চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যাচিওর ক্যাটার্যাক্ট। সাধারণত ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মধ্যে এ ধরনের ছানি পড়তে দেখা যায়। অবশ্য অনেকের বংশগত কারণে এ বয়সের আগে বা পরে ছানি পড়তে পারে। এই বয়সজনিত ছানিকে বলা হয় সেনাইল ক্যাটার্যাক্ট । বয়সজনিত ছানি ছাড়া ডায়াবেটিস, চোখের বিভিন্ন প্রদাহ ও অসুখে, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা বা অন্য কোনো জীবাণুর প্রদাহ, শারীরিক কিছু অসুখ ইত্যাদি নানা কারণে চোখে যে কোনো বয়সে ছানি পড়তে পারে।
ডায়াবেটিসে ছানি পড়ার ঝুঁকি বেশি
ডায়াবেটিসে সন্দেহাতীতভাবে ছানি পড়ার ঝুঁকি খুব বেশি। ‘ফ্রামিংহাম আই স্টাডি’ নামের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নন-ডায়াবেটিকের তুলনায় ডায়াবেটিক রোগীদের ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ছানি হওয়ার হার কিছুটা বেশি। কিন্তু ৫০-৬০ বছরে এই হার ২-৩ গুণ বেশি। আবার ৬৯ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিক ও নন-ডায়াবেটিক রোগীদের ছানি হওয়ার হার সমান সমান। সুতরাং এ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডায়াবেটিক রোগীদের বেলায় ৬৯ বছর বয়সের আগে পর্যন্ত বয়সজনিত ছানি তুলনামূলকভাবে দ্রুত শুরু হয় এবং তাদের চিকিৎসা বা ছানি অপারেশন তুলনামূলক কম বয়সে সম্পন্ন করা প্রয়োজন হয়।
কিন্তু অল্প বয়স্ক জুভেনাইল ডায়াবেটিকদের চোখে এক ধরনের ছানি দেখা যায়, যা দেখতে সাদা ফোঁটা ফোঁটা হতে পারে বা সাদা ফোঁটা ও দাগের মতো দেখা যায়। স্লিট ল্যাম্প যন্ত্রের সাহায্যে এই ছানিকে তুষারকণার মতো মনে হয়। অনেকের চেখে আবার সূক্ষ্ম সূঁচের মতো ঘোলা দাগ দেখা যায়। এই দুই ধরনের ছানিকে বলা হয় মূল ডায়াবেটিক ছানি। মূল ডায়াবেটিক ছানি সাধারণত জুভেনাইল ডায়াবেটিক, যাদের রক্তের শর্করা খুবই উঁচু মাত্রায় থাকে এবং অনিয়ন্ত্রিত বিপাক প্রক্রিয়া বিদ্যমান, তাদের বেলাতেই বেশি দেখা যায়।
এ কারণে উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এবং উন্নয়নশীল দেশে মূল ডায়াবেটিক ছানি বেশি দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এই ছানি ধরা পড়লে এবং ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করলে ঘোলা লেন্সের দাগ আবার পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে, অর্থাৎ এই ছানিকে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হয়।
রক্তে শর্করা বেশি মাত্রায় হয়ে গেলে লেন্সে সরবিটল জমা হতে থাকে। অ্যালডোজ্ রিডাকটেজ নামক একটি এনজাইম এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এ অবস্থায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েকদিনের মধ্যে ছানি পড়ে যেতে পারে। অ্যালডোজ রিডাকটেজের এই ভূমিকার কথা বিবেচনা করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ছানি প্রতিরোধ করার উপায় হিসেবে ওই এনজাইমের সংবাধক ব্যবহার করেছেন। যদিও আজ পর্যন্ত ছানি প্রতিরোধক কোনো এনজাইম বা ঔষধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
No comments:
Post a Comment