হার্ট মানুষের সর্বশরীরে রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে থাকে। হার্টের কাজ হচ্ছে রক্ত পাম্প করে রক্ত নালীতে সঞ্চালন করা, যার জন্য হার্টকে একটি বায়োলজিক্যাল পাম্প বলা হয়ে থাকে, কাজকর্মের তারতম্য ভেদে মানুষের শরীরে রক্তের প্রবাহের প্রয়োজনীয়তা কমবেশি হয়ে থাকে। হার্ট প্রতিমুহুর্তে প্রয়োজন অনুযায়ী সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। যদি কোন কারণে হার্ট শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত সঞ্চালন করতে ব্যর্থ হয় এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট ফেইলুর বলা হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ কোন কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াকে হার্ট ফেইলুর বলে থাকে। আসলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং হার্ট ফেইলুর দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। এখানে তিনটি বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়া যেতে পারে-হার্ট ফেইলুর, হার্ট এ্যাটাক ও হার্ট এ্যারেষ্ট।
হার্ট ফেইলুর
শারীরিক প্রয়োজনের তুলনায় কম রক্ত সঞ্চালনের অবস্থাকে হার্ট ফেইলুর বলে।
হার্ট এ্যাটাক
হূদপিন্ডের রক্তনালী বন্ধ হয়ে তাত্ক্ষনিক ভাবে হূদপিন্ডের অংশ বিশেষ নষ্ট হয়ে যাওয়াকে হার্ট এ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোক বলে।
হার্ট এ্যারেষ্ট
কোন কারণে হঠাৎ হূদপিন্ড থেমে যাওয়া, বন্ধ হয়ে যাওয়াকে হার্ট এ্যারেষ্ট বলে। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে (কয়েক মিনিটের মধ্যে) রোগীর মৃত্যু ঘটে থাকে।
হার্ট ফেইলুরের কারণ
হূদপিন্ডের কার্যকারিতা যে কোন ভাবে যদি এমন পর্যায়ে কমে যায়, যাতে হার্ট শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় তখন উপরোক্ত অবস্থাকে হার্ট ফেইলুর বলা হয়। বহুবিধ কারণে হার্ট ফেইলুর হয়ে থাকে। যেমন- হার্ট দুর্বল হয়ে যাওয়া, শরীরের রক্ত প্রবাহের চাহিদা অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়া এবং খুব বেশি রক্তশূন্যতা, হার্ট ফেইলুরের অন্যতম তিনটি কারণ। যে যে কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে থাকে; যেমন- হার্ট এ্যাটাক, হার্টের ভাল্বের সমস্যা, হার্টের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ ৬০%, তারপর উচ্চ রক্তচাপ-১১%, ধূমপান ১৬%, হূদপিন্ডের ভাল্বের সমস্যা (বাতজ্বর জনিত) ১২%।
হার্ট ফেইলুরের উপসর্গ
সাধারণ ভাবে হার্ট ফেইলুর খুব ধীরে ধীরে হার্টের অবস্থার অবনতি ঘটায়, যার জন্য রোগী অনেক সময় পরিবর্তিত অবস্থার সহিত খাপ খাইয়ে চলতে থাকে। এ অবস্থায় রোগীর হার্ট ফেইলুর এর উপসর্গগুলো অনুভূত নাও হতে পারে। ধীরে ধীরে যে সব উপসর্গগুলো রোগীর শরীরে দেখা দেয় তা হচ্ছে শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে স্বাভাবিক কাজকর্মে ক্লান্তি রোধ করা এবং অবশেষে অল্প পরিশ্রমে রোগীর ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। রোগীর শ্বাস কষ্ট হওয়া আরেকটি উপসর্গ। প্রাথমিক অবস্থায় রাতে শোবার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া, তার সাথে হালকা কাঁশি থাকতে পারে। অনেক সময় ঘুমের মধ্যে শ্বাস কষ্ট হয়ে থাকে যার ফলে রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যায়, রোগী ঘুম থেকে উঠে বসে বা পায়চারী করে, অনেকে শ্বাসকষ্টের জন্য ঘরের জানালা খোলে বসে থাকে।
বুক ধড়ফড় করা
হার্ট ফেইলুরের রোগীগণ প্রায়ই বুক ধড়ফড়ের কথা বলে থাকে, পরিশ্রমের সময় বুক ধড়ফড় বেড়ে যায়।
শরীরে পানি জমে যাওয়া
প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর পেটে পানি জমতে থাকে। পেটে পানি জমার জন্য রোগীর পেট ফেপে যায়, হজমে সমস্যা দেখা দেয়, অল্প খেলে পেট ভরে যায়, ক্ষুদামন্দা দেখা দেয়, পেটে অত্যাধিক গ্যাস উত্পন্ন হয়ে থাকে। হার্ট ফেইলুরের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রোগীর হাত, পা ও মুখে পানি জমে হাত, পা ও মুখ ফুলে যায়। দ্রুত রোগীর শারীরিক ওজন বাড়তে থাকে। এসব উপসর্গের সাথে সাথে রোগীর প্রস্রাব-এর পরিমাণ কমে যায়। হার্ট ফেইলুরের তীব্রতা আরো বেশি বাড়লে রোগীর ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে, হার্টের চতুরদিকেও পানি জমে যেতে পারে, এমতাবস্থায় রোগী সারাক্ষণ শ্বাস কষ্টে ভূগতে থাকে, রোগীর চলাফেরা উঠা-বসা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। যদি হূদপিন্ডের রক্তনালীর অসুখের জন্য হার্ট ফেইলুর হয়ে থাকে তবে হার্ট ফেইলুরের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রোগীর বুকে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে। অল্প পরিশ্রমে রোগীর তীব্র ব্যথা অনুভব করে। হার্ট ফেইলুর তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগীর কিছু মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়।
No comments:
Post a Comment