে ছয় মিটার দূরত্ব দেয়া হয়। এ দূরত্বের হিসাবে হেক্টরপ্রতি ১৮৫ থেকে ২৭৮টি চারা লাগানো যায়। অতি ঘন পদ্ধতিতে তিন মিটার দূরত্ব দিয়ে সব দিকে সারি করে গাছ লাগানো যেতে পারে। তা না হলে প্রথমেই ছয় মিটার দূরে দূরে চারা বা কলম লাগিয়ে মাঝখানের জায়গা ফাঁকা না রেখে গাছ যথেষ্ট বড় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন শাকসবজি, মুগ ও মাষকলাই ডাল, তিল, আদা প্রভৃতি লাগানো যায়। লাগানোর সাত থেকে ১০ দিন আগে গর্ত খুঁড়ে গর্তের মাটিতে গর্তপ্রতি ১০ থেকে ১৫ কেজি গোবর সার মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। কলম বা চারা সুরক্ষার ব্যবস্খাও করতে হবে। বর্ষাকাল চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে পলিব্যাগ বা টবের কলম খুব শীত ছাড়া বছরের যেকোনো সময় লাগানো যায়। সে ক্ষেত্রে সেচের ব্যবস্খা করতে হবে। গর্তের ঠিক মাঝখানে চারাটি সোজা করে লাগিয়ে চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে। চারা বাড়তে শুরু করলে গাছের গোড়ার চার পাশে চারটি ট্যাবলেট সার পুঁতে দিলে সারা বছর আর কোনো সার দেয়ার দরকার পড়ে না। তবে দ্বিতীয় বছর থেকে পরিমাণমতো ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিঙ্ক ও জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে বোরন সারও দিতে হবে। না হলে আমের গুটি ফেটে যেতে পারে। এ জাতের আমগাছের সুন্দর গড়ন, বাড়বাড়তি, রোগ-পোকার আক্রমণ কমানো ও ভালো ফলনের জন্য ছাঁটাই খুব দরকার। বিশেষ করে রোপণের পর প্রথম কয়েক বছর ছাঁটাই কাজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এতে মূল কাণ্ড বা গুঁড়ি মজবুত হওয়া ছাড়াও গাছের মাথা বেশি ঝাঁকড়া হয়, বেশি ফুল-ফল ধরে। গাছে ফল ধরা শুরু হলে নিচে ঝুলে পড়া ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। খুব ঘনভাবে এঁটে থাকা ডালও ছেঁটে পাতলা করে দিতে হবে। গাছকে ছেঁটে তিন থেকে পাঁচ মিটার উচ্চতার মধ্যে রাখতে পারলে স্প্রে করা ও ফল তুলতে সুবিধে হয়। এ জাতের গাছে নিয়মিতভাবে প্রতি বছরই ফল ধরে, তবে সব বছর সমান ধরে না। চারা বা কলম তৈরি : সরাসরি বীজ বা আঁটি থেকে চারা তৈরি করা যায়। পূর্ণভাবে পাকা ফল গাছ থেকে পেড়ে আরো দু-চার দিন ঘরে রেখে নরম করতে হবে। এরপর আম থেকে আঁটি সংগ্রহ করে প্রথম বীজতলার মাটিতে বসাতে হবে। বীজতলায় ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে আঁটিগুলো সারি করে বসানোর পর আঁটির ওপরে আলগা ঝুরা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আঁটি বের করার পরপরই বীজতলার মাটিতে ফেলতে পারলে ভালো, না হলে অল্প কিছু দিনের জন্য ছায়ায় শুকিয়ে চটের বস্তায় ভরে রেখে দেয়া যায়। একটা আঁটি থেকে যে কয়টি চারা গজাবে সে চারাগুলোকে শেকড়সহ সাবধানে কেটে আলাদা করে দ্বিতীয় বীজতলায়, টবে বা বড় পলিব্যাগে গোবর মিশানো মাটিতে বসাতে হবে। এক বছর বয়স হলে সেসব চারা বাগানে লাগানোর উপযুক্ত হবে। জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত চারা তৈরির উপযুক্ত সময়। তবে কলম করতে চাইলে মাঝারি আকারের গাছ হয় এমন কোনো দেশী জাতের আমের আঁটি থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হবে। চারার মাথা কেটে ফাটল তৈরি করে ক্লেফট গ্রাফটিং পদ্ধতিতে নাম ডক মাই গাছের ডগা তেরছা করে কেটে ফাটলে ঢুকিয়ে ফিতে দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। ক’দিনের মধ্যে জোড়া লেগে যায়। জুড়ে দেয়া ডগা থেকে নতুন পাতা ছাড়া শুরু হলেই বুঝতে হবে জোড়া লেগে গেছে। নতুন চারা উৎপাদনের জন্য এ পদ্ধতিই ভালো। কেননা এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত কলমের গাছে রোপণের এক থেকে দুই বছর পর থেকেই ফল ধরতে শুরু করে। বালাইব্যবস্খাপনা : এ জাতের গাছে পাউডারি মিলডিউ বা সাদা গুঁড়া রোগ বেশি হয়। ছত্রাকজনিত এ রোগটি মুকুল ও মুকুলের ডাঁটিতে আক্রমণ করে সাদা পাউডারে ঢেকে ফেলে। এতে ফুল ও ছোট ফল পচে নষ্ট হয়, সব ঝরে পড়ে। মুকুল আসার পর থেকে ফল কলাইদানার মতো হওয়া পর্যন্ত এ রোগটি সাধারণত আক্রমণ করে। কুয়াশা হলে রোগটা বাড়ে। রোগের আক্রমণে দানা বেঁধে ওঠা গুটিও ঝরে যায়। তাই মুকুল আসার পরপরই ফুল ফোটার আগেই যেকোনো অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া কাঁচা অবস্খায় আমের মুখ ছিদ্র করে একধরনের পোকা ভেতরে ঢুকে শাঁস ও কচি আঁটি খেয়ে নষ্ট করে দেয়। পাকার সময় আক্রমণ করে ফলের মাছি। ওরাও ফল ছিদ্র করে শাঁস খেয়ে পাকা আম নষ্ট করে। তাই এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফল রক্ষার জন্য অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
আম চাষ ব্যবস্থাপনা
পুষ্টিমূল্য: পাকা আম ক্যারোটিনে ভরপুর। এছাড়া প্রচুর পরিমানে খনিজ পদার্থ থাকে।
ভেষজগুণ: আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, প্রস্রাবের জ্বালা উপশমে ব্যবহার করা যায়। আম লিভার ও যকৃতের জন্য উপকারি।
ব্যবহার: চাটনি, আচার, জুস ও ক্যান্ডি।
উপযুক্ত জমি মাটি: উর্বর দোআঁশ উঁচু ও মাঝারি জমি আম চাষের জন্য উপযোগি।
জাতপরিচিতি:
বারি আম-১ (মহানন্দা): প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। বাংলাদেশের সবখানেই এ জাতটির চাষ করা যায়। পাকা ফলের রং আকর্ষণীয় হলদে। ফলের ওজন গড়ে প্রায় ২০০ গ্রাম।
বারি আম-২: প্রতি বছর ফল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত। ফলের ওজন গড়ে ২৫০ গ্রাম। ফলের খোসা মধ্যম পুরু ও মসৃন। বাংলাদেশের সবখানেই এ জাতটির চাষ করা যায়।
বারি আম-৩ (আম্রপালি): প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। ফলের শাঁস গাঢ় কমলা রঙের। আঁশহীন, মধ্যম রসালো, শাঁস ফলের শতকরা ৭০ ভাগ। গাছের আকৃতি মাঝারি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১৫৫-১৭০ টি।
বারি আম-৪ (হাইব্রিড আম): এটি একটি উচ্চ ফলনশীল, মিষ্টি স্বাদের নাব জাত। ফজলী আম শেষ হওয়ার পর এবং আশ্বিনা আমের সাথে এ জাতের আম পাকে। এ জাতের আম কাঁচা অবস্থাতেও খেতে মিষ্টি।
চারাতৈরি: ক্লেফট গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা যায়।
চারারোপণ: ষড়ভূজি পদ্ধতিতে আম চারা রোপণ করলে ১৫ ভাগ চারা বেশি রোপণ করা যায়। জৈষ্ঠ্য থেকে আষাঢ় (মধ্য মে থেকে মধ্য জুলাই) এবং ভাদ্র-আশ্বিন মাস (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। প্রতি গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ থেকে ১০ মিটার রাখতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে সারের পরিমাণ গোবর ২২ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ৫৫০ গ্রাম, এমওপি সার ৩০০ গ্রাম, জিপসাম সার ৩০০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর চারার গোড়ার মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে রোপণ করতে হবে।
একটি পূর্ণ বয়স্ক ফলন্ত আম গাছে বছরে ৫০ কেজি জৈব সার, ২ কেজি ইউরিয়া, ১ কেজি টিএসপি, ৫০০ গ্রাম এমওপি, ৫০০ গ্রাম জিপসাম ও ২৫ গ্রাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখিত সার ২ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমবার জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে এবং দ্বিতীয়বার আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ  আগাছাব্যবস্থাপনা: ফলন্ত গাছে মুকুল বের হওয়ার ৩-৪ মাস আগ থেকে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তবে মুকুল ফোটার পর ও ফল মটর দানা হলে একবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া দরকার। গাছের গোড়া ও গাছের ডালপালা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে।
রোগব্যবস্থাপনা
আমেরএ্যানথ্রাকনোজরোগদমন:
ভূমিকা: এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমনের কারণে এ রোগ হয়।
ক্ষতিরনমুনা: গাছের পাতা, কান্ড, মুকুল ও পরে ধুসর বাদামি রঙের দাগ পড়ে। এ রোগে আক্রান- মুকুল ঝরে যায়, আমের গায়ে কালচে দাগ পড়ে এবং আম পচে যায়।
প্রতিকার: আমের মৌসুম শেষে গাছের মরা ডালপালা কেটে পুড়ে ফেলতে হয়। কাটা অংশে বোঁর্দো মিশ্রণ লাগাতে হয়। গাছে মুকুল আসার পর কিন’ ফুল ফোটার আগে ডাইথেন এম-৪৫ বা টিল্ট-২৫০ ইসি প্রয়োগ করা দরকার।
পোকাদমনব্যবস্থাপনা
আমেরভোমরাপোকাদমন:
ভূমিকা: আমের ভোমরা পোকার আক্রমনে ফলনে মারাত্নক ক্ষতি হয়ে থাকে।
ক্ষতিরনমুনা: ভোমরা পোকার কীড়া আমের গায়ে ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খায়। সাধারণত কচি আমে ছিদ্র করে এরা ভিতরে ঢুকে এবং ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে ছিদ্রটি বন্ধ করে দেয় এ জন্য এ জন্য বাইরে থেকে আমটি ভাল মনে হলেও ভিতরে কীড়া পাওয়া যায়।
প্রতিকার: আম গাছের মরা ও অতিরিক্ত পাতা শাখা এবং পরগাছা কেটে ফেলতে হবে। গাছে ফল আসার ১-২ সপ্তাহ পর অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা দরকার।
ফসলতোলা: আমের বোটা যখন হলুদাভ রঙ ধারণ করে তখন আম সংগ্রহ শুরু করতে হয়। গাছ ঝাকি না দিয়ে জালিযুক্ত বাঁশের কৌটার সাহায্যে আম সংগ্রহ করা ভালো।
নিচু জায়গায় আম বাগান তৈরির কলাকৌশল
বাংলাদেশে আম একটি অর্থকরী ফসল। বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমানে এটি একটি আদর্শ ফল। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আম বাগান স্থাবর সম্পত্তির মতো। কারণ বাগান থেকে বছরের পর বছর আয় আসতে থাকে। বাংলাদেশে ৭০ হাজার হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় (বিবিএস, ২০০৯)। লক্ষ করা গেছে, অনেক আম বাগান নিচু জমিতে হওয়ায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির ফলে জলাবদ্ধতায় এবং কখনো কখনো বন্যার পানির জন্য আমগাছ মারা যায়। গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকালে। তাই নিচু জায়গায় বর্গাকারপদ্ধতিতে আম বাগান তৈরিতে নিম্নলিখিত কলাকৌশল গ্রহণ করা দরকার। ক. ইনসিটু গ্রাফটিংযখন স্বস্থানে আঁটি থেকে চারা গজানোর পর সেই চারায় কলম বাধা হয়। এ ৰেত্রে তৈরি কলমের গাছ প্রতিস্থাপন বা পুনরায় রোপণের দরকার হয় না। অর্থাৎ জোড়া লাগানোর পরে কলমের চারাটি স্বস্থানেই স্থানীয়ভাবে বেড়ে উঠে এবং ফুল-ফল দিতে থাকে।যেসব জায়গা নিচু অর্থাৎ বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে থাকে অথবা কখনো কখনো বন্যার পানি উঠে, সেসব জায়গায় প্রথমেই জমির নকশা অনুযায়ী কেবলমাত্র আঁটি লাগানোর পয়েন্ট এর চতুর্দিকে (১.৫-২.০ হাত পর্যন্ত) মাটি দ্বারা ঢিবি তৈরি এবং ঢিবি পরিমাণ মতো অর্থাৎ দাঁড়ানো পানি থেকে উঁচু করে গাছের জন্য স্থায়ী জায়গা তৈরি করতে হবে। তারপর প্রথম বছর আঁটি স্থায়ী জায়গাগুলোতে লাগাতে হবে। চারা গজালে পছন্দ মতো বড় (৪-৫ ফুট উঁচু) করে সেই চারায় আমের ভালো জাতের সায়ন নিয়ে ভিনিয়ার গ্রাফটিং করতে হবে। এ পদ্ধতিতে বাগান তৈরিতে সময় বেশি লাগে।
প্রযুক্তির সুবিধাজনক দিক ১. এতে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। ২. তৈরি কলমের গাছ স্থানান্তর করে অন্যত্র লাগানোর দরকার হয় না। বলে এর সফলতা অনেক বেশি। ৩. অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। বেশি টাকা দিয়ে কলমের চারা না কিনে অল্প টাকায় আঁটিকিনে তার থেকে রুট স্টক তৈরি করে এবং পরে সেখানে ভিনিয়ার গ্রাফটিং করে বাগান করা সম্ভব। ৪. কলমের জোড় উঁচুতে (পছন্দ মতো ৪-৫ ফুট উপরে) থাকায় জলাবদ্ধতায় রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় না। ৫. উঁচুতে কলম করা হয় বিধায় গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচার প্রয়োজন হয় না।
প্রযুক্তির জরুরি দিকগুলো ১. আঁটি সংগ্রহ করতে হয়। ২. আঁটি থেকে কাঙ্ক্ষিত রুটস্টক তৈরি করতে হয়। ৩. কাঙ্ক্ষিত সায়ন সংগ্রহ করতে হয়। ৪. কলম বাঁধায় দক্ষ ও এরকম লোক খুঁজে বের করতে হয়।
খ. মডিফাইড ইনসিটু গ্রাফটিং
এক্ষেত্রে স্বস্থানে প্রথমে আঁটি ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে অন্য জায়গায় অর্থাৎ কোনো ফার্ম বা নার্সারি থেকে গুটি গাছ (সাধারণত ৪-৫ ফুট উঁচু যাতে কমপক্ষে ২/৩টি শাখা-প্রশাখা থাকে) এনে লাগিয়ে পরে সেই চারায় পছন্দের সায়ন দ্বারা ভিনিয়ার কলম বাঁধা এবং অন্যান্য কাজকর্ম সব ইনসিটু গ্রাফটিং এর মতোই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক জায়গায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আম গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করা হয়েছে। আজকাল বাজারে সঠিক জাতের চারা পাওয়া খুবই কঠিন। এক জাতের চারা নিয়ে লাগানোর পরে অন্য জাতের গাছ হয়ে যায়। এভাবে জনগণঅহরহ প্রতারিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় মডিফাইড ইনসিটু গ্রাফটিং প্রযুক্তিতে আম বাগান তৈরি খুবই ফলপ্রসূ হবে।
প্রযুক্তির সুবিধাজনক দিক ১. এতে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে না বললেই চলে। ২. তৈরি কলমের গাছ স্থানান্তর করে অন্যত্র লাগানোর দরকার হয় না। ৩. বেশি টাকা দিয়ে কলমের চারা না কিনে অল্প টাকায় পছন্দের সায়ন ও আঁটির গাছ (রুটস্টক) কিনে পরে সেখানে ভিনিয়ার গ্রাফটিং করে বাগান করা সম্ভব। ৪. কলমের জোড় উঁচুতে (পছন্দ মতো ৪-৫ ফুট উপরে) থাকায় জলাবদ্ধতায় রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রানৱ হয় না। ৫. উঁচুতে কলম করা হয় বিধায় গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচার প্রয়োজন হয় না। ৬. বড় গুটি গাছে কলম করা হয় বিধায় অল্প সময়ে কম খরচে বাগান তৈরি হয় এবং গাছগুলো দেখতে একই রকম হয়।
প্রযুক্তিরজরুরি দিকগুলো ১. পছন্দের গুটি গাছ অর্থাৎ রুটস্টক সংগ্রহ করতে হয়। ২. কাঙ্ক্ষিত সায়ন সংগ্রহ করতে হয়। ৩. কলম বাঁধায় দক্ষ লোকের প্রয়োজন হয়।
গ. মাটি ঢিবিতে কলমের চারা রোপণ (মাটিকচারো)
যখন বাজার, নার্সারি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পছন্দের কলমের চারা ক্রয় করে এনে স্বস্থানে বা নির্ধারিত জায়গায় নকশা অনুযায়ী সরাসরি লাগানো হয়। এক্ষেত্রেও একই রকম মাটির ঢিবি তৈরি করা হয়। তবে চারাটি বড় (৪-৫ ফুট উঁচু) এবং কলমের জোড়ের স্থানটি বেশ উপরে হলে ভালো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর নিচু জায়গায়গুলোতে এ প্রযুক্তিতে বহু আম বাগান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে আম ধানের জমিতে অনেক আম বাগান গড়ে উঠেছে। দেখা গেছে, অনেক জায়গায় মাটির ঢিবি তৈরির নিয়ম মানা হয়নি। অর্থাৎ গাছের গোড়ায় অল্প মাটি দেয়া হয়েছে। ফলে গাছের রুট সিস্টেম ততটা উন্নত না হওয়ায় গাছের বৃদ্ধিও ভালো হয়নি। গাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য অর্থাৎ একটি ভালো বাগান তৈরির জন্য নিয়ম মেনে মাটির ঢিবি তৈরি করা উচিত। ২০০২ সনে জেলা কারাগার চাঁপাইনবাবগঞ্জ কর্তৃপক্ষ অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে কারাগারের অভ্যন্তরে নিচু জায়গায় বাগান তৈরির পরামর্শ চাইলে মডিফাইড ইনসিটু গ্রাফটিং অথবা মাটিকচারো যেকোনো একটি পদ্ধতিতে বাগান তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়। এতে বেশ সুফল পাওয়া গেছে।
প্রযুক্তি সুবিধাজনক দিক ১. কম সময়ে বাগান তৈরি করা যায়। ২. কাঙ্ক্ষিত সায়ন এবং রম্নট স্টক সংগ্রহ করতে হয় না। ৩. কলম বাঁধায় দৰ লোকের প্রয়োজন হয় না।
প্রযুক্তির অসুবিধা ১. প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। ২. খরচ বেশি পড়ে। ৩. চারা ছোট হলে করমের জোড় নিচে থাকে। ফলে জলাবদ্ধতায় রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রানৱ হয়।
এতোক্ষণ নিচু জায়গায় আম বাগান তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো। আম বাগান তৈরি সম্পর্কে আরো জানার থাকলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এখন আমগাছের নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ‘অন-ইয়ার’ ও ‘অফ-ইয়ার’ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আমগাছের অন-ইয়ার অফ-ইয়ারসমস্যা ও প্রতিকার আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’।
সম্ভাব্য কারণ
ক.জাতের বৈশিষ্ট্য- আমের যে জাতগুলো কেবল শাখার অগ্রভাগে ফুল ধারণ করে জাতগুলোর পর্যায় ক্রমিক অর্থাৎ এক বছর অন্তর ফল উৎপাদন হয়। এই সমস্যা সব জাতের আমের মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু কিছু ভালো আমের জাতের মধ্যে যেমন ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ইত্যাদিতে সমস্যাটি ভালোভাবে দেখা যায়। আর কিছু কিছু আমের জাত আছে যাদের ‘অফ ইয়ারে’ ফুল ও ফল হয়, তবে অপেৰাকৃত কম যেমন- ফজলি। আবার যে জাতগুলো শাখার অগ্রভাবে প্রথম বছর ও পরের বছর শাখার কৰে পুষ্পমুকুল উৎপন্ন করতে পারে সে জাতগুলো নিয়মিতভাবে কম/বেশি ফল উৎপাদন করতে পারে, যেমন- বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি।
খ.গাছের বয়স- যেসব জাতের মধ্যে সমস্যাটি দেখা যায় যেমন- ল্যাংড়া। কিন্তু যখন ওই ল্যাংড়া গাছের বয়স কম তখন সমস্যাটি থাকে না অর্থাৎ প্রথম দিকে প্রতি বারেই ফুল হয় কিন্তু সাধারণত ১৫-২০ বছর বয়সের পর তারা এই গুণটি হারিয়ে ফেলে।
গ.গাছের ডালের বয়স : মুকুল ধরার জন্য ডালের বয়স কমপৰে ৪-৫ মাস হওয়া দরকার।তবে যেসব ডালের বয়স ৮-১০ মাসের হয় সেসব ডালে বেশি মুকুল ধরে।
ঘ.পাতাওয়ালা মুকুল : আমের মুকুল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালের ডগায় আসে এবং ওপর দিকে আস্তে আস্তে সুচালো হয়ে যায়, যা দেখতে পিরামিডের মতো। উপ-শাখাগুলো ফুলে ভরা থাকে, তাতে পাতা থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু জাতের গাছ আছে,যাদের মুকুলে শুধু ফুলই থাকে না, সেই সঙ্গে পাতাও থাকে। বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদিতে বেশি পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। ফজলি গাছেও কিছুসংখ্যক পাতাওয়ালা মুকুল হয়, তাই এই জাতগুলো প্রায় প্রতি বছর মোটামুটি ফল আসে। অন্যান্য জাতেও মাঝে মধ্যে কিছু কিছু পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। পাতাওয়ালা প্যানিকলকে মিঙড প্যানিকল বলে।
ঙ. ডালে শর্করা ও নাইট্রোজেনের অনুপাত : আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়,শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে।
চ. উদ্ভিদ হরমোনের বৈষম্য (Phyohomone):আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অঙিন’,‘জিম্বেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।
প্রতিকার: ক.বাণিজ্যিক জাত : যেমন- গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা ইত্যাদির অলটারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট আছে এবং বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি রেগুলার বেয়ারর জাত। তাই বাগানে শুধু ‘অলটারনেট বেয়ারার’ জাতের গাছ না লাগিয়ে, অন্তত কিছুসংখ্যক ‘রেগুলার বেয়ারার’ জাতও লাগানো উচিত। এতে প্রতি বছরই বাগান থেকে কিছু না কিছু ফলন পাওয়া যাবে।
খ.বাগানের গাছগুলোকে অধিক উৎপাদনক্ষম করার জন্য অবশ্যই আম বাগান বছরে ৩ বার বর্ষার আগে, বর্ষার পরে ও শীতকালে লাঙল, পাওয়ার টিলার অথবা কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে গভীর চাষাবাদ করতে হবে। ফলে বাগানের আগাছা মারা যাবে এবং মাটির সাথে মিশে জৈবসারে পরিণত হবে। মাটির ভেতরকার পোকামাকড়ও মরে জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে যোগ হবে। তাছাড়া মাটির আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের গ্রহণের উপযোগী হবে। গ. গাছের বৃদ্ধি ও বেশি ফলনের জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে ও সঠিক পদ্ধতিতে সার ও সেচ দেয়া আবশ্যক। বিভিন্ন বয়সের আম গাছে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি ছক-১ এ দেখানো হলো।
বছরে দু’বার সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার শেষে আর একবার। একবারেও সব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে বেশিলাভবান হওয়া যায়। মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি/রসের অভাব হলে সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডার রম্নটগুলো গাছের গোড়া থেকে দূরে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে গাছের বয়স অনুযায়ী এ দূরত্ব (মাঝামাঝি থেকে বড় গাছ) ১.৫-৩.০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ছোট চারা গাছের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ সেমি. হতে পারে। কাজেই যেখানে ফিডার রুটটগুলো থাকে সেখানেই সার দিতে হবে। দুভাবে সার দেয়া যায়। নালা পদ্ধতিতে গাছের গোড়া থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৩.০ মিটার দূরে ৩০ সেমি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সেমি. গভীর করে চক্রাকারে নালা তৈরি করে তাতে সার দিতে হবে। পরে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। অথবা দুপুর বেলা যে জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে সেই জায়গায় সার ছিটিয়ে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। কোদাল দ্বারা কুপানোর সময় সোজা না কুপিয়ে পার্শ্বভাবে কোপাতে হবে যাতে করে গাছের শিকড় না কাটে।
ঘ. বাগানে নিয়মিতভাবে সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনই যেন রসের টান না পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফলন্ত আম গাছে দুইবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রথমবার প্যানিকল যখন ৬-৮ ইঞ্চি (১৫-২০ সেমি.) লম্বা হয় এবং দ্বিতীয়বার যখন ফল মটর দানার মতো হয়। এতে ফল এর আকার, মান ও ফলন ভালো হয়। প্রচণ্ড খরা দেখা দিলে এবং ফল ঝরার পরিমাণ বেশি হলে তখনও সেচ দিতে হবে। গাছে ফুল আসার কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সময় বাড ডিফারেনশিয়েশন হয়। ফলে গাছ অল্প পানির অভাব পছন্দ করে। কিন্তু যদি সেচ দেয়া হয় অথবা বৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে গাছের ফুলের পরিবর্তে নতুন পাতা গজাবে বেশি করে কারণ বিটপে (Shoot) বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে নতুন পাতা গজাবে।
ঙ. সাধারণত আম গাছের ডাল ছাঁটাই প্রয়োজন হয় না। কারণ আমের মুকুল আসে ৪-৫ মাস বয়সের বিটপ এর মাথায়। তবে ছোট এবং বয়স্ক গাছের মৃত, শুকনা রোগাক্রান্ত শাখা ও কেবলমাত্র বয়স্ক গাছের পরজীবী উদ্ভিদ দ্বারা আক্রান্ত শাখা আম পাড়ার পর পরই ছাঁটাই করা দরকার। তাছাড়া গাছের ভেতরের অনেক সুস্থ ডাল থাকে যেগুলোতে ফুল ধরে না সেগুলো ছাঁটাই করা দরকার। ছাঁটাই এমনভাবে করতে হবে যেন গাছের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। কাটা ডালের মাথায় বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে করে রোগের আক্রমণ হতে না পারে। পেস্ট তৈরি জন্য তুঁত ২৫০ গ্রাম ও চুন ২৫০ গ্রাম নিয়ে এমনভাবে এক লিটার পানিতে মিশাতে হবে যাতে করে পেস্ট তৈরি হয়। এ পেস্ট তৈরির ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশের মাধ্যমে ডালের কাটা অংশে প্রয়োগ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে,ডাল ছাঁটাই এর আগে গাছ নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে গুণসম্পন্ন ফল দেয়। এতে প্রতি বছর ফল না আসার সমস্যা কিছুটা কমানো যায়।
চ. যে বছর গাছে প্রচুর ফুল আসে, সে বছর যদি গাছের অধের্ক ফুল ভেঙে দেয়া হয়,তাহলে গাছের সেই অংশ নতুন শাখা উৎপন্ন করবে। আগামী বছর সেই অংশে ফুল ও ফল উৎপন্ন করবে। এভাবে আম গাছ থেকে নিয়মিত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
গাছের বয়স অনুযায়ী সারের পরিমাণ
সারের নামগাছেরবয়স(বছর)
২-৫৬-৯১০-২০২০ এর ঊর্ধ্বে
জৈবসার (কেজি)২০-৩০৩০-৪০৪০-৫০৪০-৫০
ইউরিয়া (গ্রাম)২৫০৫০০১০০০২০০০
টিএসপি (গ্রাম)২০০২৫০৫০০১০০০
এমপি (গ্রাম)১২৫২৫০৫০০১০০০
জিপসাম (গ্রাম)১০০২৫০৫০০৫০০
জিঙ্কসালফেট (গ্রাম)২৫২৫২৫২৫

আম সংক্রান্ত পোস্টসমূহ

পচন রোধে আম শোধন

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...