26 September, 2018

৬৯. বাংলাদেশের ষড়ঋতু,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা

(সংকেত: ভূমিকা; ষড়ঋতুর পরিচয়; তাপদগ্ধ গ্রীষ্মকাল; সজল বর্ষা; শুভ্র শরৎ; ফসলের হেমন্ত; উদাসী শীত; ঋতুরাজ বসন্ত; বাঙালি জীবনে ষড়ঋতুর প্রভাব; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা এই রূপসী বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বৈচিত্র্যময় ঋতু। গোটা পৃথিবীর আবহাওয়ায় চারটি ঋতু পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলার প্রকৃতিতে ছয়টি ঋতুর স্বতন্ত্র উপস্থিতি এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে পালাক্রমে ছয়টি ঋতু ঘুরে ফিরে আসে। প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে অপরূপ। ঋতুতে ঋতুতে এদেশে চলে সাজ বদল। এই সাজ বদলের পালায় বাংলাদেশের প্রকৃতি চির সজীব, চির বৈচিত্র্যময়। এমন অপরূপ বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি খুব কম দেশেই আছে। তাইতো কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন-

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’
ষড়ঋতুর পরিচয়ঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত- এই ছয়টি ঋতুৃ নিয়ে বাংলাদেশ। প্রতি দুই মাস পর পর ঋতু বদল ঘটে। অর্থাৎ দুই মাসে একটি ঋতু। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস মিলে গ্রীষ্মকাল, একইভাবে আষাঢ়-শ্রাবণ মিলে বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন-চৈত্র এই দুই মাসব্যাপী বসন্তকাল। এরা চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে। এক ঋতু বিদায় নেয়, আসে অন্য ঋতু। নতুন ঋতুর ছোঁয়ায় প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে, উপহার দেয় নতুন নতুন ফুল-ফল ও ফসল।

তাপদগ্ধ গ্রীষ্মকালঃ ঋতুচক্রের শুরুতেই ‘ধূলায় ধূসর রুক্ষ, পিঙ্গল জটাজাল’ নিয়ে আর্বিভাব ঘটে গ্রীষ্মের। বাংলা মাসের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এবং ইংরেজি সাধারণত মে থেকে জুন, এর মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্রীষ্মকালের পরিধি। প্রকৃতিতে গ্রীষ্ম আসে তার দূরন্ত ও রুদ্র রূপ নিয়ে। গ্রীষ্মের প্রচ- দাবদাহে খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যায়। জলশূন্য মাটিতে ফাটল ধরে। গাছের পাতা রুক্ষ হয়ে যায়। অসহ্য গরমে একটু শীতল বাতাস ও ছায়ার জন্য মানুষসহ সমস্ত পশু-পাখি কাতর হয়ে পড়ে। কবির ভাষায়-

‘ঘাম ঝরে দর দর গ্রীষ্মের দুপুরে
মাঠ-ঘাট চৌচির, জল নেই পুকুরে।’
গ্রীষ্ম শুধু জনজীবনে রুক্ষতাই ছড়িয়ে দেয় না, একই সঙ্গে অকৃপণ হাতে দান করে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ প্রভৃতি রসালো ফল। আর এ কারণে গ্রীষ্মকালের অন্য নাম হলো মধুমাস। আম, কাঁঠালের সুগন্ধে ম ম করে ঘর-বাড়ি।

সজল বর্ষাঃ গ্রীষ্মের বিদায়ের সাথে সাথে আসে বর্ষা। উত্তপ্ত প্রকৃতিকে স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে তুলতে দূর আকাশে জমে ওঠে মেঘের স্তুপ। আষাঢ়-শ্রাবণ (জুন থেকে আগস্ট) মাস পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। যদিও দুই মাস মিলে এক ঋতু, কিন্তু বর্ষাকাল প্রায় তিনমাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বর্ষার আগমনে দগ্ধ মাঠ-ঘাটে প্রাণ ফিরে আসে। নদী-নালা কানায় কানায় ভরে ওঠে। অবিরাম বর্ষণে গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে সজীবতা ফিরে আসে। জনজীবনে ফিরে আসে প্রগাঢ় শান্তি। যেন প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দেয় নিবিড় মায়ার কাজল। কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়,

‘আমি বর্ষা, আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি
মায়ার কাজল চোখে, মমতায় বর্মপুট ভরি।’
অন্যদিকে বর্ষা আসে কৃষকের জীবনে ফসলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। বর্ষার শুরুতেই কৃষকেরা জমিতে ধান ও পাটের চারা রোপণ করে। বাতাসে সুবাস ছড়ায় কেতকী, কেয়া আর কদম। গাছে গাছে ধরে পেয়ারা, আনারস প্রভৃতি ফল। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়-

‘গুরু গুরু ডাকে দেয়া, ফুটিছে কদম কেয়া
ময়ূর পেখম তুলে সুখে তান ধরছে
বর্ষার ঝরঝর সারাদিন ঝরছে।’
শুভ্র শরৎঃ

‘আজি ধানের ক্ষেত্রে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি খেলা
নীল -আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা।’
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাংলার ঋতুচক্রে এভাবেই আসে শরৎ। কালো মেঘ আর বর্ষার দিনকে বিদায় জানিয়ে শুভ্র মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলায় মেতে শরৎ আসে অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে। ভাদ্র -আশ্বিন অর্থাৎ ইংরেজি আগস্ট-অক্টোবর মিলে শরৎকাল। শিউলির সুগন্ধে পরিপূর্ণ শরৎ এর বাতাস। নীল আকাশে তুলোর মতো ভেসে বেড়ায় শুভ্র মেঘ আর নদীর দু’ তীর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সাদা কাশফুলের সমারোহে। শিউলি, কামিনী, জুঁই প্রভৃতি ফুলের সৌরভে মেতে ওঠে শরৎ এর প্রকৃতি। মৃদুমন্দ বাতাসে ঢেউ খেলে সবুজ ফসলের মাঠে। শরৎ এর ভোরে শিশিরের হালকা ছোঁয়া আর মিষ্টি রোদের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে কবিগুরু বলে ওঠেন- ‘আজিকে তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে’।

ফসলের হেমন্তঃ শরতের রূপময়তাকে বিদায় জানিয়ে বৈরাগ্যের ঢঙে আসে হেমন্ত। কার্তিক-অগ্রহায়ণ অর্থাৎ ইংরেজি অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হেমন্তকাল স্থায়ী হয়। হেমন্তে বৈরাগ্যের রঙে সাজে প্রকৃতি অর্থাৎ এ ঋতুতে হলুদ রঙের প্রাচুর্য থাকে প্রকৃতিতে। সর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় মাঠের পর মাঠ। অন্যদিকে থাকে, সোনালি রঙের পাকা ধান। হেমন্ত মূলত ফসলের ঋতু। এ সময় মাঠে-ঘাটে থাকে শস্যের সমারোহ। তাই রবীন্দ্রনাথ যথার্থই গেয়েছেন-

‘ওমা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে
কী দেখেছি মধুর হাসি।’
এ সময় কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফসল কাটার কাজে। পাকা ধানের মনমাতানো গন্ধে বাতাস ভরে যায়। সোনালি ধানে ভরে ওঠে কৃষকের গোলা, কৃষক বধূর মুখে ফোটে আনন্দের হাসি। নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠে গ্রাম-বাংলার জনজীবন। ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় নতুন ধানের পিঠা-পুলি ও পায়েস।

উদাসী শীতঃ হেমন্ত বিদায় নিতে না নিতেই ঘন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে উত্তুরে হাওয়ায় ভেসে আসে শীত। বাংলা মাসের পৌষ ও মাঘ এবং ইংরেজি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রায় শেষ অংশ পর্যন্ত শীত স্থায়ী হয়। শীত আসে হিম শীতল বাতাস আর কুয়াশা নিয়ে। বছরের সর্বাপেক্ষা শীতল ঋতু এই শীতকাল। কনকনে শীতে মানুষ ও প্রকৃতি জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। তীব্র শীতে গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। শীতের প্রকোপ বেশি হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় শিশু, বৃদ্ধ ও গরীব-দুঃখী মানুষের। শীতের এতসব শূন্যতা-রিক্ততার মাঝেও সকালের রোদের স্পর্শ আর খেজুরের রস ও পিঠা-পুলির মিষ্টি স্বাদে মন ভরে ওঠে। নানা রকম শাক-সবজি, ফল ও ফুলের সমারোহ শীতকে জনপ্রিয় করে তোলে। একদিকে শীতের কষ্ট অন্যদিকে ফুল-ফল-ফসল ও পিঠা-পুলির সমারোহে বাংলাদেশের শীতের আনন্দ রোমাঞ্চকর। কবি গুরু তাই শীতকে নিয়েও কবিতা লিখতে ভোলেননি-

‘শীতের হাওয়া লাগল আজি
আমলকির ঐ ডালে ডালে।’
ঋতুরাজ বসন্তঃ সবশেষে রাজার বেশে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের রিক্ততাকে মুছে ফেলে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে প্রকৃতি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল এর মাঝামাঝি পর্যন্ত বসন্তকাল। এ সময় গাছে গাছে নতুন পাতার প্রাণস্পন্দন পরিলক্ষিত হয়। দক্ষিণা মৃদু বাতাসে প্রকৃতি ও মনে দোলা লাগে। কোকিলের কুহুতানে প্রকৃতি যেন জেগে ওঠে। শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অর্জুন প্রভৃতি রঙ-বেরঙের ফুলে বসন্ত সাজে অপার সৌন্দর্যে। বসন্ত যেন ফুলের ঋতু। মালতী-মল্লিকা, পারুল, পিয়াল, চাঁপা, করবী ফুলের যেন কোনো শেষ নেই। ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করে নানা রঙের প্রজাপতি আর মৌমাছি। আমের মুকুলের মৃদু সৌরভে বাতাস ম ম করে। বসন্ত ঋতুতে অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বাসে জেগে ওঠে বাংলার প্রকৃতি। চিরযৌবনা বসন্তের মোহময় রূপ বাংলা ঋতুবৈচিত্র্যে পূর্ণাঙ্গতা দান করে। বসন্তের মোহময়তায় মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন-

‘আহা! আজি এ বসন্তে-
কতফুল ফোটে, কত বাঁশি বাজে, কত পাখি গায়’।
বাঙালি জীবনে ষড়ঋতুর প্রভাবঃ বাংলার এই ঋতুবৈচিত্র্য কেবল প্রকৃতির বুকে নয়,সমান তালে মানব মনে এবং জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মের দাবদাহে কিংবা শীতের প্রকোপে যেমন মানব জীবনের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়, ঠিক তেমনি অন্যান্য ঋতুগুলিতে জীবনে গতি সঞ্চারিত হয়। গ্রীষ্মের রুক্ষ্মতার পর বর্ষায় দ্বিগুণ উৎসাহে কৃষক মাঠে নেমে পড়ে, ফসল বোনে। হেমন্তে আবার সেই ফসল ঘরে তোলার ধুম লেগে যায়। ঋতুর প্রভাব বাঙালির সংস্কৃতি,কাব্য-সাহিত্য ও সংগীতে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। একেক ঋতু একেক রকম সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে কবিরা রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা ও গান। চিত্রশিল্পীরা তাদের চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য। ঋতুভেদে গ্রাম বাংলার জীবনে উদযাপিত হয় নানারকম পূজা-পার্বণ, মেলা ও উৎসব। অর্থাৎ বাংলাদেশের ষড়ঋতুর পালাবদলের সাথে এ দেশের জনজীবন নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।

উপসংহারঃ সত্যিই অনবদ্য সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র। ষড়ঋতুর স্বতন্ত্র সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু আশঙ্কার কথা হলো-ধীরে ধীরে শহরজীবন ঋত্যুবেচিত্র্যের প্রভাব থেকে দূরে সরে, কেবলই যান্ত্রিক সভ্যতা অভিমুখে এগিয়ে চলছে। যা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অচিরেই শহরবাসী-মানুষের জীবন থেকে যান্ত্রিকতাকে দূরে সরিয়ে, বাংলার প্রকৃতি ও ষড়ঋতু সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।

৬৮. সড়ক দুর্ঘটনা : কারণ ও প্রতিকার,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা; সড়ক দুর্ঘটনার ধরন; সড়ক দুর্ঘটনার কারণ; সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি; সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়; সড়ক নিরাপত্তা ও সরকার; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ বর্তমান সমাজে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা: বাংলাদেশের তিন ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান। (ক) সড়ক পথ, (খ) নৌপথ এবং (গ) আকাশপথ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে। এছাড়া রয়েছে রেলপথ। রেলপথে ব্রডগেজ, মিটারগেজ এবং ডাবলগেজ এ তিন ধরণের পথই আছে। এছাড়া নৌপথ ও আকাশপথ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবিশ্বে যোগাযোাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সড়কপথের যোগাযোগ সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাই এই পথের গুরুত্ব অনেক বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনার ধরনঃ প্রতিদিন সংবাদপত্রে যে খবরটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণঃ নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো-

অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং: সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।

অপ্রশস্ত রাস্তাঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঢাকা থেকে যাতায়াতের সবচেয়ে ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ওভার লোডিংঃ ওভার লোড মানে ধারণক্ষমতার বেশি মাল বহন করা। ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।

আইন অমান্যঃ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ আইন অমান্য করা। এক জরিপে দেখা যায় ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের আমলই নেয় না। পাশাপাশি ৮৫ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়। তাছাড়া এক সমীক্ষায় বলা হয় ঢাকা শহরের ৮৪ শতাংশ রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।

জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থাঃ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারে ২৪৭টির বেশি গাড়ি চলে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাধীন মোট ২২৩.৩০ কিলোমিটার রাস্তায় আনুমানিক গাড়ি চলে ৫ লাখ ৫০ হাজার। অন্যান্য বড় শহরেও অনেকটা একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ফলে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাঃ বাংলাদেশে সড়ক পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। এসব পথে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা এদেশে আজও গড়ে ওঠেনি।

প্রযুক্তির ব্যবহারঃ আধুনিক যুগ সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে অনেক সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়ির চালকরা গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলে, গান শোনে। ফলে অসতর্ক হয়ে পড়েন। এতে করে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালক, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার, অবৈধ স্থাপনা, বিকল্প রাস্তার ব্যবহার না করে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, যানবাহনে ব্যবহৃত তেলে ভেজাল এবং রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা প্রভৃতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতিঃ সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অসীম। এর ফলে কেবল মানুষের মৃত্যু নয়, অপূরণীয় আরো হাজারো ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় জনসাধারণের জীবনে। নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো-

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা World Health Organisation (WHO)-এর হিসাব মতে ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ কোটিরও বেশি মানুষ আহত হয় এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। যা খুবই মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত। যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে সারা দেশে ৭০৪৮ জন সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় যার মধ্যে ৩,৭৬৪ জন নিহত ও ৩,২৮৪ জন আহত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনায় হতাহতের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেক্টর (এআরসি)-এর গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২০০০ এবং আহত হয় ৩৫,০০০ জন।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুদের ক্ষয়ক্ষতিঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)- এর মতে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু মারা যায়। আর আহত হয় হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৬ শতাংশ শিশু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ।

সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয় তার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির দুই ভাগ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর হিসাব মতে আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে এর পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

সড়ক দুর্ঘটনায় পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষতিঃ সড়ক দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মতো বিধে থাকে সারা জীবন। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়ঃ সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য করণীয়-

বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত।
ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে।
লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে।
ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে।
পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা।
অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা।
মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি অর্থাৎ সিআরপিসির ৩০৪ বি ধারায় শাস্তির মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১০ বছর করা।
মোটরযান অধ্যাদেশের ১৪৩, ১৪৬ ও ১৪৯ ধারায় যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে তা বাড়ানো।
সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরো বেশি সক্রিয় করা।
প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।
প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সড়ক নিরাপত্তা ও সরকারঃ সরকার সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান করে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) গঠন করা হয়। এর আগে সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গঠিত হয়। এছাড়া গঠিত হয়েছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) এসব সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে চলেছে। এছাড়া এর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সড়ক বা মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১১ জুন দেশের হাইওয়ে সড়কগুলিতে হাইওয়ে পুলিশ নিযুক্ত করা রয়েছে। সরকার এবং এসব সংস্থা যদি সর্বদা সতর্ক থাকে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে।

উপসংহারঃ প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ কারোই কাম্য নয়। আমরা সবাই চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। সড়ক দুর্ঘটনা যতো বড় সমস্যা হোক না কেনো সকলের সামগ্রিক চেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যাতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। তাই আজ আমাদের স্লোগান হোক ‘নিরাপদ সড়ক চাই।’

15 September, 2018

যে কারণে মুসলমাদের কাফনের কাপড়ের রং সাদা হয়

জন্মিলে মরিতে হবে এটাই বিধাতার চিরন্তন নিয়ম। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, ‘কুল্লুন নাফসিন জায়্যিকাতুল মাউন’। অর্থ্যাৎ প্রতিটি প্রাণীই একদিন মৃত্যুর শরাব পান করবে। মুত্যুর পর মুসলমানেরা ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ি গোসলের পর মৃতদেহকে কাফনের কাপড় পরিধান করানো হয়। এরপর জানাজা করে দাফন করা হয়।
কিন্তু আপনি জানেন কি, অন্য রঙের কোন কাপড়কে কাফনের কাপড় হিসেবে কেন ব্যবহার করা হয় না? এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করো। তোমাদের জীবিতরা যেনো সাদা কাপড় পরিধান করে, আর মৃতদের সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। (নাসায়ি, হাদিস-৫৩২৩)
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কেননা, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও। (মুজামুল কাবীর, হাদিস-৯৬৪)

11 September, 2018

পাবনা জেলার ইতিহাস

পাবনা জেলার ইতিহাস
সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : ১৭২৭-১৭৩৯ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা তৎকালীন সুবেদার।
নবাব সুজা উদ্দিনের শাসনাধীনে ছিল এবং রাজশাহীর জমিদারির রাজস্ব শাসন।
পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন রাম জীবন। ১৭৩০ সালের পর রাম জীবনের
উত্তরাধিকারী মহারাজ রামকান্তের উপর রাজস্ব শাসন ব্যবস্থা অর্পিত হয়।
আলীবর্দী খাঁ ১৭৪২-১৭৫৬ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন। আলীবর্দী খার
শাসনামলে পাবনা জেলা মারাঠা আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল । ১৭৫৬
সালে আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র উত্তরাধিকারী নবাব সিরাজ-উদ
দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং এক বছরকাল পাবনা জেলাসহ।
সমগ্র বাংলার শাসন ক্ষমতা বজায় রাখেন। ১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক পলাশীর
যুদ্ধে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে
বাংলায় তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে বক্সারের যুদ্ধে বিজয়ের
মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার দেওয়ানী লাভ করে। ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত
বাংলার ফকির সম্প্রদায়ের দলপতি শাহ মস্তান বোরহান উত্তর বাংলার বিস্তীর্ণ
অঞ্চলে ব্রিটিশ বিরোধী কাজে তৎপর ছিলেন। এ সময় সিরাজগঞ্জের নিকটে
ফকিররা খুবই তৎপর ছিল। মজনু শাহ ১৭৮৭ সালে তার মৃত্যুকাল পর্যন্ত ।
পাবনা ও পাশ্ববর্তী জেলাসমূহে (রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও
ময়মনসিংহ) তৎপর ছিলেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় জেলার বেশিরভাগ
অংশ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল । বাংলার এই অংশে প্রধানত: বহু সংখ্যক
ডাকাত দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকায় ১৮২৮ সালে এটিকে স্বতন্ত্র জেলা
হিসেবে গঠন করা হয়।
২. নামকরণ : পাবনা নামকরণ নিয়ে মতামতের অন্ত নেই। একমতে ‘পাবনী
নামক পুর্বগামিনী ধারা হতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে । অপর সূত্র মতে, ।
পাবনা নামের একজন দস্যর আন্ডাস্থলই এক সময় পাবনা নামে পরিচিতি লাভ
করে। অন্য মতে, পাবনা নাম এসেছে পদুম্বা থেকে। কালক্রমে পদুম্বাই
স্বরসঙ্গতি রক্ষা করতে গিয়ে বা শব্দগত অন্য ভূৎপত্তি হয়ে পাবনা হয়েছে।
আবার অনেকের মতে, প্যেভুবর্ধন হতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। তারা
বলেন পৌড্রবর্ধনের বহু জনপদ গঙ্গার উত্তর দিকে অবস্থিত ছিল। চলতি ভাষায়।
পুড্রবর্ধন বা পৌড্রবর্ধন পোনবর্ধন বা পোবাবর্ধন রুপে উচ্চাতি হতে হতে পাবনা
হয়েছে ।
৩. আয়তন : (প্রায়)২,৩৭১.৫০ বৰ্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট- (প্রায়) ২৫২৩১৭৯ জন। পুরুষ- ১২,৬২,৯৩৪ ও মহিলা
১২,৬০২৪৫ । বৃদ্ধির হার : ১৪৭% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ১০৬২ জন।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম  ঃ ০৯টি। পাবনা সদর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী,
ফরিদপুর, ভাংগুড়াচাটমহল, সুজানগর, সাথিয়া ও বেড়া।



৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ১০টি। পাবনা সদর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদীফরিদপুর,
ভাংগুড়াচাটমহল, সুজানগর, সাথিয়া, বেড়া ও আতাইকুলা ।
৭. সংসদীয় আসন : ০৫টি। (১) সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার নিম্নবর্ণিত
এলাকাসমূহ : বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেংগা
চাকলা ও কৈটোলা ইউনিয়ন। (২) সুজানগর উপজেলা ও নিম্নবর্ণিত।
ইউনিয়নসমূহ ব্যতীত বেড়া উপজেলাবেড়া পৌরসভাহাটুরিয়া নাকালিয়া
ইউনিয়ন, নতুন ভারেংগা, চাকলা ও কৈটোলা ইউনিয়ন। (৩) চাটমোহর ও
ভাংগুড়া উপজেলা । (৪) আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলা। (৫) পাবনা সদর
উপজেলা ।
৮. বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ : কবি বন্দে আলী মিয়া, অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন, অধ্যাপক ড:
আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কবি ওমর আলীরশীদ হায়দার, ফজল এ খোদা,
গণিত বিশারদ যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী, প্রমথ চৌধুরী, সরকার জয়েন উদ্দিন,
এয়ারভাইস মার্শাল এ. কে. খন্দকার, স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার স্যামসন এইচ
চৌধুরী।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-১৬১ কি. মি.।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস : পাবনা কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন, কাশিনাথপুর বাস।
স্টেশন। রেল-ইশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন, পাকশী রেলওয়ে স্টেশন, চাট মোহর
রেলওয়ে স্টেশন। লঞ্চ : নাজিরগঞ্জ নগরবাড়ি। এনডব্লিউডি কোড নম্বর :
০৭৩১ ও পোস্ট কোড-৬৬০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক ইছামতি, পাবনা বার্তাজীবন কথা, বিবৃতি ও সিনসা।
১২. পৌরসভা০৯টি ও ইউনিয়ন-৭৩টি।
১৩. উপজেলা ভূমি অফিস-০৯টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস-৬৬টি।
১৪. গ্রামের সংখ্যা-১৫৪৯টি ও মৌজার সংখ্যা-১৩২১টি।
১৫. আদর্শ গ্রাম-২৩টি ও শিক্ষার হার-৪২.৪৪%।
১৬. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, আখতামাক, পাট, গম, ভুট্টা, সরিষা ও ডাল।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-১,০৮৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-২০২টি, নিম্ন
মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৪৯টি, কলেজ-৪৮টি, মাদ্রাসা-১২৯টি ও অন্যান্য স্কুল
১২টি।
১৮. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-২,১১২টি, মন্দির-৩৪৫টি ও গীর্জা-০৯টি।
১৯. চিকিৎসা কেন্দ্র: হাসপাতাল-০২টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-০৯টি ও ক্লিনিক
১৫টি ।
২০. নদনদীর নাম : যমুনাপদ্মা, আত্রাই, বড়াল ইত্যাদি।
২১. দর্শনীয় স্থান : হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতাল, হার্ডিঞ্চ ব্রিজ, বাংলাদেশ ইক্ষু
গবেষণা কেন্দ্র।
২২. জেলার ঐতিহ্য : এ জেলার ঐতিহ্য হচ্ছে তার্ত শিল্প।

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...