07 February, 2019

শেষ চিঠি

প্রিয় ক অথবা খ অথবা অন্যকিছু



আগষ্টের ২২ তারিখের কথা মনে আছে?হুমম ২০০৮ সালের কথাই বলছি।আমি সকালে ঘুমাচ্ছিলাম,তুই আমাকে ভোর ৫টায় ফোন দিয়ে বললি “শুধু একবার বল,তাহলে আমি পালিয়ে চলে আসবো” আমি বলদের মত বলে বসলাম “তোকে আমি পরে ফোন দিব”।



তারপর কি হল আমার মনে নেই।ঘুম থেকে উঠলাম ১২টায়।নিয়ম অনুযায়ী সিগারেট ধরিয়ে তোকে ফোন দিলাম।তুই ধরলিনা।গোসল করে এসে আবার ফোন দিলাম ধরলিনা।আবার দিলাম তাও ধরলিনা।হঠাৎ আমার বুকটা যেন কেঁপ উঠল।আমার মনে পড়ে গেল আজ তোর বিয়ে।অথচ আমি কত বোকা বিয়েটা দুপুরে নাকি রাতে তাই জানিনা।



ভাত খেলাম,গতকাল টিউশনিতে যাইনি।তাই আজ যেতে হবে।সিগেরেট ধরিয়ে গেলাম টিউশনিতে। আমার ছাত্রটা ভীষন ফাজিল বলে স্যার আপনার কি মন খারাপ? আমি জানি আমার মন খারাপ না।বরং কিছুটা মুক্তির স্বাদ অনুভব করছি। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।কি যেন হচ্ছে আমার।আমি জানি তোর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে।হুমম ঝগড়া হয়েছে। তোকে একটা ছেলের সাথে দেখেছে আমার বন্ধু।তুই অস্বীকার করেছিস।পরে আবার স্বীকার করেছিলি।তুই আমার কাছে মাফ চেয়েছিলি।কিন্তু আমি মহৎ হয়ে তোকে ক্ষমা করতে পারিনি।এরপর তোর বিয়ে ঠিক হল।আমি বললাম করে ফেল,আমি আমার মত করে খুজে নিব। খুজে নিশ্চয় নিব।নীলা মিলা একজন আমার জীবনে আসবে নিশ্চয়।



সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় হাজিরা দিলাম।আজ আর সিগারেটকে বিড়ি বললাম না,সিগারেটই বললাম।অংশ নিলাম না ক্লাসের শ্যামার শরীর বিষয়ক আলোচনায়,এমনকি একটুও হাসলাম না অশ্লীল জোকস শুনে।রাস্তায় সুন্দরী নারীরাও আজ আমার বাজে দৃষ্টি থেকে বেঁচে গেল।



১২ টায় বাসায় ফিরলাম।ঘরের দরজা বন্ধ করে কম্পিউটারে যখন গান ছাড়লাম তখন মনে হল আচ্ছা তুই এখন কি করছিসরে? বাসর রাতে স্বামীর শরীরের পুজা করছিস বুঝি? না না তা কিভাবে হবে? তুইতো বলেছিলি “আমার শরীর তোর নামে দলিল করা,কেউ ছুতে পারবেনা”আমি বলেছিলাম কেউ যদি অবৈধ দখল নেয়? তুই খু্ব হাসছিলি।আমি হাসলাম।এখনো হাসছি।মনে মনে ভাবছিলাম একবার যদি সুযোগ পেতাম তাহলে তোকে মাফ করে দিতাম।বলতাম “যা সব ভুলে গেছি,চলে আয় আমার কাছে”



কিভাবে যেন রাতটা কেটে গেল।সকালে নাস্তা না করেই ক্যাম্পাসে দৌড় দিলাম।মুন্নীকে (যাকে তুই সবচে বেশী সন্দেহ করতি) দিয়ে তোর নম্বরে ফোন করালাম।তোর মা ধরেছিল।তারপর তোর স্বামীর নম্বর জোগাড় করে মুন্নীকে দিয়ে ফোন করালাম।একবার কণ্ঠ শুনতে চেয়েছিলাম।তু্‌ই আমার সাথে কথা বলেছিল,না আসলে কেদেছিলি।আমি কি কেঁদেছিলাম।জানিনা।তবে আজ কেন জানি জানতে মন চাচ্ছে।

সেদিনের পর আর কখনো তোর সাথে কথা হয়নি।আমি চেষ্টা করেছিলাম।তুই শক্ত হাতে আমাকে দমন করেছিলি।



তোর চলে যাওয়াতে আমার কোন কিছু বদলায়নি।ঘুম থেকে উঠে ঠিকমতই ব্রাশ করি, আড্ডাবাজি করি,ঘুমাই।তবে ঘুম ভাঙ্গানি চুমুটা আর পাওয়া হয়না।খুব ভোরে ক্লাস  থাকলে কেউ হয়ত ফোন দিয়ে বলেনা “ওই উঠ,এত ঘুমাস ক্যান”।



তুই বলেছিলি যে ঠোটে সিগারেট খাস ওই ঠোটে আমাকে চুমু খেতে পারবিনা।আসলেই পারি নারে।এখনো সিগারেট ছাড়তে পারিনি।তুই থাকলে হয়ত চুমুর লোভে ছেড়ে দিতাম।তোকে ক্ষমা করার সময়টুকু দিলিনা। আমি কি ক্ষমাপ্রার্থী? না না আমি ক্ষমা প্রার্থী হব কেন? আমি অপরাধ করেছি নাকি?



তুই একজনের বৌ ভাবতেই আমার হাসি আসে।এইতো সেদিন একসাথে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে দুজন দুজায়গায় ভর্তি হলাম।পিচ্চি একটা মেয়ে তুই,সংসার চালাস কিভাবে? বাদ দে সেসব কথা।আচ্ছা বলতো তোর স্বামী কি আমার মত সিগারেট খায়? চুমু খেতে দিস? আমার দলিলটা কোথায় রেখেছিস?বেদখল না দলিল অন্য নামে হস্তান্তর করেছিস?



এ চিঠি তোর কাছে আমার লিখা শেষ চিঠি।আর কখনই লিখবোনা তোর অধ্যায় এখানেই শেষ করবো।আচ্ছা আমার চিঠিগুলো কোথায়রে? প্রতিদিন একটা করে চিঠি দেয়ার নিয়ম  ছিল। প্রায় সময় আমি দিতে পারতাম না। এ নিয়ে আমার সাথে কত অভিমান তোর? আমি ছিলাম ভীষন অলস।চিঠি লিখেতে আলসেমী লাগত।আজ আর আলসেমী লাগছে না।ইচ্ছে হচ্ছে লিখতে থাকি।তুই বলেছিলি “বাসর রাতে চিঠি নিয়ে ঢুকবি নইলে রুম থেকে বাইর ঘরে করে দিব” আমি বলেছিলাম “বাসর রাতে তোরে আমি একটা উপন্যাস সাইজের চিঠি দিব,পড়তে পড়তে রাত কেটে যাবে,আদর করার সময় পাবিনা” তুই কেবল নাক উল্টিয়ে ভেংচি কেটেছিলি।আচ্ছা তোর স্বামী কি তোকে চিঠি দেয়?



তুই জানিস মাঝে মাঝে তোর দেয়া চিঠিগুলোর সাথে কথা বলি। তোর লিখা গোটা গোটা হরফের শব্দগুলো আমার সাথে জমিয়ে প্রেম করে। এটা কি পরকীয়া??



ভাল থাকিস। আমিও ভাল থাকবো।শেষ চিঠির একটা সমস্যা আছে।চিঠি শেষ হতে চায় না।তবুও ভাল থাকিস।



ইতি

তোর গ অথবা ম অথবা কেউ না।

No comments:

Post a Comment

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...