28 February, 2016

জিপির নতুন অফার

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে SIMরেজিস্ট্রেশন করতে আপনারনিকটস্থ আঙ্গুলের ছাপ চিহ্নিতস্থানে চলে আসুন। রেজিস্ট্রেশনকরলেই পাচ্ছেন 1GB ইন্টারনেটমাত্র ৯ টাকায়। অফারটি পেতেডায়াল করুন *5000*99#

22 February, 2016

নামাজের মর্যাদা

নামাযের মর্যাদাআল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতে সঠিকভাবে ঈমান আনার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তা আল্লাহ তাআলা সূরা আন নাসে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ মানুষের রব, বাদশাহ ও ইলাহ বা মাবূদ । কুরআনে আরও একটি সম্পর্কের কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি আরো আবেগময়।আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে ঈমানদারদের ওয়ালী বা অভিভাবক। জীবন্ত নামায আল্লাহর সাথে এ চার রকম সম্পর্ক মযবুত করতে থাকে। মুমীনের রুহানী তরক্কীর জন্য নামাযই সবচেয়ে বেশি কার্যকর । রাসূল (স) নামাযকে তাঁর চোখের মণি বলেছেন। কখনো কোন পেরেশানীর কারণ ঘটলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসল্লাম নামাযের মাধ্যমে প্রশান্তি বোধ করতেন।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেন: ()বোখারী শরীফে বর্ণিত এ হাদীসটির অর্থ : তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে গোপনে কথা বলে এবং তার রব তার ও কিবলার মাঝে বিরাজ করেন।জীবন্ত নামাযের বাস্তব অবস্থা এটাই । মুমিন দুনিয়াকে পেছনে রেখে নামাযে যখন দাঁড়ায় তখন তার ও কিবলার মাঝে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকে না। নামাযে যা কিছু পড়া হয় এ সবই আল্লাহর সাথে একান্তে বলা হয়। তাই এ সবই আল্লাহর সাথে গোপন সংলাপ।নামায মুমিনের মেরাজ কথাটি প্রচলিত আছে। সহী হাদীসে এ ভাষায় কথাটি না থাকলেও উপরের হাদীসটি থেকে একথাটি নামাযের বেলায় প্রযোজ্য । পার্থক্য এটুকু অবশ্য রয়েছে যে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে গিয়েছিলেন সশরীরে আর নামাযে মুমীনের মেরাজ হয় শুধু রূহানীভাবে। নামাযে আল্লাহরই সাথে নামাযীর সংগোপনে সংলাপ চলে । এটা অন্তরে অনুভব করার বিষয় । নামায যতটা জীবন্ত হয় এ অনুভুতি ততই গভীর হয়।বহু হাদীস থেকে জানা যায়, অগণিত ফেরেশতা নামাযের বিভিন্ন অবস্হায় রয়েছে। একদল ফেরেশতা শুধু দাঁড়িয়ে আছে, একদল শুধু রুকুতে আছে, একদল শুধু সিজদায় আছে। হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কোন একদল ফেরেশতা পূর্ণ নামায আদায় করে।আল্লাহ তাআলা মানুষকে পূর্ণ নামায আদায়ের মাধ্যমে ফেরেশতার চেয়ে মর্যাদা দান করেছে। তাই আল্লাহর সাথে বান্দাহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার জন্য নামাযই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। জীবন্ত নামাযের মজা যারা পেয়েছে তাদের নিকট নামাযই সবচেয়ে প্রিয় । নামাযেই আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায়।নামাযে দেহ ও রূহ নির্মাণের জন্য যা করণীয় তা প্রতি ওয়াকতে এবং প্রতি রাকআতে করা সম্ভব নয়। এর জন্য মনকে অবসর করে প্রয়োজনীয় যথেষ্ট সময় লাগিয়ে নামায আদায় করতে হয়। এর জন্য উপযুক্ত সময় হলো শেষ রাত। তাহাজ্জুদের অভ্যাস করতে পারলেই এটা সম্ভব ও সহজ মনে হবে। ৫ ওয়াকতের নামাযে তাহাজ্জুদের মতো নিরিবিলি পরিবেশ ও মানবিক প্রস্তুতি সম্ভব নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয নামাযের পর তাহাজ্জুদের নামায একই সকল নফল নামাযের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষনা করেছেন। তাহাজ্জুদ সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করি :অর্থ : রাত জাগা তোমাদের কর্তব্য । কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের তরীকা, তোমাদের রবের নৈকট্যের মাধ্যমেই আগের গুনাহর কাফফারা এবং গুনাহ থেকে বিরত রাখার উপায়।(তিরমিযী)রাসূল (স) এ হাদীসে তাহাজ্জুদের ৪টি ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য একটি আল্লাহর দরবারে ধরনা দেবার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমই হলো নামায। আল্লাহর সাথে এটা বান্দাহর সরাসরি সম্পর্কের মহা সুযোগ।নামাযের রূহের দিকটাকে না বুঝলে নামায নিতান্তই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য । এ প্রাণহীন নামাযে কী করে মজা পাওযা যেতে পারে। এ জাতীয় নামাযই আমাদের সমাজে চালু আছে। এ কারণেই এ ধরনের নিস্প্রাণ নামায দ্বারা নামাযের উদ্দেশ্য পূরণ হতে পারে না।আল্লাহ তাআলা বলেন :অর্থ : আমাকে স্মরণে রাখার জন্য নামায কায়েম কর। (সূরা তোয়াহা : ১৪ )বারবার নামাযে হাযির হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় । যাতে আল্লাহর কথা ভুলে না যায় সেজন্যই বারবার নামায । নামায শেষ হলে দুনিয়ার দায়িত্ব পালনকালে কি আল্লাহকে ভুলে থাকার অনুমতি আছে?সূরা জুমআর ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন :অর্থ : যখন নামায শেষ হয় তখন যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযক) তালাশ কর। এ সময় আরও বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।এ আয়াতে নামাযের বাইরে আরও বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।হাদীসে আছে যে আল্লাহ বলেন, “ বান্দাহ যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথেই থাকি। যখন সে একা স্মরণ করে আমিও তখন একা তাকে স্মরণ করি। যখন সে কোন জামায়াতে আমাকেস্মরণ করে তখন এর চেয়ে ভাল জামায়াতে (ফেরেশতাদের মধ্যে )আমি তাকে স্মরণ করি। যখন সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, আমি তখন তার দিকে একহাত এগিয়ে যাই। যখন সে একহাত আমার দিকে এগিয়ে আসে আমি তার দিকে একগজ এগিয়ে যাই। যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তখন তার দিকে দৌড়ে যাই।”আল্লাহর সাথে বান্দাহর এ সম্পর্ক নামাযের মাধ্যমেই গড়ে উঠে ও বৃদ্ধি পেতে থাকে।বিতরের নামাযবিতরের নামাযের সঠিক সময় তাহাজ্জুদের পর । এ নামায ওয়াজিব তাই । শেষ রাতে যারা উঠার অভ্যাস করেনি তাদেরকে এশার পরই বিতর পড়তে হয়, যাতে ওয়াজিব তরক হয়ে না যায়।এ নামাযের তৃতীয় রাকাআতে দোয়া কুনুত পড়তে হয়। এ দোয়াটির অর্থের দিকে খেয়াল করলে বুঝা যায় যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই এর উদ্দেশ্য। দোয়াটি বড়ই আবেগময়। কুনুতে দুটো দোয়াই প্রচলিত। এর একটি হানাফী মাযহাব অনুসারী নামাযীদের মধ্যে এবং অপরটি আহলি হাদীসের মধ্যে প্রচলিত। দোয়া দুটোর অনুবাদ এখানে পেশ করা হল :“ হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারি নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই উপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। আমরা তোমার অবাধ্যদের সাথে সম্পর্ক রাখিনা। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদা করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমরাই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফিরদের জন্যই নির্ধারিত।“হে আল্লাহ তুমি যাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছ, আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের মধ্যে শামিল কর। যাদেরকে ক্ষমা ও সুস্থতা দান করেছ, আমাকেও ক্ষমা ও সুস্থতা দান করে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি তাদের অভিভাবক হয়েছ, আমাকেও তাদের মধ্যে শামিল কর। তুমি আমাকে যা দিয়েছ তাতে বরকত দান কর। তোমার মন্দ ফায়সালা থেকে আমাকে রক্ষা কর। তুমিই আসল ফায়সালাকারী, তোমার উপর কারো ফায়সালা চলে না। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ তাকে কেউ অপদস্থ করতে পারে না। তুমি যাকে শত্রু সাব্যস্ত করেছ তাকে কেউ ইজ্জত দিতে পারে না। হে আমাদের রব! তুমিই বরকতময় ও মহান।”Source : https://jibontonamaz.wordpress.com/2011/03/20/namajer-morjada/

16 February, 2016

তারাবির নামাজ

তারাবী হ নামাজের হুকুমঃরমজান মাসের এশার নামাজের পর ২০ রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজকে তারাবীহ নামাজ বলা হয়। তারাবী শব্দটি আরবী । তারাবীহাহ্ তার বহুবচন, যার অর্থ ক্ষনিক বিশ্রাম। রমজানের এই নামাজে প্রতি ৪ রাকায়াতের পরে কিছু সময় অর্থাৎ ৪ রাকায়াত নামাজের সম পরিমান সময় বিলম্ব ও বিশ্রামের নিয়ম থাকায় এ নামাজে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে । তারাবীহ নামাজের ফজিলতঃরাসূল (সাঃ) বলেন, "(হে আমার উম্মতগন), তোমরা জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন এবং উহার রাত্রে তারাবীহের নামাজ সুন্নাত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে ঈমানের সাথে কেবল সোয়াবের আশায় এ মাসে দিনের বেলায় রীতিমত রোজা রাখবে এবং রাত্রিতে রীতিমত তারাবীহের নামাজ পড়বে তার বিগত সব সগীরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে।" অতএব, এ পবিত্র মাসে অধিক নেকী সঞ্চ্য করে লওয়া উচিৎ। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান নেকী পাওয়া যায়। তারাবীহ নামাজের সময়ঃযে রাতে রমজানের চাঁদ দেখা যাবে সে রাত থেকে তারাবীহ নামাজ শুরু করতে হবে। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেলে তারাবীহ বন্ধ করতে হবে। তারাবী নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে শুরু হয় এবং ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত থাকে । যদি কী এশার নামাজের পূর্বে তারাবী পড়ে তাহলে তারাবী হবে না। (দুররুল মুখতার) তারাবীহ নামাজের জামায়াতঃরাসুল (সাঃ) রমজানে তিন রাত ২৩, ২৫ এবং ২৭ শে রাত তারাবীহ নামাজ জামায়াতে পড়িয়েছিলেন। তারপর তিনি যখন সাহাবীদের মধ্যে বিরাট উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুরাগ দেখলেন তখন মসজিদে এলেন না। সাহাবাগন তখন তাঁ দরজায় আওয়াজ দিতে লাগলেন। তখন নবীজি বললেন, আল্লাহ তোমাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় আরও বরকত দিন । আমি এ আশংকায় মসজিদে যাইনি যে, এ নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে না যায় এবং সর্বদা তোমরা তা পালন করতে না পার। কারণ, নফল নামাজ ঘরে পড়াতে বেশী সওয়াব ও বরকতের জারণ হয় (বুখারী)। এ হাদিস থেকে প্রমানিত হয় যে, রাসূল (সাঃ) ৩ রাত জামায়াতের পরে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) রীতিমত জামায়াত কায়েম করেন এবং সাহাবায়ে কিরাম তা মেনে নেন। পরবর্তীকালে কোন খলিফাই এ সুন্নতের বিরোধিতা করেননি। এ জন্য আলেম সমাজ এ নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া বলেছেন। তারাবীহ নামাজের নিয়াতঃنَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْتراويح سُنَّةُ رَسُوْلُ للَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ-উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতাই ছালাতিত তারাবীহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।অর্থঃ কিবলামুখী হয়ে দু'রাকায়াত তারাবীর নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করছি "আল্লাহু আকবার"।তারাবীহ নামাজের দোয়াঃতারাবীহ নামাজে প্রতি চার রাকাত অন্তর অন্তর বসে নিম্নলিখিত দোয়াটি মনে মনে পাঠ করবেঃسُبْحَانَ ذِى الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوْتِ سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَىِّ الَذِيْ لَا يَمُوْتٌ، سُبُّوْحٌ قُدُوْسٌ رَّبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَاءِكَةِ وَلرُوْحِ، اللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ، يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ-উচ্চারণঃ সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা যিল ইজ্জাতি, ওয়াল আজমাতে, ওয়াল হায়বাতি,ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়া জাবারুত। সুবহানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযী লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা, সুববুহুন ক্কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ ।অর্থঃ পবিত্রতে ঘোষণা করছি তাঁর, যিনি ইহজগত, ফেরেশতা জগতের প্রভু সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি মহিমাময় বিরাট, ভীতিপূর্ণ, শক্তিময়, গৌরবময় এবং বভত্তর। আমি সে প্রতিপালকের গুনগান করছি, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনও নিদ্রা যান না এবং যাঁর কখনও মৃত্যু ঘটে না। পুতঃপবিত্র তিনি। তিনি আমাদের পালনকর্তা, ফেরেশতাকুল এবং আত্মাসমূহের পালনকর্তা। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে বেহেশত চাচ্ছি এবং দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি ।তারাবীহ নামাজের মাসয়ালাঃ০১। তারাবীহ নামাজের নিয়ত এভাবে করতে হবে আমি দু’রাকায়াতের সুন্নাত তারাবীহ নামাজের নিয়ত করছি। এমনিভাবে দশ সালাম সহ ২০ রাকায়াত নামাজ পুরা করতে হবে।০২। তারাবীহ নামাজের পর বেতেরের নামাজ পড়া উত্তম । কিন্তু কোন কারণে যদি কিছু তারাবীহ পড়ার পূর্বে অথবা সমস্ত তারাবীহ পড়ার পূর্বে বেতেরের নামাজ পড়াও জায়েজ হবে।০৩। যদি কোন মুক্তাদির বিলম্বে নামাজে যোগ দেবার করণে তার কিছু তারাবীহ বাকী থাকতে ঈমাম বেতেরের নামাজের জন্য দাঁড়ালেন, এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উচিৎ হবে ঈমামের সাথে বেতেরের নামাজ পড়া এবং তারপর বাদ পড়া তারাবীহ পড়া।০৪। চার রাকায়াত পড়ার পর এত সময় পর্যন্ত বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব যত সময়ে চার রাকায়াত পরা হয়েছে।০৫। যদি এশার ফরজ না পড়ে তারাবীতে শরীক হয় তাহলে তার তারাবী দুরস্ত হবে না ।০৬। যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল এবং তারাবীহ জামায়াতে পড়ল না, সে-ও বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়তে পারে।০৭। যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল না সে তারাবীহ ও বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়তে পারবে।০৮। বিনা কারণে বসে বসে তারাবীহ নামাজ পড়া মাকরূহ ।০৯। ফরজ ও বেতের এক ঈমাম এবং তারাবীহ অন্য ঈমাম পড়াতে পারে।১০। তারাবীহ দ্বিতীয় রাকায়াতে বসার পরিবর্তে ঈমাম দাঁড়িয়ে গেল, যদি তৃ্তীয় রাকায়াতে সিজদার পূর্বে তার মনে পড়ে যায় অথবে কোন মুক্তাদি মনে করিয়ে দেয় তাহলে ঈমামের উচিত বসে যাওয়া এবং তাশাহুদ পড়ে এক সালাম ফিরিয়ে সিজদায় সাহু দেবে, তারপর নামাজ পুরা করে সালাম ফেরাবে। তাতে দু’রাকায়াত সহীহ হবে। আর যদি তৃ্তীয় রাকায়াতের সিজদা করার পর মনে পড়ে তাহলে এক রাকায়াতের সাথে মিলিয়ে চার রাকায়াত পুরা করবে।১১। যারা এশার নামাজ জামায়াতে পড়েনি, তাদের জন্য তারাবীহ জামায়াতে পড়া দুরস্ত নয়।১২। কেউ যদি মসজিদে এমন সমইয়ে পৌছে যখন এশার ফরজ হয়ে গেছে, তাহলে প্রথমে সে এশার ফরজ পড়বে এবং পরে তারাবীতে শরীক হবে। তারাবি’র যে সব রাকায়াত বাদ যাবে সেগুলো হয় বিরতির সময় পড়ে নেবে অথবে জামায়াতে বেতের পড়ার পর পড়ে নেবে।১৩। তারাবীতে কুরআন পড়ার নিয়ম হলো, কোন সূরায় বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তে হবে। পুরা কুরআন পাঠকারীকে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে এবং শ্রবণকারীকে শুনতে হবে। এজন্য হাফেজকে উচ্চস্বরে পড়তে হবে।১৪। কেউ কেউ তারাবীহতে তিনবার ক্কুলহু আল্লাহ পড়ে। তা পড়া মাকরূহ ।১৫। কুরআন খতম করার পর সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় কুরআন শুরু করা সুন্নাত। রাসূল (সাঃ) বলেন, আল্লাহ এ কাজ পছন্দ করেন যে কেউ কুরআন খতম করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রথম থেকে আবার শুরু করে “আলিফ লাম মিম .....................মুফলিহুন” পর্যন্ত পড়বে।তারাবীর সময় বেতেরের নামাজের জামায়াতঃশুধু রমজান মাসে বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়া প্রমাণিত আছে। রমজান মাস ছাড়া অন্য মাসে বেতের জামাতে পড়া জায়েজ নেই। যারা একাকী তারাবীহ নামাজ পড়ল তারাও জামায়াতে বেতের পড়তে পারে। কিন্তু যারা তারাবী জামায়াতে পড়ল তাদে জন্য বেতের জামায়াতে পড়া দরকার। বেতের নামাজ তারাবীর পরে অথবা আগে পড়া যায়।তারাবীহ নামাজে কুরআন খতমঃপবিত্র রমজান মাসে একবার কুরআন ক্রমানুসারে খতম করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (ইলমুল ফিকাহ) রাসূল (সাঃ) প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল (আঃ) কে পুরা কুরআন শরীফ শুনাতেন। যে বছর তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, সে বছর তিনি জিবরাইল (আঃ) কে দু’বার কুরআন শুনিয়েছেন।

15 February, 2016

নামাজের মোস্তাহাব সমূহ

 নামাযের মোস্তাহাব সমূহনামাযের মোস্তাহাব সমূহএক্বামতের সময়ে “হাইয়্যালাল ফালাহ্” বলামাত্র নামাযে ঠিকভাবে দাঁড়ান ।তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়ে আন্তিন হতে হাতের তালু বাহির করা ।দাঁড়াবার সময়ে সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।রুকুতে পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা ।বৈঠকে কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা ।সাধ্যানুযায়ী হাসি ও কাশি বন্ধ রাখা ।রুকুতে মাথা ও পৃষ্ঠ ভাগ সমান উঁচু রাখা ।সিজদায় প্রথমে দুই হাঁটু ,তারপর দুই হাত জমিনে রাখা, পরে নাক ও তারপরে কপাল জমিনে রাখা এবং সেজদা হতে উঠার সময়ে যথাক্রমে প্রথমে কপাল, পরে নাক উঠিয়ে তৎপর দুই হাত হাঁটুর উপরে রেখে বসা ।সিজদায় দুই হাতের মধ্যে মাথা রাখা, নাক দুই বৃদ্ধাংগুলির মধ্যে বরাবর রাখা ।হাত-পায়ের আঙ্গুলিসমূহ কেবলা মুখ করে রাখা ।ছালাম ফিরানোর সময় দুই সিনার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।সেজদায় পুরুষের দুই হাত পৃথক ভাবে রাখা এইভাবে উঁচুতে রাখতে হবে  যেন বকরীর বাচ্চা যাতায়াত করতে পারে । কিন্তু স্ত্রীলোকের জন্য সেজদায় এর বিপরীত করতে হবে । যেমন দুই হাত চাপিয়ে রাখা এবং রানের উপর পেট রাখা ।তিন বারের অধিক-বেজোড় তছবীহ্ পড়া ।ফযরের নামাযে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া।আছরের নামাজে ( سورة الشمس – سورة البينة)  এর মধ্যে যে কোন ২টি  সুরা  পড়া ।মাগরিবের নামাজে ছোট ছোট সূরাহ (سورة الزلزال  -  سورة الناس) পাঠ করা ।এশার নামাজে (سورة الحجراة – 

নামাজের সুন্নত সমূহ

 নামাযের সুন্নত সমূহনামাযের সুন্নত সমূহতাকবীর বলে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠান ।হাতের আঙ্গুল পরস্পর পৃথক রাখা ।ইমামের জন্য নামায আরম্ভের তাকবীর উচ্চঃস্বরে পড়া ।ছানা পাঠ করা ।“আউযুবিল্লাহ্” পাঠ করা ।“বিছমিল্লাহ্” পাঠ করা ।সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ঈমাম ও মুস্তাদিগণের মৃদুস্বরে “আমীন” বলা ।পুরুষের জন্য নাভীর নীচে তাহরিমা বাঁধা আর স্ত্রী লোকের জন্য ছিনার উপরে তাহরিমা বাঁধারুকুর তাকবীর বলা ।রুকুতে দুই হাঁটু ধরা ও আঙ্গুল সমুহ পরস্পর পৃথক রাখা ।রুকুর ভিতরে তিন, পাঁচ বা সাতবার তাছবীহ্ বলা ।রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ান ।রুকু হতে উঠার সময়ে ইমামের “ছামিয়াল্লাহ হুলিমান হামীদা” ও মোক্তাদিগণের “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা ।সেজদায় গিয়ে দুই হাঁটু ও তাকবীর বলে বসা ।সেজদায় তাছবীহ্ পড়া ।পুরুষের জন্য ছেজদাহ হতে উঠে ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা, আর স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বাহির করে ছতরের উপর বসা ।ছেজদা থেকে উঠার পর এক তছবীহ্ পরিমাণ সময় বসে থাকা ।দরুদ শরীফ পাঠ করা ।দোয়ায়ে মাছুরা পড়া ।দুই দিকে ছালাম ফিরান ।

নামাজের ওয়াজিব সমূহ

 নামাযের ওয়াজিব সমূহনামাযের ওয়াজিব সমূহনামাজের মধ্যে মোট ওয়াজিব ১৪টি। এগুলো একটি ভুল করে ছেড়ে দিলে শেষ বৈঠকে সিজদায় সাহু পড়তে হবেঃসুরা ফাতিহা পড়াসুরা ফাতেহার সঙ্গে সুরা মিলানোরুকু ও সেজদায় দেরী করারুকু হইতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোদুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসাদরমিয়ানী বৈঠকদুই বৈঠকে আত্ত্যাহিয়াতু পড়াঈমামের জন্য কেরাত আস্তের জায়গায় আস্তে পড়া এবং জোরে জায়গায় জোরে পড়াবিতিরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়াদুই ঈদের নামাজে ছয় তকবীর বলা ৷ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাত কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা ৷্রত্যেক রাকাতের ফরজ গুলির তরতীব ঠিক রাখা ৷প্রত্যেক রাকাতের ওয়াজিব গুলির তরতীব ঠিক রাখা ৷আস্আলামু আ'লাইকুম ও'রাহ...বলিয়া নামাজ শেষ করা

নামাজের ফরজ সমূহ

 নামাজের ফরজ সমূহনামাজের ফরজ সমূহনামাজের বাহিরে এবং ভিতরে ১৩টি ফরজ রয়েছে।নামাজের বাহিরে ৭ ফরজশরীর পাককাপড় পাকনামাজের যায়গা পাকসতর ঢাকাক্বিবলামূখী হওয়াওয়াক্ত মত নামাজ পড়ানামাযের নিয়ত করানামাজের ভেতরে ৬ ফরজতাকবীরে তাহরীমাহ বলাদাঁড়িয়ে নামাজ পড়াক্বির আত পড়ারুকু করাদুই সিজদা করাআখিরী বৈঠকছালামের সহিত নামায ভঙ্গ করা সুন্নত । নামায আদায় করতে গিয়ে উপরোক্ত ১৪টি [বাহিরের ৭ টি + ভেতরের ৬টি] ফরযের কোন একেটি ভুলেও ছেড়ে দিলে নামায শুদ্ধ হবে না; নামায পুণরায় পড়তে হবে ।

Ripon


14 February, 2016

পবিত্র ইদে মিলাদুন্নবী

পবিত্র কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম । আল্লাহর এ নেয়ামত ও আনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ করার নির্দিশ স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজে দিয়েছেন ।যেমন এরশাদ হচ্ছেঃ-قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَআর্থাৎ হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তরা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট। সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮উল্লেখ্য যে, নবীজীর শুভাগমনের চাইতে শ্রেষ্ট নেয়ামত এবং দয়া বিশ্ববাসীর জন্য আর কি হতে পারে ? যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে-وما ارسلنك إلا رحمة للعالمينহে রাসূল, নিশ্চই আমি আপনাকে জগতসমুহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)দ্বিতীয় দলীলঃ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমানঃ-قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَاءِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا الِّاَوَّلِنَا وَاَخِرِنَا وَ اَيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ-আর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) দুয়া করলেন, হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ন করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে ( বর্তমানে আছে ) এবং যারা পরে, সকলের জন্য আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয়। আর আপনি আমাদেরকে রিযিক প্রদান করুন বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিযিক প্রদানকারী। (সূরা মায়েদা আয়াত ১১৪)মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা পেলে তা যদি ঈসা (আঃ) এর ভাষায় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দোৎসবের কারণ হয় তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত মহান নেয়ামতে আগমন দিবস কতই না মর্যাদাবান , গুরুত্ববহ, ও আনন্দের তা সহজেই আনুমেয়। পবিত্র হাদিস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্র হাদিসের মধ্যে ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতার প্রমান পাওয়া যায় । তম্নধ্য হতে কয়েকটি হাদীস হতে একটি হাদীস শরীফ হচ্ছে-عن ابن عباس رضي الله عنه ،كان يحدث ذات يوم في بيته وقائع و لاد ته بقوم فيبشرون ويحمدون إذا جاء النبي صلي الله عليه و سلم و قال حلت لكم شفاعتي͏ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।( ইবনে দাহইয়ার আত-তানবীর )সুতরাং প্রমানিত হল, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন দ্বারা রাসূলে পাকের শাফায়াত নসীব হয় ।͏ মিলাদ পালন করেছেন নবীজি নিজেই -عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা (রা:) হতে বর্নিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জম্মন গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয় ।(সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)͏ আরো মজার ব্যপার হল আবুলাহাব একজন কাফের হওয়ার পরও নবীজীর জন্মেরর দিন খুশি হয়ে সে তার সংবাদ দাতা দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দেওয়ার কারনে পরকালে কঠিন আযাবের ভিতরে ও প্রতি সোমবার তার আযাব হালকা করে দেওয়া হয়।(উল্লেখ্য যে আবু লাহাবের ঘটনা সম্পর্ক হাদিসটি আল্লামা ইবনে জাওযী, আল্লামা কুস্তালানী, আল্লামা জালালুদ্দিন মুয়ূতী সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। ) সাহাবায়ে কেরামের মতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর মক্কি হায়তমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রনীত কিতাব ‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‍‍আন ইন মাতুল কুবরা আলাল আলম ফী মাওলিদি উলদে আদম”এর মধ্যে কতিপয় হদিস শরীফ রিলক্ষিত হয়।- সর্বশ্রেষ্ট সাহবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:)বলেন-مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ مَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَنَرَفِيْقِى فىِ الجَنّةِঅর্থাৎ ইমলাদুন্নবী উপলেক্ষে যে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে বেহেশতের শধ্যে আমার বান্ধু হবে।দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন -مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَخْيَا الاسْالاَمُযে মিলাদুন্নবীকে সম্মান করল সে যেন ইসলামকেই জিন্দা করলতৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান (রাঃ) বলেন -مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر رَوحُنَيْنُযে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে যেন বদর এবং হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করলচুতর্থ খলিফা হযরত আলি মুরতাদ্বার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَحْرُمُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَابঅর্থাৎ যে ব্যিক্ত মিলাদুন্নাবী সম্মান করবে তার বদৌলেত সে ঈমান ব্যতিরেকে দুনিয়া হতে বিদায় নেবেনা এবং কোন হিসাব নিকাশ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করবে।বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-وَدَوتْ لَوْكَانَ لِى مِثل جَبَلٍ اُحٍد زَهْبًا فَا نْفَقُتُهُ عَلَ قِراَ ة مَوْلِدِالنّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَঅর্থাৎ আমার মন চায়, যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন থাকত, তাহলে সব গুলো মিলাদুন্নবী পালনে খরচ করতাম।হযরত জুনাঈদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাহি বলেন-مَنْ حَضَرَ مَوْلِدِالنَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمُ وَعَظّمَ قدره فَقَد فَازَ با لاِ يْما نঅর্থাৎ যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী মাহফিলে উপস্থিত হয় এবং তার যথাযথ সম্মান করে তাহলে তার ঈমআন সফল হয়েছে।
আমি রিপন

আখেরী চাহার সোম্বা

অবিস্মরণীয় আখেরী চাহার সোম্বাআল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (স.) এই পৃথিবীতে তেষট্টি বছর হায়াত পেয়েছিলেন। এর মধ্যে কখনোই তিনি বড় ধরনের কোনো রোগ ব্যাধির কবলে পড়েন নাই। কাফের মুশরিকদের শত অত্যাচার ও নির্যাতনের মাঝেও তিনি ছিলেন হিমাদ্রির ন্যায় অবিচল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স.) কে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেবেন তার আগে রোগে আক্রান্ত হলেন। উম্মুল মু'মেনীনগনও সাহাবা আজমাইনগন তাতে খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। এর আগে সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি সুস্থতা অনুভব করলেন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) কে ডেকে বললেন, বিবি আমার কাছে আসুন ও আমার কথা শুনুন। হযরত আয়শা (রা.) দৌঁড়ে চলে এলেন এবং বললেন, হে আল্লহর রসূল (স.), আমার বাবা-মা আপনার জন্য উত্সর্গ হোক, বলুন! আমাকে কি জন্য ডেকেছেন। মহানবী (স.) বললেন, আয়েশা আমার মাথা ব্যাথা চলে যাচ্ছে এবং আমি সুস্থ্যতা অনুভব করছি। আপনি হাসান হোসাইন ও মা ফাতিমা কে আমার করছে ডেকে নিয়ে আসেন। হযরত আয়েশা (রা.) তাই করলেন। রসূল (স.) এর মাথায় পানি ঢাললেন। তাকে সুন্দর ভাবে গোসল করালেন। এই খবর মদীনায় সকল স্থানে ছাড়িয়ে পড়লো। অনেক সাহাবী এই খবর পেয়ে আনন্দে আত্মাহারা হয়ে গেলেন। কেউবা দাসমুক্ত করে দিলেন। কেওবা উট দান করলেন। কেউবা বহু দান সাদকা করলেন। সাহাবিরাও অনেকে রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়ার নামাজ ও দোয়া করলেন। এটা ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এজন্য এই দিনটিকে আখেরী চাহার সোম্বা বলা হয়। আখেরী আর্থ শেষ আর চাহার সোম্বা হলো বুধবার। রসূল (স.) এর আগে তার পরম বন্ধু আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছানোর জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। একজন মুসাফির যেমন দূরবর্তী সফরে বের হওয়ার আগে সবার নিকট বিদায় নেয় সব কিছু গুছিয়ে নেয়। যা দেখে অনুভব করা যায় যে, উনি কোনো সফরে বের হবেন। ঠিক তদ্রূপ মহানবী (স.) তাঁর ইন্তেকালের আগেই তার বিদায় যাত্রার প্রস্তুতি দেখে নিকটতম সাহাবীরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, রসূল (স.) বোধ হয় আমাদের মাঝে আর বেশিদিন থাকবেন না। এর পর হঠাত্ জিব্রাইল (আ.) আসলেন এবং বললেন, হে রসূল (স.) আল্লাহ তায়ালা আপনাকে শীঘ্রই এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার অথবা আরো কিছুদিন এখানে থাকার অবকাশ দিয়েছেন। এখন আপনি যেটা পছন্দ করেন। প্রিয় পাঠক! আল্লাহর নবী রসূলগন হলেন জগতের সেরা সন্তান। তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর আগে ছালাম জানিয়েছেন থাকা ও যাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু সকল নবী যাওয়াটাকেই বেছে নিয়েছেন। মহানবী (স.) ও তাই করলেন। তিনি একদিন বলেছিলেন, আল্লাহ তাঁর কোনো এক বান্দাকে এই পৃথিবীতে থাকার ও এখান থেকে যাওয়ার ইখতিয়ার দিয়েছেন। কিন্তু সেই বান্দা-বলেছে-আল্লাহুম্মার রফিকুল আলা" আমি আমার পরম বন্ধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্নিধ্যকেই বেছে নিচ্ছি। সাহাবীরা বলেন, রসূলের এই কথায় সম্মুখের নিকটতম সাহাবী আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, যুবারের, আবদুর রহমান বিন আউফ এসব জলিল-এ-ক্বদর সাহাবীরা ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। তাদের কান্নার শব্দ পিছনের কাতার থেকে শোনা গিয়েছিল। সাহাবীরা বুঝে ছিলেন রসূল (স.) হয়ত আর বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবেন না। এরপর রসূল (স.) শেষ অসুস্থ হলেন-তার স্ত্রী মায়মুনার বাড়ী থেকে ফেরার পথে। হযরত আয়শার কাছে আসলেন। রসূল (স.) তাঁর অসুস্থতার কথা আয়শাকে বলার আগেই আয়শা (রা.) রসূল (স.) কে বললেন, মাথা গেল, মাথা গেল, তখন রসূল (স.) বললেন, কার মাথা? আমার না তোমার? আয়শা (রা.) বললেন আমার মাথা গেল। রসূল (স.) তখন রসিকতা করে বললেন, তোমার মাথা গেলে তো তুমি সৌভাগ্যবর্তী হবে। কেননা আমি আখেরী নবী, তোমার স্বামী তোমাকে নিজে কবরে শায়িত করে রেখে আসবো এর চেয়ে সম্মানের আর কি হতে পারে? আয়শা (রা.) রসিকতা করে বললেন, হ্যাঁ আমি আগে মৃত্যুবরণ করি আর আপনি আর একজন বিবি এনে আনন্দে কাটাতে পারেন। এথেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য জীবনের মধুর সম্পর্কের কথাও জানা যায়। রসূল (স.) আয়শাকে বললেন, আয়শা! খয়বারের ইহুদীনী মহিলার সেই বিষ মিশানো খাবার এখনো আমাকে পীড়িত করছে। মহানবী (স.) কখনোই জামায়াত ছাড়া ফরজ নামাজ আদায় করেননি। যখন থেকে জামায়াতবদ্ধ ভাবে নামাজ ফরজ হয়েছে। সর্বশেষে যখন বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন। তখন তিনি সতের ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে যেতে পারেননি। শেষ যে নামাজে গিয়েছেন তখনকার অবস্থা ছিল অন্যান্য দিনের মত হযরত বেলাল আজান দিলেন। কিছুক্ষন পর বেলাল মহানবী (স.) কে এসে ডাক দিলেন রসূল (স.) জামায়াতের সময় হয়েছে। মহানবী (স.) বললেন আমি বোধহয় একাকী জামায়াতে যেতে পারবোনা তুমি কাওকে ডেকে নিয়ে এসো। তিনি হযরত আলী অথবা অন্য একজন সাহাবী নিয়ে এলেন। মহানবী (স.) দু'জন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে জামায়াতে চলে গেলেন। অসুস্থতার কারণে দাড়াতে পাড়ছেননা। তিনি বসলেন। আর আবু বকরকে পাশে ডাকলেন। বেলালকে ইকামত দিতে বললেন। তখন মহানবী (স.) বললেন, হে আবু বকর! তুমি আমার অনুসরণে নামাজ পড়বে আর তোমরা সবাই আবু বকরের অনুসরণে নামাজ পড়বে। সেভাবেই শেষ হলো। এটা হলো জোহরের নামাজ। নামাজ শেষে রসূল সাহবীদেরকে কিছু কথা বললেন, "তোমরা কেউ শিরকে লিপ্ত হবেনা। বিদেশ হতে আগত দূতদেরকে সম্মান করবে। সাবধান আমার কবরকে তোমরা পুজা করবেনা। কেননা নবী রাসূলদের কবর পুজা করে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর পরের ওয়াক্ত অর্থাত্ আসরের ওয়াক্তের সময় আসল। বেলাল ডাক দিলেন। রসূল (স.) বললেন, বেলাল! আমি বোধ হয় আর জামায়াতে যেতে পারবোনা তুমি হযরত আবু বকরকে নামাজ পড়াতে বলো। যখন নামাজ চলছিল তখন রসূল (স.) আয়েশাকে বললেন, আয়েশা! হুজরার পর্দাখানা একটু সরিয়ে দাও আমি নামাজরত আমার সাহাবীদের কাতারগুলি একটু দেখতে চাই। আয়শা পর্দা সরিয়ে দিলে মসজিদের মধ্যে রসূল (স.) এর দৃষ্টি পড়লো। সাথে সাথেই মলিন চেহারাটা আলোকে উদ্ভাসিত হলো। আয়শা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, প্রচণ্ড অসুস্থতার কারণে আপনার চেহারাটা মলিন কিন্তু আপনি মসজিদের দিকে তাকাতেই আপনার চেহারা উজ্জল হয়ে গেল তার কারণ কি? মহানবী (স.) বললেন, আমি দেখলাম আমার অবর্তমানে আমার সাহাবীরা নামাজে ব্যতিক্রম করে নাই। ঠিক আমার মত সুন্দর করে নামাজ পড়ছেন। এই দৃশ্য দেখে আমার হূদয় কন্দরে আনন্দের হিল্লোল প্রবাহিত হয়েছে তাই আমার চেহারা আলোকিত হয়েছে। বৃহসপতিবার আসরের নামায়াজের পর হতে আর মসজিদের জামায়াতে যেতে পারেনি। এরপর ধীরে ধীরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গোটা মদিনা নগরী নীরব নিস্তব্দ। সোমবার সুবেহ সাদিকে বেলালের আজান নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে জাগিয়ে দিল সব মানুষদেরকে। রসূল (স.) ইশারায় ফজরের নামাজ আদায় করলেন। হযরত আয়শা (রা.) বললেন আমার হুজরার বাতি সে সময় নিভে গেল। মহানবী (স.) এর সকল সম্পদ এই মুহুর্তে এমন ভাবে শেষ হলো যে, বাতিজ্বালানোর তেলটুকুও ছিল না। অর্থাত্ তার প্রাণ প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই আলোর প্রদীপ নিভে গেল। হযরত জিব্রাইল (আ.) এসে বললেন হে রসূল (স.)! আপনাকে আল্লাহ সালাম দিয়েছেন। রসূল (স.) তখনই ধরাধাম হতে চিরবিদায় নেবেন। মেয়ে ফাতিমা সে সময় খুব কাঁদছিলেন। মহানবী (স.) ফাতেমাকে ডাকদিয়ে কি যেন বললেন। তার কান্না বন্দ হয়ে গেল। হযরত আয়েশা (রা.) ফাতেমাকে ডেকে বললেন তোমার আব্বা তোমার কানে কি বললেন, আর তোমার কান্না বন্ধ হয়েগেল? ফাতেমা বললেন, আব্বাজান আমাকে বলেছেন মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সবার মধ্যে আগে তাঁর সাথে আমার দেখা হবে। এর পর মালাকুল মওত আজরাইল (আ.) আসলেন। আর একটু পরেই জান কবজ হবে। জিব্রাইল (আ.) জিজ্ঞাস করলেন ইয়া রসূল (স.)! আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে। মহানবী (স.) বললেন হ্যাঁ, মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই কষ্টকর। জিব্রাইল (আ.) বলেন, ইয়া রসূল (স.) আপনাকে পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে কম কষ্টে জান কবজ করা হচ্ছে। মহানবী (স.) বলেন, আমারতো মনে হচ্ছে ওহুদ পাহাড়টি আমার বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রিয় পাঠক! গভীর ভাবে চিন্তা করুন, সবচেয়ে কম কষ্ট যদি এই হয় তাহলে যারা আল্লাহ বিরোধী, বিপদগামী, বেনামাজী মৃত্যুর সময় তাদের কি অবস্থা হবে? এরপর রসূল (স.) আস্-সলাত! আস্-সলাত!! অমা মালাকাত আইমানুকুম। নামাজ! নামাজ!! তোমরা তোমাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। এই কথা বলতে বলতে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে গেলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। ভোর না হতেই চারিদিকে আওয়াজ উঠল রসূল নেই! রসূল নেই!! সবাই যেন বাক্যরূদ্ধ হয়ে গেলেন। নিকটতম সকল সাহাবী খবর পেয়ে হাজির হলেন। হযরত ওসমান একবার হুজরার মধ্যে যান আবার বের হয়ে এসে লোকদের শান্ত করেন। সাহাবী উনায়েস (রা.) বেহুশ হয়ে গেলেন। হযরত ওমরের মত বড় বীর পাগল প্রায় হয়ে গেলেন। নাঙ্গা তরবারি বের করে বলছিলেন, যে বলবে মুহাম্মদ (স.) নেই, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিব। এ খবর যখন হযরত আবুবকরের কাছে পৌছলো। তখন তিনি সুনুহ পল্লীতে অবস্থান করছিলেন। হযরত আয়শা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা হযরত আবুবকর (রা.) একটি ঘোড়ায় চড়ে এলেন। ঘোড়া হতে নামলেন। কারো সাথে কোন কথা বললেন না। সোজা হুজরায় ঢুকলেন। রসূলের চেহারা হতে কাপড় উঠালেন। ললাটে চুম্বন করলেন। আর বললেন, হে প্রিয় বন্ধু! তুমি সত্যি ইন্তেকাল করেছো। এরপর তিনি মনটাকে হিমাদ্রির মতো শক্ত করে বাইরে এসে বললেন, হে জনমন্ডলি! তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদের পূজারি তারা শোন, মোহাম্মদ (স.) ইন্তেকাল করেছেন। আর যারা আল্লাহর পূজারী, তারা শোন, সেই আল্লাহ চিরঞ্জিব, অমর। তিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না। হে ওমর! ঠান্ডা হও। অতঃপর তিনি কুরআনের 'অমা মুহাম্মাদুন ইল্লা রাসূল' আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ হলো মুহাম্মদ (স.) একজন রসূল ছাড়া আর অন্য কিছু নন। তার আগে বহু রসূল এসেছিলেন ও তারাও মৃত্যুবরণ করেছেন। সুতারাং যদি মুহাম্মদ (স.) ইন্তেকাল করেন, অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা তোমাদের পূর্বের অবস্থায় (জাহেলিয়াতে) ফিরে যাবে? হযরত ওমর (রা.) বললেন, যখন আবুবকর এই কথাগুলো বলছিলেন ও কুরআনের আয়াত পড়ছিলেন তখন আমার হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। ধীরে ধীরে পা ভারি হতে লাগলো। অবশেষে আমি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলাম। আখেরী চাহার সোম্বায় যদি আমরা এ সমস্ত দৃশ্য ও কথাগুলো হূদয় পটে জাগরুক করতাম তাহলে আমাদের মন মানসিকতার আমুুল পরিবর্তন ও আলোর উন্মীলনে উদ্ভাসিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা কি হয়? তাই আমরা এবার আখেরী চাহার সোম্বা হতে শপথ নিয়ে রসূলের খাটি উম্মত হওয়ার লক্ষে তার প্রতিটি সুন্নাহ বা আদর্শকে আকড়ে ধরি ও আমলে জিন্দেগী গড়ে তুলে আল্লাহর রিজামন্দি হাসিল করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফিক দান করুন, আমিন।

পবিত্র আশুরা

আরবি নববর্ষের মাস মহররম। তা আরবি শব্দ। যার অর্থ সম্মানিত, বিশেষভাবে গুরুত্বপ্রাপ্ত ইত্যাদি। এ মাসের গুরুত্ব সত্যিই অপরিসীম এর সম্মান অত্যন্ত বেশি। মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আরবি ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেই সুবাদে ওই তারিখ আশুরা বলে উল্লেখিত হয়ে আসছে।১০ই মহররম/আশুরা এর তাৎপর্য:০১. আল্লাহপাক এ তারিখে আসমান, জমিন, লওহে কলম সৃষ্টি করেছেন এবং এই ১০ মহররম মহাপ্রলয় বা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।০২. আল্লাহতায়ালা আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে ১০ মহররম দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।০৩. মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ঈমানের মহা কঠিন পরীক্ষা দিতে নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন ১০ মহররম।০৪. ১০ মহররম খোদাদ্রোহী ফেরাউন বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে নীল দরিয়ার অতল তলে তুবে মরে আর হযরত মুসা (আঃ) বনি ইসরাইলদের নিয়ে পানির ওপর দিয়ে পার হয়ে যান।০৫. হযরত ইউনুছ (আঃ) ৪০ দিন মাছের পেটে অবস্থানের পর ১০ মহররম নাজাত পেয়েছিলেন।০৬. হযরত নূহ (আঃ) ৪০ দিনের মহাপ্লাবনের পর ১০ মহররম নৌকা থেকে বেলাভূমিতে অবতরণ করেন।০৭. হযরত ঈসা (আঃ) ইহুদিদের অত্যাচার, নির্যাতন শূলদণ্ড থেকে মুক্তি লাভের জন্য সশরীরে চতুর্থ আসমানে উপস্থিত হন ১০ মহররম।০৮. হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁর হারানো ছেলে হজরত ইউসুফ (আঃ)- কে ফিরে পান এবং দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরে পান ১০ মহররম।০৯. ধৈর্য, সহনশীলতার মূর্ত প্রতীক হযরত আয়ুব (আঃ) ১৮ বছর কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত থেকে আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ১০ মহররম আকস্মিকভাবে আরোগ্য লাভ করেন।১০. কাবাঘরের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল এবং ঐতিহাসিক কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা সংগঠিত হয়, যা বিশ্বের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।তবে উপরোক্ত বিষয়গুলো লোকমুখে প্রচলিত থাকলেও কিছু কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্যও রয়েছে। যেমন – এদিন হযরত ইউসুফ (আঃ) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদরীস (আঃ) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলে, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।–(আল আসারুল মারফূআ, আবদুল হাই লাখনুবী ৬৪-১০০; মা ছাবাহা বিসসুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানাহ ২৫৩-২৫৭।)মহান ত্যাগ ও ঘটনাবহুল আশুরা/মহররমের ঐতিহাসিক তাৎপর্য।হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) এর নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে এক মহাবিপ্লব ঘটেছিল। এই মহাবিপ্লব খোদাদ্রোহী ও মুনাফিক চরিত্রের অধিকারী উমাইয়া শাসকদের স্বরূপ উন্মোচন করেছিল। ইসলামের নামে ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাসবাদ চালু করেছিল ইয়াজিদি শাসক গোষ্ঠী। উমাইয়াদের রাজতান্ত্রিক ইসলামে বসেছিল দরবারি আলেমদের মেলা। লাখ লাখ জাল হাদিস প্রচার করে ইসলাম সম্পর্কে ধুম্রজাল ও বিভ্রান্তি জোরদার করা হয়েছিল সে সময়। ইসলামের প্রকৃত নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ও ভন্ড প্রকৃতির নেতাদের মাহাত্ম্য প্রচার করা ছিল তাদের স্বভাব। উমাইয়া রাজশক্তির পক্ষ থেকে ইমাম হুসাইন (রা:) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ‘ইসলামী হুকুমাতের’ বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বলে প্রচার করা হয়েছিল।ঐতিহাসিক বর্ণনায় দেখা গেছে, হযরত ইমাম হুসাইন (রা:)-কে হত্যার জন্য উদ্যত সেনাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল নামাজি। তারা বলছিল: তাড়াতাড়ি হুসাইনের মাথা কাট, নামাজ বা জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় পার হয়ে যাচ্ছে! এরা একবারও হয়তো চিন্তা করেনি যে, রাসূল (সা:) এর আহলে বাইতের একজন মহান সদস্যকে তারা হত্যা করতে এসেছে! আর আহলে বাইত (রা:)এর ওপর দরুদ পেশ করা ছাড়া নামাজ আদায় হয় না।৬১ হিজরির চতুর্থ মহররম কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের গভর্নর নরপিচাশ ইবনে জিয়াদ ‘শুরাইহ কাজি’ নামক দরবারি আলেমের কাছ থেকে নেয়া ফতোয়ার ভিত্তিতে হযরত ইমাম হুসাইন (রা:)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উস্কানি দিয়েছেন। কুফার মসজিদে ওই ফতোয়া শুনিয়ে তিনি একদল মানুষকে ইমামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। ইবনে জিয়াদের নির্দেশে তৈরি করা ওই ফতোয়ায় বলা হয়েছিল হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের খলিফা ইয়াজিদের আনুগত্য করেননি তাই তাকে দমন করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব।কুফার ১৩ হাজার বিভ্রান্ত মুসলমান ইমাম হুসাইন (রা:)এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর সাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এদের মধ্যে শিমার বিন জিল জুশান ছিল ওই ১৩ হাজার সেনার চার জন গ্রুপ-লিডারের অন্যতম।কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ইমাম হুসাইন (রা:) যেদিন কারবালায় পৌছেন সে দিনটি ছিল দোসরা মহররম। তিনি সেখানে পৌছেই জানতে পারেন ওই এলাকার নাম কারবালা। তখনই তিনি জানান যে, সেখানে তাঁর ও সঙ্গীদের শাহাদত ঘটবে এবং তাঁদের নারী ও শিশুদের বন্দী করবে ইয়াজিদ বাহিনী। এ দিনেই তিনি কাইস বিন মাসহারকে দূত হিসেবে কুফায় পাঠান। ইমাম তার কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কুফায় তাঁর সমর্থক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইয়াজিদের সেনারা কাইসকে পথে গ্রেফতার করে। কাইস ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে শহীদ করা হয়।ইবনে জিয়াদ ২ রা মহররম ইমামের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে সে জানায়, তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে ইয়াজিদের প্রতি বায়আত বা আনুগত্যের অঙ্গীকার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এর অন্যথা হলে তাঁদেরকে হত্যা করতে বলেছেন ইয়াজিদ। ইমাম এ চিঠির জবাব না দিয়ে বললেন, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।ইমাম হুসাইন (রা:) ৩ রা মহররম কারাবালায় তাবু স্থাপন করেন। আর ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ তার সেনাদের নিয়ে কারবালায় পৌঁছে। আগে নানা জায়গায় ইমামের কাফেলার তাবুগুলো কিছুটা উঁচু বা টিলার মত স্থানে বসানো হয়েছিল। কিন্তু এবার ইমাম (রা:) সমতল বা কিছুটা গর্তময় স্থানে তাবু বসানোর নির্দেশ দেন। সম্ভবত এর কারণ ছিল শিশু ও নারীরা যাতে যুদ্ধের দৃশ্য দেখে ভয় না পান।হোর ইবনে ইয়াজিদ (রা:) নামের একজন সেনা কর্মকর্তা সর্ব প্রথম কারবালায় ইমাম শিবিরের বিপরীতে তাবু গাঁড়েন। তিনিই ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে প্রথম খবর দেন যে ইমাম হুসাইন (রা:) কারবালায় এসেছেন।ইমাম জানতেন কারবালায় কি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি ৩ রা মহররমই কারবালার স্থানীয় নেইনাভাবাসীদের কাছ থেকে জমি কিনে নেন। তিনি তাদের এ শর্ত দেন যে ভবিষ্যতে যারা এখানে নবী (সা:) এর পরিবারের সদস্যদের কবর জিয়ারত করতে আসবেন তাদেরকে যেনো আপ্যায়ন করা হয় ও পথ দেখিয়ে দেয়া হয়।ইরানের শাসনভার দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ইবনে জিয়াদ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ওমর বিন সাদকে পাঠান। সাদ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু একদল সঙ্গীর নিষেধ সত্ত্বেও সে শেষ পর্যন্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয়। ৩ রা মহররম কুফার চার হাজার সেনা নিয়ে ওমর বিন সাদ কারবালায় প্রবেশ করে। সে প্রথমে ইমামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একজন দূতের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, ইমাম বলেছেন, কুফার জনগণই তাঁকে দাওয়াত করেছে ও প্রতিনিধিও পাঠিয়েছিল তাঁর কাছে যাতে তিনি এই শহরে আসেন। তারা (কুফাবাসী)যদি তাঁর আগমনে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তিনি ফিরে যাবেন বলে জানান। ওমর বিন সাদ এই তথ্য ইবনে জিয়াদের কাছে পাঠালে ইবনে জিয়াদ ধারণা করে যে ইমাম হোসাইন (রা:) যুদ্ধের ফাঁদে পড়েও মুক্তির আশা করছেন, কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। তিনি সাদকে এক চিঠিতে জানান, তোমার চিঠি পেয়ে সব কিছু জেনেছি। হোসাইন (রা:) ও তাঁর সঙ্গীদের বল ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে। যদি তারা তা করে তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। সাদ বুঝতে পারে যে জিয়াদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। তাই সে জিয়াদের চিঠি ইমাম (রা:) এর কাছে পাঠাননি। কারণ, সে জানত ইমাম হুসাইন (রা:) কখনও ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য করবেন না।এদিকে জিয়াদ বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশের চিন্তা করতে থাকে। কুফাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোক পাঠিয়ে সেনা সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে এবং ইমামের প্রতি সহযোগিতার কঠোর পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এ সময় আমের বিন আবি সালামাহ নামক ইমাম হুসানই (রা:) এর এক সমর্থক ইবনে জিয়াদের এক সেনা-নিবাস বা সেনা-উদ্যানে জিয়াদকে হত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু সফল হননি। ইনি পরে কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা:) এর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন।৫ ই মহররম ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে হাছিইন বিন নুমাইর চার হাজার অশ্বারোহী সেনা নিয়ে কারবালায় আসে। এ দিনে জিয়াদ শাবাশ বিন রবি নামের এক ব্যক্তিকে এক হাজার সেনাসহ কারবালায় পাঠায়। এ ছাড়াও সে এক ব্যক্তিকে ৫০০ সেনাসহ কারবালা ময়দানে এ দায়িত্বে নিয়োজিত করে এবং হুকুম দেন যদি কেউ ইমাম হুসাইন (রা:) এর পক্ষে যুদ্ধ করতে কারবালায় প্রবেশ করে তাকে সে হত্যা করবে। কিন্তু এত প্রহরা সত্ত্বেও আমের বিন আবি সালামাহ ৫ ই মহররম ইমাম-শিবিরে যোগ দেন এবং আশুরার দিনে শাহাদত বরণ করেন।মরুভূমির লাল সূযটা দিগন্তের ওপারে মুখ লুকানো। সে হয়তো লজ্জায় দুঃখে পালিয়ে বাঁচল। ইমাম শিবিরের করুণ আহাজারী, হয়তো তারও সহ্য হয়নি। পিপাসায় কাতর প্রাণ উষ্ঠাগত। কচি শিশুদের দুঃখে, পাষাণ হৃদয়ও বিচলিত হয়। কিন্তু নরাধম এজিদ বাহিনীর হৃদয়ে কোন দয়ামায়া নেই। তিনদিন ধরে নবীবংশের প্রিয়জনরা পানিও পাচ্ছে না। দুরাত্মা এজিদ পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। একি নিষ্ঠুরতা! ইমাম বাহিনীর সবাই পরম ধৈর্যের সাথে, তাদের জীবনের শেষ রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটালেন। অন্তপুরে নারী শিশুদের করুণ কান্নার ধ্বনি। কারবালার সেই রাত্রীকে আরো ভারী করে তুলেছিল। গভীর নিশীথের মরু হাওয়া যেন অশুভ সংকেত নিয়ে ছুটে গেল কোন অজানার পথে। এরপর আযানের ধ্বনী যেন হৃদয়কে স্পর্শ করলো। এই সুমধুর ধ্বনী করুণ আর্তনাদ হয়ে যেন বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিল তোমরা কে কোথায় আছো দেখে যাও আজ কি ঘটতে চলেছে। বর্ণিত আছে হযরত আলী আকবরের কন্ঠস্বর ছিল মহানবী (সঃ) এর অনুরুপ। তার কন্ঠে আজানের ধ্বনী এমনকি এজিদ বাহিনীর মাঝেও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু পিশাচদের মাঝে তার কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। আশুরার দিন ভোরে ফজরের নামাজের ইমামতি করলেন ইমাম হোসেন (রা:)। এই নামাজই ছিল কারবালার শহীদদের শেষ নামাজ। আল্লাহর সৈনিকদের এই নামাজ শেষ হবার আগেই এজিদ বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। দুরাচার সেনাপতি ওমর সাদ প্রথমে একটি তীর নিক্ষেপ করে যুদ্ধ শুরু করে। তীর বৃষ্টির মধ্যেই ইমাম ও তার সাথীরা নামাজ শেষ করলেন। ইমার তার সাথীদেরকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হবার নির্দেশ দিয়ে দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন। ভাই আব্বাসকে দিলেন পতাকা রক্ষার দায়িত্ব। এ সত্যের পতাকাবাহী হযরত আব্বাস ” আব্বাস-ই- আলমদার ” নামে বিখ্যাত।পথভ্রষ্ট দুরাত্মাদেরকে আবারও বুঝাবার চেষ্টা করলেন ইমাম হোসেইন (রা:)। ভুল বুঝার শেষ সুযোগ দিয়ে এজিদ বাহিনীর উদ্দেশ্যে বললেন, হে জনসাধারণ , ক্ষান্ত হও। তোমরা কি জান আমি কে? আমাকে হত্যা করা কি উচিত হবে? আমি কি তোমাদের নবী কন্যা ফাতেমার সন্তান নই? আলী মুর্তাজা কি আমার পিতা নন? তোমরা কি জানোনা মহানবী (সাঃ) বলেছেন আমি ও আমার ভাই বেহেশতে যুবকদের সরদার? আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তোমরা জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী, আবু সাঈদ খুদরী, সাহল ইবনে সা’দ সাঈদী, যায়েদ ইবনে আরকাম, আনাস ইবনে মালিকের কাছে প্রশ্ন করে জেনে নাও। এরপরও কি তোমরা আমাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে না? কিন্তু পাষাণ হৃদয় দুরাচারদের মাঝে কোন ভাবান্তর হলো না। ওমর সাদ, শিমারসহ অন্যান্য পাপিষ্ঠরা যুদ্ধ করার জন্যে সৈন্যদের লেলিয়ে দিল। এই অবস্থায় এজিদ বাহিনীর এক সেনাপতি হুরের মাঝে ভাবান্তর হলো। ইমামের ভাষণ শুনে সে নিজের ভুল বুঝতে পারলো। ইমাম হোসেইনের কাছে এসে সে বলল, হযরত আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আমি অনেক পাপ করেছি। আমি আপনাকে বাধা দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছি। আপনাদের এই অবস্থার জন্যে আমি দায়ী। আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার কাছে ফিরে এসেছি, আমার তওবা কি কবুল হবে। ইমাম মৃদু হেসে তাকে আশ্বাস দিলেন , হুর দেরী না করে তলোয়ার চালাতে চালাতে এজিদ বাহিনীর দিকে ছুটে গেল। হোরের সাথে সাথে তার ছেলে, ভাই, এবং ক্রীতদাসও এজিদ বাহিনী ত্যাগ করে ইমাম বাহিনীতে এসে যোগ দিল। এরা সকলে লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেল। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই তীব্র আকার ধারন করলো। এ ছিল অসম যুদ্ধ। মাত্র ৭০/৮০ জন মুসলমানের সাথে হাজার হাজার মোনাফেকের যুদ্ধ। এ ছিল এক অসহায় মুষ্টিমেয় ঈমানদারের প্রতিরোধ যুদ্ধ। একদল ধর্মপ্রাণ আল্লাহর বান্দাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে হিংস্র নেকড়ের দল। ছোট্ট একদল মোমিন কারবালার এই মরু প্রান্তরে যে অসীম সাহসিকতা, বীরত্ব ও ধৈর্য্যরে পরিচয় দিলেন মানব ইতিহাসে তেমনটি আর কখনো দেখা যায় নি এবং ভবিষ্যতেও হয়ত দেখা যাবে না।তিন দিন ধরে পিপাসায় কাতর ইমাম বাহিনী ছিলেন ঈমানের তেজে বলীয়ান। পার্থিব শক্তি সামর্থ তখন ছিল গৌণ ব্যাপার। ধৈর্য আর ঈমানের পরীক্ষাই ছিল মুখ্য। মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতকে রক্ষা করার জন্যে ইমাম হোসেনের সাথীরা সিংহ বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শত্রু সৈন্যের উপর। প্রচন্ড আক্রমনে অসংখ্য এজিদ সৈন্য খতম করে নিজেরা শহীদ হতে লাগলেন। এভাবে একে একে ইমাম বাহিনীর বিখ্যাত বীরেরা শহীদ হয়ে গেলেন। তারা সকলেই ইমাম হোসেন ও তার আহলে বাইতের চারপাশে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে যুদ্ধ করেছেন। ইমামের দিকে ছুটে আসা তীর ও বর্শার আঘাত তারা বুক পেতে নিয়েছেন। ইমামের সামনে তারা একে একে শহীদ হয়ে গেছেন। বাকি রইলেন শুধু আহলে বাইতের সদস্যগণ। মহাকালের এই মহা কোরবানির জন্যে এবার ইমাম হোসেন (রা:) ও তার আহলে বাইত প্রস্তুত হলেন। কারবালার আকাশে প্রচন্ড তেজে জ্বলছে সূর্য। সুহাওয়ার করুণ দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আল্লাহর প্রিয়তমদের প্রতি শয়তানদের আক্রমণে বিস্ময় বিমুঢ় হয়ে আসছে বিশ্ব প্রকৃতি। নবীজীর প্রিয় নাতনী হযরত যয়নব (সাঃ) তার দুই শিশু সন্তান অউন এবং মোহাম্মদকে ডেকে বললেন, এখনও তোমরা বসে আছো? আল্লাহর পথে শহীদ হবার সময়তো এসে গেছে। ১০ বছর ও ৯ বছরের দুই ভাই সমস্বরে বলে উঠলেন, না মা, আমরা শুধু পবিত্র ইমামের হুকুমের অপেক্ষায় আছি। হযরত যয়নব (রা:) এর ভাই ইমাম হোসেন (রা:) এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তার দুই সন্তানকে এজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দিলেন। ক্ষুদে বীর অউন এবং মোহাম্মদ অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। ইমাম হোসেন (রা:) ও আব্বাস ছুটে গিয়ে তাদের পবিত্র দেহ দুটো এনে হযরত যয়নাবের সামনে রাখলেন। হযরত যয়নাব নিজ সন্তানের নূরানী মুখে চুমু খেতে খেতে বললেন প্রিয় বাছারা আমার। এখন আমি তোমাদের উপর খুশী হয়েছি। তোমরা সত্যের জন্যে যুদ্ধ করে আল্লাহ ও তার নবীকে খুশী করেছ। ছোট্ট এ শিশু দুটোর শাহাদাতের পর আহলে বাইতের অন্যান্য ছেলে সন্তানদের মধ্যে যুদ্ধে যাওয়ার জন্যে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল। ১৪ বছরের কিশোর কাসিম ইবনে হাসান ইমামের অনুমতি নিয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন। ইমাম হোসেন (রা:) এর ছেলে কাসিম একাকী তলোয়ার চালাতে চালাতে শত্রু বাহিনীর ভেতর ঢুকে পড়লেন। তিনি একাই পাঁচজন শত্রু সেনাকে খতম করে শহীদ হয়ে গেলেন। ইমাম হোসেন (রা:) ভাইপোর মৃতদেহ তুলে আনার আগেই শয়তানের দল তার উপর ঘোড়া চালিয়ে দেয়। কাসিমের শাহাদাতে ইমাম শিবিরে কান্নার রোল পড়ে যায়। ইমাম হোসেন (রা:) সকলকে শান্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা করতে লাগলেন। কাসিমের মৃত্যু দেখে মহাবীর আব্বাস আর সহ্য করতে পারলেন না। তিনি ইমামকে সালাম করে এজিদের সেনাবাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করলেন। তার ঘোড়া বিদ্যুৎ গতিতে শত্রু ব্যুহ ভেদ করছে। আব্বাসের তলোয়ারের আঘাতে শত্রুসেনারা কচুকাটা হচ্ছে। এই মহাবীরের সামনে সহজে কেউ আসার সাহস পাচ্ছে না। আব্বাস শত্রু সেনাদের মাঝখান দিয়ে পথ করে ফোরাতের তীরে এসে পৌছুলেন । তাকে কেউ আটকে রাখতে পারল না। প্রচন্ড পিপাসা কাতর আব্বাস, পানি খাওয়ার জন্যে নিচু হলেন। কিন্তু সাথে সাথে আঁজলা থেকে পানি ফেলে দিলেন। ইমাম শিবিরের কচি শিশুদের কথা তার মনে পড়ল। দুধের বাচ্চারা এক ফোটা পানির জন্যে কাতরাচ্ছে। তাদের ফেলে তিনি কি করে পানি পান করবেন? একটি থলেতে পানি ভরে ফিরতে লাগলেন আব্বাস। অমনি গোপন জায়গা থেকে অসংখ্য তীর এসে তাকে আঘাত করল। যুদ্ধাহত বীর আব্বাস ফোরাতের তীরেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন। মহাবীর আব্বাস শহীদ হওয়ার পর ইমাম হোসেনের ছেলে আলী আকবর ময়দানে এলেন। আলী আকবর ছিলেন দেখতে অনেকটা মহানবী (সঃ)এর মত। তাকে যুদ্ধের ময়দানে দেখে শত্রু সেনারা থমকে গেল। কেউ তাকে আঘাত করার সাহস পেল না। বীর আলী আকবর প্রচন্ড বেগে তলোয়ার চালাতে চালাতে শত্রু সেনাদেরকে চারদিকে ছত্রভঙ্গ করে দিলেন। বহু শত্রু সেনা খতম করে আলী আকবর ইমামের কাছে ফিরে এসে বললেন আব্বাজান আমি বড্ড পিপাসার্ত। ইমাম হোসেন পুত্রকে সান্তনা দিয়ে আবার যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়ে দিলেন। আলী আকবর বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে আবার যুদ্ধের ময়দানে ফিরে গেলেন। এজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ শুরু করলেন। হঠাৎ একটি তীর এসে তার কন্ঠে বিদ্ধ হলে তিনি ধরাশায়ী হন। এভাবে ইমাম হোসেনের চোখের সামনেই তার পুত্র, ভ্রাতুস্পুত্র, ও বন্ধু বান্ধবরা একে একে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। এ আত্ম বিসর্জনে কারো মাঝে কোন প্রকার ভয়ভীতি বা দ্বিধা দ্বন্দ ছিল না। সবাই স্বত:স্ফূর্তভাবে ইমাম হোসেনের আহবানে সাড়া দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্যে মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিজেদের বিলীন করে দিয়েছেন। ইমাম হোসেন দেখলেন চূড়ান্ত সময় এসে গেছে। পৃথিবীর বুকে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি। মহানবী (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্যে যে প্রতিরোধের প্রয়োজন ছিল সেটাই তিনি উপস্থাপন করে বিশ্ব তাগুতী শক্তিকে হতবাক করে দিলেন। ইমাম হোসেন (রা:) ও তার সাথীরা এজিদী ইসলামের মোকাবেলায় মোহাম্মদী ইসলামের ঝান্ডাকে উচিয়ে ধরলেন। বাতিল শক্তির মুখোশ উম্মোচন করে সত্যের মশালকে প্রজ্জ্বলিত করেছেন। সকলকে হারিয়ে আজ এই মুহুর্তে কারবালার মরুপ্রান্তরে দাঁড়িয়ে আছেন ইমাম হোসেন। এত বিষাদ, এত বেদনা, এত বিরহের মাঝেও ইমামের মিশনকে কৃতকার্য করার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছেন তিনি। এখন তো কেবল শেষ পোঁচ দেয়াই বাকি। তিনি নিজে এই মহাকান্ডের সমাপ্তি টানবেন। দুধের শিশু আলী আসগরকে দেখার সাধ জাগল। ইমাম হোসেন তাঁবুতে গিয়ে কচি শিশু আলী আসগরকে দুহাতে বুকে তুলে নিলেন। পিপাসায় কাতর এই শিশুকে দেখে ইমাম আর স্থির থাকতে পারলেন না, শত্রুদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে জনসাধারণ! তোমরা আমার সাথে যুদ্ধ করছো আমাকে হত্যা করাই তোমাদের উদ্দেশ্য। এই শিশু তো কোন দোষ করে নি , একে অন্তত: একটু পানি দাও। ইমামের এই আহবানের জবাবে একটি বিষাক্ত তীর এসে ইমামের হাতে বিদ্ধ হলো। তীরের ফলা ইমামের হাত ভেদ করে শিশু আলী আসগরের কন্ঠ এফোঁড় ওফোড় করে দিল। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল। ইমাম সেই রক্তমাখা হাত আকাশের দিকে তুলে ফরিয়াদ জানালেন হে প্রভু তুমি এর বিচার কর। শিশুপুত্রকে মাটিতে রেখে ইমাম হোসেন চূড়ান্ত ফায়সালার জন্যে প্রস্তুত হলেন। তাবুতে অসুস্থ পুত্র জয়নুল আবেদীনের কাছে ইমামতের দায়িত্বভার তুলে দিয়ে পরিবারের জন্য সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলেন।ইমাম হোসেন (রা:) যুদ্ধের ময়দানে এসে মুর্খ সেনাদের উদ্দেশ্যে শেষবারের মতে আবারো উপদেশ দিতে চাইলেন। এজিদ বাহিনীকে সম্বোধন করে তিনি বললেন, হে জনসাধারণ! তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাও? আমার কি অপরাধ? শত্রুদের কাছ থেকে কোন উত্তর পেলেন না তিনি। শত্রু পরিবেষ্টিত ইমাম একাকী দাঁড়িয়ে আছেন। তীরের আঘাতে জর্জরিত তার দেহ থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি আবার ডাক দিলেন, হাল মিন নাসেরিন ইয়ানসুরুনা? আমাদের সাহায্য করার কেউ আছে কি? কারো কাছ থেকে কোন উত্তর না পাওয়ায় ইমাম আবার বললেন, তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছোনা? তোমাদের মধ্যে একজন মুসলমানও কি নেই? কিন্তু পাষাণ হৃদয়গুলোতে কোন ভাবান্তর হলো না। শত্রুবাহিনী তীর ছুড়ে তার জবাব দিল। শেরে খোদার সন্তান মহাবীর হোসেন স্থির থাকতে পারলেন না। আমার মৃত্যু ব্যতীত যদি মোহাম্মদের ধর্ম টিকে না থাকে তাহলে হে তরবারী আমাকে গ্রহণ কর। একথা বলে প্রচন্ড হুংকারে তিনি শত্রুদের দিকে ছুটে গেলেন। শেরে খোদার পুত্রকে রণমূর্তীতে দেখে এজিদ বাহিনী ভয়ে পিছু হটতে লাগল। ইমাম হোসেন প্রচন্ড বেগে তলোয়ার চালাতে চালাতে শত্রুদের দিক বিদিক ছত্রভঙ্গ করে দিলেন। তার তলোয়ারের প্রচন্ডতায় কেউ টিকতে পারছে না। শত্রু সেনারা পালিয়ে যাবার পথ পাচ্ছে না। ওমর সাদ, শিমার, সেনান, প্রমুখ দুরাচার পাপিষ্ঠরা সৈন্যদের উসকে দিতে লাগল একযোগে ইমামের উপর আঘাত হানতে। এদিকে তীরের আঘাতে জর্জরিত ইামামের দেহ থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আসছিল। তিনি আর তলোয়ার চালাতে পারছিলেন না। একসময় তিনি অশ্বপৃষ্ঠ থেকে মাটিতে পড়ে গেলেন। এ সময় পাপিষ্ঠরা চারদিক থেকে তার উপর আক্রমণ চালায়। ইমাম হোসেন তার বুক থেকে তীরের ফলা টেনে বের করে শেষবারের মত বিশ্ব প্রভুর দরবারে ফরিয়াদ জানালেন, হে আল্লাহ! দেখ তোমার হোসেনের প্রতি এরা কেমন আচরণ করল। ওমর সাদের নির্দেশে এজিদের নিষ্ঠুর সৈনিকরা মহানবী (সঃ) এর দৌহিত্রের শির মোবারকও কেটে ফেলে। সেনান বা মতান্তরে শিমার জিলজওশান নামের নরাধম এই নিষ্ঠুরতম কাজটি করেছিল। ইমামের শির যখন কেটে বর্শার আগায় বিদ্ধ করা হয় তখনো ইমামের পবিত্র কন্ঠ দিয়ে উচ্চারিত হলো , আল্লাহু আকবার। এভাবে নিষ্ঠুরতার বিকট উল্লাসের মোকাবেলায় আত্মত্যাগের চরম দৃষ্টান্ত মহাকালের পাতায় চির উজ্জল হয়ে থাকল। ইমাম হোসেন ও তার সাথীরা নতুন করে যেন স্থাপন করলেন লা ইলাহা কালেমার ভিত্তি।তারপরের ঘটনা আরো করুণ ও হৃদয়বিদারক। কারবালার শহীদদের পবিত্র দেহ থেকে শির ছিন্ন করে নেয়া হয় এবং অশ্ববাহিনী ছুটিয়ে পবিত্র দেহগুলো দলিত মথিত করা হয়। এরপর এজিদের বর্বর সেনারা ইমাম পরিবারের মহিলাদের তাবু লুট করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। নবী বংশের অসহায় নারী ও শিশুরা আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে এবং বহু শিশু আগুনে পুড়ে মারা যায়। ইতিহাসের করুণ ও ভয়াল রাত নেমে এলো। কারবালার আকাশ আজ রাতে রক্তিম আভায় আবৃত। ইতিহাসে এ রাত “শামে গারিবান” নামে পরিচিত। সত্যিই এর চেয়ে করুণ আর হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে? ধরাপৃষ্ঠের সর্বোত্তম পরিবারের সদস্যরা অভিভাবকহীন অবস্থায় পোড়া তাবুগুলোর মধ্যে বসে শহীদদের স্মরনে কাঁদছিলেন, আহাজারী করছিলেন। রাসুলে খোদা তার জীবনের প্রতিদান হিসেবে চেয়েছিলেন মুসলিম উম্মত যেন তার বংশদল ও আহলে বাইতকে ভালোবাসে। অথচ তার আহলে বাইতের প্রতি মুসলিম নামধারীদের এ কি আচরণ! একদিকে এজিদী সৈনিকদের অট্টহাসি আর শরাব পানের উন্মত্ততা আর অন্যদিকে মস্তকবিহীন শহীদদের পবিত্র লাশ ঘিরে নবী বংশের নারীদের বুকভাঙ্গা বিলাপ। এ রাতে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম পাপীও দুফোটা অশ্রু না ফেলে পারে না। পরদিন এজিদের সৈন্যরা পৈশাচিক উল্লাসে আহলে বাইতের নারী ও শিশুদেরকে বেঁধে গলায় দড়ি লাগিয়ে খালি উটের পিঠে তুলে দেয়। ৭২ জন শহীদের মস্তক বর্শার ফলায় বিদ্ধ করা হয়। নবী বংশের সম্মানিতা মহিলাদের পর্দা কেড়ে নেয়া হয়। কথিত আছে অসুস্থ ইমাম জয়নুল আবেদীনকে কাটাওয়ালা লোহার বেড়ি পরিয়ে দিয়ে খালি পায়ে টেনে হিঁচড়ে কারবালা থেকে কুফা এবং কুফা থেকে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় মহিয়সী নারী যয়নাব এবং ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা:) আশুরার এই বিরহের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। কারবালার এই নিষ্ঠুর অত্যাচার অবিচারের কাহিনী জনসাধারণের কাছে তুলে ধরেন। ইসলামের বিপ্লবী নায়িকা হযরত জয়নাব যদি না থাকতেন তাহলে কারবালার আত্মত্যাগের কাহিনী মানুষের কাছে অজানা থেকে যেত। সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হোসেন ইসলামী বিপ্লবের যে ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন তার পরবর্তী আরাধ্য কাজ অঞ্জাম দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন হযরত জয়নাব। হাল মিন নাসেরিন ইয়ানসুরনা। অর্থাৎ আমাদের সাহায্য করার কেউ আছে কি? ইমাম হোসাইনের এই কালজয়ী আহবানকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন হযরত জয়নাব। আজো সেই আহবান মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেয় আশুরার বিপ্লব থেকে শিক্ষা নেয়ার এবং ইসলামকে নতুন করে জানার।আশুরার আরও কিছু ইতিহাসইমাম হোসেন (রা:) এর জীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল শাহাদত। কারণ, রাসুলে খোদা স্বয়ং বলেছেন, শাহাদাত হচ্ছে সবচেয়ে বড় পূণ্য। ইমাম হোসেন (রা:) এর মনে পড়ে গেল তার মহান পিতা ও শিক্ষক হযরত আলী (আঃ) এর কথা। ১৯ শে রমজান ভোর বেলায় দুশমন তার মাথায় আঘাত করলে তার কন্ঠ থেকে প্রথম যে কথাটি নিঃসৃত হয়েছিল, সেটি হলো কাবার প্রভুর কসম আমি কামিয়াব হয়েছি। শাহাদতের আগে তার পিতার মর্মভেদী কথাগুলো বার বার ঘুরে ঘুরে তার মনে হচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন খোদার কসম, অনাকাঙ্খিত কিছুই ঘটেনি। ইমাম হোসেন (রা:) এর মনে পড়ে গেল তার নানাজীর কথা। তিনি আধ্যাত্মিক জগতে তার উচ্চ মর্যাদার সুসংবাদ তাকে দিয়েছিলেন। এসব ভাবতে ভাবতে তার ক্লান্ত অবসনড়ব চোখে তন্দ্রা চলে এলো। স্বপ্নে দেখলেন নানাজান রাসুলে খোদাকে, পিতা হযরত আলীকে, স্নেহময়ী মা ফাতেমাকে, আর ভাই ইমাম হাসানকে। তারা বললেন হে হোসেন! তুমি আগামীকালই আমাদের সাথে মিলিত হবে। এর পরপরই তার তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল। ইমাম হোসেন (আঃ) তার বোন বিবি জয়নাবকে স্বপ্নের কথা খুলে বললেন। ভাইয়ের নিশ্চিত শাহাদাতের কথা শুনে বোনের মন কি আর মানে? জয়নাব (রা:) চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। ইমাম তাকে সান্তনা দিলেন। ইমাম হোসেন (আঃ) পরদিনের মহা কোরবানির জন্য প্রস্তুত হলেন। এই কোরবানি হবে সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এতে তিল পরিমান খাদ থাকতে পারবে না। কারণ আগামীকাল যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হবেন তাদের প্রতিটি রক্ত বিন্দু শত সহস্র রক্ত বিন্দুতে নয় বরং লক্ষ-কোটি রক্ত বিন্দুতে পরিণত হয়ে সমাজদেহে সঞ্চালিত হবে। শহীদের খুন রক্তশূণ্যতায় আক্রান্ত সমাজদেহে নতুন রক্ত প্রবাহ দান করে। তাদের ব্যক্তিত্ব ও স্মৃতি যুগযুগ ধরে মানুষকে মুক্তির প্রেরণা যোগায়। তাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস ও চেতনা দান করে। শহীদরা কেয়ামত পর্যন্ত অমর থাকবেন এবং শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদেরকে এমন জৌলুসসহ হাজির করবেন যে স্বর্গীয় বাহনে উপবিষ্ট নবী রাসূলরাও তাদেরকে সম্মান দেখানোর জন্য নীচে অবতরণ করবেন। তাই ইমাম তার কাফেলার মধ্যে যাদের নিয়্যতে বিন্দু পরিমান গোলমাল আছে তাদের কাছ থেকে মুক্ত হতে চাইলেন। তিনি সবাইকে একস্থানে সমবেত করলেন এবং শাহাদাতের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় ভাষণ দিলেন। তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, “আমি আমার সঙ্গী সাথীদের চেয়ে কোন সাথীকে অধিক নেককার এবং আমার আহলে বাইতের চেয়ে কোন পরিবারকে অধিক উত্তম মনে করি না। মহান আল্লাহ তোমাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।” ভয়াবহ আশুরার পূর্বাভাস নিয়ে ঘনিয়ে এলো অন্ধকার। ধৈর্য্যর মূর্ত প্রতীক ইমাম হোসেন (রা:) সকলকে কাছে ডাকলেন। বললেন, ভায়েরা আমার! জেনে রাখো আজকের এই রাত হবে তোমাদের শেষ রাত। আমার সাথে থাকলে তোমরা কেউ রেহাই পাবে না। আগামীকালই আমাকে ও আমার পরিবার পরিজনকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হবে। এমনকি আমার দুধের বাচ্চাকেও এরা রেহাই দেবে না। ভাইসব, “তোমরা ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারো। আমার হাতে তোমরা যে বায়াত করেছো, তা আমি ফিরিয়ে নিলাম। তোমরা এখন মুক্ত। আমার জন্যে শুধূ শুধু তোমরা কেন প্রাণ দেবে? শত্রুরা শুধু আমাকে চায়, তোমাদেরকে নয়। এখন আন্ধকার রাত। যার ইচ্ছা চলে যাও , কেউ দেখতে পাবে না।“ ইমাম ভাষণ শেষ করে তার ভাই আব্বাসকে প্রদীপ নিভিয়ে দিতে বললেন। যখন অন্ধকার হয়ে এল তখন ইমামের সাথে আসা অনেক লোক সঙ্গোপনে ইমাম বাহিনী ত্যাগ করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল। সবাই পার্থিব লাভের আশায় মক্কা থেকে ইমামের সাথে যোগ দিয়েছিল। যখন আলো জালানো হল তখন দেখা গেল মুষ্টিমেয় কিছু লোক মাত্র রয়ে গেছেন। এদের সংখ্যা একশো জনেরও কম। আত্মত্যাগের আদর্শে বলীয়ান বিশুদ্ধ অন্তরের এই মর্দে মোমিনদের দিকে তাকিয়ে ইমামের প্রশান্ত মুখটা উজ্জল দ্বীপ্তিমান হয়ে উঠল। মহাকালের মহাত্যাগের জন্যে এরকম বিশুদ্ধ হৃদয়গুলোই তার প্রয়োজন ছিল। তবুও তিনি তার সাথীদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন গেলে না? এ প্রশ্ন শুনে আহলে বাইতের সদস্যরা বলে উঠলেন, একি বলছেন হযরত! আমরা আপনাকে একা ফেলে কিভাবে চলে যাবো? লোকের কাছে গিয়ে কীভাবে মুখ দেখাবো? আমরা কি বলব মহানবী (সঃ) এর সন্তানকে আমরা একা ফেলে চলে এসেছি। তা কখনো হবে না। নিজের জীবন দিয়ে দেব তবুও আপনাকে ছেড়ে যাব না। আপনার সাথে থেকে শহীদ হব। মুসলিম বিন আউসাজা দাঁড়িয়ে বললেন, প্রিয় ইমাম একি বলছেন আপনি। আপনাকে দুশমনদের হাতে ফেলে রেখে পালিয়ে যাবো ? খোদা আপনার পরে যেন আমাদের জীবিত না রাখেন। আমরা যুদ্ধ করবো। গায়ে শক্তি থাকা পর্যন্ত দুশমনের গায়ে তলোয়ার চালাবো, বর্শা চালবো। ওগুলো ভেঙ্গে গেলে পাথর মেরে মেরে যুদ্ধ করবো। সাঈদ বিন আবদুল্লাহ হানাফী বললেন, প্রিয় ইমাম! খোদার কসম আপনাকে রেখে আমরা কোথাও যাবোনা। আপনার জন্যে যদি নিহত হই এবং জীবন্ত দগ্ধ হই এবং তা যদি ৭০ বারও হয় তবুও আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না। আপনি মরে যাবেন আর আমরা বেচে থাকব এ কি করে হয়! যুহাইর ইবনে কাইন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, হে মহানবীর প্রিয় সন্তান, আপনি ও আপনার পরিবারকে রক্ষার জন্যে আমাকে যদি হাজারবারও মেরে ফেলা হয় তাহলেও আমি আপনাকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করব। এভাবে ইমামের বিভিন্ন সঙ্গী সাথী ইমামকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন, নিজেদের আন্তরিকতা প্রকাশ করতে লাগলেন। সঙ্গী সাথীদের এরকম দৃঢ়তা দেখে ইমামের চেহারা মোবারক এক অভূতপূর্ব প্রফুল্লায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তিনি মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন। ইমাম হোসেন (রা:)এর ভাষনের পর সবাই ছত্রভংগ হয়ে মশগুল হলেন এবাদতে। কেউ সেজদায়, কেউ নামাজে, কেউ মুনাজাতে। কারবালার প্রান্তর সিক্ত হয়ে উঠল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শহীদদের অশ্রুতে। দুনিয়ার সব ফেরেশতা যোগ দিলেন তাদের এই প্রার্থনায়।মহররম মাসের অন্যান্য বিশেষত্ব:পবিত্র ‘মহররম’ মাসের ৩০ দিনে বিশ্বের ইতিহাসে এমনসব ঘটনার অবতারণা ঘটেছে, যার দিকে দৃষ্টিপাত করলে হতবাক না হয়ে পারা যায় না। এই মাসের ১ম তারিখটি বছরের প্রারম্ভ বলে স্বীকৃত। ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখার কথা হাদীস শরীফে ঘোষিত হয়েছে। ১০ তারিখে আশুরা বা কারবালা বার্ষিকী পালিত হয়। এই তারিখে ইমাম হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) খলীফা ইয়াজীদ ইবনে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কারবালা প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। ১৬ তারিখে বাইতুল মোকাদ্দাসকে কিবলা মনোনয়ন করা হয়েছিল। এই মাসের ১৭ তারিখ আবরাহার হস্তি বাহিনী মক্কার উপকণ্ঠে ছাউনী গেড়েছিল। বিশেষ করে আশুরার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিনে হযরত আদম (আ:) দুনিয়ার বুকে পদার্পণ করেছিলেন। হযরত নূহ (আ- এর সময়কার মহাপ্লাবনের শুরু এবং শেষও ছিল আশুরার দিনে। হযরত মুসা (আ:) তাওরাত কিতাব লাভ করেছিলেন এই দিনে এবং অভিশপ্ত ফেরাউনের ধ্বংসও সাধিত হয়েছিল এইদিনে। হযরত ইব্রাহীম (আ:) পাপিষ্ঠ নমরূদের অনলকু- হতে নিষ্কৃতি লাভ করেছিলেন এই দিনে। হযরত ইউসুফ (আ:) অন্ধকার কূপ হতে এইদিনে উদ্ধার লাভ করেছিলেন। হযরত ঈসা (আ:) কে আল্লাহ পাক চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলন এই দিনে। হযরত আইয়ুব (আ:) এর আরোগ্য লাভের দিনটি ছিল আশুরা। এই দিনে হযরত ইউনূস (আ:) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই দিনেই হযরত ইদ্রিস (আ:) সশরীরে জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন। আবার এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এতসব ঘটনার চিত্র যে মাস স্বীয় বুকে ধারণ করে আছে এর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য যে অপরিসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুত ‘মহররম’ হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী মাস। এ প্রসঙ্গে ‘মুহির নেছারা’ যা বলেছেন, তা খুবই প্রাণিধানযোগ্য। ‘আবহমানকাল ধরে চলছে মিথ্যার সাথে সত্যের লড়াই। সৃষ্টির ইতিহাসে এ দুইয়ের বৈরিতা চিরন্তন। তা যেমন শক্ত তেমনি শক্তিশালী। এ দ্বন্দ্ব কখনো মুছে যাওয়ার নয়, কিংবা নয় থেমে থাকারও। সত্যের সাথে শত্রুতা ঘোষণা করেই হয় মিথ্যার জন্ম। আর মিথ্যাকে প্রতিহত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে আসে সত্য।’ এভাবেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিজয় মাল্য লাভে ধন্য হয়। মাহে ‘মহররম’ এই শিক্ষাই দিয়ে যায় বারবার।১০ই মহররম/আশুরা এর আমল:নামাজ(১) হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত: রাসুলে পাক (সা:) বলেন যে ব্যাক্তি মহররমের দশম রাত্র জেগে এবাদত করবে, আল্লাহ তাকে উত্তম জীবন দান করবেন।(২) গাউছুল আজম হযরত আব্দুল কাদের জ্বীলানী (রহ:) বলেন যে ব্যাক্তি মহররমের দশম রাত্র জেগে এবাদত করবে, তার মৃত্যু হবে কষ্টহীন এবং আরামের।নামাজের কতিপয় নিয়ম:(১) বুযুর্গনে দ্বীনদের মতে আশুরার রাত্রে ২ রাকাত নামাজ আছে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা একবার এবং সুরা এখলাস তিন বার। এভাবে যে দুই রাকাত নামাজ পড়বে আল্লাহতায়ালা তার কবরকে র‍ৌশন (আলোকিত) করে দেবেন।(২) এক নিয়তে চার রাকাত নফল নামাজ যার প্রত্যেক রাকাতে একবার সুরা ফাতেহা এবং পঞ্চাশ বার সুরা এখলাস। এভাবে যে ব্যাক্তি ৪ রাকাত নামাজ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার পঞ্চাশ বছর পূর্বের ও পরের সব গোনাহ মাফ করে দিবেন।(৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন এক নিয়তে চার রাকাত নফল নামাজ যার প্রত্যেক রাকাতে একবার সুরা ফাতেহা, তিন বার সুরা এখলাস, এবং এক বার আয়তুল কুরসী।এভাবে নামাজ শেষে ১০০ বার সুরা এখলাস পাঠ। এভাবে নামাজ আদায় করলে গুনাহ মাফ হবে এবং জান্নাতের অসীম নেয়ামত হাসেল হবে।রাহাতুল কুলুব গ্রন্থে একবার সুরা ফাতেহা, ১০ বার সুরা এখলাস এবং ৩ বার আয়াতুল কুরসী পড়ার কথা বলা হয়েছে। (রাহাতুল কুলুব-পৃষ্ঠা ২২৫)(৪) গুনিয়াতুত ত্বালেবিন গ্রন্থে ১০০ রাকাত নফল নামাজের কথা বলা হয়েছে। দুই দুই রাকাত করে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা ১ বার এবং সুরা এখলাস ১০ বার। এভাবে ১০০ রাকাত নামাজ আদায় করলে সেই ব্যাক্তির উপরে ৭০টি রহমতের নযর করবেন।যার মধ্যে সর্ব নিম্নটি হলো গোনাহ মাফ।রোযাহয়েছিল।হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর মদিনা শরিফে প্রত্যাবর্তন করে মহররমের দশম তারিখে ভিন্ন ধর্মীয়দের সাওম পালনরত দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমরা কেন এদিন সাওম পালন করছ? উত্তরে ইহুদি সম্প্রদায় বলেছিল, ‘সেদিন ফেরাউনের অন্যায় অবিচার থেকে মূসা (আ.) নিরাপত্তা লাভ করেছিলেন, তাই আমরা কৃতজ্ঞতাবশত সেদিন সাওম আদায় করি। উত্তরে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জানিয়ে ছিলেন মূসা (আ.)-এর ব্যাপারে আমরা অধিক হকদার। তাই তিনি নিজেও সেদিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদের (রা.)কেও রোজা রাখতে বললেন। (ইমাম বুখারি, জামি হাদিস নং-১৯০০, মুসলিম সহীহ, হাদিস নং-২৬৫৩) পরবর্তীকালে দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের সাওম ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজাকে ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়, যা রাখলে অত্যন্ত বেশি ছওয়াব হয়। আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন রমজানের রোযার পরে, সবচেয়ে উত্তম রেযা হলো মহররম মাসের (আশুরার) রোযা এবং ফরজ নামাজের পরে সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাত্রীকালীন (তাহাজ্জুদ) নামাজ (মুসলিম শরীফ)। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমিনিন হজরত আইশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘জাহিলিয়াতের যুগে কুরাইশরাও আশুরার দিনে রোজা রাখত। এদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও রোজা রেখেছেন এবং লোকদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রমজানের রোজা ফরম হওয়ার পর আশুরার রোজা ইচ্ছাধীন করে দিয়েছেন। (ইমাম বুখারি, জামি, ১৮৯৮ তিরমিজী, সুনান ৭৫৩ বাইহাকি, সুনান ৮৪৯৪)।তাছাড়া ইসলাম সম্পুর্ণরূপে অন্যান্য ধর্মের সংশ্রব মুক্ত। তাদের কোনোরূপ অনুকরণ ইসলামে পছন্দনীয় নয়। ইহুদিরা আশুরার দিন ১টি রোজা রাখায় ইসলামে ২টি রাখার পরামর্শ রয়েছে। ৯ তারিখ বা ১১ তারিখকে জড়িত করে তা পালন করা যায়। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আগামী বছর আমি সুযোগ পেলে (বেঁচে থাকলে) মহররমের দশ তারিখের সঙ্গে নবম তারিখেও রোজা রাখব। (ইমাম মুসলিম, সহিহ ২৬৬২, ইবনে মাজাহ, সুনান ১৭৩৬)।খাদ্যইয়াজিদের নির্মম বাহিনী সামান্য পানি দিয়ে কচি শিশুর তৃষ্ণা নিবারণ করতে দেয়নি বরং বিশ্বের ইতিহাসের সর্বাধিক হৃদয়গ্রাহী ঘটনার অবতারণা করেছিল। তাই এ মাসের আশুরায় উত্তম আহার গ্রহণের ব্যাপারে হাদিস শরিফে তথ্য বিদ্যমান।পরিশেষসত্যের জন্য শাহাদাতবরণের এ অনন্য দৃষ্টান্ত সব আনুষ্ঠানিকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে এর অন্তর্গত ত্যাগ-তিতিক্ষার মাহাত্ম্য তুলে ধরার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ১০ মহররমের ঐতিহাসিক তাৎপর্য। পবিত্র আশুরা দিবসে কারবালার শিক্ষা হলো, অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামীদের সামনে প্রতিপক্ষের তরফ থেকে কোনো সময় অর্থ, বিত্ত ও সম্মানের লোভনীয় প্রস্তাব এলেও ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করে আপসহীন মনোভাবের মাধ্যমে ত্যাগের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী তাই আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।পবিত্র আশুরা এ মহান শিক্ষা দিয়েছে যে সত্য কখনো অবনত শির হতে জানে না। বস্তুত, কারবালা ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের সংগ্রাম, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণতন্ত্রের। ইসলামি আদর্শকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ); কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে আপস করেননি। জীবনের চেয়ে সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার জন্য নবী-দৌহিত্রের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগজগতের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা। কারবালার ঘটনায় চিরন্তন সত্যের মহাবিজয় হয়েছিল এবং বাতিলের পরাজয় ঘটেছিল। সুতরাং আশুরার এ মহিমান্বিত দিনে শুধু শোক বা মাতম নয়, প্রতিবাদের সংগ্রামী চেতনা নিয়েহোক চির সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়াই, প্রয়োজনে আত্মত্যাগ। কারবালার কথকতা শুধু শোকের কালো দিবসই নয়, এর মধ্যে সুপ্তরয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য কঠিন শপথ নেওয়ার সুদৃঢ় আকাঙ্ক্ষা। মহররমের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত শিক্ষা অন্যায়-অবিচার-অসত্য ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সব সময় রুখে দাঁড়ানো। কোনো সমাজে বা রাষ্ট্রে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিরোধ করাই হোক কারবালার মূলমন্ত্র।পবিত্র আশুরা দিবসে কারবালার ত্যাগের শিক্ষা, অন্যায়ের কাছে মাথানত না করার শিক্ষা আমাদের চিরন্তন আদর্শ ও অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত। তাই মর্সিয়া ক্রন্দন নয়, কারবালার বাস্তব শিক্ষা, অর্থাৎ সত্যের জন্য আত্মত্যাগের যে অতুলনীয় শিক্ষা, তা সাদরে গ্রহণ করতে হবে।অতিরঞ্জিত বিষয়াদি ইসলাম সমর্থিত নয়। মাতম, কৃত্রিম সমাধি তৈরি, অস্ত্র দিয়ে স্বশরীরে আঘাত এগুলো ইসলাম বহির্ভূত কাজ। এগুলো থেকে মুক্ত থেকে নিজেকে মহররমের শিক্ষা ও আশুরার দীক্ষা নিয়ে গড়ার চেষ্টা করা উচিত। ইসলামের বিধানকে সমুন্নত করা, সর্বাবস্থায় তা পালনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং অন্যায়কে মেনে না নেয়ার শিক্ষা আমরা মহররম ও আশুরা থেকে গ্রহণ করতে পারি। আল্লাহতায়ালা আমাদের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করুন এবং তাঁর সর্বাধিক প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণ ও প্রকৃত উম্মতরূপে কবুল করুন।

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

 বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহিম ঈদ বয়ে আনুক সবার জীনবে সুখ শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ঈদের দিনের মতো সুন্দর হোক প্রতিটি দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক...