07 February, 2019

ভালোবাসায় সাতার কাটি

আজ সকাল বেলায় ঘুম ভেঙেই আমার বিড়ালটার কথা খুব মনে পড়ে গেল।কতদিন দেখিনা

বিড়ালটাকে।নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে ভাবছেন,ভালোবাসার গল্প লিখতে গিয়ে বিড়াল নিয়ে কেন

বকবক করছি!কি করব বলেন!আমার ভালোবাসার গল্পের পুরোটা জুড়েই যে আমার বিড়ালটা!আমার

প্রাণের বিড়াল!!!



যাকগে,খুলেই বলি।বিড়ালের নাম হল নুহা।আমি অবশ্য তাকে গুহা বলেই

ক্ষ্যাপাই।ভাবছেন,এত কিছু থাকতে(ময়না পাখি,জান,প্রান,টুনটুনি...)তাকে বিড়াল কেন

ডাকি!প্রথমত,তার চেহারাটা এতটাই আদুরে আর মায়ামায়া যে ওকে দেখলেই আমার বিড়ালের কথা

মনে পড়ে।দ্বিতীয়ত,বিড়ালের মতই ও ময়লা সহ্য করতে পারেনা।ওর সাথে দেখা করতে গেলেই ও

নাক কুঁচকে বলবে,’উহ!শার্টটা কতদিন ধোয়া হয়নি বলতো!শেভ করনি কেন?’

আর মজার ব্যাপার হল,ওর চোখের কালার ব্ল্যাক না।পুরা বিড়ালের চোখ,ক্যাটস আই

যাকে বলে আর কি।এতগুলা বৈশিষ্ট্য থাকার পর তাকে বিড়াল না ডাকাই হত অন্যায়!এখন কথা

হচ্ছে,বিড়ালটাকে ভয়াবহ মিস করছি।তাকে ফোন করছিনা কেন ভাবছেন?কি করে করি?আমার এখানে

ভোর ৬টা মানে ওর ওখানে(আমার বিড়ালটা মেলবোর্নে) রাত ২টা।আমার ঘুম কাতুরে বিড়ালটা

হয়তো অঘোরে ঘুমাচ্ছে।ঘুমাক।সেই ফাঁকে আপনাদের আমার বিড়ালটার গল্প শোনাই।

নুহাকে প্রথম দেখি IUT(Islamic University of

Technology)এর গেটের সামনে।সাদা ফ্রকপরা বাচ্চা একটা মেয়ে।কার জন্য যেন ওয়েট

করছে।একটু পরপর ফোন দিচ্ছে আর ঘড়ি দেখছে।যেহেতু আমরা সম্পূর্ণভাবেই নারী বিবর্জিত,তাই এখানে কেউ এভাবে দাঁড়িয়ে

থাকলে আমরা নজর দিইনা,কে জানে কোন বড়ভাইয়ের কে!কিন্তু নুহার কথা আলাদা।চোখ ফেরান

মুশকিল।একটুপর যিনি বের হয়ে নুহার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসলেন,তাকে দেখে

পুরা চুপসে গেলাম আমি।রাকিব ভাই!আমাদের অতি প্রিয় বড়ভাই।কথা বলতে বলতে আমাদের দিকে

চোখ পড়ল উনার।হাত নেড়ে ডাকলেন,ওই রায়ান,এদিকে আয়।

খাইছে!সাদাফ্রকের সুন্দরীর দিকে

তাকানোর জন্য কপালে কোন খারাপি আছে কে জানে!

-জী রাকিব ভাই!

-কিরে কি করস ওইখানে খাড়াইয়া?

-না ভাই কিছু না।টিউশনিতে যাবতো।তাই

রিকশা খুজতেছি।আপনি যাবেন না আজকে?

-না,আজকে আমার ছাত্রী নিজেই চলে আসছে।

বলেই উনি নুহার দিকে তাকিয়ে বললেন,নুহা

এ হল রায়ান।ইলেকট্রনিক্স এর বস।মনে মনে ভীষণ কৃতজ্ঞ হলাম রাকিব ভাইয়ের

প্রতি।না,না।এইজন্য না যে,উনি আমাকে এতবড় কমপ্লিমেন্ট দিলেন।কৃতজ্ঞতা এই কারনে যে

উনি নুহার বয়ফ্রেন্ড না।এভাবেই পরিচয় হল এই গ্রহের সবচেয়ে অসাধারন মেয়েটার

সাথে।রাকিব ভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম,তার এই ছাত্রী অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট।ইন্টার

ফার্স্টইয়ার,রাজউক কলেজ।আজকে আসছিলো ভাইয়ের পেনড্রাইভ নিতে।(ভাগ্যিস

আসছিলো)



।টুকটাক কথার পর রাকিব ভাই ওকে বললেন,ঠিক আছে নুহা,কালকে আমি আসব।চল বাসে

তুলে দেই তোমাকে।রায়ান তো ওদিক দিয়েই যাবি,ওকে তুলে দিতে পারবি না?

নুহা সামনে না থাকলে পা ছুঁয়ে সালাম

করতাম ভাইয়ের।বললাম,জী ভাই,পারব।

নুহা বলল,আমি নিজেই পারব ভাইয়া।

রাকিব ভাই বললেন,আরে না না।এই রায়ান

যা।

বাসে তুলে দিয়ে নিজেও উঠে পড়লাম।চোখ

কপালে তুলে ও বলল,আপনি টিউশনিতে যাবেন না ভাইয়া?

-হ্যাঁ,উত্তরায় একটা স্টুডেন্ট আছে

আমার।

মুচকি হাসল মেয়েটা,ও!কয় নাম্বারে?

মনে মনে বললাম,তুমি যেখানে নামবা।মুখে

বললাম,এইতো জসিমুদ্দিনে।

-আরে আমার বাসাও তো ওখানে।চলেন,আমাদের

বাসা হয়ে যাবেন।

পারলে তো তখনি যাই।কিন্তু এত

হ্যাংলামি ঠিক হবেনা ভেবে বললাম,না না আরেকদিন।

-আসবেন কিন্তু ভাইয়া।

নামার আগে ভয়ে ভয়ে জানতে

চাইলাম,ফেসবুক আইডি কি তোমার?

-আপনি রাকিব

ভাইয়াকে সাজেস্ট করতে বলে দিয়েন।

রাতে রাকিব ভাই ধরলেন আমাকে,কিরে

হারামি?আমার ছাত্রীরে নাকি বাসা পর্যন্ত নিয়ে গেছিস?

-ভাই,আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে না?একটু

সাজেস্ট করেন না!

-ঠিক আছে,করলাম নাহয়।মেয়েটা কিন্তু

আসলেই ভাল রায়ান।বুঝে শুনে আগাস।

-জি ভাই।

অ্যাড করলাম।মাঝে মাঝে চ্যাট হত নুহার

সাথে।একদিন রাকিব ভাই বলল,কিরে যাবি নাকি!নুহার স্কলারশিপ ট্রিট।তোকে নিয়ে যেতে

বলল।আমি,নুহা,রাকিব ভাই,নুহার ফ্রেন্ডরা খুবই এনজয় করলাম।

এরপর থেকে রেগুলার চ্যাট

হত।বুঝতাম,বুকের ভেতর নুহার জায়গাটা আস্তে আস্তে বেড়েই যাচ্ছে।খুব ভাল করে বুঝলাম

যখন ওর টেস্ট পরীক্ষার আগে একাউন্ট ডিএকটিভ করে দিল।অস্থির লাগত খুব।ওকে একটা মেইল

করলাম কি ভীষণ মিস করছি জানিয়ে।আর সাহস করে সেল নাম্বারটাও চাইলাম।টানা তিন দিন

অপেক্ষার পর ফোনে একটা মেসেজ পেলাম,’নুহা’।



বিকালে ফোন দিলাম।পরীক্ষা কেমন হল জানতে

চাইলাম।বললাম,মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে জ্বালাব।

কথা হত,প্রায় প্রতিদিনই।কতভাবে আমার

ফিলিংসটা ওকে বোঝাতে চাইতাম।দুষ্টুমি করে এড়িয়ে যেত।অবশেষে ঠিক করলাম ভ্যালেন্টাইন

ডেতে বলেই ফেলব।জানতে চাইলাম কোচিং কখন শেষ হয়।তারপর যেন একটা মিনিট দেয় আমাকে।জানতাম,মুখে

বলতে গেলে হয় তোতলা হয়ে যাব,নয়ত সেন্সলেস হয়ে পড়ব।একটা পেন্সিলবক্স কিনলাম,তার

ভেতর আধফোঁটা একটা লালগোলাপ রেখে একটা নোট লিখলাম,’নুহা,তুমি তো খুব পড়তে

ভালবাস।আমি যদি একটা বই হয়ে তোমাকে আজীবন পড়তে দিতে চাই,পড়বে তুমি?তোমার জন্য কখনো

পুরনো হবেনা বইটা।‘

হাসবেন না প্লিজ।আমি বেরসিক

ইঞ্জিনিয়ার মানুষ।কবিত্ব আসেনা আমার।;(

যাকগে,ও বের হবার পর বক্সটা হাতে

ধরিয়ে বললাম,তোমার পরীক্ষায় কাজে লাগবে।ওকে হতভম্ব রেখে পালিয়ে বাঁচলাম।রাতে ফোন

দিতেও সাহস হলনা।দুরুদুরু বুকে ভাবছি,কিজানি হয়!সাড়ে নয়টার দিকে ফোন দিল।ধরে কি

বলব ভাবতে ভাবতে কেটে গেল।একটু পর মেসেজ,’আমার কিছু বলার ছিল,ভিতুর ডিম’।

দোয়া দরুদ

পড়ে ফোন দিলাম।ওর প্রশ্ন,বইটা পুরনো হবেনা মানলাম,যদি দুর্বোধ্য হয় কখনো?

আমি বললাম,তুমি তো পুরা ডিকশনারি

মুখস্ত জানো।

তারপর?আমার বিড়ালটা আমাকে এত  ভালবাসে কিভাবে আমি ভেবেই পাইনা।আমার

শ্বশুরমশাই অবশ্য ভিলেনের মত HSCএর পর ওকে

আপুর কাছে মেলবোর্ন পাঠিয়ে দিলেন।তাতে কি?ইয়াহু,ফেসবুক,স্কাইপ আছে না?

এয়ারপোর্টে ওকে সি অফ করতে গিয়ে

কিছুতেই চোখদুটো কথা শুনছিল না।আমার বিড়ালটা এক কোনায় টেনে নিয়ে গুনগুন করে গাইল,’চোখের

জলে ঢেউ দিওনা,চোখটা প্রেমের নদী,ভালোবাসায় সাঁতার কেটো পার তুমি যদি’......

আমি সাঁতরে যাচ্ছি।

ফোন বাজছে।আমার বিড়ালটা জাগলো বোধহয়।

No comments:

Post a Comment

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...