28 April, 2018

কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাস


১সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : ১৭৯০ সালে। মোমেনশাহী জেলার কালেক্টর সাহেব বিশাল।
. মোমেনশাহী জেলার স্থানে স্থানে থানা স্থাপনের তাগিদে ঢাকা রেভিনিউ বোর্ডের
কাছে পরানগঞ্জ, কটিয়াদী, চাদপুর, সিরাজগঞ্জ, জগনাথগঞ্জ, শের মদন, শের
দিবার দিযাশের মাচরা প্রভৃতি স্থানের প্রস্তাব পেশ করেন। ১৭৯২ সালের
মধ্যে সিরাজগঞ্জসহ এসব এলাকায় প্রথম বিলেতি প্যাটানের থানা স্থাপিত হয়।
১৮৪৫ সালে মোমেনশাহী জেলায় ধরমচান্দ ঘোষ প্রথম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট
নিযুক্ত হয়ে আসেন। ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনশাইী জেলার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি
মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব করেন। শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, হাজীপুর, পিংনাসহ ৪
থানা নিয়ে ১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা এবং নিকলীবাজিতপুর, ফতেপুর
ও মাদারগঞ্জ এই ৪ থানা নিয়ে হুসেনপুর বা নিকলী মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব
করা হয়। ১৮৪৫ সালের এপ্রিল মাসে সরকার সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর মহকুমা
দুটি স্থাপনের অনুমতি দেন। ফলে ১৮৪৫ সালে বিশাল মোমেনশাহী জেলার
অধীনে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ নামে দুটি মহকুমার সৃষ্টি করা হয়।
পরবর্তীকালে মোমেনশাহী জেলাকে বিভক্ত করে ১৮৬৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা
সৃষ্টি করা হয়েছে।
২. নামকরণ : কিশোরগঞ্জের নামকরণের উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞজনদের ধারণা ও
জনশ্রুতি অনুযায়ী অনুমান করা হয়, বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বত্রিশ প্রামাণিক
পরিবারের প্রয়াত কৃষ্ণ দাশ প্রামাণিকের ষষ্ঠ ছেলে নন্দকিশোরের কিশোর" ও
তারই প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় হাট বা গঞ্জের ‘গঙ' যোগ হয়ে কিশোরগঞ্জ নামকরণ
হয়েছে।
৩. আয়তন : (প্রায়) ২৬৮৯ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ২৯,১১,৯০৭ জন। পুরুষ- ১৪,৩২,২৪২ ও মহিলা
১৪,৭৯,৬৬৫ । বৃদ্ধির হার : ১.১৪% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ১০৮৩ জন ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ১৩টি। কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর,
পাকুন্দিয়াভৈরব, হোসাইনপুর, কটিয়াদি, করিমগঞ্জ, নিকলি, তাড়াইল,
অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ১৩টি। কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর,
পাকুন্দিয়াভৈরব, হোসাইনপুর, কটিয়াদি, করিমগঞ্জ, নিকলি, তাড়াইল,
অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা।
৭. সংসদীয় আসন : ০৬টি । (১) কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা। (২)
কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা। (৩) তাড়াইল ও করিমগঞ্জ উপজেলা। (৪)
ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা। (৫) নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলা। (৬)
কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলা।
৮. বিশিষ্ট ব্যক্তি ; চন্দ্রাবতীসত্যজিত রায়, তাহের উদ্দিন মল্লিক, মনির উদ্দিন
ইউসুফ, আতাউস সামাদ, ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, জিলুর রহমান, সৈয়দ নজরুল
ইসলাম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এড. আন্দুল হামিদ, শ্ৰী মনোরঞ্জন ধর,
আলহাজ্ব আবুল কাসেম কাঞ্চন মিয়া প্রমুখ।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-১৪০ কি. মি. ও রেলপথে-১৩৭ কি. মি.।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস- কিশোরগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন, ময়মনসিংহ বাস
স্টেশন, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মতিঝিল, গুলিস্থান বিআরটিসি বাস স্টেশন ইত্যাদি।
রেল - ভৈরববাজার রেলওয়ে স্টেশন। এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৯৪১ ও
পোস্ট কোড-২৩০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক আজকের দেশ, আজকের সারাদিন, শতাব্দির কণ্ঠ
সাপ্তাহিক আলোরমেলাগৃহকোণ ও হোসেনপুর বার্তা।
১২. পৌরসভা০৮টি ও ইউনিয়ন-১১০টি।
১৩. উপজেলা ভূমি অফিস- ১৩টি।
১৪. মৌজার সংখ্যা-১,৭১১টি ও গ্রামের সংখ্যা- ১,৭৯৪টি।
১৫. শিক্ষার হার-৩৮.২৭%
১৬. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, পাট, ইস্, , তামাক, বেগুন, সরিষা ও ভুটা।।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৮৫৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-২১০টি, নিম্ন
মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৪২টি, কলেজ-১৪টি ও মাদ্রাসা-২৩৭টি ।
১৮. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-৪,৫৪৯টি।
১৯. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-০৩টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-১০টি, ইউনিয়ন
স্বাস্থ্য কেন্দ্র-৬৯টি ও ক্লিনিক-১৭টি।
২০. নদনদীর নাম : পুরনো ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ধলেশ্বরী, কালনী, ধনু ও বাউলাই ।
২১. দর্শনীয় স্থান । ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ী, ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দুর্গ, কবি
চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির, দিলীর আখড়াশোলাকিয়া ঈদগাহ, পাগলা মসজিদ,
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, হাওড় অঞ্চল, সুকুমার রায়ের বাড়ি, জহুরুল
ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও দুর্জয় স্মৃতি ভাস্কর্য।
২২জেলার ঐতিহ্য : ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ী, ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দু, কবি
চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির, দিলীর আখড়াশোলাকিয়া ঈদগাহ, পাগলা মসজিদসহ ।
অনেক স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্য রয়েছে এ জেলায়।

মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস


১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৫ সালের মে মাসে।
মানিকগঞ্জ মহকুমা প্রথমে ফরিদপুর জেলার (১৮১১ সালে সৃষ্ট) অধীনে।
ছিল। প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনকল্পে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে
ফরিদপুর জেলা থেকে ঢাকা জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৩১ মার্চ ১৯৮৪
সালে মানিকগঞ্জকে জেলায় উন্নীত করা হয়।
২. নামকরণ : মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণের ঐতিহাসিক প্রমাণ আজও পাওয়া ।
যায়নি। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী মানিক শাহ নামে এক সুফি সাধকের
নামানুসারে এই জেলার নামকরণ হয়েছে মানিকগঞ্জ । কেই কেউ বলেন,
দুর্ধর্ষ পাঠান সরদার মানিক ঢালীর নামানুসারে নামকরণ হয়েছে মানিকগঞ্জ ।
অনেকে মনে করেন, বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশ্বাসঘাতক
মানিক চাদের নামানুসারে ইংরেজরা মানিকগঞ্জ নামকরণ করেন।
৩. আয়তন : (প্রায়) ১৩৭৮.৯৯ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ১৩,৯২,৮৬৭ জন। পুরুষ-৬, ৭৬,৩৫৯ ও
মহিলা৭,১৬৫০৮ ।বৃদ্ধিরহার :০.৮০%ও ঘনত্ব(বর্গ কি. মি.):১,০০৭ জন।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ০৭টি। মানিকগঞ্জ সদর, শিবালয়, সিংগাইর,
সাটুরিয়াহরিরামপুর, ঘিওর ও দৌলতপুর।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ০৭টি। মানিকগঞ্জ সদর, শিবালয়, সিংগাইর,
সাটুরিয়াহরিরামপুরঘিওর ও দৌলতপুর।
৭. সংসদীয় আসন : ০৩টি । (১) দৌলতপুর উপজেলা. ঘিওর উপজেলা ও
শিবালয়। (২) সিংগাইর, হরিরামপুর উপজেলা ও মানিকগঞ্জ সদরের
নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : পুটাইল, ভাড়ারিয়া ও হাটিপাড়া। (৩) নিম্নবর্ণিত
ইউনিয়নসমূহ ব্যতীত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা ও ইউনিয়নসমূহ চ পুটাইল,
ভাড়ারিয়া, হাটিপাড়া ও সাটুরিয়া উপজেলা।
৮. পৌরসভা০২টি, ইউনিয়ন-৬৫টি।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-৬৪ কি. মি.।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা : মানিকগঞ্জ বাস স্টেশন, দৌলতপুর বাস স্টেশন, ঢাকা
মানিকগঞ্জ বিআরটিসি বাস স্টেশন মতিঝিল ইত্যাদি। এনডব্লিউডি কোড
নম্বর- ০৬৫১ ও পোস্ট কোড-১৮০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক মানিকগঞ্জের কাগজ, মানিকগঞ্জের সংবাদ ও আল ।
আযান।
১২. উপজেলা ভূমি অফিস-০৫টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস-৬৭টি।
১৩. মৌজার সংখ্যা- ১,৩৫৭টি ও গ্রামের সংখ্যা-১,৬৬৮টি।
১৪. মোট জমি : ১২০৭৯৭.৩২ হেক্টর ।
১৫. বিশিষ্ট ব্যক্তি : ড. অমর্ত্য সেন, শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি এ
কে এম নূরুল ইসলাম, কর্নেল (অব:) এম এ মালেক, ক্যাপ্টেন (অব:)
আন্দুল হালিম চৌধুরীহীরালাল সেন, খান আতাউর রহমান, কণ্ঠশিল্পী
মমতাজ বেগম ও কিশোরীলাল রায় চৌধুরী।
১৬. আদর্শ গ্রাম- ২২টি । শিক্ষার হার-৫৬%।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৭১৮টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-২৯২টি,
কলেজ -১৯টি, উচ্চতর মাদ্রাসা-২৫টি ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা-৩৯টি।
১৮. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-২,২১০টি।
১৯. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-০৬টি,
ক্লিনিক-১১৬ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্ৰ-০২টি ।
২০. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, পাট, সবজি ইত্যাদি।
২১নদনদীর নাম : পদ্মাযমুনাধলেশ্বরী, ইছামতি ও কালিগঙ্গা।
২২. দর্শনীয় স্থান : বালিয়াটি প্রাসাদ, তেওতা জমিদার বাড়ি, তেওতা নবরত্ব
মঠ, মানিকগঞ্জের মত্তের মঠ, রামকৃশন মিশন সেবাশ্রম, শিব সিদ্ধেশ্বরী
মন্দির, মানিকগঞ্জের শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ীমানিকগঞ্জের গৌরাঙ্গ মঠ,
নারায়ণ সাধুর আশ্রম, মাচাইন গ্রামের ঐতিহাসিক মাজার ও পুরোনো
মসজিদ, কবিরাজ বাড়ীবাঠইমুড়ী মাজার ও ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়।
২৩. জেলার ঐতিহ্য : বর্তমান মানিকগঞ্জের মানুষ শতাব্দী ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
সহমর্মিতা নিয়ে বসবাস ও জীবন ধারণের যে প্রথা তারা প্রতিষ্ঠা করে।
গিয়েছিলেন সময়ের বিবর্তনে তা ঐতিহ্য হিসেবে বয়ে চলেছেন এ প্রজন্মের
মানুষ ।

মুন্সীগঞ্জ জেলার ইতিহাস


১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট ; ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের
কাছ থেকে ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন। সে।
সময় মুন্সীগঞ্জ ঢাকা জেলার অংশ ছিল। ঢাকা কালেক্টরেটের আওতায় ১৯৪৭
সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টি হয় এবং ১ মার্চ ১৯৮৪ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলা
ঘোষণা করা হয় ।
2. নামকরণ : মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন নাম ছিল ইদ্রাকপুর। কথিত আছে, মোগল শাসন।
আমলে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুসী হায়দার হোসেন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন।
তিনি মোগল শাসকদের দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন ও
জনহিতৈষী মুন্সী হায়দার হোসেনের নামে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সীগঞ্জ । কারো
কারো মতে জমিদার এনায়েত আলী মুন্সীর নামানুসারে মুন্সীগঞ্জ নামকরণ করা।
হয়েছে ।
৩. আয়তন : (প্রায়) ৯৫৪.৯৬ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ১৪,৪৫,৬৬০ জন। পুরুষ- ৭,২১,৫৫২ ও মহিলা
৭,২৪,১০৮ । বৃদ্ধির হার : ১.১০% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ১৪৩৯ জন ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম ঃ ০৬টি। শ্ৰীনগর, সিরাজদিখান, লৌহজংটঙ্গীবাড়ী
গজারিয়া ও মুন্সীগঞ্জ সদর।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ০৬টি। মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ী, শ্ৰীনগর, লৌহজং,
গজারিয়া এবং সিরাজদিখান।
৭. সংসদীয় আসন : ০৩টি। (১) শ্রীনগর উপজেলা ও সিরাজদিখান। (২)
লৌহজং উপজেলা ও টঙ্গীবাড়ী। (৩) মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও গজারিয়া।
৮. হানাদার মুক্ত দিবস : ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত
হয় ।
৯. বিশিষ্ট ব্যক্তি এ রীতান অতীশ দীপংকর, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু
চিত্তরঞ্চন দাস, সরোজিনী নাইডু, সত্যেন সেন, জিতেন ঘোষ, মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু মুখ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর ড.
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ও ইমদাদুল হক মিলন।
১০ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-২৭ কি. মি.।
১১. যোগাযোগ ব্যবস্থা : মুন্সীগঞ্জ বাস স্টেশন, কাচারী রোড, পশ্চিম মুক্তারপুর বাস।
স্টেশন, মুক্তারপুর, মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাট। এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৬৯১ ও
পোস্ট কোড- ১৫০০।
১২. পত্রপত্রিকা : দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ, সাপ্তাহিক কাগজের খবর, সত্য প্রকাশ,
মুন্সীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ সংবাদ।
১৩. পৌরসভা০২টি, ইউনিয়ন-৬৮টি ও উপজেলা ভূমি অফিস-০৬টি।
১৪. মৌজার সংখ্যা-৬৯৫টি, গ্রামের সংখ্যা-৯৭০টি ও শিক্ষার হার-৪৫.৮%।
১৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৫৩৮টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৯৯টি,
কলেজ-১৩টি ও যাদ্রাসা২৯টি।
১৬. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-২,৪৮৭টি।
১৭. চিকিৎসা কেন্দ্র :হাসপাতাল-০১টি,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-০৬টি ওক্লিনিক-৫টি।
১৮. উল্লেখযোগ্য ফসল : আলু, ধান, পাট, সবজি ইত্যাদি।
১৯. নদনদীর নাম : ধলেশ্বরী, পদ্মামেঘনা ইত্যাদি।
২০. দর্শনীয় স্থান। : বল্লাল সেনের দীঘি, সুখবাসপুর দীঘি, শিকদার সাহেবের
মাজার, বার আউলিয়ার মাজার, শহীদ বাবা আদমের মসজিদ, ইদ্রাকপুর কেল্লা
ও অতীশ দীপংকরের পণ্ডিত ভিটা ।

গাজীপুর জেলার ইতিহাস


১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : ইতিহাসখ্যাত ভাওয়াল পরগনার গহীন বনাঞ্চল আর গৈরিক
মৃত্তিকাকোষের টেকটিলায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক এ জনপথ, ১৯৮৪ সালের ১
মার্চ গাজীপুর জেলা হিসেবে গঠিত হয়।
২. নামকরণ : মোহাম্মদ শাহ তুঘলকের সময় পালোয়ান গাজী এই অঞ্চলে এসে।
বসতি স্থাপন করেন। পর্যায়ক্রমে গাজীবংশের লোকেরা ৫ শত বছরের বেশি।
সময় এ এলাকা শাসন করেন। জনগণ তাদের শাসনামলের ইতিহাস ও
ঐতিহ্যকে ভালবেসে এলাকার নাম রাখেন গাজীপুর।
৩. আয়তন : (প্রায়) ১৭৭০.৫৪ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ৩৪,০৩৯১২ জন। পুরুষ- ১৭,৭৫,৩১০ ও মহিলা
১৬, ২৮,৬০২ । বৃদ্ধির হার : ৫.২১% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ১৮৮৪ জন ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ৫টি। গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া
কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ ।
৬. থানার সংখা ও নাম : ৬টি। জয়দেবপুর, টঙ্গী (গাজীপুর সদর উপজেলাধীন),
কাপাসিয়াকালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও কালীগঞ্জ ।
৭. সংসদীয় আসন । : ০৫টি। (১) কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর।
উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ ঃ কাশিমপুর, কোনাবাড়ী ও বাসন। (২)
গাজীপুর সদর উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়ন ব্যতীত ; পুবাইল, বাড়ীয়া
কাশিমপুর, কোনাবাড়ীবাসন, কাউলতিয়া ও মির্জাপুর। (৩) শ্রীপুর উপজেলা
এবং গাজীপুর সদর উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : কাউলতিয়া ও
মির্জাপুর । (৪) কাপাসিয়া উপজেলা(৫) কালীগঞ্জ উপজেলা ও গাজীপুর সদর
উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : পুবাইল ও বাড়ীয়া ।
৮. সিটি কর্পোরেশন-১টি, পৌরসভা৪টি ও ইউনিয়ন-৪৪টি।
৯. বিশিষ্ট ব্যক্তি : বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ, মো: শামসুল হক, ময়েজউদ্দিন
এডভোকেট, আফজাল মিয়া (বীর উত্তম), ভবানী ভট্টাচার্য, শহীদ হুরমত আলী
মো: হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ মাস্টার, বিএ সিদ্দীকি, আহম্মদ উল্লাহ
মন্ডল, আলাউদ্দিন হোসেন, ফকির শাহাবউদ্দিন, গাজী গোলাম মোস্তফাকৃষক
নেতা মিয়া সিরাজুল হক, এড. রহমত আলীএড. আ ক ম । মোজাম্মেল হক,
মেঘনাদ সাহা, স্যার কে জি গুপ্ত, ড. মো: এখলাছ উদ্দিন, নুরুল ইসলাম,
নারায়ণ চন্দ্র রায় চৌধুরীআন্দুল খালেক পাঠান প্রমুখ।

১০. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-৩৭ কি. মি. ও রেলপথে-৩৩ কি. মি.।
১১. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস : কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন গাজীপুর, ঢাকা-গাজীপুর-ঢাকা ।
বাস স্টেশন, বিআরটিসি বাস স্টেশন মতিঝিল। রেল ড ঢাকা-গাজীপুর রেল।
স্টেশন কমলাপুর । এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০২ ও পোস্ট কোড-১৭০০।
১২. পত্রপত্রিকা : দৈনিক গণমুখ, জন সংবাদ, আজকের জনতা, মুক্ত সংবাদ, গাজীর
দেশ ও বস্তুর চিত্র।
১৩. উপজেলা ভূমি অফিস-৫টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস-৩৫টি।
১৪. মৌজার সংখ্যা৮১৪টি ও গ্রামের সংখ্যা- ১,১৪৬টি।
১৫. আদর্শ গ্রাম-২০টি । শিক্ষার হার-৫৬.৪০%।
১৬শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৫২৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-২৫৫টি,
মহাবিদ্যালয়-৩০টি, মাদ্রাসা-১৭৯টি, হোমিও মেডিক্যাল কলেজ-১টি,
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-২টি, বিশ্ববিদ্যালয়-৫টি ও প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং
কলেজ-১টি ।
১৭. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-৩৫০০টি ও মন্দির-৩২৫টি।
১৮. চিকিৎসা কেন্দ্র : মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-২টি, উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স-৫টি ও ক্লিনিক-১৮৫টি।
১৯. উল্লেখযোগ্য ফসল: ধান ও পাট ।
২০. নদনদীর নাম : লবলং, ব্রহ্মপুত্র, পারুলীসী, গোয়ালী, শীতলক্ষ্যা, বানার,
তুরাগ, বালু ও চিলাই ।
২১. দর্শনীয় স্থান : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইন্সটিটিউট, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা, ভাওয়াল রাজবাড়ী, জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়, আনসার একাডেমী, ইকো পার্ক, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, হুমায়ন
আহমদের নুহাশ পল্লী ইত্যাদি।
২২. জেলার ঐতিহ্য : এককালের প্রমত্তা স্রোতস্বিনী লরলং, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা
বানার, তুরাগ, বালু, মালদহ প্রভৃতির বিপুল জলরাশির কল্যাণে গৈরিক মৃত্তিকার
কোলে এক সমৃদ্ধ জনপথ গাজীপুর। যার ঐতিহাসিক সভ্যতার প্রমাণ মেলে
২৫০-৩০০ হাজার বছর পূর্বের জনপথ সাকেশ্বর, ভাকুরাই ছড়া ও টোক,
কপালেশ্বর, দরদরিয়া একচালা, বৰ্ষপুর, চিনাসুখানিয়াশৈলাট, দিঘলীর ছিট
প্রভৃতি প্রাচীন প্রত্নস্থলে। মুসলমানদের বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার জন্য
টঙ্গী বহুল পরিচিত।

27 April, 2018

নারায়ণগঞ্জ জেলার ইতিহাস


নারায়ণগঞ্জ জেলার ইতিহাস
-----------------------------
১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : নারায়ণগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৮২ সালে। ঢাকা জেলার
সাবেক মহকুমা থেকে ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলায় উন্নীত হয়।
২. নামকরণ : ১৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বিকন লাল পান্ডে বেনুর
ঠাকুর বা লক্ষ্মীনারায়ণ ঠাকুর নামেও পরিচিত) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিকট
থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা গ্রহণ করেন। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার
ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি উইলের মাধ্যমে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত।
মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীতে এ স্থানের
নাম হয় নারায়ণগঞ্জ । যা বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম জেলা।
৩. আয়তন : (প্রায়) ৭৫৯.৫৯ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ২৯,৪৮,২১৭ জন। পুরুষ- ১৫,২১,৪৩৮ ও মহিলা
১৪,২৬,৭৭৯ জন। বৃদ্ধির হার : ৩.০৫% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.): ৪৩০৮ জন ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ৫টি। নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ,
আড়াইহাজার ও সোনারগাঁও ।
৬. থানার সংখা ও নাম : ৭টি। নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লাসিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর,
রূপগঞ্জ , আড়াইহাজার ও সোনারগাও
৭. সংসদীয় আসন : ০৫টি। না:গঞ্জ-১ : রূপগঞ্জ । না:গঞ্জ-২ : আড়াইহাজার।
না:গঞ্জ-৩ ; সোনারগাও উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা/পৌরসভাভূক্ত। না:গঞ্জ-৪ : নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার
নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : ফতুল্লা, কুতুবপুর, এনায়েতনগর, কাশিপুর ও
বক্তাবলী। না:গঞ্জ-৫ : নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন নিম্নবর্ণিত এলাকাসমূহ
: নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাগোগনগর ইউনিয়ন, আলীরটেক ইউনিয়ন ও বন্দর।
৮. হানাদার মুক্ত দিবস : ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ উপজেলা হানাদার
মুক্ত হয় ।
৯. বিশিষ্ট ব্যক্তি : পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, আজহার ইসলাম, ড.
কাজী দীন মোহাম্মদ, মেজর জেনারেল (অব:) কে এম সফিউল্লাহ (বীর ।
উত্তম), ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম, সুফি মিজানুর রহমান, গোলবক্স
ভূইয়া, আ: মতিন চৌধুরীখান সাহেব ওসমান আলীগাজী গোলাম দস্তগীর।
(বীর প্রতীক), এডতৈমুর আলম খন্দকার, ড. আতাউর রহমান, ডা. সেলিনা
হায়াত আইভীঅধ্যাপক নিতাই চক্রবর্তীশিল্পপতি রুকন উদ্দিন মোল্লাছফর।
আলীমিজানুর রহমান (বাবু), ব্যবসায়ী খবির উদ্দিন মোল্লাএডসুরুজ আলী
রাজনীতিবিদ আলী আহাম্মদ চুনকা, ড. আন্দুল আজিজ, এড. আন্দুর রাজ্জাক,
এমএলএ সামসুল হক, ড. অধ্যাপক মাওলানা মো: নাসির উদ্দিন প্রমুখ ।
১০. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-১৭ কি. মি. ও রেলপথে-২৩ কি.।
১১ . যোগাযোগ ব্যবস্থা ; গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ ঢাকা বাস স্টেশন, চাষাড়া বাস
স্টেশন, বন্দর বাস স্টেশন, নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন, নারায়ণগঞ্জ নৌ
বন্দর। এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০২ ও পোস্ট কোড-১৪০০।
১২. পত্রপত্রিকা : দৈনিক ডান্ডিবার্তা, সচেতন, সকাল বার্তা প্রতিদিন, খবরের পাতা,
সোজা সাপটা, দেশের আলো, যুগের চিন্তাখবর প্রতিদিন, জন্মভূমি, প্রতিদিন।
সকাল, ইয়াদ, নির বাংলা, কালের কথাসাপ্তাহিক আমাদের রূপগঞ্জ, সাপ্তাহিক
রূপগঞ্জ ও বাংলার সাথী।
১৩. সিটি কর্পোরেশন-১টি । পৌরসভা-০৬টি ও ইউনিয়ন- ৪১টি।
১৪. উপজেলা ভূমি অফিস-০৫টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস- ৪৩টি।
১৫. মৌজার সংখ্যা-৮৮১টি ও গ্রামের সংখ্যা-১,৩৭৪টি।
১৬. মোট পরিবার-৪,৫৩,৬২৭টি, মোট জমি-৫১,২৯০.০০ হেক্টর ।
১৭. শিক্ষার হার-৫১.৭৫%।
১৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৪৫৯টি, জুনিয়র বিদ্যালয়-১৭টি, মাধ্যমিক
বিদ্যালয়-১২৪টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-০৫টি, কলেজ-২৬টি, মাদ্রাসা-৬১টি
ও ভোকেশনাল স্কুল-১০টি
১৯. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-২৪২৯টি, মন্দির-৭৩টি ও গীর্জা-৬০টি।
২০. চিকিৎসা কেন্দ্র : সরকারি হাসপাতাল-০২টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-০৫টি,
ক্লিনিক-৫৬ এবং ইউ: স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্ৰ-৪৭টি।
২১. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, পাট, ইক্ষু ও সবজি ইত্যাদি।
২২. নদনদীর নাম : শীতলক্ষ্যামেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা, বালু এবং
ধলেশ্বরী।
২৩. দর্শনীয় স্থান : কদম রসূল দরগাহ, মেরিন একাডেমি, (লাঙ্গলবন্দ) হিন্দু তীর্থ
স্থান, সোনাকান্দা দুর্গ, সালেহ বাবর মাজার, আদমজী ইপিজেট, হাজীগঞ্জ দুৰ্গ,
কিল্লারপুল, পাচ পীরের দরগাহ, বিবি মরিয়মের মাজার, সোনারগাঁও লোকশিল্প
যাদুঘর ও পানাম নগরী, সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার, রাসেল।
পার্ক, জিন্দা পার্ক, কুন্দুস পার্ক ও বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম।
২৪. জেলার ঐতিহ্য শ শাসন আমল থেকেই নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ডান্ডি নামে
বৃহৎ ক্ষুদ্র এবং মাঝারী শিল্পকলকারখানায়
নারায়ণগঞ্জ । মসলিন কাপড় আর ঈশাখার ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁও, রূপগঞ্জের
জামদানি, অধুনালুপ্ত পৃথিবীখ্যাত আদমজী জুট মিলস, ব্যক্তি মালিকানাধীন।
বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়া, কদমরসুল মসজিদের ঐতিহ্য ।
নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সুপরিচিত।

25 April, 2018

পুরান ঢাকার ভাষায় গল্প


আমগো পুরান ঢাকার ছক্কু বেপারী লেনের নাম হুনছেন ! না হুনেন নাইক্কা ! মাগার চাংখার পুলের নাম তো হুনছেন না কি কন ? হেই চাংখার পুলের থেকা যে রাস্তা ছোজা হোছনী দালান বরাবর গেছে ঐডা দিয়া কিছু আওগাইলেই দেখবেন এক্ষান চিপা গলি পুব দিকে হান্দায় গেছে। ঐডা না, তয় ঐ গল্লির মইধ্যে ঢুইকা দুই কদম ছামনে গেলেই দেখবেন আরো চিপা এউগা গল্লি ডাইনে গেছে । দুই দিকে পুরান পুরান বিটিশ আমলের দলান। আস্তর খইসা পড়ছে, ইটের ফাকে বট গাছ ভী গজাইছে। মাগার অক্ষনও খাড়ায় আছে। দুই চাইরবার ভুমিকম্প হইলেও হিলাইতে পারবো না কয়া দিলাম।



এই গল্লিরই ছেছ মাথায় অইলো গিয়া আমার বাড়ি, লম্বর ছতরো। আমার বাপে বানায় রাইখা গেছিলো। লম্বর খুইজা না পাইলে আমার নাম কইলেই মাইনছে দেখায় দিবো। এই মহল্লার বেবাকতে আমারে বারেক ফকির নামেই চিনে।



আমার পরথম বিবি মারা যাওয়ার দুই বচ্ছর পর আরেকক্ষান শাদী করছিলাম। হের নাম অইলো গিয়া নুরজাহান। তয় তারে আমি ছোহাগ কইরা কমলা কয়া ডাকি। পাঁচ লম্বর ছাওয়ালডা হওয়ার পর থেইক্কা হেই যে খাটে হুইছে আর উঠবার পারেনা। এত মাইনছেরে তাবিজ - কবচ আর পানি পড়া দিয়া ভালো করবার লাগছি, মাগার হেরে কিচ্ছুই করবার পারলাম না।



বিছনায় পইড়া থাকলে কি অইবো, আমার কমলির চেহারাডা যেন আসমানের চাঁন্দের লাহান, না না ভুল কইতাছি এক্কেরে পাকা একখান কমলা। হের মুখের দিকে চাইলে খালি চায়া থাকবার মুন চায়।



বাড়ি ঘর পুলাপাইন ছব ভাইছা যাইবার লাগছে দেইখা কমলি আমারে ছেদিন ডাইকা কয় ,

'আপনারে এক্ষান কথা কইবার চাই হাছেমের আব্বা আপনি কইলাম চেতবার পারবেন না' ।

'কও কি! চেতুম কেলা !

'ঢোক গিলে কমলি বলে উঠে, 'কইছিলাম কি আপনি এক্ষান ছাদী করেন, বাসার ছব্বাইর বহুত পেরেসানী হইতাছে, লগে আপনেরও ভী'।

একটা ক্লিষ্ট হাসি দিয়ে কমলা চেয়ে রইলো বারেক ফকিরের দিকে।



'এইডা তুমি কি কইতাছো কমলা'!



'হাচাই কইতাছি, দেখবার পারতাছেন না বাড়ি ঘরের কি অবস্থা হইছে'।



আমি আর কিচ্ছু কইবার পারলাম না। কমলা হাচাই কইতাছে। আমার ছোনার ছংছার যেন ছাই হয়া যাইবার লাগছে, আমিও বুঝবার পারতাছি। আল্লার মাল দছ দছটা পোলাপান, কে যে কি করবার লাগছে হেইডা ভী কইবার পারুম না।

ছেদিন মহল্লার দু একজন মাইনছে আমারে ডাইকা কয়,

'হুজু..র এক্ষান কথা কই কিছু মনে লয়েন না, আপনেরে আমরা মহল্লার মানুছ বহুত ছন্মান করি, মাগার আপনার বড় পোলা দুইডা হাছেম আর কাছেম কিন্তক আপনের লাহান হয়নাইক্কা'।



'হ ঠিকই কইছো, তয় মা মরা ছাওয়াল, খেয়াল করবার পারিনা, কেঠা কুনহানে কি করবার লাগছে। আর আমার অন্দরমহলের কথাতো ছবই জানো তুমরা', বলতে বলতে মাথাটা নীচু হয়ে আসে বারেক ফকিরের।



না এক্ষান ছাদী করনই লাগবো দেখতাছি, নইলে বাকি পুলাপানটিও জাহান্নামে যাইবো।

ছোটো ছেলে জমিরেরর ডাকে চমকে তাকায়," আব্বা.., দুইন্নার মাইনছে আয়া বয়া আছে বৈঠকখানায় , আপনে করতাছেন কি উঠানে খারায়া? আইবার লাগছেন না কেলা? কহন থিক্কা চিক্কুইর পারতাছি'।



এই পুলাডা আমারে একটু কম ডরায়। ও কইনাইক্কা, আমি ফকিরি লাইনে আছি। পাড়ার মাইনছে আহে, কত্তরকম তাগো ছমছ্যা। কারো বিমার, কারো ছোয়ামী আরেকক্ষান বিয়া করছে , কারো পুলাপাইন নেছা করবার লাগছে ।আমি ঝাড় -ফুক, তাবিজ -কবচ দেই।



পানি পইড়াই থুইছি ডেরাম ভইরা, যার যিমুন দরকার। ছক্কাল বেলা মাইয়া মানুছ। বিকাল থিক্কা পুরুছ মানুছ।



আস্তে আস্তে বারেক ফকির তার বৈঠকখানায় এসে জায়নামাজ বিছানো একটু উচু চৌকির উপর এসে বসে, ডান হাতে একটা তেল চুকচুকে কাঠের তসবী।

'ছালাম হুজু..র', মহিলারা সমস্বরে বলে উঠে। কারো কোলে, কারো বা হাতে ধরা ছোটো ছোটো বাচ্চা। কেউ বা একা ।সবাই এগিয়ে এসে বসবার চেষ্টা করে, কে কার আগে তার সমস্যার কথা বলবে। এটা নিয়ে মৃদু একটা ধাক্কা ধাক্কি চলতে থাকে।



হুজুরের এ্যসিস্টেন্ট শহীদ ধম্‌কে উঠে,

'আব্বে ঐ তরা এমুন ঠেলা ঠেলি করতাছোস কেলা! চুপ কইরা ব, দুরে ছর, দুরে ছর, সিজিল কইরা ব, হুজুরের চক্কির লগে যেন ঠ্যাং না লাগে, ঐ ছেমরী তর পোলা ছামলা'।



হুজুর এবার প্যাকেট থেকে চারটে আগরবাতি জ্বালিয়ে চাল ভরা একটা পুরোনো কৌটার মধ্যে গুজে রেখে সামনের দিকে তাকায়। তার হাল্কা কাঁচা পাকা মেহেদী লাগানো দাড়িতে বা হাত বুলাতে বুলাতে সামনে বসা বাচ্চা আলা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে ?

'কও কি অইছে'?

'হুজুর আমার পুলাডা তিন দিন ধইরা রাইতে ঘুমায় না, খালি চইমকা চইমকা উঠে আর চিক্কুর পাইরা কান্দে। আমার ছাছুড়ি কইলো 'জীনের বদ নজর লাগছে, জলদি হুজুরের কাছে লইয়া যা' ।

এট্টুসখানি ঝাইরা দেন হুজু..র'।



'আনো কাছে আনো, হ হ ঐখানেই থাড়াও আর আউগাইয়োনা, তুমার পুলার চেহারাডা একটু দেইখা লই', ভালো করে একবার বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো,

' মুখটা এইদিক করো দেখি, হ তোমার ছাছুড়ি হাঁচাই কইছে, বদ নজরই লাগছে'।



হুজুর একটা ছোট্ট কাগজে লেখা তাবিজ মহিলার দিকে বাড়িয়ে ধরলো,



'ধরো এইডা, রুপার তাবিজে ভইরা কালা ছুতা দিয়া পুলার কোমোরে বাইন্ধা রাইখো আছরের নামাজ পইরা। ঠিক মত নামাজ কালাম পইরো আর যদ্দুর মনে অয় তুমি ছন্ধ্যার ছময় পুলা লয়া বাইর অইছিলা' !

দশটা টাকা হুজুরের হাতে দিয়ে মাথা নীচু করে মহিলার প্রস্থান। হুজুর কি যেন বিড় বিড় করতে থাকে।

এর পর এগিয়ে আসে এক তরুনী। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, চুলগুলো উস্কোখুস্কো। শীর্নদেহে মলিন শাড়িটা টেনে টুনে একটু সামনে এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে কথা বলতে শুরু করে, ভাবটা যেন তার দীনতার কথা কেউ শুনে না ফেলে।

'আব্বে কি কইতাছো! একটু জোরে জোরে কও, ঠিক মত ছুনবার পারতাছিনা '!

হুজুর বিরক্ত হয়ে উঠে।

মেয়েটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে দম নিয়ে গলাটা একটু উচুস্বরে তুলে বলে, 'হুজু.র কি আর কমু , আমার ছোয়ামীতো আমগো বস্তিরই এক মাগীর লগে কয়দিন ধইরা আছনাই করবার লাগছে'।

'বুঝলা কেমতে'!

হুজুরের কথায় তরুনীটি আবার বলতে শুরু করে।

'হুজু..র আমি তো পয়লা পরথম কিচ্ছুই বুঝবার পারি নাইক্কা, আমগো ঘরের লগে থাকে যে আমার ছই বুলবুলি, উই ছেদিন আমারে ডাইকা কয়,



"কিরে, তর মুন্নীর বাপ যে ঐ ঘরের আদুরীর লগে পিরীত করতাছে তুই কি কিছুই বুঝবার পারোছ না!'

বুলবুলির কথা ছুইনা আমার বুকটা ধ্বক্‌ কইরা উঠলো হুজু..র। আমি কইলাম 'কইতাছোছ কি তুই' ?

'হ হাচা কইতাছি, মিছা কমু কেলা! তুই আইজ রাইতে জাইগা দেখিছ হাচা কই না মিছা কই' ! জোর গলায় বলে উঠে বুলবুলি।

'হুজুর এই কথা ছুইনা আমি তিন রাইত জাইগা রইছি, দেখি মাঝরাইতে উইঠা আমার খসম ঘর থিকা বাইর অইতাছে, হাতে একখান ঠোংগা। আমি কি কমু বুঝবার পারলাম না। আস্তে কইরা পিছন পিছন যায়া দেখি মুন্নীর বাপ গুসোল খানার কোনায় খাড়ায়া আদুরীর লগে হাছাহাছি করতাছে, আর ঠোংগা থিকা কি জানি বাইর কইরা ওরে খিলায় দিতাছে'।



'হুজুর এর পর থেইক্কা আমি খিয়াল কইরা দেখছি, পরায় রাইতেই হ্যায় ভি বাইরে যাইবার লাইগ্গা উঠে, উই ছেমরী ভি বাইরে যাইবার লাইগ্গা উঠে। আপনি একটা কিছু করেন হুজুর, আমার পিচ্চি দুইখান মাইয়া'।



'যাও যাও চিন্তা কইরো না ছব ঠিক হয়া যাইবো। তুমার সোয়ামীরে পানি পড়া খিলাইতে পারবা নি হেইডা কও'?

'হ তা পারুম ' বিষন্ন করুন কন্ঠে তরুনীর উত্তর।

'ঐ ছহীদ কই গেলি'?

'এই যে হুজুর আমি তো এহানেই খাড়ায় আছি'।

"ওই ঐ যে নীল ডেরামে ছামী বছ করনের লেগা পানি ফু দিয়া রাখছি ঐ খান থিক্কা এক বোতল পানি দিয়া দে, বোতল আনছো নি ? না আনলে আলাদা দশটাক্কা দেওন লাগবো' মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বল্লো বারেক ফকির।

না না হুজুর আনছি', শহীদ পানি এনে দেয়।

'এই লও, নিয়ম কইরা তিন বেলা খাওয়াইবা কয়া দিলাম। এক ছপ্তাহ পর আবার আইছো'।

মেয়েটা দশ টাকা দিয়ে পানির বোতল নিয়ে যায়।



কিছুক্ষন পর পকেট হাতড়ে কতগুলো খুচরা টাকা বের করে গুনে দরজা দাড়ানো শহীদের দিকে বাড়িয়ে ধরে বারেক ফকির।

'আব্বে ঐ ছহীদ , এই ল একছ টাকা, আমার বড় পোলারে দিয়া ক হেরে বাজারে যাইতে, নইলে আইজ খাওন নাইক্কা'।



কিছুক্ষন পর হুজুর তাকিয়ে দেখলো পেছনে একটা ১৮ /২০ বছরের ছেলে পেটে হাত দিয়ে বসা। পাড়ার ছেলে মুখ চেনা ।

'কি অইছে তুমি অখন আইছো কেলা ? তুমি জানোনা অখন মাইয়া মাইনছের টাইম। বিকালে আহো তখন ছুনমুনে '।

'হুজুর আমি জানি , মাগার বহুৎ বিপদে পইরা আইছি এই টাইমে'।

'হ বিপদে পড়লেই তো আমার কাছে মাইনছে আহে, হুদাইতো আর আহেনা, তাড়াতাড়ি কও দেহি কি হইছে' ?



মহিলারা বিরক্তির নয়নে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ।



'হুজুর আপনি তো কাল্লু মাতব্বররে চিনেন' ?

হুজুর মাথাটা নাড়তেই ছেলেটি বল্লো,

'হুজুর হের পুলা ছপন আমার ন্যাংটা কালের দোস্ত। ছেদিন মোড়ের মাথায় খারায় রইছি, উই জানি কইথিক্কা লৌড় পাইরা আইলো কইবার পারুম না। আমারে কয়, 'দোস্ত এই জিনিসটা একটু রাখবার পাড়বি'? কইয়া আমার হাতে কাগজে পেচাইনা কি এক্ষান পেকিট ধরায়া দিয়াই আবার লৌড়।



আমি চুপি দিয়া চায়া দেখি হেইডার মধ্যে এক খান পিস্তল! দেইখাতো আমি ফিট হয়া যাইবার লাগছিলাম হুজু..র! যাউক্গ্গা তাড়াতাড়ি বাইত আয়া চক্কির নিচে আমার টেরাংকের মইধ্যে হান্দায় থুইলাম। ছক্কাল বেলা হ্যায় আয়া কইলো 'কাইলকার জিনিছটা দে',

আমি ডরে ডরে বাইর কইরা দিলাম। কইলো, 'ছন্ধ্যা বেলায় আমগো বাইত আহিছ , তরে হাজীর বিরানী খিলামু'।



'হুজু..র ইমানে কইতাছি হাজীর বিরানীর কথা ছুইনা লোভ ছামলাইতে পারিনাইক্কা, গেলাম। আরো বহুৎ কিছু আছিলো মাগার আমি আর কিচ্ছু খাই নাইক্কা, ইমানে কইতাছি। কিন্ত রাইতে থিকা হুজু..র আমার এমুন পেট ছুটলো যে কয়া পারুমনা। ছক্কাল বেলা আমারে বদনা লয়া আমারে বাইর বাড়ীতে লৌড় পারতে দেইখা আমার মায়ে জিগাইলো 'কি অইছে তর '?

মায়েরে ছব ঘটনা খুইলা কইলাম। হুইনা হ্যায়তো চিল্লায়া বাড়ি মাথায় তুইলা ফালাইলো,

কইলো, "হেই হারামীর পুত নিশ্চয় তরে বান মারছে, নইলে হাজীর বিরানী খায়া তর এমুন অইবো কেলা। অক্ষন হুজুরের কাছে যা"।

এর লেগাই এই টাইমে আইছি হুজুর'।



হুজুর একটা তাবিজ আর তার ড্রামে ভরা যাদু টোনা দুর করার ফু দেয়া পড়া পানি এক বোতল দিয়ে তিন বেলা নিয়ম করে খেতে বল্লো।

'হ তর মায়ে ঠিকই কইছে। তর বাপ এক পাট্টি করে, ছপনের বাপ কাল্লু মাতবর আরেক পাট্টি । হেগো বাড়িত যাইয়া তর খাওন ঠিক হয় নাইক্কা।বানই মারছে তরে'।

হুজুরের কথায় ছেলেটি চিৎকার করে কেঁদে উঠে,

" হুজুর আমারে বাঁচান, এমুন কাম আমি আর জীন্দেগীতেও করুম না, কছম কইবার লাগছি'।

'আইচ্ছা অহন যা পানি পড়া দিছি লগে তাবিজ ভী দিছি কুনো ডর নাইক্কা। ছব বাণ টান কাইটা যাইবো, আমার তাবিজের কথা কি তুই জানোছনা'!

'হ হুজুর তাতো জানি, হের লেগায় মায় আপনার কাছে আইবার কইলো জলদি কইরা'।



'ঐ ছহীদ টাইম কয়টা'? মুখ না তুলেই বারেক ফকির প্রশ্ন করে।

'হুজু..র পরায় একটা বাজ বার লাগছে' শহীদের উত্তর ।

'হায় হায় নামাজের ছময় হয়া আসলো দেখতাছি, এই তোমরা উঠো উঠো কাইল আইছো'।

বিমর্ষ বদনে বাকী মহিলারা উঠে দাড়ায়, একজন জানতে চায়,

'হুজু..র কাইল বইবেনতো না কি'?

হ হ বহুম না কেলা ! এইডা আবার কেমুন কথা কইতাছো'!

'না এমনি জিগাইলাম'।

সবাই চলে যাওয়ার পর ঘরে ঢুকে বারেক ফকির দেখলো ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো ভাতের জন্য মাটিতে বসে কান্নাকাটি করছে আর কমলা বিছানায় শুয়ে অসহায় দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।

লগে লগে চৌক্ষের মধ্যে মুন্নীর মার চেহারাডা একবার চিল্লিক দিয়া উঠলো, যার খছম কিনা আদুরীর লগে আছনাই করবার লাগছে। না আরেকটা বিয়ে করনই লাগবো দেখতাছি। কমলির কথা আর ফালান যাইবো না।



কিন্ত ছারাদিনে মাইনছের দেওয়া এই দছ বিছ টাকা দিয়া এত্ত বড় ছংসারটা চলবো কেমতে এইডা ভাইবা মাথাডা কেমুন জানি চক্কর দিয়া উঠলো আর খাড়ায় থাকবার পারতাছিনা ।



বলে ধ্বপ করে বসে পড়লো বারেক ফকির কমলির পায়ের কাছে।

পুরান ঢাকার ভাষা


আমগো পুরান ঢাকার ছক্কু বেপারী লেনের নাম হুনছেন ! না হুনেন নাইক্কা ! মাগার চাংখার পুলের নাম তো হুনছেন না কি কন ? হেই চাংখার পুলের থেকা যে রাস্তা ছোজা হোছনী দালান বরাবর গেছে ঐডা দিয়া কিছু আওগাইলেই দেখবেন এক্ষান চিপা গলি পুব দিকে হান্দায় গেছে। ঐডা না, তয় ঐ গল্লির মইধ্যে ঢুইকা দুই কদম ছামনে গেলেই দেখবেন আরো চিপা এউগা গল্লি ডাইনে গেছে । দুই দিকে পুরান পুরান বিটিশ আমলের দলান। আস্তর খইসা পড়ছে, ইটের ফাকে বট গাছ ভী গজাইছে। মাগার অক্ষনও খাড়ায় আছে। দুই চাইরবার ভুমিকম্প হইলেও হিলাইতে পারবো না কয়া দিলাম।



এই গল্লিরই ছেছ মাথায় অইলো গিয়া আমার বাড়ি, লম্বর ছতরো। আমার বাপে বানায় রাইখা গেছিলো। লম্বর খুইজা না পাইলে আমার নাম কইলেই মাইনছে দেখায় দিবো। এই মহল্লার বেবাকতে আমারে বারেক ফকির নামেই চিনে।



আমার পরথম বিবি মারা যাওয়ার দুই বচ্ছর পর আরেকক্ষান শাদী করছিলাম। হের নাম অইলো গিয়া নুরজাহান। তয় তারে আমি ছোহাগ কইরা কমলা কয়া ডাকি। পাঁচ লম্বর ছাওয়ালডা হওয়ার পর থেইক্কা হেই যে খাটে হুইছে আর উঠবার পারেনা। এত মাইনছেরে তাবিজ - কবচ আর পানি পড়া দিয়া ভালো করবার লাগছি, মাগার হেরে কিচ্ছুই করবার পারলাম না।



বিছনায় পইড়া থাকলে কি অইবো, আমার কমলির চেহারাডা যেন আসমানের চাঁন্দের লাহান, না না ভুল কইতাছি এক্কেরে পাকা একখান কমলা। হের মুখের দিকে চাইলে খালি চায়া থাকবার মুন চায়।



বাড়ি ঘর পুলাপাইন ছব ভাইছা যাইবার লাগছে দেইখা কমলি আমারে ছেদিন ডাইকা কয় ,

'আপনারে এক্ষান কথা কইবার চাই হাছেমের আব্বা আপনি কইলাম চেতবার পারবেন না' ।

'কও কি! চেতুম কেলা !

'ঢোক গিলে কমলি বলে উঠে, 'কইছিলাম কি আপনি এক্ষান ছাদী করেন, বাসার ছব্বাইর বহুত পেরেসানী হইতাছে, লগে আপনেরও ভী'।

একটা ক্লিষ্ট হাসি দিয়ে কমলা চেয়ে রইলো বারেক ফকিরের দিকে।



'এইডা তুমি কি কইতাছো কমলা'!



'হাচাই কইতাছি, দেখবার পারতাছেন না বাড়ি ঘরের কি অবস্থা হইছে'।



আমি আর কিচ্ছু কইবার পারলাম না। কমলা হাচাই কইতাছে। আমার ছোনার ছংছার যেন ছাই হয়া যাইবার লাগছে, আমিও বুঝবার পারতাছি। আল্লার মাল দছ দছটা পোলাপান, কে যে কি করবার লাগছে হেইডা ভী কইবার পারুম না।

ছেদিন মহল্লার দু একজন মাইনছে আমারে ডাইকা কয়,

'হুজু..র এক্ষান কথা কই কিছু মনে লয়েন না, আপনেরে আমরা মহল্লার মানুছ বহুত ছন্মান করি, মাগার আপনার বড় পোলা দুইডা হাছেম আর কাছেম কিন্তক আপনের লাহান হয়নাইক্কা'।



'হ ঠিকই কইছো, তয় মা মরা ছাওয়াল, খেয়াল করবার পারিনা, কেঠা কুনহানে কি করবার লাগছে। আর আমার অন্দরমহলের কথাতো ছবই জানো তুমরা', বলতে বলতে মাথাটা নীচু হয়ে আসে বারেক ফকিরের।



না এক্ষান ছাদী করনই লাগবো দেখতাছি, নইলে বাকি পুলাপানটিও জাহান্নামে যাইবো।

ছোটো ছেলে জমিরেরর ডাকে চমকে তাকায়," আব্বা.., দুইন্নার মাইনছে আয়া বয়া আছে বৈঠকখানায় , আপনে করতাছেন কি উঠানে খারায়া? আইবার লাগছেন না কেলা? কহন থিক্কা চিক্কুইর পারতাছি'।



এই পুলাডা আমারে একটু কম ডরায়। ও কইনাইক্কা, আমি ফকিরি লাইনে আছি। পাড়ার মাইনছে আহে, কত্তরকম তাগো ছমছ্যা। কারো বিমার, কারো ছোয়ামী আরেকক্ষান বিয়া করছে , কারো পুলাপাইন নেছা করবার লাগছে ।আমি ঝাড় -ফুক, তাবিজ -কবচ দেই।



পানি পইড়াই থুইছি ডেরাম ভইরা, যার যিমুন দরকার। ছক্কাল বেলা মাইয়া মানুছ। বিকাল থিক্কা পুরুছ মানুছ।



আস্তে আস্তে বারেক ফকির তার বৈঠকখানায় এসে জায়নামাজ বিছানো একটু উচু চৌকির উপর এসে বসে, ডান হাতে একটা তেল চুকচুকে কাঠের তসবী।

'ছালাম হুজু..র', মহিলারা সমস্বরে বলে উঠে। কারো কোলে, কারো বা হাতে ধরা ছোটো ছোটো বাচ্চা। কেউ বা একা ।সবাই এগিয়ে এসে বসবার চেষ্টা করে, কে কার আগে তার সমস্যার কথা বলবে। এটা নিয়ে মৃদু একটা ধাক্কা ধাক্কি চলতে থাকে।



হুজুরের এ্যসিস্টেন্ট শহীদ ধম্‌কে উঠে,

'আব্বে ঐ তরা এমুন ঠেলা ঠেলি করতাছোস কেলা! চুপ কইরা ব, দুরে ছর, দুরে ছর, সিজিল কইরা ব, হুজুরের চক্কির লগে যেন ঠ্যাং না লাগে, ঐ ছেমরী তর পোলা ছামলা'।



হুজুর এবার প্যাকেট থেকে চারটে আগরবাতি জ্বালিয়ে চাল ভরা একটা পুরোনো কৌটার মধ্যে গুজে রেখে সামনের দিকে তাকায়। তার হাল্কা কাঁচা পাকা মেহেদী লাগানো দাড়িতে বা হাত বুলাতে বুলাতে সামনে বসা বাচ্চা আলা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে ?

'কও কি অইছে'?

'হুজুর আমার পুলাডা তিন দিন ধইরা রাইতে ঘুমায় না, খালি চইমকা চইমকা উঠে আর চিক্কুর পাইরা কান্দে। আমার ছাছুড়ি কইলো 'জীনের বদ নজর লাগছে, জলদি হুজুরের কাছে লইয়া যা' ।

এট্টুসখানি ঝাইরা দেন হুজু..র'।



'আনো কাছে আনো, হ হ ঐখানেই থাড়াও আর আউগাইয়োনা, তুমার পুলার চেহারাডা একটু দেইখা লই', ভালো করে একবার বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো,

' মুখটা এইদিক করো দেখি, হ তোমার ছাছুড়ি হাঁচাই কইছে, বদ নজরই লাগছে'।



হুজুর একটা ছোট্ট কাগজে লেখা তাবিজ মহিলার দিকে বাড়িয়ে ধরলো,



'ধরো এইডা, রুপার তাবিজে ভইরা কালা ছুতা দিয়া পুলার কোমোরে বাইন্ধা রাইখো আছরের নামাজ পইরা। ঠিক মত নামাজ কালাম পইরো আর যদ্দুর মনে অয় তুমি ছন্ধ্যার ছময় পুলা লয়া বাইর অইছিলা' !

দশটা টাকা হুজুরের হাতে দিয়ে মাথা নীচু করে মহিলার প্রস্থান। হুজুর কি যেন বিড় বিড় করতে থাকে।

এর পর এগিয়ে আসে এক তরুনী। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, চুলগুলো উস্কোখুস্কো। শীর্নদেহে মলিন শাড়িটা টেনে টুনে একটু সামনে এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে কথা বলতে শুরু করে, ভাবটা যেন তার দীনতার কথা কেউ শুনে না ফেলে।

'আব্বে কি কইতাছো! একটু জোরে জোরে কও, ঠিক মত ছুনবার পারতাছিনা '!

হুজুর বিরক্ত হয়ে উঠে।

মেয়েটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে দম নিয়ে গলাটা একটু উচুস্বরে তুলে বলে, 'হুজু.র কি আর কমু , আমার ছোয়ামীতো আমগো বস্তিরই এক মাগীর লগে কয়দিন ধইরা আছনাই করবার লাগছে'।

'বুঝলা কেমতে'!

হুজুরের কথায় তরুনীটি আবার বলতে শুরু করে।

'হুজু..র আমি তো পয়লা পরথম কিচ্ছুই বুঝবার পারি নাইক্কা, আমগো ঘরের লগে থাকে যে আমার ছই বুলবুলি, উই ছেদিন আমারে ডাইকা কয়,



"কিরে, তর মুন্নীর বাপ যে ঐ ঘরের আদুরীর লগে পিরীত করতাছে তুই কি কিছুই বুঝবার পারোছ না!'

বুলবুলির কথা ছুইনা আমার বুকটা ধ্বক্‌ কইরা উঠলো হুজু..র। আমি কইলাম 'কইতাছোছ কি তুই' ?

'হ হাচা কইতাছি, মিছা কমু কেলা! তুই আইজ রাইতে জাইগা দেখিছ হাচা কই না মিছা কই' ! জোর গলায় বলে উঠে বুলবুলি।

'হুজুর এই কথা ছুইনা আমি তিন রাইত জাইগা রইছি, দেখি মাঝরাইতে উইঠা আমার খসম ঘর থিকা বাইর অইতাছে, হাতে একখান ঠোংগা। আমি কি কমু বুঝবার পারলাম না। আস্তে কইরা পিছন পিছন যায়া দেখি মুন্নীর বাপ গুসোল খানার কোনায় খাড়ায়া আদুরীর লগে হাছাহাছি করতাছে, আর ঠোংগা থিকা কি জানি বাইর কইরা ওরে খিলায় দিতাছে'।



'হুজুর এর পর থেইক্কা আমি খিয়াল কইরা দেখছি, পরায় রাইতেই হ্যায় ভি বাইরে যাইবার লাইগ্গা উঠে, উই ছেমরী ভি বাইরে যাইবার লাইগ্গা উঠে। আপনি একটা কিছু করেন হুজুর, আমার পিচ্চি দুইখান মাইয়া'।



'যাও যাও চিন্তা কইরো না ছব ঠিক হয়া যাইবো। তুমার সোয়ামীরে পানি পড়া খিলাইতে পারবা নি হেইডা কও'?

'হ তা পারুম ' বিষন্ন করুন কন্ঠে তরুনীর উত্তর।

'ঐ ছহীদ কই গেলি'?

'এই যে হুজুর আমি তো এহানেই খাড়ায় আছি'।

"ওই ঐ যে নীল ডেরামে ছামী বছ করনের লেগা পানি ফু দিয়া রাখছি ঐ খান থিক্কা এক বোতল পানি দিয়া দে, বোতল আনছো নি ? না আনলে আলাদা দশটাক্কা দেওন লাগবো' মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বল্লো বারেক ফকির।

না না হুজুর আনছি', শহীদ পানি এনে দেয়।

'এই লও, নিয়ম কইরা তিন বেলা খাওয়াইবা কয়া দিলাম। এক ছপ্তাহ পর আবার আইছো'।

মেয়েটা দশ টাকা দিয়ে পানির বোতল নিয়ে যায়।



কিছুক্ষন পর পকেট হাতড়ে কতগুলো খুচরা টাকা বের করে গুনে দরজা দাড়ানো শহীদের দিকে বাড়িয়ে ধরে বারেক ফকির।

'আব্বে ঐ ছহীদ , এই ল একছ টাকা, আমার বড় পোলারে দিয়া ক হেরে বাজারে যাইতে, নইলে আইজ খাওন নাইক্কা'।



কিছুক্ষন পর হুজুর তাকিয়ে দেখলো পেছনে একটা ১৮ /২০ বছরের ছেলে পেটে হাত দিয়ে বসা। পাড়ার ছেলে মুখ চেনা ।

'কি অইছে তুমি অখন আইছো কেলা ? তুমি জানোনা অখন মাইয়া মাইনছের টাইম। বিকালে আহো তখন ছুনমুনে '।

'হুজুর আমি জানি , মাগার বহুৎ বিপদে পইরা আইছি এই টাইমে'।

'হ বিপদে পড়লেই তো আমার কাছে মাইনছে আহে, হুদাইতো আর আহেনা, তাড়াতাড়ি কও দেহি কি হইছে' ?



মহিলারা বিরক্তির নয়নে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ।



'হুজুর আপনি তো কাল্লু মাতব্বররে চিনেন' ?

হুজুর মাথাটা নাড়তেই ছেলেটি বল্লো,

'হুজুর হের পুলা ছপন আমার ন্যাংটা কালের দোস্ত। ছেদিন মোড়ের মাথায় খারায় রইছি, উই জানি কইথিক্কা লৌড় পাইরা আইলো কইবার পারুম না। আমারে কয়, 'দোস্ত এই জিনিসটা একটু রাখবার পাড়বি'? কইয়া আমার হাতে কাগজে পেচাইনা কি এক্ষান পেকিট ধরায়া দিয়াই আবার লৌড়।



আমি চুপি দিয়া চায়া দেখি হেইডার মধ্যে এক খান পিস্তল! দেইখাতো আমি ফিট হয়া যাইবার লাগছিলাম হুজু..র! যাউক্গ্গা তাড়াতাড়ি বাইত আয়া চক্কির নিচে আমার টেরাংকের মইধ্যে হান্দায় থুইলাম। ছক্কাল বেলা হ্যায় আয়া কইলো 'কাইলকার জিনিছটা দে',

আমি ডরে ডরে বাইর কইরা দিলাম। কইলো, 'ছন্ধ্যা বেলায় আমগো বাইত আহিছ , তরে হাজীর বিরানী খিলামু'।



'হুজু..র ইমানে কইতাছি হাজীর বিরানীর কথা ছুইনা লোভ ছামলাইতে পারিনাইক্কা, গেলাম। আরো বহুৎ কিছু আছিলো মাগার আমি আর কিচ্ছু খাই নাইক্কা, ইমানে কইতাছি। কিন্ত রাইতে থিকা হুজু..র আমার এমুন পেট ছুটলো যে কয়া পারুমনা। ছক্কাল বেলা আমারে বদনা লয়া আমারে বাইর বাড়ীতে লৌড় পারতে দেইখা আমার মায়ে জিগাইলো 'কি অইছে তর '?

মায়েরে ছব ঘটনা খুইলা কইলাম। হুইনা হ্যায়তো চিল্লায়া বাড়ি মাথায় তুইলা ফালাইলো,

কইলো, "হেই হারামীর পুত নিশ্চয় তরে বান মারছে, নইলে হাজীর বিরানী খায়া তর এমুন অইবো কেলা। অক্ষন হুজুরের কাছে যা"।

এর লেগাই এই টাইমে আইছি হুজুর'।



হুজুর একটা তাবিজ আর তার ড্রামে ভরা যাদু টোনা দুর করার ফু দেয়া পড়া পানি এক বোতল দিয়ে তিন বেলা নিয়ম করে খেতে বল্লো।

'হ তর মায়ে ঠিকই কইছে। তর বাপ এক পাট্টি করে, ছপনের বাপ কাল্লু মাতবর আরেক পাট্টি । হেগো বাড়িত যাইয়া তর খাওন ঠিক হয় নাইক্কা।বানই মারছে তরে'।

হুজুরের কথায় ছেলেটি চিৎকার করে কেঁদে উঠে,

" হুজুর আমারে বাঁচান, এমুন কাম আমি আর জীন্দেগীতেও করুম না, কছম কইবার লাগছি'।

'আইচ্ছা অহন যা পানি পড়া দিছি লগে তাবিজ ভী দিছি কুনো ডর নাইক্কা। ছব বাণ টান কাইটা যাইবো, আমার তাবিজের কথা কি তুই জানোছনা'!

'হ হুজুর তাতো জানি, হের লেগায় মায় আপনার কাছে আইবার কইলো জলদি কইরা'।



'ঐ ছহীদ টাইম কয়টা'? মুখ না তুলেই বারেক ফকির প্রশ্ন করে।

'হুজু..র পরায় একটা বাজ বার লাগছে' শহীদের উত্তর ।

'হায় হায় নামাজের ছময় হয়া আসলো দেখতাছি, এই তোমরা উঠো উঠো কাইল আইছো'।

বিমর্ষ বদনে বাকী মহিলারা উঠে দাড়ায়, একজন জানতে চায়,

'হুজু..র কাইল বইবেনতো না কি'?

হ হ বহুম না কেলা ! এইডা আবার কেমুন কথা কইতাছো'!

'না এমনি জিগাইলাম'।

সবাই চলে যাওয়ার পর ঘরে ঢুকে বারেক ফকির দেখলো ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো ভাতের জন্য মাটিতে বসে কান্নাকাটি করছে আর কমলা বিছানায় শুয়ে অসহায় দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।

লগে লগে চৌক্ষের মধ্যে মুন্নীর মার চেহারাডা একবার চিল্লিক দিয়া উঠলো, যার খছম কিনা আদুরীর লগে আছনাই করবার লাগছে। না আরেকটা বিয়ে করনই লাগবো দেখতাছি। কমলির কথা আর ফালান যাইবো না।



কিন্ত ছারাদিনে মাইনছের দেওয়া এই দছ বিছ টাকা দিয়া এত্ত বড় ছংসারটা চলবো কেমতে এইডা ভাইবা মাথাডা কেমুন জানি চক্কর দিয়া উঠলো আর খাড়ায় থাকবার পারতাছিনা ।



বলে ধ্বপ করে বসে পড়লো বারেক ফকির কমলির পায়ের কাছে।

21 April, 2018

মোঃ রিপন মিয়া,বেংদহ পাতাইর


মোঃ রিপন মিয়া
গ্রামঃ বেংদহ পাতাইর
ডাকঘরঃ কিচক
উপজেলাঃ শিবগঞ্জ
জেলাঃ বগুড়া

03 April, 2018

অভিমানী


!

(১) বিয়ের অনুষ্ঠানে এক একা বসে আছে লিমা। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে সে। বিরক্ত লাগছে তার অনেক বেশি। আগেই জানতো এখানে এসে একা থাকতে হবে, তাই আসতেই চায়নি সে। কিন্তু মায়ের পিড়াপীড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন কাজ না পেয়ে ফেসবুকে লগইন করলো। করেই দেখে অনলাইনে রাকিব, লিমার বয়ফ্রেন্ড !
- কি করো, জান ? ( লিমাকে অনলাইনে দেখামাত্রই রাকিবের মেসেজ )
- কিছু না। মেজাজ খারাপ এখন।
- হইছে টা কি ?
- কথা বলবা না।
- ওকে।
- ওকে মানে কি ?
- তুমিই তো বললা কথা বলতে না।
- তাই বলে আমার সাথে কথা বলবা না ?
- আরেহ আশ্চর্য তুমিই তো বললা !
- ও বুঝছি তুমি তো এখন মেয়েদের সাথে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত। করো করো যত ইচ্ছা চ্যাট করো।
- আজব তো। হু করতেছি আমি চ্যাট। তোমার কি তাতে ?
- কি ??????????
- জানো আমি এখন ১০ জন মেয়ের সাথে চ্যাট করতেছি !
প্রচন্ড রাগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে যায় লিমা !
ইচ্ছা করেই রাকিব কাজটা করে। লিমাকে রাগিয়ে দেয় সে। আর লিমাও একটু আহ্লাদী মেয়ে, মন মত কিছু না হলেও হয়েছে, প্রচন্ড রেগে যায় সে। বরাবরের মতই এখন রাগে ফুঁসছে সে। ফর্সা, গোলগাল চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। একটু পরেই আবার ফেসবুকে গেলো। গিয়ে নিজের আইডি থেকে লগআউট করে রাকিবের আইডিতে গেলো। গিয়ে দেখে কিসের কি ! সে বাদে সর্বশেষ মেসেজিং করেছে তার বন্ধুদের সাথে। কোন মেয়ের সাথেই তার চ্যাটিং হয়নি। তারমানে মিথ্যা বলেছে সে ! আরেকদফা রেগে গেলো লিমা। আবার নিজের আইডিতে গিয়ে রাকিবকে মেসেজ দিলো, " আমার সাথে মিথ্যা কথা বললা কেন ? "
- তারমানে তুমি আমার আইডিতে লগইন করেছিলে ? ছি ছি ! না বলে অন্যের আইডিতে যাও, লজ্জা নাই তোমার ?
- কি ????????????
- এত কি কি করো কেন ?
- তোমার সাথে কথা নাই।
- আরেহ আজব !
রিপ্লাই দেয় না লিমা। রেগে মেগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেছে সে। একটু পরে আবার লগইন করে দেখে একটা লাভ স্টোরি দিয়েছে রাকিব, নায়ক যথারীতি আর্মি অফিসার !
- আচ্ছা তুমি এত আর্মি আর্মি করো কেন গল্পে ?
- এনি প্রব্লেম ?
- মানে কি ?
- মানে হচ্ছে আমার গল্পের প্লটের সাথে আর্মি অফিসারেরা বেশি খাপ খায়, তাই ওভাবে দেই। আমি ওভাবে কল্পনা করে লিখতে পছন্দ করি।
- না তুমি এভাবে বলো নাই !
- মানে ?
- তুমি প্রথমে অন্যভাবে বলেছ।
- আরেহ আজব।
- কি আজব ?
- তুমি ! নারায়ণগঞ্জের মেয়ে তো, একটু বেশি সন্দেহপ্রবণ ! সবসময় একটু বেশি বুঝে !
- তোমার সাথে কথা নাই।
- উফফ !! কিছু হইলেই খালি কথা নাই, কথা নাই বলে গান শুরু করে দিবে মেয়েটা !
- তুমি মুড়ি খাও।
- তুমি বিয়েতে গেছো না ?
- হুম।
- তাইলে তুমি ভালো করে মোরগ-পোলাও খাও ! তাইলে যদি মাথায় একটু বুদ্ধি হয় !
মেসেজ দেখে আবার রেগে গেলো লিমা। এবার আর কথাই নাই। সোজা আইডি ডি-অ্যাক্টিভ করে বের হয়ে গেলো।
পরদিন বিকালে পার্কে বসে আছে রাকিব। গতরাতে লিমাকে প্রচন্ড রাগিয়ে দিয়েছে সে ! যে কারণে মেয়েটা প্রথম প্রথম তার ফোনও ধরনি।
মোবাইলের মেসেজে অনবরত সরি বলার বলার পরে একবার ফোন ধরেছিল। ফোনেও অনেকবার সরি বলেছে, লিমা কোন কথা বলেনি। তাই তাকে বিকালে এখানে আসতে বলেছে। যতই কথা না বলুক রাকিব জানে লিমা না এসে পারবে না। যথা সময়েই লিমা এসে হাজির। রাকিবকে দেখেই, " তোমার সাথে কোন কথা নাই। " মুচকি হাসে রাকিব। রাগলে লিমাকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। তাই ইচ্ছা করেই সে তাকে রাগায়। আর সে ভালো করেই।জানে লিমার রাগ কি করে ভাঙ্গাতে হয় !
পকেট থেকে কিটক্যাটের একটা বড় প্যাকেট বের করে বললো, " ভেবেছিলাম তোমাকে দিবো কিন্তু এখন এটা দেওয়ার জন্য মনে হয় অন্য একজন মেয়ে খুঁজতে হবে !
" কি ? " চোখে পাকিয়ে বলে লিমা। " এটা আমার জন্য আনোনি ?
- এনেছিলাম তোমার জন্যই। কিন্তু তুমি তো নিতে চাও না ...
- ফাজিল।
আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না লিমা। হেসে ফেললো সে। তার মধ্যে এখনো বাচ্চাদের মত চকলেটপ্রীতি কাজ করে। আর সেটা জানে রাকিব। লিমার রাগ ভাঙ্গাতে সে তাই চকলেটের ব্যবহারই করে !
এভাবেই তাদের খুনসুটির সমাপ্তি ঘটে যেটা গত দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত চলে আসছে !
পার্কে বসে রাকিবের কাঁধে মাথা রেখে চকলেট খাচ্ছে লিমা !
আর দুজনে নীরবে উপভোগ করছে পড়ন্ত বিকেলের আশ্চর্য সুন্দর, মায়াবী পরিবেশটা !
দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার এ দৃশ্যটা আশ্চর্য সুন্দর, সমস্ত সৌন্দর্যকে যেন হার মানিয়ে যায় ! অসাধারণ সুন্দর আর মায়াবী পড়ন্ত বিকেলও এ দৃশ্য দেখে যেন হিংসায় মরে যায় !

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...