17 August, 2018

৬৭. অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা; যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকারভেদ; রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথ, বিমানপথ, যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাধ্যমের ভূমিকা; ডাক ব্যবস্থা; টেলিফোন ও মোবাইল; টেলিভিশন, বেতার, ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, টেলেক্স, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট, অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড আবর্তিত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্পজাত পণ্য সামগ্রী সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে স্থানান্তর করতে সুবিধা হয়। এর ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটে। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থাঃ বাংলাদেশ আকারে ছোট হলেও এখানে নানা রকম বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদেশে নদী-নালা, খাল-বিল ও হাওড় পরিপূর্ণ বলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক অমিল রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ যোগাযোগের জন্য স্থলপথের উপর নির্ভরশীল। আবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যোগাযোগের জন্য জলপথের উপর নির্ভরশীল। এদেশের আবহাওয়া সব সময় এক থাকে না। বর্ষাকালে দেশের অধিকাংশ জায়গা পানির নিচে চলে যায়। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশের এই ভিন্ন বৈশিষ্টের কারণে এখানে নানা ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রায় সারাদেশকেই যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকারভেদঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিশ্ব আজ যোগাযোগ ও তথ্য বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছে। মানুষ তার সকল বাধা-বিপত্তি ও সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে নিজেকে যোগাযোগের মহাসড়কে যুক্ত করছে। বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়ন এখন সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেসব মাধ্যমগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো নিচে দেওয়া হলো-

রেলপথঃ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা হতে জগতী পর্যন্ত ৫২.৮ কিমি রেলপথ চালু হয়। রেলপথ সাধারণত ৩ প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলো হলো মিটার গেজ, ব্রড গেজ এবং ডুয়েল গেজ বা মিশ্র গেজ। বাংলাদেশে প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হয় ১৯৮৬ সালে। ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর রেল ব্যবস্থার উন্নতির জন্য আলাদা রেলমন্ত্রণালয় গঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪৪১টি রেল স্টেশন আছে। দেশের রাজধানী, শহর ও বন্দরের সাথে যোগাযোগের জন্য রেল পথের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৮৭৭ কি.মি। এদের মধ্যে ১৮৪৩ কি.মি মিটার গেজ, ৬৫৯ কিমি ব্রড গেজ এবং ৩৭৫ কি.মি হলো ডুয়েল বা মিশ্র গেজ।

সড়ক পথঃ বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সড়ক পথ গুরত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত নয়। বাংলাদেশে সড়ক পরিবহনের সাথে নিয়োজিত সরকারি সংস্থাটির নাম হলো বিআরটিসি। এটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে এদেশে ৩৫৭৫ কি.মি জাতীয় মহাসড়ক, ৪৩২৩ কি.মি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩৬৭৮ কি.মি জেলা রোড রয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও পূর্ণাঙ্গ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব এখনও হয়নি।

নৌপথঃ বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় নৌপথের বিশেষ অবদান রয়েছে। নদী-মাতৃক দেশ হওয়ায় অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব সর্বাধিক। বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন সংস্থার নাম হলো ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কতৃপক্ষ’। বর্তমানে বাংলাদেশের নদীপথের দৈর্ঘ্য ৮৪০০ কি.মি। বাংলাদেশে সারা বছর নাব্য নদী পথের দৈর্ঘ্য ৫২০০ কি.মি। নৌপথে স্টিমার, লঞ্চ, কার্গো, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও সাধারণ নৌকা চলাচল করে। দেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনেও এর অবদান রয়েছে। আমাদের দেশের মোট যাত্রী ও পণ্য সামগ্রীর প্রায় ৭৫ ভাগই নৌপথে পরিবাহিত হয়।

বিমানপথঃ আকাশ পথে বিমানের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যাওয়া সম্ভব। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ৩টি বিমান বন্দর রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকায় অবস্থাত হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রামে অবস্থিত শাহ-আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও সিলেটে অবস্থিত ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরটি ১৯৮০ সালে চালু হয়। বাংলাদেশের যশোর, কক্সবাজার, বরিশাল, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, সৈয়দপুর এবং ঠাকুরগাঁয়ে অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের বিমান পরিবহনের উন্নতির জন্য প্রথম বেসরকারি এয়ারলাইন্স চালু হয় ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে অ্যারোবেঙ্গল এয়ারলাইন্স, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এভিয়েশন এবং এয়ার পারাবত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাধ্যমের ভূমিকাঃ শুধু পরিবহন ব্যবস্থার মাঝেই আমাদের যোগাযোগ সীমাবদ্ধ নয়। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো কিছু মাধ্যম আছে যেগুলো আমরা নিত্যদিন ব্যবহার করে যাচ্ছি। এগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করছে। যেমন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া। এই ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া বলতে মোবাইল, টেলিফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের ফলে মানুষ ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর নিতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন গণ মাধ্যম আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ডাক ব্যবস্থাঃ ডাক ব্যবস্থা বাংলাদেশের যোগাযোগের সবচেয়ে প্রাচীন মাধ্যম। ভারতীয় উপমহাদেশে ১৭৭৪ সালে ডাক সার্ভিস চালু হয়। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ইসরাইল ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ডাক বিভাগকে আধুনিক করার জন্য ১৯৮৬ সালে পোস্ট কোড চালু করে। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে ডাকঘরের সংখ্যা ৯৮৮৬ টি।

টেলিফোন ও মোবাইলঃ ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ফোন চালু হয় ১৯৯০ সালের ৫ জানুয়ারি। ১৯৯২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে কার্ড ফোন চালু হয় এবং ১৯৯৩ সালের ৮ আগস্ট সেলুলার ফোন চালু হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে। সেগুলো হলো- সিটিসেল, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক এবং এয়ারটেল। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯.৮৪ কোটি।

টেলিভিশনঃ ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ২টি পূর্ণাঙ্গ সরকারি টেলিভিশন কেন্দ্র এবং ১৪টি উপকেন্দ্র বা রিলে কেন্দ্র রয়েছে। ২০০০ সালে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে ‘একুশে টিভি’ নামে একটি টিভি চ্যানেল খোলা হয়। তবে ইতোমধ্যে অনেকগুলো স্যাটেলাইট বাংলা চ্যানেল এদেশে তাদের অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এগুলো হলো- চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এনটিভি, বাংলা ভিশন, বৈশাখী ইত্যাদি।

বেতারঃ ১৯৪৭ সালে এদেশে মাত্র একটি বেতার কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে। বেতারের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের কার্যক্রমে বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবি ও নেপালি ইত্যাদি। এছাড়াও ১২টি বেসরকারি এফএম রেডিও রয়েছে। গ্রাম অঞ্চলে রেডিওগুলো তাদের বার্তা প্রচার করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় আবহাওয়া সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া হয় এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষগুলোকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়। এভাবে বেতারের মাধ্যমে নানা ধরণের উন্নতি সাধিত হয়।

ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রঃ বর্তমানে বিশ্বে যোগাযোগের জন্য ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বাংলাদেশে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪টি। এগুলো হলো- রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া, গাজীপুরের তালিবাবাদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র। ঢাকার মহাখালী এবং সিলেট ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র। এদের মধ্যে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে চালু হয়।

টেলেক্স, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেটঃ বর্তমান যুগে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে দ্রুত সংবাদ আদান-প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। ফ্যাক্সের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো দেশে মুহূর্তের মধ্যে শব্দ, ছবি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি প্রেরণ করা যায়। আবার ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। ১৯৯৬ সালে ৪ জুন বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বঃ যোগাযোগ এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে যেকোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলা হয়ে থাকে। যেসব দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত সেসব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নত। কোনো দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি পণ্যের এবং শিল্পজাত পণ্যের বাজারজাতকরণ, শ্রমিকদের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকার প্রশ্ন জড়িত। পল্লী যোগাযোগের জন্য সড়ক যোগাযোগ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগে, দুর্যোগ মোকাবিলা, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং রাজস্ব আয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে নৌ-ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এছাড়াও সংবাদপত্র আদান-প্রদান, প্রশাসনিক কাজ এবং দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বও কম নয়।

উপসংহারঃ মানবজীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে মানব সম্পদের উন্নয়ন এবং মানুষের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আর এ দুটি বিষয়ই যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষকে গতিশীল করে। যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নয়নের মূল শক্তি বলা যায় তাই আমাদের দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটাতে হবে।

৬৬. সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম; ফেসবুক; ব্লগ; টুইটার; গুগল প্লাস; উইকিপিডিয়া; ইউটিউব; স্কাইপ; অন্যান্য মাধ্যম; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বাংলাদেশ; সুবিধা; অসুবিধা; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এ যুগের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে বসবাস করার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। সেই কাজটি অত্যন্ত সহজতর করার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমঃ যোগাযোগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটা সময় কবুতর কিংবা হাতের লেখা চিঠির উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সময়ের পথ-পরিক্রমায় বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে মানুষ সহজতর মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। এই যোগাযোগের এমনই একটি মাধ্যম হচ্ছে Social Networking site বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। এটি ব্যবহার করে উন্নত দেশগুলো তাদের যোগাযোগকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও পিছিয়ে নেই। নিম্নে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ফেসবুকঃ ফেসবুক (Facebook) বিশ্ব-সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট। ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকই বৃহত্তম। এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মার্ক জাকারবার্গ। তার হাত ধরেই ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেসবুক যাত্রা শুরু করেছিল। এটি ব্যবহারকারীগণ বন্ধু সংযোজন, বার্তা প্রেরণ এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী হালনাগাদ ও আদান-প্রদান করতে পারেন। সেই সাথে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চলভিত্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারেন।

ব্লগঃ ব্লগ (Blog) শব্দটি ওয়েবলগ থেকে এসেছে। যার অর্থ আলোচনা বা তথ্য সম্পর্কিত সাইট। বর্তমান বিশ্বে তথ্যের চাহিদা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। বই বা লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বই ঘেটে প্রয়োজনীয় তথ্য যোগাড় করা কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য অনলাইনভিত্তিক ওয়েব লগ এর যাত্রা শুরু হয় যা পরবর্তীতে ব্লগ হিসেবে প্রচলিত হয়। যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলা হয়। মানুষের তথ্য চাহিদা পূরণের জন্য ব্লগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিয়তই মানুষ ব্লগের কল্যাণে চাহিদার উপরে ভিত্তি করে তথ্য অনুসন্ধান করছে এমনকি গবেষণাসহ বিভিন্ন জরিপ পরিচালনা করছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ব্লগের জন্ম হচ্ছে। সেই সাথে তৈরি হচ্ছে অনলাইনে লক্ষ লক্ষ নিবন্ধ।

টুইটারঃ বর্তমান বিশ্বে যতগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে টুইটার (Twitter) অন্যতম। টুইটার সামাজিক আন্তঃযোগাযোগের ব্যবস্থা এবং মাইক্রোব্লগিংয়ের একটি ওয়েবসাইট, যেখানে ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ ১৪০ শব্দের বার্তা আদান-প্রদান ও প্রকাশ করতে পারেন। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে টুইটারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ টুইটার ব্যবহার করে থাকেন।

গুগল প্লাসঃ গুগুল প্লাস (Google+) হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সামাজিক যোগাযোগের একটি সাইট। এটি চালু হওয়ার পর থেকেই মূলত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গুগল প্লাস জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকের মতো নয় বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ফেসবুকের সাথে কিছুটা মিল থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই এ ধরণের উদ্যোগ।

উইকিপিডিয়াঃউইকপিডিয়া (Wikipaedia) তথ্য, সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সৃষ্ট ওয়েবভিত্তিক, বহুভাষিক, মুক্ত বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত এ অনলাইন তথ্যকোষের প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি স্যাংগার। ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু হয় ওয়েবসাইটটির। বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইউটিউবঃ ইউটিউব (Youtube) একটি ভিডিও আদান-প্রদান করার ওয়েবসাইট। এটি বর্তমানে ইন্টারনেট জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট, যার মাধ্যমে এর সদস্যরা ভিডিও আপলোড, দেখা এবং আদান-প্রদানের কাজ করে থাকে। এখানে ভিডিও পর্যালোচনা ও অভিমত প্রদানের সুবিধাও রয়েছে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত এ সাইটটি নির্মাণের পেছনে ছিলেন মূলত পে-প্যাল প্রতিষ্ঠানের তিন প্রাক্তন চাকুরীজীবী- চ্যাড হারলি, স্টিভ ব্যান আর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাভেদ করিম।

স্কাইপঃ স্কাইপ (Skype) একটি ভিওআইপি সেবা এবং সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে পরস্পরের সাথে ভয়েস, ভিডিও এবং তাৎক্ষণিক বার্তার সাহায্যে যোগাযোগ করে থাকেন। ২০০৩ সালে ডেনমার্কের ধমিজা, জানুজ ফ্রিজ এবং সুইডেনের নিকলাস জেনস্ট্রম স্কাইপ প্রতিষ্ঠা করেন।

অন্যান্য মাধ্যমঃ উপরে বর্ণিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়াও আরও কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে যেমন : মাইস্পেস, ব্লগিমেট, এওএল ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জার, ফেসটাইম (ম্যাকিন্টোল), গুগল টক, গুগল ভয়েস, আইসিকিউ, আইবিএম লোটাস সেমটাইম, উইন্ডোজ লাইভ মেসেঞ্জার, জিমেইল, ইয়াহু মেসেঞ্জার ইত্যাদি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বাংলাদেশঃ সামাজিক যোগাযোগের আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোর ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় সারা বিশ্বজুড়ে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও পিছিয়ে না থেকে দেশীয় কিছু যোগাযোগের মাধ্যম গড়ে তুলেছে। যেমন-

>* বেশতো ডট কম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের প্রথম বাংলা মাধ্যম। যার দ্বারা বাংলা ভাষাভাষীরা সম্পূর্ণ বাংলায় নিজের মতামত ও অনুভূতিগুলো পরস্পরের সাথে বিনিময়ের সুযোগ পায়।

* সাম হোয়্যার ইন ব্লগ একটি সামাজিক ব্লগিং সাইট। টুইটার বা অন্যান্য সার্ভিসে ১৪০ শব্দের বেশি লেখা যায় না কিন্তু এই ব্লগ সাইট ছোট বড় ব্লগ লেখার সুবিধা রয়েছে।

* সব ধরণের তথ্য সম্বলিত আরেকটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে বিডি অল ইনফো। যেটি রুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মারছুছ, যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাদ্দাম মিলে তৈরি করেছেন।

* ফেসবুকের সব ধরণের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে চালু হয়েছে ‘হাউকাউ’ ডটকম। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন বন্ধুত্ব তৈরি, চ্যাট, ভিডিও আপলোড এবং গ্রুপ তৈরি করা যায়।

* বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের লোকজনের কেনাকাটার খবর জানার জন্য তৈরি হয়েছে ফেরিওয়ালা নামক সাইট।

* বাংলাদেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মাধ্যম হলো ক্যাফে ইয়ার্ড। সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর সকল সুবিধাসহ এই ওয়েবসাইটে বিশেষ কিছু ফিচার সুবিধা রয়েছে।

* ইন্টারনেটের বিশাল জগতে বয়স্ক থেকে তরুণ সবার ধারণা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে নগরবালক নামক মাধ্যমটি।

* সংগীত প্রেমীদের সামাজিক মাধ্যমগুলো হলোÑ মিউজিক জলসা, মূর্ছনা, পোলাপাইন মিউজিক, মিউজিক ফূর্তি, ফ্রী ডট কম, বিডি বাংলা প্রভৃতি।

এছাড়া আরো কিছু দেশীয় মাধ্যম হচ্ছে ফেসকই, মাইলিমেক্স, রংমহল, বিডিস্পট, আওয়াজ, ফ্রেইন্ডফেইস বাংলাদেশ, এফএনএফ পিয়ার ডট কম ইত্যাদি।

সুবিধা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বহুবিধ সুবিধা রয়েছে। যেমন-

- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভৌগোলিক দূরত্বের বাধাকে অতিক্রম করে মানুষকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

- যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে পুরনো বন্ধু খোঁজা, নতুন বন্ধু তৈরি করা ছাড়াও নিজের বৃত্তের বাইরে অন্যকেও আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব।

- এই মাধ্যমগুলোতে খুব সহজে বিভিন্ন সংবাদ ও তথ্য পাওয়া যায় ।

- এর সদস্য হতে খুব একটা খরচ লাগে না। একইভাবে কম শিক্ষিতরাও সহজে ব্যবহার করতে পারে।

- সামাজিক মাধ্যমগুলো বিভিন্ন ভাষা সমর্থন করে। পাশাপাশি এগুলোর ব্যবহারিক শব্দও মোটামুটি সহজ।

- স্বাধীন মত প্রকাশ এবং ভালো লেখক সৃষ্টিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভূমিকা রয়েছে।

অসুবিধা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন-

- সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপব্যবহারে নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে।

- এই মাধ্যমগুলো সহজে ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

- শিশুদের সুস্থ বিকাশের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যম। সেই সাথে তাদের শরীরের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে যেমন- আর্থরাইটিস, স্থুলতা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মানুষ তাদের জীবনের নানা দিক তুলে ধরছে। ফলে সুবিধাবাদী দেশগুলো গোয়েন্দা ও নিরাপত্তায় এই মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে।

উপসংহারঃ বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেটি পৃথিবীর দূরত্বকে হাতের মুঠোয় আনতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এর নেতিবাচক দিকগুলো সচেতনতার সাথে পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও তার জনগণ উভয়ই উপকৃত হবে।

৬৫. ইন্টারনেট,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; ইন্টারনেট কী; ইন্টারনেটের উৎপত্তি; ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ; ইন্টারনেটের প্রকারভেদ ইন্টারনেটের ব্যবহার; ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিক; বাংলাদেশ ও ইন্টারনেট; ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ইন্টারনেট; তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে করণীয়; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ মানব সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের যে সব আবিষ্কার অনন্য ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্টারনেট। বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী এক মাধ্যমের নাম ইন্টারনেট। এটি কম্পিউটারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সারাবিশ্বের দেশগুলি আজ যেন নিকট প্রতিবেশী। এই ব্যবস্থা ‘বিশ্বগ্রাম’ (Global Village)ধারণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক ও বহুমুখী কাজে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে বিপুলভাবে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে ইন্টারনেট।

ইন্টারনেট কীঃ ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক (আন্তর্জাতিক জাল) শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ইন্টারনেট। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো এই ব্যবস্থা। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি পদ্ধতি হিসেবে গড়ে উঠেছে এই সিস্টেম। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কম্পিউটারকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে যুক্ত করে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। সারাবিশ্বের অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, সংবাদ সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি গ্রাহক ইন্টারনেটের সাহায্যে যুক্ত হয়ে এই মহাযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়ে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন কিংবা অনুরূপ যেকোনো ডিভাইস মুহূর্তেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন কম্পিউটার বা অনুরূপ ডিভাইস, মডেম এবং ইন্টারনেট সংযোগ।

ইন্টারনেটের উৎপত্তিঃ ইন্টারনেট আধুনিক কালের আবিষ্কার। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এটি আবিষ্কার করে। যোগাযোগের গোপন এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে এটি প্রতিরক্ষা বিভাগের গবেষণাগারে টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে স্থান করে নেয়। এটি টেলিফোন লাইন নির্ভর একটি যোগাযোগ পদ্ধতি। ডেস্কটপ কম্পিউটারের আবিষ্কার হলে টেলিনেটওয়ার্কের সাথে কম্পিউটারের সংযুক্তি ঘটে। তখন এর নাম ছিল ARPANET । এক সময় কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট সারাবিশ্বে ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার ইন্টারনেটের বিপ্লবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

ইন্টারনেটের সম্প্রসারণঃ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ৪টি কম্পিউটারের সংযোগ ঘটিয়ে যে ব্যবস্থার শুরু করে, পরবর্তী তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬টিতে। ১৯৮৪ সালে মার্কিন ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি ব্যবস্থা চালু করে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তখনও সুযোগ-সুবিধা ছিল সীমিত। সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৯০-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। অতি অল্প সময়েই তা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা শত কোটির ঊর্ধ্বে।

ইন্টারনেটের ব্যবহারিক দিকঃ ইন্টারনেট সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ব্যবহারিক দিক হলো

* ই.মেইল: দ্রুত সময়ে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা হলো ইলেকট্রনিক্স মেইল বা ই-মেইল।

* ওয়েব: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে রাখা তথ্য দেখার পদ্ধতি।

* নেট নিউজ: ইন্টারনেটের তথ্য ভান্ডারে রক্ষিত সংবাদ।

* চ্যাট: অনলাইনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কথা বা টেক্সট আড্ডা।

* ইউজনেট: সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য ভান্ডার।

* ই-ক্যাশ: অর্থনৈতিক লেনদেন ও বাণিজ্যিক সুবিধা।

ইন্টারনেটের ব্যবহারঃ বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সভ্য সমাজের মানুষের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অচল। এর মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। লেখাপড়া, গবেষণা, সাহিত্য চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, বই, ইন্টানেটের মাধ্যমে যেকোনো সময় পাওয়া সম্ভব। এটি মানুষের হাতের মুঠোয় জ্ঞানভান্ডার তথা লাইব্রেরিকে এনে দিয়েছে। পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। হোটেল রির্জাভেশন, টিকেট কাটা সবই সম্ভব অনলাইনে। এছাড়াও ইন্টারনেটে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়। ঘরে বসে বিশ্ববিখ্যাত সব সিনেমা-নাটক দেখা যায় যা বিনোদনকে সহজ করেছে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলি যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ইন্টারনেট এনেছে নতুন দিগন্ত। অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে কেনাবেচা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দিয়েছে নতুনমাত্রা। এতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। সংবাদপত্র এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রকেও ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।

ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকঃ ইন্টারনেটের বহুমাত্রিক উপকারিতার পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকও আছে। অবশ্য তা নির্ভর করে এর ব্যবহারের উপর। বর্তমানে এর সাহায্যে মিথ্যা খবর, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন, মানুষকে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বিষয় যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা অসংখ্য কম্পিউটারকে অকেজো করে দিচ্ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হ্যাকাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য চুরি করে বিভিন্নভাবে মানুষের ক্ষতি করছে। এছাড়াও অন্যের একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ-সম্পদ নিজের দখলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আবার ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করেও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এসবের দায় ইন্টানেটের নয়, ব্যবহারকারীর। অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ইন্টারনেটঃ ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয়। তবে তখন এর ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত এবং তা কেবল ই-মেইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালে ইন্টারনেট সংযোগের প্রসার ঘটতে থাকে। ২০০০ সালের শুরুতে ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল প্রায় ৬০,০০০। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়ক সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়। এতে দেশে ইন্টারনেটের গতি অনেক বেড়ে যায়। ২০১৭ সাল নাগাদ সাবমেরিন ক্যাবলের দ্বিতীয় মহাসড়কে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি। সরকার ইন্টারনেটের প্রসারে অনেক কাজ করে যাচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ইন্টারনেটঃ বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। দেশের সরকারি অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সেবা সংস্থা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সেবা এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ই-গর্ভনেন্স এবং ই-বিজনেসের ফলে সরকারি কাজ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সহজ হয়ে এসেছে। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা আর্থিক কর্মকান্ডকে অনেক বেশি গতি দান করেছে। তবে একথা সত্য যে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে।

তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে করণীয়ঃ জ্ঞান বিজ্ঞান ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ছে, তারা এক ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যাকে ডিজিটাল বৈষম্য বলা হয়। বাংলাদেশও এরূপ বৈষ্যমের শিকার। এই বৈষম্য দূর করতে চাইলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো-

* আমাদের তরুণ সমাজকে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

* ব্যাপক সংখ্যক জনগণের নিকট ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

* টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

* তথ্য প্রযুক্তির জগতে ভাষা হিসেবে ইংরেজির অধিপত্য একক। তাই ইংরেজির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

* তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনসম্পদ এবং সরকার গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহারঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি। এক্ষেত্রে যারা যতো বেশি অগ্রগামী, তারা ততো উন্নত। ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি স্তরকে জয় করে মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখনও পিছিয়ে আছি। আমাদের উচিত হলো ইন্টারনেটের ব্যাপক ও বহুমাত্রিক ব্যবহারের প্রসার ঘটিয়ে দেশকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে গড়ে তোলা।

৬৪. এইডসঃ এ যুগের ঘাতক ব্যাধি,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; ভাইরাস ও এইচআইভি ভাইরাস; এইডস; এইডস-এর ইতিহাস; এইডস ভাইরাসের বিস্তার ও কারণ; বিশ্বব্যাপী এইডস-এর বিস্তার; এইডস ও এশিয়া; এইডস ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত; এইডস এর লক্ষণসমূহ; এইডস প্রতিরোধে করণীয়; এইডস প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ সারাবিশ্ব যেখানে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি আন্দোলনে উদ্বেলিত, এইডস নামক ভয়ানক মারাত্মক ব্যাধির উপস্থিতি সেখানে সভ্যতার গতিরোধক। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আজ এইডস-এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। সবাই জানে এইডস এর ফলাফল মৃত্যু, কিন্তু এর কারণ সম্পর্কে সমাজে নানা রকম মত প্রচলিত। এর অধিকাংশ মতই ভ্রান্ত অর্থাৎ এইডস সম্পর্কে সমাজে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। এসব ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত আবশ্যক, যা একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এইডস এমন এক দূরারোগ্য ব্যাধি, যার প্রতিরোধ আছে কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই।

ভাইরাস (Virus) ও এইচআইভি (HIV)ভাইরাসঃ ভাইরাস নিউক্লিক প্রোটিন দ্বারা গঠিত, অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এক ধরণের জীবাণু, যা কিনা সুনির্দিষ্ট পোষক কোষে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে কেবল সেখানেই বংশ বিস্তার করতে সক্ষম। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর, এমন কিছু ভাইরাস রোগের নাম হলোÑ ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, এইডস, ক্যান্সার, হার্পিস, বসন্ত, হাম, ভাইরাল হেপাটাইটিস ইত্যাদি। এইডস রোগের জীবাণু বা ভাইরাসের নাম হলো এইচআইভি (HIV) ভাইরাস। HIV এমন এক ধরণের রেট্রো (Retro) ভাইরাস যা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উপায়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়। HIV-এর পূর্ণরূপ হলো Human Immune Deficiency Virus পৃথিবীতে দুই ধরণের এইচআইভি পাওয়া গেছে। এগুলো হলো - HIV1, HIV2|

এইডস (AIDS): এইডস এর পূর্ণরূপ হলো Acquired Immune Deficiency Syndrome| এটি একটি ঘাতক ব্যাধি, যা এইচআইভি (HIV) থেকে জন্ম নেয় এই ভাইরাস দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। HIV অন্যান্য সব ভাইরাসের মতোই, কিন্তু এর কার্যপদ্ধতি ভিন্ন।

এইডস (AIDS)-এর ইতিহাসঃ HIV আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৯ সালে ব্রিটেনে। সত্তর এর দশকে আফ্রিকায় এইডস ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে আমেরিকা এবং ১৯৭৭-৭৮ সালে হাইতি, হাভানাসহ বিশ্বের অনেক স্থানে এইডস ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালেই প্রথম এইডসকে মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এই রোগের কারণসমূহও চিহ্নিত হয়। হলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা হাডসন ১৯৮৫ সালে যখন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তখন বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, ১৯৮৫ সালেই মানব রক্তে এইডস ভাইরাস আছে কিনা তার পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়।

এইডস ভাইরাসের বিস্তার ও কারণঃ কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শরীরের চার ধরণের তরল পদার্থের মাধ্যমে এইডস ভাইরাস ছড়ায়। এগুলো হলো রক্ত, বীর্য, যোনিরস ও মাতৃদুগ্ধ। এই চারটি তরল পদার্থ যদি কোনো এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে কোনো সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে তবেই তিনি এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।

HIV-তে আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো হলো-

এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন।

এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সূচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার।

এইচআইভি বহনকারী মা এর মাধ্যমে তার গর্ভস্থ সন্তান, অথবা জন্মদানের সময় বা জন্মের পর দুগ্ধদানের মাধ্যমে সন্তান এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারে।

রক্তদানের সময় দানকৃত ব্যক্তির এইচআইভি থাকলে তা গ্রহীতার রক্তে সঞ্চালনের মাধ্যমে গ্রহীতার এইচআইভি হতে পারে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তি যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সরাসরি শরীরে প্রবেশ করায়, তাদের এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি অনিরাপদ যৌন মিলনের চেয়েও বেশি।

বিশ্বব্যাপী এইডস এর বিস্তারঃ UNAIDS ও WHO এর হিসাব অনুযায়ী ২০০৩ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ৪০ মিলিয়ন পূর্ণবয়স্ক ও শিশু ছিল যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত। বর্তমানে নারী ও পুরুষ উভয়ক্ষেত্রেই সমানভাবে এইডস ছড়াচ্ছে। বিশ্বে এ পর্যন্ত মোট ৬ কোটির বেশি লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, এইডস আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩.২ মিলিয়ন, এর মধ্যে ৩,৩০,০০০ জনই ছিল শিশু। আর বাকি ৩ কোটি ৩২ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েই বেঁচে আছে।

এইডস ও এশিয়াঃ ২০০৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়াতে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি ও শিশু ছিল ৫.৮ মিলিয়ন। একই অঞ্চলে ২০০০ সালের হিসাব অনুযায়ী ৭,০০,০০০ জন এইচআইভি আক্রান্ত ছিল। এদের মধ্যে ৪,৫০,০০০ জন পুরুষ ও ২৫,০,০০০ জন মহিলা। বর্তমানে এ অঞ্চলে ৭২ লাখ লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত। যার মধ্যে ২০০২ সালে ১০ লাখ বয়স্ক ও শিশু নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছে। সর্বদিক বিচারে এশিয়ার বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়।

এইডস ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতঃ বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। এর পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভুটানে এইচআইভি সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বাংলাদেশের সাথে এসব দেশের যোগাযোগ থাকার কারণে বাংলাদেশেও এইডস এর বিস্তার ঘটছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুটো জেলা সিলেট ও চট্টগ্রামে এইডসে আক্রান্তের হার বেশি। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলা যশোর ও রাজশাহীতেও এই হার চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের জন্য এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি থাইল্যান্ডের মতো হুমকিস্বরূপ।

HIV-তে আক্রান্ত হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো যৌনকর্মীরা। এছাড়াও এদেশে ইনজেকশন-এর মাধ্যমে মাদক সেবনকারীরাও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার কিছু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো-

কিশোর ও তরুণ সমাজ যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে।

অল্প বয়স্ক মহিলা ও মেয়ে শিশু, যাদের অধিকাংশ শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত।

নিজের পরিবার পরিজন ও সমাজ ছেড়ে আসা ভাসমান জনগোষ্ঠী, যারা প্রায়ই একাকিত্বের কারণে যৌন কর্মীদের সাথে যৌন মিলন করে থাকে।

মাদকসেবী জনগোষ্ঠী যারা অর্থের জন্য অনিরাপদ যৌন মিলনে বাধ্য হয়।

এইডস এর লক্ষণসমূহ : এইডস এর লক্ষণসমূহ নিম্নরুপ -

* মাঝে মাঝে জ্বর, মাথা ব্যথা ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।

* মুখের ভেতর, ঠোঁটে ও জিভে সাদা পর্দা পড়া।

* অসীম দুর্বলতা ও হজম শক্তি হ্রাস।

* স্মৃতিশক্তি হ্রাস।

* শুকনা কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট।

* গ্রন্থিসমূহ বিশেষ করে গলা, বগল ও কুচকী ফুলে যাওয়া।

* রাতে ঘাম হওয়া, অনিদ্রা ও ওজন কমে যাওয়া।

* পিঠে, মুখে ও গলায় ফুসকুরি।

এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ এইডস প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এইডস প্রতিরোধে করণীয়গুলো নিম্মরূপ-

প্রথমতঃ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিশ্বস্ততা বজায় রাখা।

দ্বিতীয়ঃ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করা। এছাড়া বহুগামীতা ও পতিতালয়ে যাতায়াত বন্ধ করা।

তৃতীয়তঃ রক্তদানের পূর্বে রক্তদাতার রক্তে HIV- আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।

চতুর্থতঃ অন্যের সুই, সিরিঞ্জ, ব্লেড, রেজার, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।

পঞ্চমঃ এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকা।

ষষ্ঠতঃ মাদক দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা এবং সরকারি, বেসরকারি, দেশি, বিদেশি সকল প্রচার মাধ্যমে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো।

এইডস প্রতিরোধে সমাজ সচেতনতামূলক শিক্ষা কার্যক্রমঃ এইডস প্রতিরোধে জীবনমুখী ও গণশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। শিক্ষিত সমাজে সচেতনতা থাকলে, পুরো সামজকে সচেতন করে তোলা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি জীবনমুখী বা বাস্তবমুখী শিক্ষা দিতে পারে না। পাঠ্য পুস্তকে এইডস-এর সচেতনতামূলক কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে নতুন এক দিগন্ত হলো জীবন দক্ষতামূলক শিক্ষা (LSE=Life Skill Education) এর মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে এইডস-এর মতো ভয়াবহ ব্যাধি মোকাবিলা করা সম্ভব।
উপসংহারঃ এইডস একটি ঘাতক ব্যধি। সারাবিশ্বে অতি দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ছে। এখনো পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ব্যাপক হারে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালাতে হবে। এই সচেতনতা কার্যক্রম ফলপ্রসু না হলে কিংবা প্রতিকার ব্যবস্থা না আসলে এটি মহামারীর আকার ধারণ করবে এবং পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তাই এইডস প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

৬৩. নারীর ক্ষমতায়ন,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; নারীর ক্ষমতায়ন; সংবিধানে নারীর অবস্থান; বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নারী; বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী; নারীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান; নারীর ক্ষমতায়নের অন্তরায়সমূহ; নারীর ক্ষমতায়নে করণীয়সমূহ; সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ; নারী নির্যাতন প্রতিরোধ; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
কাজী নজরুল ইসলাম
সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান অনস্বীকার্য। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত ও শোষিত হয়ে আসছে। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীরা তাদের অধিকার বিসর্জন দিয়ে আসছে। নারীরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ও আত্মপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ থেকে ক্রমে বঞ্চিত হচ্ছে। নারীকে পূর্ণ মর্যাদা প্রদান, তার মেধা ও শ্রমকে শক্তিতে রূপান্তর করে এবং তার স্ব-নির্ভরশীলতাকে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র নির্বিশেষে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।
নারীর ক্ষমতায়নঃ নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাপক অর্থে একজন নারীর স্বকীয়তা, নিজস্বতা সর্বোপরি স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিকাশকে বোঝায়। নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা ও বৈষম্য দূর করে নারীকে পুরুষের সমকক্ষে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীকে ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারীদেরকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। সমাজ ও অর্থনীতিতে নারীর অবদান যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে এবং তাদের উপর নির্যাতন করা প্রতিরোধ করতে হবে, তবেই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে।

সংবিধানে নারীর অবস্থানঃ বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর যথাযোগ্য অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ১৯ অনুচ্ছেদে বর্ণনা হয়েছে “জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।” ২৭ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে- “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।” এছাড়াও ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(২)-ধারায় নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকারের বিধান রয়েছে। ৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত আছে এবং এ ধারার অধীনে নারী স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নারীঃ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি প্রথম সাড়া জাগায়। আর এ ক্ষমতায়ন সফল করতে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ নারীর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালকে ‘বিশ্ব নারী বর্ষ’, ১৯৭৫-১৯৮৫ সালকে নারী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে, ১৯৮০ সালে কোপেনহেগেনে ১৯৮৫ সালে নাইরোবিতে এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উন্নত দেশগুলোতে যেমন আমেরিকা, ব্রিটেনে, কানাডা, জাপান প্রভৃতি দেশের নারী সকল ক্ষেত্রে পারদর্শী।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীঃ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণেই নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়। তবে একথাও সত্য যে, আলোকোজ্জ্বল প্রভাতে দিকে দিকে আজ নারীপ্রগতির বাদ্য বেজে উঠছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীর পুনর্বাসন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে “নারী পুনর্বাসন বোর্ড” গঠন করা হয়। ১৯৭৮ সালে গঠিত মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ১৯৯৪ সালে বর্ধিত করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রূপান্তর করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচন, নারী নির্যাতন, নারী পাচার রোধ, নারীর নিরাপত্তা এবং সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই হলো মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মূল লক্ষ্য। নারীকে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য National Strategy for Accredited Poverty Reduction (NSAPR-II)-এ বিভিন্ন কার্যক্রম সন্নিবেশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৭৬% আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই পোশাক তৈরির খাতে নারী শ্রমিকের অবদানই সবচেয়ে বেশি।

নারীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অবস্থানঃ বাংলাদেশের আইনসভায় মহিলাদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত সংরক্ষিত আসনে মোট ১৮৫ জন মহিলা সদস্য মনোনীত হয়েছেন। যার মধ্যে ৮ জনই একাধিকবার। প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯৯১ সালে ৫ জন, ১৯৯৬ সালে ৭ জন এবং বর্তমানে ৬ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। যা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে খুবই অপ্রতুল। বাংলাদেশে নারী শ্রমশক্তির পরিমাণ প্রায় ২৫ মিলিয়ন। এর মধ্যে প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা পেশায় মাত্র ১০,০০০ জন, প্রায় ৭৯% কৃষিখাতে, ৯.৯% নারী ম্যানুফ্যাকচারিং ও পরিবহন খাতে ২.২% নারী বিপণন শ্রমিক এবং ০.৬% করণিক পর্যায়ে কাজ করে। সরকারি চাকরিজীবী ৮৫,০০০ জন নারীর মধ্যে ১% মন্ত্রণালয়গুলোতে, ১৬.৫% স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থায় এবং ৮২.৫% সাধারণ অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়নের অন্তরায়সমূহঃ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন সন্তোষজনক নয়। এসব রাষ্ট্রে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো এতটাই দুর্বল যে তারা তাদের নারী সমাজের উন্নয়নে পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারে না। সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষাক্ষেত্রে অসহযোগিতা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আইনী পদক্ষেপ, সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনা ও মনোভাব এসব কিছুই নারীর ক্ষমতায়নে বাধা সৃষ্টি করে। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধান প্রধান অন্তরায়সমূহ নিম্মরূপ-

সামাজিক কারণঃ সমাজে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়াকে এক ধরণের বোঝা মনে করা হয়। তারা পারিবারিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে বড় হতে থাকে। তারপর সমাজের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্বামীর সংসারে আসার পরও তারা অবহেলা, অবজ্ঞা ও প্রবঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পায় না। নারীকে ‘ঘরের লক্ষ্মী’ বলা হয়। কিন্তু সমাজে নারীর অবদানকে কখনোই মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে তারা আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলে এবং নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখে।

রাজনৈতিক কারণঃ সমাজবিজ্ঞানী ম্যাককরম্যাক বলেছেন যে, মহিলারা তিনটি কারণে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে না। সেগুলো হলো (ক) সামাজিকীকরণে ভিন্নতা, (খ) কম শিক্ষিত, (গ) হীনমন্যতা ও প্রাচীন মনোভাব। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে দেখা হয়। শিক্ষার অভাবে আত্মবিশ্বাস কম থাকায় নারী আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং সমর্থন না থাকায় রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।

অর্থনেতিক কারণঃ প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা Easter Bosemp তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "Womens Role in Economic Development"- এ নারীর অন্যতম শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে নির্দেশ করেছেন। বাংলাদেশের দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী শতকরা ৪০ ভাগ জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশই নারী। কর্মক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া সংসারে নারীর শ্রম বিনিময়ের কোনো মাপকাঠি উদ্ভাবিত হয়নি।

শিক্ষার অভাবঃ নেপোলিয়ন বলেছেন- “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি দিব।” কিন্ত আমাদের দেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা শতকরা ৩০ ভাগ। শিক্ষার অভাবে নারী তার নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে না। এটি নারীর ক্ষমতায়নের অনেক বড় অন্তরায়।

নারীর ক্ষমতায়নে করণীয়সমূহঃ নারীর ক্ষমতায়নে নারীকেই সবার প্রথম এগিয়ে আসতে হবে। নিজেরা সচেতন না হলে, নিজের উন্নয়ন নিজে না ভাবলে ক্ষমতায়ন অসম্ভব। তাই নারীদের যাবতীয় অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে করণীয়সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো-

* বেগম রোকেয়া নারী জাতির অগ্রগতির জন্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- “আমি চাই সেই শিক্ষা যাহা তাহাদিগকে নাগরিক অধিকার লাভে সক্ষম করিবে।” নারীশিক্ষা বৃদ্ধির হার বাড়ানোর পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে নারীর আইনগত ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত তথ্য সংযোজিত করতে হবে।

* সামাজিকতার দোহাই দিয়ে নারীকে ঘরে বন্দী করে রাখা যাবে না। নারীর প্রতি প্রাচীন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সমাজে পুরুষের সমমর্যাদায় নিয়ে আসতে হবে।

* বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে নারীদেরকে যে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলাম ধর্মে হাদীসে বর্ণিত আছে- “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। আবার হিন্দু পুরাণে বর্ণিত হয়েছে- “নারীরা শক্তির মূল আধার”। এসব ধর্মীয় বাণী অপরিবর্তিত অবস্থায় এবং সঠিক উপায়ে সমাজের মানুষের কাছে প্রচার করতে হবে।

* নারী সমস্যা সমাধানের জন্য নারীকেই ব্যাপক হারে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেরাই স্ব-জাতির সংকট উত্তরণে প্রতিনিধির ভূমিকা পালন করতে পারে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রচার মাধ্যমগুলোকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

* শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ এবং মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে নারীকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করতে হবে।

* কর্মস্থানে নারীর নিরাপত্তা প্রদান এবং সমান মজুরি প্রদানের মাধ্যমে নারীকে উৎপাদনশীল কর্মে যোগদানের সুযোগ করে দিতে হবে।

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপঃ বাংলাদেশ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। ১৯৭২ সালে সরকারি চাকুরিতে দশভাগ কোটা নারীর জন্য সংরক্ষিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে মহিলা বিষয়ক স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। সরকার নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য গেজেটেড পদে ১০% এবং নন গেজেটেড পদে ১৫% কোটা নির্ধারণ করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০% নিয়োগ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া সরকার বিভিন্ন আইনী পদক্ষেপ এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা বিধান করেছে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধঃ নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অচিরেই নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সুপরিকল্পিত কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কর্মসূচির আওতায় সচেতনতা বৃদ্ধি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা, নিরাপদ আশ্রয় ও পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রদান করতে হবে, যাতে করে নারী নির্যাতনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের উচিত নারী ও শিশু বিষয়ক অপরাধের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং সময়োপযোগী কঠোর আইন পাস করা।

উপসংহারঃ

“কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়েছে সাহস দিয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।”
-কাজী নজরুল ইসলাম
জগৎ সংসারে নারীকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। নিজের সন্তানকে গর্ভে ধারণ এবং জন্ম দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখানোর মাধ্যমে একজন ‘মা’ নারী হিসেবে জীবনের সার্থকতা লাভ করে। যখন একটি শিশুর জন্ম হয় তখন একজন মায়েরও জন্ম হয়। এছাড়া স্ত্রী, বোন, কন্যাসহ মর্যাদাপূর্ণ সব সম্পর্কের বাঁধনে নারীরা সমাজের সাথে আবদ্ধ। তারা সমাজের অর্ধেক অংশ। তাদের প্রতিভা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

৬২. ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক; সম্পর্কের ভালো দিক; সম্পর্কের নেতিবাচক দিক; সমস্যা সমাধানের উপায়; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুটি দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে সেটিই মূলত এই সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কঃ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশ পরস্পর একে অপরকে সর্বদা সহযোগিতা করে থাকে। যার ফলে উভয়ের মাঝেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সম্পর্কের ভালো ও খারাপ উভয়দিকই রয়েছে। নিম্নে সে বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা করা হলো-

সম্পর্কের ভালো দিকঃস্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হতে আজ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সম্পর্কের এ ভালো দিকগুলো হলো-

স্বাধীনতা যুদ্ধঃ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটা নতুন ভূ-খন্ডের সৃষ্টি হয়। যেখানে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া এত অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভবপর ছিল না। সে সময় বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা অসংখ্য বাঙালি যুবককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলে। শুধু তাই নয় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করেছিল যৌথবাহিনী। এর ফলেই মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিটাও আসে ভারতের কাছ থেকে।

বাণিজ্যঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি ভারত থেকে এদেশে আমদানি করা হয়। আবার বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন জিনিস ভারতে রপ্তানি করা হয়। যার ফলে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে একটা মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিক চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। যা দুটি দেশের অর্থব্যবস্থাকে অনেকখানি প্রভাবিত করছে।

সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং অবৈধ মাদক পাচার রোধ চুক্তিঃ কোনো সন্ত্রাসী চক্র এবং তাদের সহযোগিরা যদি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায় এবং তাতে রাষ্ট্রীয় সীমানা ব্যবহার করে তবে দুটি দেশ প্রয়োজনীয় ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে পারবে। এছাড়া অবৈধ মাদক পাচার এবং তার অপব্যবহার বন্ধের জন্য চুক্তি সম্পাদান করেছে উভয় দেশ। সেটি ভারত ও বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমনে সাহায্য করে।

ঋণ সহায়তা চুক্তিঃ কোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রতিবেশী বা অন্য কোনো দেশের ঋণ সহায়তা দরকার। সেটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। সম্প্রতি তথা ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যার সঠিক বিনিয়োগে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। দুদেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ ছাড়াও রেল ও সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী বহনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ সুবিধাঃ বিদ্যুৎ ছাড়া বর্তমান যুগকে কল্পনাই করা যায় না। তাই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ২০১০ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি যে ৫০ দফা ঘোষণা দেয়া হয় সেখানেও বাংলাদেশকে ভারত ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে সম্মত হয়।

সম্পর্কের নেতিবাচক দিকঃ ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের যেমন ভালো দিক রয়েছে। বিপরীতে খারাপ দিকও কম নয়। উভয় দেশের সম্পর্কের খারাপ দিকগুলো হলো-

পানি বণ্টন সমস্যাঃ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ প্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা হলো পানি বণ্টন সমস্যা। বাংলাদেশের প্রায় সকল নদীর পানির উৎস হচ্ছে ভারত। তাই আমাদের পানির প্রবাহ মূলত ভারতের উপর নির্ভরশীল। আর বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় পানির প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি। কিন্তু ভারত বরাবরই এ প্রয়োজনীয়তাকে আগ্রহ্য করে এসেছে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে পদ্মার প্রবাহ স্তিমিত হয়ে গেছে। বর্তমানে যে টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে যা কার্যকর হলে বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

বিএসএফের কর্মকান্ডঃ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নির্বিচারে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করলেও তার কোনো বিচার হয় না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত শত শত মানুষ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। যা দুটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা বড় হুমকি।

গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে বিতর্কঃ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যা। রপ্তানি করার মতো যথেষ্ট গ্যাস আমাদের দেশে মজুদ নেই। কিন্তু ভারত গ্যাস রপ্তানি করার জন্য বাংলাদেশকে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করছে। ফলে উভয় দেশের মাঝে সমস্যা নতুন করে রূপ নিচ্ছে।

অবাধ বাণিজ্য চুক্তিঃ ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে চরম ভারসাম্যহীনতা। তার উপর আবার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। এর ফলে ভারতের পণ্য মুক্তভাবে বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার পাবে। যে কারণে বাংলাদেশের পণ্য ও শিল্প কারখানা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ট্রানজিট সমস্যাঃ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় যে সাতটি রাজ্য রয়েছে তা এক অর্থে বাংলাদেশের ভূমি দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এসব রাজ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে এ সমস্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উক্ত অঞ্চলের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সহজ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সাতটি রাজ্যে যাওয়ার ট্রানজিট দাবি করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও ভৌগোলিক অখ-তা ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এটিকে সমর্থন দিতে পারছে না। ফলে উভয় দেশের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যান্য সমস্যাঃ উপরিউক্ত সমস্যা ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন- নদী ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যা, সীমানা চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত সমস্যা প্রভৃতি। তাদের বিমাতাসুলভ আচরণের আরেকটি বড় উদাহারণ হচ্ছে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রায় ১ যুগ আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আজ পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি।

সমস্যা সমাধানের উপায়ঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। তবে এসব সমস্যাকে জটিল না করে বরং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত। নিম্নে এরকম কিছু সমাধানের উপায় উল্লেখ করা হলো-

* ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার বাস্তবায়ন ঘটলে পানি বণ্টন সমস্যা অনেকখানি সমাধান হবে।

* ভারতের বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বিনা কারণে হত্যাকান্ড ঘটে। তার সুষ্ঠু বিচার হলে এ সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে।

* ভারত যাতে আগ্রাসীভাবে কোনো কিছু বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিতে না পারে সেজন্য বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

* ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে জনমত গঠন ও জাতীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

* ভারত যদি বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসে তাহলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করা যেতে পারে।

* সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ সরকারের জোরালো উপস্থাপনই বিশ্ব সংস্থার কাছে এদেশের সমস্যাগুলো গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।

* সর্বোপরি পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ ভুলে জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবেই সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

উপসংহারঃ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ একে অপরের উপর কম-বেশি নির্ভরশীল। তাই উভয় দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সুসস্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য। কিন্তু ভারতের সাথে বাংলাদেশের এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো খুবই জটিল। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা মাথায় রেখে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাংলাদেশকে সামনের দিকে পা বাড়াতে হবে।

৬১. বেগম রোকেয়া,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; জন্ম ও শৈশব জীবন; শিক্ষাজীবন; জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস; বিবাহিত জীবন; বাংলা ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতা; ইংরেজি ভাষার চর্চা; সাহিত্যকর্ম; সাহিত্য ও নারীমুক্তি; সমাজ সংগঠক; অন্তিমযাত্রা; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ বাঙালি মুসলিম সমাজের নারীদের অন্ধকারময় পৃথিবীতে আলোকবার্তা হাতে এসেছিলেন বেগম রোকেয়া। তার সকল কর্মের মূলে ছিল নারীমুক্তির স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গিয়েই তিনি একদিকে কলম তুলে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে নারীদের নতুন পথের সন্ধান দেখিয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি আজও ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে পরিচিত।

জন্ম ও শৈশবজীবনঃ বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। বেগম রোকেয়ার পারিবারিক নাম রোকেয়া খাতুন। তার পিতার নাম জহিরুদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী সাবের এবং মাতার নাম রাহাতুন্নেসা। বেগম রোকেয়া যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁদের জমিদারি অনেকটা পড়ন্ত দশায় ছিল। তবুও তার শৈশব কাটে তৎকালীন মুসলমান জমিদারি রীতি অনুযায়ী কঠোর পর্দা ও অবরোধের মধ্যে। তার নিজের ভাষায় “অবিবাহিত বালিকাদিগকে অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বাড়ির চাকরাণী ব্যতীত অপর কোনো স্ত্রীলোক দেখিতে পায় না।” এমন কঠোর পর্দা প্রথার মধ্যেই বেগম রোকেয়ার বেড়ে ওঠা।

শিক্ষাজীবনঃ বিশ্বের অনেক কৃতী ব্যক্তির মতো বেগম রোকেয়াও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। নিজের প্রবল আগ্রহ ও কিছু মানুষের সহায়তায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বশিক্ষিত। তাইতো সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল চালু করার সময় প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। সামসুন্নাহার মাহমুদের ভাষায়- “রোকেয়া যখন প্রথম পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে বালিকা স্কুল স্থাপন করেন, তখন তিনি ভেবে পাননি কী করে একজন শিক্ষয়িত্রী একই সঙ্গে পাঁচটি মেয়েকে পড়াতে পারে।” তবে তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি প্রভৃতি ভাষা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তার সাহিত্যে আমরা এর পরিচয় পাই।

জীবনে অনুপ্রেরণার উৎসঃ বেগম রোকেয়া যে মুসলিম সমাজে বেড়ে উঠেছিল সেখানে স্ত্রীশিক্ষা হিসেবে প্রচলিত ছিল ‘টিয়া পাখির মতো কোরান শরীফ’ পাঠ, নামাজ, রোজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান। এছাড়া স্বামী বা নিকট আত্মীয়কে চিঠি লিখতে পারা, দু-একটি উর্দু-ফারসি পুঁথি পুস্তক পড়ার ক্ষমতা, সেলাই, রান্না ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন মেয়েদের বাংলা শিক্ষা ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন সমাজের মধ্যেও বেগম রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা একটু আধটু বাংলা পড়েছিলেন এবং ছদ্মনামে বেশ কয়েকটা কবিতাও লিখেছিলেন। করিমুন্নেসার বিদ্যানুরাগ বেগম রোকেয়াকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এর সাথে বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের প্রচেষ্টায় তিনি শৈশব থেকে কুসংস্কারকে ঘৃণা করতে শেখেন এবং বিদ্যার্জন করেন। বিয়ের পর স্বামী সাখাওয়াত হোসেনও তাকে এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।

বিবাহিত জীবনঃ উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের সময় বেগম রোকেয়ার বয়স ছিল ১৬ এবং সাখাওয়াত হোসেনের ছিল ৩৮ বছর। সাখাওয়াত হোসেন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে বিয়ে করেন। ব্যক্তি হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদারমনা, রুচিশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও কুসংস্কার বিরোধী মানুষ। এছাড়া স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতীও ছিলেন তিনি। তাইতো তিনি বেগম রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। এমনকি ১৯০৯ সালে মৃত্যুর আগেই মেয়েদের শিক্ষার জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন নিঃসন্তান। তার দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তাদের অকাল মৃত্যু হয়।

বাংলা ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতাঃ উর্দুর প্রবল প্রতিকূল স্রোতে বাংলা ভাষাকে প্রাণপ্রণে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন বেগম রোকেয়া। তার স্বামী ও অভিভাবকরা সবাই ছিলেন বাংলা ভাষার বিরোধী। কিন্তু এর মাঝেও তিনি বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। এছাড়া স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে বাংলা শেখাবার ব্রতও নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে তাকে যে নিদারুণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল তার বর্ণনা ‘মতিচূর’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের করিমুন্নেসার নামে উৎসর্গ পত্রে রয়েছে।

ইংরেজি ভাষার চর্চাঃ বেগম রোকেয়া বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ না করলেও ইংরেজি ভাষার ওপর তার যথেষ্ট দখল ছিল। তার লেখা ওলফভট্র, Sultana's Dream-এর প্রমাণ। এছাড়া বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছে দেয়া ইংরেজিতে লেখা চিঠিও এর প্রমাণ বহন করে।

সাহিত্য কর্মঃ আধুনিক জাগরণশীল বাঙালি মুসলিম সমাজে বেগম রোকেয়াই প্রথম উল্লেখযোগ্য লেখিকা। সাহিত্য ক্ষেত্রে তিনি মিসেস আর এস হোসেন নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা পিপাসা। ১৯০১ সালে ‘নবপ্রভা’ পত্রিকায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন লেখা নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তার গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি। এগুলো হলো- মতিচূর (প্রথম খন্ড), সুলতানার স্বপ্ন, মতিচূর (দ্বিতীয় খন্ড), পদ্মরাগ ও অবরোধবাসিনী। এছাড়া সম্প্রতিকালে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আরও কিছু রচনা ও চিঠিপত্র পাওয়া গেছে।

সাহিত্য ও নারী মুক্তিঃ

“সুকঠিন গার্হস্থ্য ব্যাপার
সুশৃঙ্খলে কে পারে চালাতে
রাজ্যশাসনের রীতিনীতি
সূক্ষ্মভাবে রয়েছে ইহাতে।”
বেগম রোকেয়া এই কথাটি শুধু মুখেই বলেননি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাইতো নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে নারীর মানবীয় সত্তার প্রতিষ্ঠা কামনা করেছেন। মুসলিম নারী সমাজের কুসংস্কারের জাল ছিন্ন করতে এবং জড়তা দূর করতে তিনি সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলতেন- “না জাগিলে ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগিবে না।” তাই তিনি তার লেখার মাধ্যমে নারীর জাগরণের জন্য লড়াই করেছেন। মুক্তিফল গল্পে তাই বলেছেন- “কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশমাতৃকার মুক্তি অসম্ভব।” বেগম রোকেয়ার মতে এই জাগরণের প্রধান শর্ত শিক্ষা। তার ভাষায় “আমরা পুরুষের ন্যায় সাম্যক সুবিধা না পাইয়া পশ্চাতে পড়িয়া আছি।” তিনি বুঝেছিলেন শিক্ষাই হলো স্বনির্ভরতার সোপান। তাই শিক্ষাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য, আর্থিক সমস্যা, সামাজিক বাধা, লোকনিন্দা কোনো কিছুই তাকে এই ব্রত থেকে সরাতে পারেনি। তাইতো স্ত্রী জাতির অবনতি, অর্ধাঙ্গী, সুগৃহিনী, বোরকা, গৃহ, জাগো গো ভগিনী প্রভৃতি প্রবন্ধে তিনি এই শিক্ষার জয়গানই গেয়েছেন, দিয়েছেন নারী মুক্তির দীক্ষা।
সমাজ সংগঠকঃ বেগম রোকেয়া কেবল লেখিকাই নন, নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। তিনি ১৯০৯ সালে ১ অক্টোবর ভাগলপুরে পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই তিনি একটি আন্দোলনের সৃষ্টি করেন। এই ধারাই শিক্ষার ধারাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে তিনি ১৯১৬ সালে “আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম” নামে একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বিদ্যালয় ও নারী সমিতির কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন।

অন্তিম যাত্রাঃ বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর ৫২ বছর বয়সে আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগের রাতেও এগারোটা পর্যন্ত তিনি “নারীর অধিকার” নামক একটি প্রবন্ধ লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কলকাতার কাছাকাছি চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সোদপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার স্মরণে প্রথমে কলকাতার আলবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউজ) ও পরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে দুটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই শোকসভায় হিন্দু মুসলমান একই সাথে যোগদান করেছিলেন। সেখানে এক ভাষণে সৈয়দ এমদাদ আলী বলেছিলেন- “তাহার স্মৃতির উপরে আজ বাংলার মুসলমান সমাজ যে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেছেন, বাংলার কোনো মুসলমান পুরুষের মৃত্যুতে সেরূপ করিয়াছেন বলিয়া জানি না।”

উপসংহারঃ বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব সত্যিই বিস্ময়কর। কারণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম করেছিলেন নারীমুক্তির লক্ষ্যে, নারীশিক্ষার লক্ষ্যে। বর্তমান নারী সমাজ যে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে তার অনেকটাই বেগম রোকেয়ার অবদান। এ জন্যই ২০০৪ সালের বিবিসি জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তিনি ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন। তাই আবুল হুসেনের ভাষায় বলা যায়- “তাহার মতো চিন্তাশীল নারী প্রকৃতই নারীজাতি কেনো, সমগ্র মানবজাতির গৌরবের পাত্রী।”

৬০. বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; শিক্ষা কি; শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা; বাংলাদেশে শিক্ষার চিত্র; জাতীয় শিক্ষানীতি; বর্তমানে দেশে শিক্ষার মান; বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট; শিক্ষাব্যবস্থায় সংকট সমাধানের উপায় ও আমাদের করণীয়; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ Education is the backbone of a nation. মানুষের মেরুদন্ডের মতো শিক্ষাও একটি জাতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে জাতি এগিয়ে যায়, উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সন্তোষজনক চিত্র আমাদের চোখে পড়ে না। তবে আশার বিষয় হচ্ছেÑ শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার মান, শিক্ষানীতি, শিক্ষার জন্য বরাদ্দ, শিক্ষার পরিবেশ প্রভৃতির উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

শিক্ষা কিঃ শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ Education-যা ল্যাটিন শব্দ Educere বা Educatum থেকে এসেছে। মানুষের সত্যিকারের পরিচয় তার মনুষ্যত্ব ও যোগ্যতার মধ্যে। মানব সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই একজন পরিপূর্ণ মানুষের সব গুণ তার মধ্যে বিকশিত হয়ে ওঠে না। এসব গুণাবলী তাকে নিজের সাধনায় অর্জন করতে হয়। এই যোগ্যতা বা গুণবালী অর্জনের জন্য মানুষকে বিভিন্ন উৎস থেকে যে জ্ঞান অর্জন কতে হয় তাই শিক্ষা। শিক্ষা হলো-'The harmonious development of body, mind and soul.' অর্থাৎ মানুষের মানবিক, দৈহিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণের ধারাবাহিক পদ্ধতি হলো শিক্ষা।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাঃ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই বাস্তব জীবনে চরম উৎকর্ষতা লাভ করা সম্ভব হয়। জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগে জীবনকে উৎকর্ষমন্ডিত করা যায়। বিশ্বের বহুমুখী জ্ঞানভান্ডারের সাথে শিক্ষার মাধ্যমেই পরিচিত হওয়া যায়। অজানাকে জানা এবং সেই জানাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার কৌশল শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, যোগ্যতা ও মনুষ্যত্ব অর্জন এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়ে তা থেকে জীবনকে উপকৃত করার মাধ্যমে হলো শিক্ষা। সর্বোপরি, জীবনকে সাফল্যমন্ডিত, সৌন্দর্যমন্ডিত, অর্থবহ ও কৃতকার্য করার জন্য শিক্ষাই একান্ত ও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশে শিক্ষার চিত্রঃ বাংলাদেশে সাক্ষরতার শতকরা হার ৫১.৮% (আদমশুমারি ২০১১)। ২০১৫ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতা মুক্ত করা সরকারের অঙ্গীকার। ইতোমধ্যে ৯৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে। ৩১ হাজার ২০৮টি সরকারি, রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩-৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। সরকারি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৩ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বছরে প্রায় ৭৮ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যন্ত সবার জন্য বিানমূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের জিডিপির ১.৬ ভাগ ব্যয় হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে আর সরকারি সার্বিক ব্যয়ের মাত্র ১৫ ভাগ বরাদ্দ এই ক্ষেত্রের উন্নয়নে।

জাতীয় শিক্ষানীতিঃ ২০১০ সালের ৩১ মে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করে। এ শিক্ষানীতিতে মোট আটাশটি অধ্যায় ও দুটি সংযোজনী রয়েছে। এ শিক্ষানীতিতে কিছু নতুন বিষয় সংযোজিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক, সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা । প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর ধরা হয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। এছাড়াও-

- ৫ বছরের শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার (১ বছরের জন্য) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

- প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পঞ্চম শ্রেণি এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে দশম শ্রেণিতে বৃত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

- নতুন শিক্ষানীতির আলোকে প্রচলিত ডিগ্রি (পাস) কোর্স ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে ৪ বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স চালু রাখা হচ্ছে।

- শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশে শিক্ষার মানঃ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণশীল হলেও শিক্ষার গুণগত মানের ক্রমাগত অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠায় শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণে যোগ্যতার অভাব রয়েছে। লেখাপড়ায় দীনতা ও আসামঞ্জস্যতা থাকায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করে যেনতেনভাবে ডিগ্রি অর্জনের জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছে। শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পাসের হার বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণগত মান কমেছে ও বাস্তবমুখী শিক্ষার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংকটঃ বাংলাদেশে সাক্ষরতার শতকরা হার মাত্র ৫১.৮% হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুমুখী সংকট রয়েছে। নিম্নে শিক্ষাব্যবস্থার সংকটগুলো সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো-

যুগোপযোগী শিক্ষার অভাবঃ বর্তমান যুগকে বিশ্বায়নের যুগ বলা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর না হওয়ায় বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। যা আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থাঃ বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের জন্য একটি সর্বজনীন, গণমুখী এবং বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাদানের গুণগত মান, বিদ্যালয় পরিচালনার ব্যবস্থা, বিদ্যালয়ের উপকরণাদি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাস্তবমুখী শিক্ষানীতির অভাবঃ স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭২ সালের ‘কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন’ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বেশ কিছু শিক্ষানীতি প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয়, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে দরকার সুনির্দিষ্ট যুগোপযোগী শিক্ষানীতি যা আজও প্রকৃত অর্থে প্রণীত হয়নি।

মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাঃ ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ কম থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের মুখস্থনির্ভর শিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে। যদিও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বর্তমানে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে এখনো মুখস্ত বিদ্যাই ভরসা।

ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অনীহাঃ বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজি কেবল একটি ভাষার নাম নয় বরং এটি টেকনোলজির অপর নাম। কিন্তু মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় নামসর্বস্ব ইংরেজি শেখানো হয় যা প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণঃ বর্তমানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। অন্যদিকে শিক্ষকগণ শিক্ষাদানের আদর্শ ভুলে কোচিং কিংবা বাসায় পড়িয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দক্ষ শিক্ষকের অভাবঃ বর্তমান সরকার শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করলেও শিক্ষকদের জন্য তেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখছে না। ফলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে না।

শিক্ষকদের আন্দোলনঃ বেতনভাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বর্তমানে শিক্ষকরা আন্দোলনে রাস্তায় নামছে যা পড়াশুনার পরিবেশে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসঃ বর্তমানে শিক্ষা বিপর্যয়ের অন্যতম এরকটি কারণ হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। একটি বিশেষ মহলের সহায়তায় এই ঘৃণ্য অপরাধটি সংগঠিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃত মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে না। যা আমাদের উন্নয়নের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।

ছাত্ররাজনীতি ও সন্ত্রাসঃ বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি ও সন্ত্রাস অনুপ্রবেশ করায় পড়াশুনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনীতিতে ছাত্ররা ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গন স্থবির হয়ে পড়ছে।

শিক্ষাব্যবস্থায় সংকট সমাধানের উপায় ও আমাদের করণীয়ঃ যে জাতি যতো বেশি শিক্ষিত, সে জাতি ততবেশি উন্নত। সুতরাং আমাদের সর্বাঙ্গীণ উনয়নের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার সংকট উত্তরণ অপরিহার্য। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমস্যামুক্ত করা। শিক্ষাব্যবস্থার সংকট সমাধান কল্পে আমাদের নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে-

- শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, বিজ্ঞানসম্মত, কর্মমুখী, প্রযুক্তিনির্ভর ও বাস্তবসম্মত করতে হবে।

- শিক্ষাক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং যাবতীয় শিক্ষাবৈষম্য দূর করতে হবে।

- প্রযুক্তিনির্ভর বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।

- শিক্ষাক্ষেত্রে যাতে পূর্ণমেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়, এজন্য মুখস্তনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে হবে।

- ইংরেজিকে শুধু বিদেশি ভাষা হিসেবে না দেখে বিশ্বায়নের জন্য অপরিহার্য ভাষা হিসেবে পরিগণিত করতে হবে।

- বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টার, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বন্ধ করে শিক্ষার যথাযথ মান বজায় রাখতে হবে।

- শিক্ষকদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

- শিক্ষা প্রশাসনকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে।

- প্রশ্নপত্র ফাঁস কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

উপসংহারঃ বাংলাদেশে সংকটমুক্ত একটি যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন এখন শুধু সময়ের দাবি। পদ্ধতি পরিবর্তন এবং প্রচলিত পদ্ধতিকে বাস্তবসম্মত ও দুর্নীতিমুক্ত করে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষাকে গুণগত মানের দিক থেকে উন্নত করতে পারলেই জাতীয় জীবনে উন্নয়ন সম্ভব হবে।

৫৯. বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ,বাংলা রচনা

বাংলা রচনা


(সংকেত: ভূমিকা; বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ; মৎস্যের প্রকারভেদ; মৎস্যক্ষেত্র সমূহ; বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব; মৎস্য সম্পদের বর্তমান অবস্থা; মৎস্য সম্পদের সমস্যা বা অবনতির কারণ; মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গৃহিত পদক্ষেপ; সরকারি প্রচেষ্টা; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এদেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি। এসব জলাশয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছ আমাদের প্রিয় খাদ্য। তাই আমাদের মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়। বাংলাদেশের মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। আগে এদেশে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে এর পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থান প্রভৃতির উপর বিবেচনা করে এ সম্পদের প্রতি নজর দেওয়া দরকার।

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদঃ মৎস্য শিল্পে উন্নত না হলেও বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে নানা ধরণের মাছ রয়েছে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক জলাশয় থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে মাছ আহরণ করা হয়। দেশের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ ও ব্যবসায়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫%। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ মৎস্য উৎপাদন করে থাকে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কর্তৃক প্রকাশিত The Global Aquacuture Production Statistics for the year 2011 শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে বার্ষিক মৎস্যের উৎপাদন হলো ১৫,২৪,০০০ টন। বিশ্বে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে প্রথম চীন।

মৎস্যের প্রকারভেদঃ আমাদের দেশে দুই ধরণের মাছ পাওয়া যায়। যথা-স্বাদু বা মিঠা পানির মাছ ও লোনা পানির মাছ। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ইলিশ প্রধান। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এছাড়াও রয়েছে লাক্ষা, রূপচাদা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, হাঙর, পোয়া, ভেটকি, কোরাল, বোয়াল ইত্যাদি। মিঠা বা স্বাদু পানির মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, বোয়াল, পাঙ্গাস, কালবাইশ, শোল, গজার, কই, মাগুর, মলা, চিংড়ি, পাবদা, তেলাপিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রসমূহঃ বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ডোবা, হাওর-বাওর, নদীর মোহনা উপকূল ও সমুদ্র অঞ্চল ইত্যাদি মৎস্যের প্রধান ক্ষেত্র। বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রে প্রায় ২৫০ রকমের মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মৎস্যের উৎপাদন ক্ষেত্র অনুযায়ী তাদের দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।(ক) অভ্যন্তরীণ মৎস্যক্ষেত্র।(খ) সামুদ্রিক মৎস্যক্ষেত্র।(ক) অভ্যন্তরীণ বা মিঠা পানির মৎস্যক্ষেত্রঃ বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরডোবা, হাওর-বাওর, ধান ও পাটক্ষেত এবং নদীর মোহনা ইত্যাদিকে অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্র বলা হয়। অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬০০ একর এবং ধীবরের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার। নিম্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মৎস্য খাতের উৎপাদন তুলে ধরা হলো-

সাল ২০১০-১১ ২০১১-১২ ২০১২-১৩
অভ্যন্তরীণ মৎস্য ২৫.১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ২৬.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন ২৭.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন
উৎসঃ মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রকৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

(১) মুক্ত জলাশয়ঃ বাংলাদেশে প্রায় ৪০.২৫ লক্ষ হেক্টর মুক্ত জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে নদী ও মোহনা অঞ্চল, সুন্দরবন অঞ্চল, বিল, কাপ্তাই হ্রদ, প্লাবনভূমি অন্তর্ভুক্ত। ২০১২-১৩ সালে মুক্ত জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন প্রায় ৯.৫৩ লক্ষ মেট্রিক টন।

(২) বদ্ধ জলাশয়ঃ বাংলাদেশের দিঘি, পুকুর, বাওর ডোবা প্রভৃতি এ শ্রেণির মৎস্য ক্ষেত্রের অন্তর্গত। বাংলাদেশে প্রায় ৭.৪১ লক্ষ হেক্টর বদ্ধ জলাশয় রয়েছে। ২০১২-১৩ সালে বদ্ধ জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন প্রায় ১৮.২৮ লক্ষ মেট্রিক টন।

অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রসমূহঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ মৎস্যকেন্দ্র রয়েছে। যেমন ঢাকার সোয়ারী ঘাট, কাজলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, মাদারিপুর, সিলেট, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, খুলনা, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ মৎস্য কেন্দ্র।

(খ) সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রঃ বাংলাদেশের সমুদ্র মৎস্য সম্পদে খুবই সমৃদ্ধশালী। এ মৎস্য ক্ষেত্রে ৪৭৫টি মাছের প্রজাতির মধ্যে মাত্র ১৩৩টি আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যে ৪২টি প্রজাতিকে বাণিজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দক্ষ ধীবর, মূলধন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম, বড় জাহাজ প্রভৃতির অভাবে মৎস্যক্ষেত্রের বিরাট অংশের মাছ ধরা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা-

(১) উপকূলীয় মৎস্য ক্ষেত্রঃ বাংলাদেশে প্রায় ৭৩২ কি.মি. উপকূল রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষের তেমন বিস্তৃতি না থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

(২) গভীর সমুদ্রের মৎস্য ক্ষেত্রঃ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উপকূল হতে ৩২০ কি.মি. গভীর সমুদ্র পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিস্তৃত। এর গভীরতম অংশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ।

সামুদ্রিক মৎস্য কেন্দ্রঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলের টেকনাফ, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া ও হাতিয়া, সুন্দরবন এলাকার দুবলা দ্বীপ, রাঙ্গাবালি, বাইশদিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক মৎস্য কেন্দ্র।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্বঃ মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে মৎস্য সম্পদের অবদান শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ৪.৩৭%।

নিম্নে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-

খাদ্য হিসাবে মাছঃ বলা হয়ে থাকে মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত-মাছ ছাড়া আমাদের খাবারের পরিতৃপ্তি আসে না। ফলে প্রতিদিন প্রতিবেলা খাবারে মাছ থাকে। মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন এ ও ডি রয়েছে।

জীবিকা নির্বাহের উপায়ঃ বাংলাদেশের প্রায় মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফলে মাছ চাষ করে মানুষ দিন দিন স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।

শিল্পের উপকরণঃ মাছের চামড়া, হাড়, কাঁটা, চর্বি ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া শুশুক, হাঙর, কচ্ছপ প্রভৃতির তেল দ্বারা নানা ধরণের ওষুধ, বার্নিশ, গ্লিসারিন, সাবান ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়।

জমির সদ্ব্যবহারঃ কৃষি জমিতে একই সাথে মাছ ও ধান চাষ করা হয়। তাছাড়া জলাশয়, খালবিল, হাওর-বাওরকে যত্ন সহকারে মৎস্য চাষের আওতায় আনা হচ্ছে।

পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধিঃ মাছ ও মাছের পোনা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর প্রভৃতি সহজসাধ্য করার জন্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়ে থাকে। ফলে পণ্য বাজারজাতকরণের দরুন পরিবহন সংস্থার আয় বৃদ্ধি পায়।

মৎস্য সম্পদের বর্তমান অবস্থাঃ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ মৎস্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ থেকে গুণগত মানসম্পন্ন হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, হংকং, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, সুদানসহ অন্যান্য উন্নত দেশে রপ্তানি করা হয়। যা থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। নিম্নে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ থেকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও অবদান তুলে ধরা হলো-

প্রবৃদ্ধির হার%
সাল ২০১১-১২ ২০১২-১৩
মৎস্য সম্পদ ৫.৩৯ ৫.৫২
অবদানের হার%
সাল ২০১১-১২ ২০১২-১৩
মৎস্য সম্পদ ৪.৩৯ ৪.৩৭
উৎসঃ বাংলাদেশের অর্থনেতিক সমীক্ষা ২০১৩
মৎস্য শিল্পের সমস্যা বা অবনতির কারণ: বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ আজ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। নিম্নে মৎস্য সম্পদ অবনতির কারণ তুলে ধরা হলো-

- নদীতে চর পড়ায় মৎস্য বিচরণ ক্ষেত্রের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যাচ্ছে। ফলে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

- মানুষ দিনদিন নদীনালা খাল-বিল ভরাট করে বাড়ি ঘর তৈরি করছে। ফলে মাছের আবাসস্থল ও বংশবৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে।

- জমিতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে প্রচুর মাছ মারা যায়।

- সময়মতো বৃষ্টির অভাবে নদীর পানি শুকিয়ে যায়।

- নদী থেকে ডিমওয়ালা ও পোনা জাতীয় মাছ অপরিকল্পিতভাবে নিধন করা হচ্ছে।

- শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে পানি দুষিত হয়ে মাছ মারা যায়।

- সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে প্রতিবছর বহু মাছ পঁচে যায়।

- বাজারজাতকরণের অসুবিধার জন্য অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যায়।

মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপঃ বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের জন্য সকলের সদিচ্ছা থাকা দরকার। প্রতিবছর পানির অভাবে ব্যাপকভাবে মাছচাষ ব্যহত হচ্ছে। এজন্য সঠিক পানি সরবরাহের জন্য দরকার গঙ্গা ও তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি। তাছাড়া পানি সংরক্ষণের জন্য নদী খননের ব্যবস্থা করতে হবে। ডিমওয়ালা ও পোনা জাতীয় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা থেকে সরে আসতে হবে। মাছ সংরক্ষণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি মৎস্য ব্যবসায়ীদের আধুনিক নিয়মাবলীর শিক্ষা দেওয়া ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

সরকারি প্রচেষ্টাঃ মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। এজন্য সরকার একটি পৃথক বিভাগ রেখেছে। তাছাড়া জেলেদের নৌকা ও জাল কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করছে। বড় বড় নদী, খাল ও বিলগুলো সমিতির মাধ্যমে জেলেদের নিকট বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মৎস্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ও পোতাশ্রয় নির্মিত হয়েছে। মৎস্য শিল্পের বিকাশের জন্য মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র ও মৎস্য শিকার ট্রেনিং কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সর্বোপরি মৎস্য সম্পদ বিকাশের জন্য সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উপসংহারঃ আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই মৎস্য সম্পদের উন্নতির লক্ষ্যে শুধু দেশীয় চাহিদা নয় বৈদেশিক চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে এ সম্পদের উন্নতি করা দরকার। দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এবং মৎস্য সম্পদকে স্থায়ী সম্পদে পরিণত করতে প্রয়োজনী সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা।

সকল সিমের প্রয়োজনীয় কিছু কোড

Grameen Phone

Show SIM Number : *2#

Balance Check : *566#

Minute Check : *566*24# , *566*20#

Package Check : *111*7*2#

SMS Check : *566*2#

MMS Check : *566*14#

Data (MB) Check : *566*10# , *567#

Call Me Back : *123*Number#

Net Setting Request : *111*6*2#

Miss Call Alert (On) : type START MCA & Send to 6222

Miss Call Alert (Off) : Type STOP MCA & Send to 6222

All Service type “Stop all” and send 2332

Welcome tune : Type “Stop” and send to 4000

Internet off : *500*40#

Facebook Type “Stop” and send to 32665

Facebook USSD dial *325*22#

Mobile Twitting Type “Stop” and send to 9594

Call Block : Type “Stop CB” and send to 5678

Missed Call Alert write “STOP MCA” and send to 6222

Cricket Alert Service “Stop Cric” to 2002.

Sports service Type “STOP SN” and SMS to 2002.

Cricket service, type “STOP CR” and SMS to 2002.

Mobile Backup Write “Stop MB” and send to 6000

Buddy Tracker Type “Stop” and send to 3020

Music News Type “Stop BD ” and send to 4001

Voice Chat dial 2828 and press 8.

Entertainment Box Type “Stop” and send to 1234

Ebill type “Ebill cancel” and send to 2000.

Job News type “STOPJOBCATEGORY” to 3003.

Namaz timings: SMS “STOP N” to 2200.

Hadith sharif SMS “STOP H” to 2200.

Voice Mail Service Dial ##62# or ##67# or ##61# or ##21#

Banglalink

Show SIM Number : *511#

Balance Check : *124#

Minute Check : *124*2#

Package Check : *125#

SMS Check : *124*3#

MMS Check : *124*2#

Data (MB) Check : *124*5# , *222*3#

Call Me Back : *126*Number#

Net Setting Request : Type ALL & Sent to 3343

Miss Call Alert (On) : Type START & Send to 622

Miss Call Alert (Off) : Type STOP & Send to 622

Robi

Show SIM Number : *140*2*4#

Balance Check : *222#

Minute Check : *222*3#

Package Check : *140*14#

SMS Check : *222*11#

MMS Check : *222*13#

Data (MB) Check : *222*81# , 8444*88#

Net Setting Request : *140*7#

Miss Call Alert (On) : Type ON & Send to 8272

Miss Call Alert (Off) : Type OFF & Send to 8272

Airtel

Show SIM Number : *121*6*3#

Balance Check : *778#

Minute Check : *778*5# or *778*8#

Package Check : *121*8#

SMS Check : *778*2#

MMS Check : *222*13#

Data (MB) Check : *778*39# or *778*4#

Call Me Back : *121*5#

Net Setting Request : *140*7#

Miss Call Alert (On) : *121*3*4#

Teletalk

Show SIM Number : *551# Or Type “Tar” & send to 222

Balance Check : *152#

Minute Check : *152#

Package Check : unknown

SMS Check : *152#

MMS Check : *152#

Data (MB) Check : *152#

Net Setting Request : Type SET & Send to 738

Miss Call Alert (On) : Type REG & Send to 2455

Miss Call Alert (Off) : Type CAN & Send to 245

কিভাবে অ্যান্ড্রয়েড ব্রাউজারে বুকমার্ক বা ফোল্ডার যোগ করবেন

অনেক সমইয় ব্রাউজারে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় কিছু পেজ বুকমার্ক আকারে সংরক্ষণ করে রাখার দরকার হয়। এইজন্য ওই পেজ ওপেন করে ব্রাউজারের Menu button (Menu-16.png অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সকল টিপস ও ট্রিকস (মেগাটিউন)) এ ক্লিক করুন। তারপর সেখান থেকে “Save to bookmarks” এ ক্লিক করলেই পেজটি বুকমার্ক আকারে সেভ হয়ে যাবে। আর যদি বুকমার্কটি রিনেম করতে চান তাহলে ইচ্ছামত পরিবর্তন করে সেভ করতে পারবেন অথবা ফোল্ডারে করতে চাইলে “Add to” অপশন সিলেক্ট করে সেখান থেকে “Other folder” এ ক্লিক করুন। ব্রাউজ করে যেকোন ফোল্ডার সিলেক্ট করুন অথবা নতুন ফোল্ডার তৈরী করুন। আর যদি বুকমার্ক ডিলেট করতে চান তাহলে ব্রাউজারের Tabs button (Tabs-16.png অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সকল টিপস ও ট্রিকস (মেগাটিউন)) টি সিলেক্ট করুন। তারপর সেখান থেকে Bookmarks button (Bookmark-16.png অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সকল টিপস ও ট্রিকস (মেগাটিউন)) এ ক্লিক করলে বুকমার্কস গুলো আসবে। যেটি ডিলেট করতে চান সেটিকে টাচ করে ধরে রাখলে ডিলেট অপশন আসবে। এবার ডিলেট করুন।

কিভাবে সেন্সর অফ করে আপনার স্ক্রীনের অটো-রোটেশন অফ করবেন

স্মার্টফোনের একটু জনপ্রিয় সুবিধা হল এর সেন্সর। এর যেমন সুবিধা আছে, তেমনি কিছু ঝামেলাও আছে। যেমন কোন কারণে আপনি ফোন কাত করলেই সেন্সরের কারণে ফোনের স্ক্রীণ ঘুরে যায়। যেটা মাঝে মাঝে খুবই বিরক্তিকর। তাই আপনি চাইলে আপনার ফোনের সেন্সর অফ করতে পারেন। এইজন্য আপনার ফোনের সেটিংস এ যান। সেখান থেকে “Display” অপশনটি সিলেক্ট করুন। তারপর “Auto-rotate screen” অপশনটি থেকে টিক চিহ্ন তুলে দিন, সেন্সর অফ হয়ে যাবে।কিভাবে সেন্সর অফ করে আপনার স্ক্রীনের অটো-রোটেশন অফ করবেন

ইন্টারনেটের দাম কমালো গ্রামীণফোন কিন্তু বর্তমান দাম দেখলে…

গ্রামীণফোন তার দুটি ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম হ্রাস করেছে। সরকার ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ভ্যাট ১৫% থেকে হ্রাস করে ৫% করায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য প্যাকেজর দাম সমন্বয় করা হবে।
৩ আগস্ট ২০১৮ থেকে বর্তমানের ৪২ টাকায় ২জিবি প্যাকেজ পাওয়া যাবে ৩৮ টাকায় (মেয়াদ ২ দিন) এবং ৯৪ টাকায় ১ জিবি প্যাকেজ পাওয়া যাবে ৮৬ (মেয়াদ ৭দিন)।
এ নিয়ে গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও এবং সিএমও ইয়াসির আজমান বলেন, ‘আমরা ভ্যাট হ্রাসের সরকারী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করি এর কারণে গ্রাহকদের আরো কম মূল্যে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে পারছে গ্রামীণফোন। এখন আমাদের গ্রাহকরা আরো সুলভে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং আমাদের উন্নততর নেটওয়ার্কের অভিজ্ঞতা পাবেন।’
গ্রামীণফোনই প্রথম সারাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট নিয়ে যায়। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ইন্টারনেটের সংযোগ এবং গতি পরীক্ষা ও গতি পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান ওকলা দেশের দ্রুততম মোবাইল নেটওয়ার্কের স্বীকৃতি দিয়েছে গ্রামীণফোনকে।

12 August, 2018

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)
হযরত আলী রাঃ,ফজরের নামাজ আদায়
করার জন্য মসজিদে গেছেন ৷ এদিকে
হযরত ফাতিমা রাঃআঃ,গায়ে অত্যান্ত জ্বর অবস্থায়৷
ঘরের সমস্ত কাজ, শেষ করেছেন ৷
আলী রাঃ, মসজীদ থেকে এসে দেখে,
ফাতিমা
কাঁদতেছেন, আলী (রাঃ),প্রশ্ন
করলেন,ও ফাতিমা তুমি কাঁদ কেন? ফাতিমা কোন
উত্তর দিলেন না৷ ফাতিমা
আরোজোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন,
আলী রাঃ কয়েকবার প্রশ্ন করার পরে,
ফাতিমা রাঃ কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
ও আলী,,,,,,,,আমি স্বপ্নের মধ্যে
দেখতেছি,আমার আব্বাজান, হযরত মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ্ সাঃ আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে কি যেন
তালাশ
করতেছেন ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময়, আমি
পিছন দিক থেকে,আমার আব্বাজান কে ডাক দিলাম৷ ও
আব্বাজান আপনি কি তালাশ করতেছেন? আব্বাজান
মুহাম্মাদুর রা:(সঃ) বলতেছেন, ও আমার ফাতিমা,
আমিতো তোমাকে তালাশ করতেছি, তোমাকে
নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ আরো বললেনঃ ও আমার
ফাতিমা,আজকে
তো তুমি রোজা রাখবা ৷ সাহরী করবা আলীর
দস্তরখানায়, আর ইফতার করবা আমি আব্বাজানের
দস্তরখানায় ৷৷৷
আলী (রাঃ) এই স্বপ্ন শোনার পর, দু’জনের
বুঝতে বাকী থাকলোনা, যে ফাতিমা
আজকেই ইন্তেকাল করবেন৷ দুনো জন
আরো
জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন৷ এই
সময়ের
মধ্যে হযরত হাসান হুসাইন (রাঃ) এসে জিজ্ঞাসা
করতেছেন, ও আব্বাজান ও আম্মাজান আপনারা
দুনোজন কাঁদেন কেন? ফাতিমার রাঃ এর একটা
অভ্যাস
ছিল, যখন হাসান হুসাইন রাঃ কোন কাজে বিরক্ত
করতেন, তখন দুনো জনকে নানাজান এর
কবরের
কাছে যেতে বলতেন। আজকে ও ফাতিমা
বলেন,তোমরা দুনোভাই এখন নানার
কবরে চলে যাও, কবরের নিকট যাওয়ার
সাথে সাথে,কবর থেকে আওয়াজ
আসলো,ও আমার আদরের নাতীরা, এই মূহুর্তে
তোমরা আমার কাছে কেন আসছো,
আমার কাছে তো সব সময় আসতে পারবা, এখন
যাও,
যেয়ে মায়ের চেহারার দিকে তাকায়ে থাক,
আজকের পরে তোমাদের মাকে আর পাবেনা৷
এই কথা শোনার পরে,দুনো ভাই কাঁদতেছে
আর
দৌড়াতে দৌড়াতে আম্মার নিকট চলে গেলেন।
যেয়ে আম্মাকে বললেন যে,
তোমরা দুনোজন কেন কাঁদতেছ বুঝেছি,
নানাজান আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আজকের
দিনটা তোমার জন্য শেষ দিন,
নানাজান তোমার চেহারার দিকে তাঁকায়ে থাকার জন্য
আমাদের কে বলেছেন৷
বিকেলের দিকে হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর শরীর
বেশি খারাপ হলো। তাকে বিছানাতে শোয়ানো
হলো। ফাতিমা রাঃ মৃত্যুর পূর্বক্ষনে আলী রাঃ
কে,
তিনটি কথা বলেন ৷
【০১】ও আলী যেদিন থেকে আমি আপনার
ঘরে এসেছি, ঐ দিন থেকে নিয়ে, আজ পর্যন্ত
আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, আলী
আপনি


যদি আমাকে
ক্ষমা না করেন, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে, আমি
সন্তানের কারনে, (আমি মেয়ের কারনে) আমার
আব্বাজান অনেক
লজ্জীত হবেন৷ বলেন আপনি আমাকে ক্ষমা
করলেন কি না,আলী রাঃ বলেন ও ফাতিমা, তুমি এসব
কি বলতেছো, আমি আলী তো তোমার
যোগ্য ছিলাম না, তোমার আব্বাজান দয়া করে
মেহেরবানী করে তোমাকে আমার,,, কাছে
বিয়ে দিয়েছেন,বিয়ের দিন থেকে নিয়ে আজ
পর্যন্ত, আমি আলী তোমাকে কোনদিন
ঠিকমত
দুইবেলা খানা খাওয়াতে পারিনাই,
ও ফাতিমা তুমি বল, আমাকে ক্ষমা করছো
কি না, তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর, তাহলে
আমাকে
ও কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে ৷
【০২】ও আলী আপনার সাথে আমার
দ্বিতীয় কথা হল, আমি মারা যাওয়ার
পরে, আপনি বিয়েকরে নিবেন, দুনিয়ার যে
কোন
মহিলাকে, আপনার পছন্দমত৷
আপনাকে আমি অনুমতি দিলাম৷ আর
আমার বাচ্চা দুইটাকে, সপ্তাহে একটা দিন
আপনার কোলের মধ্যে করে নিয়ে ঘুমাবেন৷৷
【০৩】ও আলী আপনার সাথে আমার তৃতীয় কথা
হল, হাসান হুসাইন যখন বালেগ হবে,তখন দুনো
ভাইকে আল্লাহর
রাস্তায় সপর্দ করে দিবেন৷ এবং আমাকে রাতের
বেলায় দাফন করবেন।
হজরত আলী (রাঃ) বললেনঃ “তুমি নবীর
মেয়ে।
আমি সবখানে খবর দিয়ে তোমায় দাফন করবো।
এতে সমস্যা কি?
হজরত ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ “আামার কাফনের
কাপড়ের
ওপর দিয়ে সবাই অণুমান করবে যে, নবীর
মেয়ে কতটুকু লম্বা ছিলো, কতটুকু সাস্হ ছিলো।
এতে আমার পর্দা ভঙ্গ হবে।”
হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর
তাঁর লাশের খাটিয়া বহন করার মানুষ
মাত্র তিনজন। হজরত আলী (রাঃ)
এবং শিশু হাসান ও হোসাইন (রাঃ)আনহুমা ৷ হজরত
আলী
ভাবছিলেন
যে, খাটিয়া বহন করার জন্য মানুষ আরও
একজন প্রয়োজন তবেই চার কোনায় চার জন
কাঁধে নিতে পারবেন।
এমন সময় হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) এলেন ও
খাটিয়ার এক কোনা বহন
করলেন। হজরত আলী প্রশ্নকরলেন, ও
আবুজর
আমি তো কাউকে বলিনাই, আপনি জানলেন
কিভাবে ? হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) বলেন,
আমি
আল্লাহর
রসুল (সঃ) কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বললেন,
হে আবু জর! আমার ফাতিমার লাশ বহন করার জন্য
লোকের অভাব, তুমি তাড়া তাড়ি চলে যাও। ও
আলী
আমাকে তো হুজুরে আকরাম সঃ আসতে
বলছেন ৷
হযরত ফাতিমা রাঃ আনহা কে যখন কবরে
নামাচ্ছেন, তখন হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ)
কবরের কাছে গিয়ে কবর কে উদ্দেশ্য করে
বললেন……….
…………………………
আতাদরী মানিল্লাতী জি’না বিহা ইলায়কা?
“হে কবর, তুই কি জানিস, আজ
তোর মধ্যে কাকে রাখছি?
【০১】
হা-যিহী সায়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাতী ফা-


তিমাতা
রাঃ আনহা,
এটা জান্নাতের সকল মহিলাদের সর্দার,
ফাতিমা (রাঃ)আনহা৷
কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷
【০২】
হা-যিহী উম্মূল হাসনাইন রাঃ আনহুমা ,
এটা হযরত হাসান হুসাইন
এর আম্মা ৷
…………………….এবার ও কবর থেকে
কোন আওয়াজ নাই৷
【০৩】
হা-যিহী ঝাউযাতু আলিয়্যিন কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্,
এটা হযরত আলী রাঃ এর স্ত্রী ৷
…………………………..এবার ও কবর থেকে
কোন আওয়াজ নাই৷
【০৪【
হা-যিহী বিনতু রসুলুল্লাহি সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম,
এটা,দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে।
……..খবরদার কবর
বেয়াদবী করবি
না ”
“আল্লাহ্ তায়ালা কবরের জবান খুলে দিলেন, কবর
বললঃ
【০১】আনা বায়তুয-যুলমাতি
আমি অন্ধকার ঘর৷
【০২】আনা বায়তুদ-দূদাতী,
আমি সাপ বিচ্ছ্যুর ঘর৷
【০৩】আনা বায়তুন-নফরাতী,
আমি এমন একটি ঘর,
যার মধ্যে কোন বংশ পরিচয় কাজ হয়না……
“আমি দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে
ফাতিমা কে চিনিনা,1
হজরত আলীর স্ত্রীকে চিনিনা,2
হাসান হোসাইনের আম্মাকে চিনিনা,3
জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনীকে চিনিনা,4
আমি শুধু চিনি-
ঈমান আর আমল।”
আমার মধ্যে যদি কেহ্ ভাল আমল নিয়ে
আসে তাহলে আমি কবর তাকে জান্নাতের বিছানা
বিছিয়ে দিবো। আর যদি কেহ খারাপ
আমল নিয়ে আসে, তাহলে আমি কবর দু’দিক
থেকে এমন জোরে চাপা দিবো, হাড় মাংস
মিশে একত্রিত হয়ে যাবে!!!
আমার মুসলমান ভাই ও বোনদের উদ্দেশ্য করে
বলছি, একটু
চিন্তা করে দেখুন- যদি নবী (সঃ) এর আদরের
মেয়ে ফাতিমা, যাকে জান্নাতের সর্দারনী বলা
হয়েছে। তার জন্য যদি কবর এমন কথা বলতে
পারে ! তাহলে
আমাদের কি অবস্থা হবে? বুঝতে
পারতেছেন ৷ কিসের আশায় কি চিন্তা করে
আল্লাহর
হুকুম থেকে এতো গাফেল (ভুলে) আছি।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে ঈমান ও নেক আমল
নিয়ে কবরে যাওয়ার. তৌফিক দান করুন।
#_______________আমীন______________৷

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...