07 February, 2019

তুমি আছো নীরবে

"এই ছবি প্রিন্ট করা যাবে? কেমনে?" তার কথার উত্তরে অতি উৎসাহে বললাম, "যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে। যে কোন কালার ল্যাব-এ বললেই হয়ে যাবে।" উনি বললেন, "এই লুবনা, ছবি গুলো প্রিন্ট করে... ... ..."

আব্বা আমার তোলা ছবি প্রিন্ট করাতে চাচ্ছেন, এইটা স্বপ্ন না তো? যদ্দুর বুঝি আমার ঐ ছবি তোলার নেশা তার খুব একটা পছন্দ না। ফার্স্ট সেমিস্টার শেষে আমি যখন বেশ ভারী একটা GPA নিয়ে রাজবাড়ী তার কাছে গেলাম, তখন কোনো এক ভোরে তিনি আমাকে বলেছিলেন, "ছবি তুলবি না কেন? মাঝে মধ্যে তুল্লি। যখন কিছু হইলো কিংবা কোথাও গেলি। ল' টা ভালো করে শেষ কর। এই সব ফটোগ্রাফি কি? মানুষ কি বলে?" আমি বললাম, "আমার রেসাল্ট তো ভালোই হইসে। আমার ডিপার্টমেন্টের সব চেয়ে বেশি GPA আমার।" তারপরেও তাকে খুব একটা ভরসা পেতে দেখলাম না। আমি মেনে নিলাম আমার এই ফটোগ্রাফির ধ্যান ধারনা তার পছন্দ না।

আর আজ একি শুনি? গ্রামের বাড়ীতে প্রথম বারের মত আমার DSLR ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ায় উঠনে উঠেই কিছু র‍্যানডম ক্লিক করেছিলাম। আর আব্বা অই গুলো প্রিন্ট করাতে চাচ্ছেন?!! উনি কোনো দিনও আমার তোলা কোন ছবি দেখেন নাই। আমি মেনে নিয়েছিলাম, উনার কাছে ফটোগ্রাফি মানে শুধু মানুষের ছবি তোলা, আর কিছু না। উনি ফটোগ্রাফি বুঝেন না।

সেই আব্বা গ্রামে গিয়ে আমার তোলা সব... একদম সব ছবি প্রিন্ট করানোর কথা বলছেন। বলাই বাহুল্য, এর আগে হাজার হাজার ছবি তুল্লেও কোন দিন একটা ছবিও প্রিন্ট করানো হয় নাই। আমার ভেতরে একটা চাঁপা অহংকার ও ভালোলাগা এক সাথে কাজ করছিল।

শেষমেশ আমাকে অবাক করে দিয়ে কয়েক দিন পরেই একদিন দেখলাম কয়েক বান্ডেল ছবি নিয়ে বসার ঘরে সবাই দেখছে। একি!! সব যে আমার তোলা অই র‍্যানডম ক্যাপচার গুলো!!! আব্বা কি করে পারলো কয়েক হাজার টাকা দিয়ে এইগুলো সব প্রিন্ট করাতে? আমি ভিতরে ভিতরে সুখে মরে যাচ্ছিলাম।




আব্বা, আমি আজ কষ্টে মরে যাচ্ছি আব্বা। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আব্বা। দম বন্ধ হয়ে আসছে আব্বা। তুমি ফিরে না আসার যেই অমোঘ দেশেই যাও না কেন, তুমি আটকে পড়ে আছো আমার কষ্ট, উপলব্ধি, কান্না, কিংবা হারিয়ে ফেলা যে কোনও স্মৃতি... সব কিছুতেই। আব্বা, আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি। সবচেয়ে বেশি।
পুনশ্চঃ ছবিটি কোরবানির ঈদ'২০১০-এর। পরিবারের সবাই আগেই দাদা বাড়ীতে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম ঈদের ঠিক আগের দিন। বরাবরের মতই বেশ সাজ সাজ রব। খুব মজা করে ছবি তুলছিলাম। উঠনে আমার দুই বোন একবার মা'কে ধরে একবার আব্বাকে ধরে অদ্ভুত অদ্ভুত পোজ দিচ্ছিলো। আব্বা বড় ঘরের চৌ-কাঠে বসতেই এই ছবিটা তোলা।

পুনশ্চ ২- কোন পোজ দিয়ে না- ন্যাচারালি। উনি পোজ বড় খারাপ দিতেন।

কয়েক দিন হলো আপনাদের গ্রুপ থেকে ভালবাসার গল্প পড়ছি। বেশ লাগে সুখ আর দুঃখের সংমিশ্রণ গুলো। এর মধ্যেই আর কয়েকটা স্বাভাবিকতার মধ্যেই চলে গেলো আমার আব্বা। উন্মাদের মত হাতড়ে ফিরছি তার প্রত্যেকটা স্মৃতি। আটাচমেন্টে যে লেখাটা পাঠালাম তা হয়তো গুন বিচারে গল্পের মর্যাদা পাবে না তবু সন্তুষ্টি এই মাত্র লিখাটা শত ভাগ সত্যি। খাদহীন স্মৃতি হাতড়ে লিখা। গ্রুপের সব গল্পই যেখানে একটি গতানুগতিক ও নির্দিষ্ট সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে লিখা সেখানে আমার আব্বার অনুপস্থিতি সংক্রান্ত আমার শুন্যতার যন্ত্রনা জায়গা পাবে কিনা জানি না। তবু এই জন্যই মেইল করছি যদি এই গ্রুপ মারফত কেউ লিখাটা পড়ে আব্বার জন্যও দোয়া করেন।

No comments:

Post a Comment

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...