03 June, 2018

আযান পর্ব ১


৫৭৬ ইমরান ইবনু মাইসারা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সালাত (নামায/নামাজ) সমবেত হওয়ার জন্য) সাহাবা-ই কিরাম (রাঃ) আগুন জ্বালানো অথবা নাকূস বাজানোর কথা আলোচনা করেন। আবার এগুলোকে (যথাক্রমে) ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রথা বলে উল্লেখ করা হয়। তারপর বেলাল (রাঃ)- কে আযানের বাক্য দু’বার করে ও ইকামতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

৫৭৭ মাহমূদ ইর্বন গায়লান (রহঃ) নাফি (রহঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন যে, মুসলমানগন যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তাঁরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় অনুমান করে সমবেত হতেন। এর জন্য কোন ঘোষণা দেওয়া হতো না। একদিন তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কয়েকজন সাহাবী বললেন, নাসারাদের ন্যায় নাকূস বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বললেন, ইয়াহূদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা ফোকানোর ব্যবস্থা করা হোক। উমর (রাঃ) বললেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর ঘোষণা দেওয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বেলাল, উঠ এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ঘোষণা দাও।

৫৭৮ সুলাইমান ইব্‌ন হারব্‌ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)- কে আযানের শব্দ দু’বার এবং কাদ-কামাতিস-সালাহ ব্যতীত ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

৫৭৯ মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলিমগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময়ের জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক, কিংবা ঘণ্টা বাজানোো হোক। তখন বিলাল (রাঃ) – কে আযানের শব্দগুলো দু দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হল।

৫৮০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হল। ইসমায়ীল (রহঃ) বলেন, আমি এ হাদীস আইয়্যূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে ‘কাদ্‌কামাতিস্‌ সালাত (নামায/নামাজ)ু’ ব্যতীত।

৫৮১ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ণ করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।

৫৮২ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহঃ) থকে বর্ণিত, যে আবূ সায়ীদ খুদ্‌রী (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বক্‌রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালবাস। তাই তুমি যখন বক্‌রী নিয়ে থাক, বা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আযান দাও, তখন উচ্ছকণ্ঠে আযান দাও। কেননা, জ্বীন, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াযযিনের আওয়াজ শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রাঃ) বলেন, একথা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে শুনেছি।

৫৮৩ কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমাদের নিয়ে কোন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি তখন আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পৌছলাম। যখন প্রভাত হল এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার হলেন। আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর পিছনে সাওয়ার হলাম। আমার পা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কদম মুবারকের সাথে লেগে যাচ্ছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসল। হঠাৎ তারা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেল, তখন বলে উঠল, ‘এ যে মুহাম্মদ , আল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ তাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ!’ আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখে বলে উঠলেনঃ ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দ!’

৫৮৪ আব্দুল্লহাহ্‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়ায্‌যিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে।

৫৮৫ মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) । ঈসা ইবনু তালহা (রাঃ) থকে বর্ণিত, একদিন তিনি মু’আবিয়া (রাঃ)-কে (আযানের জবাব দিতে) শুনেছেন যে, তিনি ‘আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ পর্যন্ত মুয়ায্‌যিনের অনুরূপ বলেছেন।

৫৮৬ ইসহাক ইবনু রাহওয়াই (রহঃ) ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) থকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) বলেছেন। আমার কোন ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুয়ায্‌যিন যখন বলল, তখন তিনি (মু’আবিয়া (রাঃ)) বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি।

৫৮৭ আলী ইবনু আইয়্যাশ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ ‘হে আল্লাহ-এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ –কে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’-কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।

৫৮৮ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই তারা কুরআহর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত। যুহরে সালাত (নামায/নামাজ) আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) (জামা’আতে) আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত।

৫৮৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন হারিস (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার বর্ষণ সিক্ত দিনে ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। এ দিকে মুয়আয্‌যিন আযান দিতে গিয়ে যখন -এ পৌছল, তখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন যে, লোকেরা যেন আবাসে (নিজ নিজ ঘরে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। ’ এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তখন ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বললেন, তাঁর চাইতে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )তিনই এরূপ করেছেন। অবশ্য জুমু’আর সালাত (নামায/নামাজ) ওয়াজিব। (তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার অনুমতি রয়েছে)।

৫৯০ আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল (রাঃ) রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা (সাহ্‌রীর) পানাহার করতে পার। আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) বলেন, ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) ছিলেন অন্ধ। যতক্ষন না তাঁকে বলে দেওয়া হত যে, ‘ভোর হয়েছে, ভোর হয়েছে’-ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না।

৫৯১ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মুআয্‌যিন সুব্‌হে সা’দিকের প্রতীক্ষায় থাকত (ও আযান দিত) এবং ভোর স্পষ্ট হতো- জামা’আত দাঁড়ানোর আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিতেন।

৫৯২ আবূ নু’আইম (রহঃ) আযিশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপে আদায় করতেন।

৫৯৩ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর(রা )থকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহ্‌রী) পানাহার করতে থাক; যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাক্‌তূম (রাঃ) আযান দেন।

৫৯৪ আহ্‌মদ ইব্‌ন ইউনুস (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) থকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাশাদ করেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহ্‌রী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা, সে রাত থাকতে আযান দেয়-যেন তোমাদের মধ্যে যারা তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) রত তারা ফিরে যায় আর যারা ঘুমন্ত তাদেরকে জাগিয়ে দেয়। তারপর তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ ফজর বা সুবহে সা’দিক বলা যায় না, যখন এরূপ হয়-তিনি একবার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ইশারা করলেন, যতক্ষন না এরূপ হয়ে যায়। বর্ণনাকারী যুহাইর (রহঃ) তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয় একটি আপরটির উপর রাখার পর তাঁর ডানে ও বামে প্রসারিত করে দেখালেন।

৫৯৫ ইসহাক ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সূএে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই, ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) যতক্ষণ আযান না দেয়, ততক্ষন তোমরা পানাহার করতে পার।

৫৯৬ ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মুগাফ্‌ফাল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সালাত (নামায/নামাজ) রয়েছে। একথা তিনি তিনবার বলেন। (তারপর বলেন) যে চায় তার জন্য।

৫৯৭। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুয়াজ্জ্বীন যখন আযান দিত, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগনের মধ্যে কয়েকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বের হওয়া পর্যন্ত (মসজিদের) স্তম্ভের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগরিবের আগে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অথচ মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যে কিছু (সময়) থাকত না। উসমান ইবনু জাবালা ও আবূ দাঊদ (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এ’দুয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত।

৫৯৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মুয়াজ্জ্বীন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম আযান শেষ করতেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সুবহে সা’দিকের পর ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপে আদায় করতেন, তারপর ডান কাতে শুয়ে পড়তেন এবং ইকামতের জন্য মুয়াজ্জ্বীন তার কাছে না আসা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।

৫৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা যায়। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা যায়। তৃতীয়বার একথা বলার পর তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি ইচ্ছা করে।

৬০০। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম এবং আমরা তার নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু বৎসল ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর, আর তাদের দ্বীন শিক্ষা দিবে এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

৬০১- মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। মুয়াজ্জ্বীন আযান দিতে চাইলে তিনি বললেনঃ ঠাণ্ডা হতে দাও। কিছুক্ষন পর মুয়াজ্জ্বীন আবার আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। তারপর সে আবার আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। এভাবে বিলম্ব করতে করতে টিলাগুলোর ছায়া তার সমান হয়ে গেল। পরে বললেনঃ উত্তাপের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফল।

৬০২- মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’জন লোক সফরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ তোমরা উভয় যখন সফরে বেরুবে (সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হলে) তখন আযান দিবে, এরপর ইকামত দিবে এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

৬০৩- মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হলাম। বিশ দিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নমর স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি। যখন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। তারপর তিনি বল্লেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাঃ) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।

৬০৪- মূসা জ্জাদ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রচন্ড এক শীতের রাতে ইবনু উমর (রাঃ) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। এরপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা প্রচন্ড শীতের রাতে মুয়াজ্জ্বীনকে আযান দিতে বললেন এওং সাথে সাথে একথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা আবাসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও।

৬০৫- ইসহাক (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবতাহ নামক স্থানে দেখলাম, বিলাল (রাঃ) একটি বর্শা নিয়ে বেরুলেন। অবশেষ আবতাহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তা পূতে দিলেন, এরপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দিলেন।

৬০৬- মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে দেখেছেন। (এরপর তিনি বলেন) তাই আমি তাঁর (বিলালের) ন্যায় আযানের মাঝে মুখ এদিক সেদিক (ডানে-বামে) ফিরাই।

৬০৭- আব নু’আইম (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। হঠাত তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়াজ শুনতে পেলেন। সাতাল শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বললেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। বললেনঃ এরুপ করবে না। যখন সালাত (নামায/নামাজ) আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ফাওত হয়ে যায় তা (ইমামের সালাম ফেরানোর পর) পূরা করে নিবে।

৬০৮- আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা ইকামত শুনতে পাবে, তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত ধীরস্থীরতা ও গাম্ভীর্যতা বজায় রাখা। তাড়াহুড়া করবেনা। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর ছুটে যায় তা পূরা করে নিবে।

৬০৯- মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না।

৬১০- আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ধীরস্থিরতার প্রতি লক্ষ রাখা তোমাদের জন্য একান্ত আবশ্যক। আলী ইবনু মুবারাক (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় শায়বান (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।

৬১১- আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হুজরা থেকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য তাশরীফ নিয়ে আসলেন। এদিকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত দেওয়া হয়েছে এবং কাতার সোজা করে নেওয়া হয়েছে, এমন কি তিনি মূসা ল্লায় দাঁড়ালেন, আমরা তাকবীরের অপেক্ষা করছি, এমন সময় তিনি ফিরে গেলেন এবং বলে গেলেন তোমরা নিজ নিজ স্থলে অপেক্ষা কর। আমরা নিজ নিজ স্থানে অপেক্ষা করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি তাশরিফ নিয়ে আসলেন, তাঁর মাথা মুবারক থেকে পানি টপকে পড়ছিলো এবং তিনি গোসল করে এসেছিলেন।

৬১২- ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত দেয়া হয়ে গেছে, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসলেনএবং সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন তাঁর উপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বল্লেনঃ তোমরা নিজ নিজ এলাকায় অপেক্ষা কর। এরপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন, তারপর ফিরে আসলেন, তখন তাঁর মাথা মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। এরপর সবাইকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৬১৩- আবূ নু’আইম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন হযরত উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কসম! আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারিনি, এমন কি সুর্য ডুবতে লাগলো, (জাবির (রাঃ) বলেন,)যখন কথা হচ্ছিল তখন এমন সময়, যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ইফতার করে ফেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমিও সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করিনি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বুহতান’ নামক উপত্যকায় গেলেন, আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। সেখানে তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে তিনি (প্রথমে) আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এরপর তিনি মাগ্রিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৬১৪- আবূ মা’মার আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত হয়ে গেছে তখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপাশে একব্যাক্তির সাথে একান্তে কথা বলছিলেন, অবশেষে যখন লোকদের ঘুম আসছিল তখন তিনি সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন।

৬১৫- আইয়্যাশ ইবনু ওয়ালিদ (রহঃ) হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত হয়ে যাওয়ার পর কোন ব্যাক্তির কথা বলা সম্পর্কে আমি সাবিত বুনানীকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস শোনালেন। তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত দেওয়া হয় এমন সময় এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাতের পর তাঁকে ব্যস্ত রাখল। আর হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, কোন মা যদি তার সন্তানের প্রতি স্নেহবশত ইশার সালাত (নামায/নামাজ) জামা’আতে আদায় করতে নিষেধ করে, তবে এ ব্যাপারে সন্তান তাঁর মায়ের আনুগত্য করবে না।

৬১৬- আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, তারপর সালাত (নামায/নামাজ) কায়েমের নির্দেশ দেই, এরপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেওয়া হোক, তারপর এক ব্যাক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দেই। এরপর আমি লোকদের কাছে যাই এবং তাদের (যারা সালাত (নামায/নামাজ) শামিল হয় নাই) ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশতহীন মোটা হাঁড় বা ছাগলের ভালো দুটি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ইশার জামা’য়াতে হাযির হত।

৬১৭- আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা’আতে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ফযিলত একাকীএ আদায়কৃত সালাত (নামায/নামাজ)-এর থেকে সাতাশ’ গুণ বেশি।

৬১৮- মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামা’আতের সাথে সালাত (নামায/নামাজ)-এর সাওয়াব, তাঁর নিজের ঘরে বাজারে আদায়কৃত সালাত (নামায/নামাজ)-এর সাওয়াব দ্বিগুণ করে ২৫ গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণে এই যে, সে যখন উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করল, তারপর একমাত্র সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তখন তাঁর প্রতি কদমের বিনিময়ে একটী মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থানে থাকে, ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দু’আ করতে থাকেন- “হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুণ এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুণ। “আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাত (নামায/নামাজ)-এর অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাত (নামায/নামাজ) রত বলে গণ্য হয়।

৬১৯- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, জামা’আতের সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের কারো একাকি সালাত (নামায/নামাজ) থেকে পঁচিশ গুণ বেশি মর্তবা রাখে। আর ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রাতের ও দিনের ফিরিশতারা সম্মিলিত হয়। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন, তোমরা চাইলে (এর প্রমান স্বরূপ) ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) উপস্থিত হয় (ফিরিশতাগণ) এ আয়াত পাঠ কর। শুয়াইব (রহঃ) বলেন, আমাকে নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ননা করে শুনিয়েছেন যে, জামা’আতের সালাত (নামায/নামাজ) একাকী সালাত (নামায/নামাজ)-এর থেকে সাতাশ গুণ বেশি মর্তবা রাখে।

৬২০- উমর ইবনু হাফস (রহঃ) উম্মে দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবূ দারদা (রাঃ) রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কিসে তোমাকে রাগান্বিত করেছে? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম মুহাম্মদ উম্মতের মধ্যে জামা’আতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা ব্যতিত তাঁর তরীকার আর কিছুই দেখছি না। (এখন এতেও ত্রুটি দেখছি)

৬২১- মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন (মসজিদ থেকে) যে যত বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সালাত (নামায/নামাজ) আসে, তার তত বেশি সাওয়াব হবে। আর যে ব্যাক্তি ইমামের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার সাওয়াব সে ব্যাক্তির চাইতে বেশি, যে একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে।

৬২২- কুতাইবা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যাক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় একটি কাটাযুক্ত ডাল দেখে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা’লা তার এ কাজ সা’দরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার – ১ প্লেগে মৃত ব্যাক্তি ২ কলেরায় মৃত ব্যাক্তি ৩ নিমজ্জিত ব্যাক্তি ৪ চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তি ৫ আল্লাহর পথে (জিহাদে) শহীদ। তিনি আরো বলেছেনঃ মানুষ যদি আযান দেওয়া, প্রথম কাতারে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার কী ফযিলত তা জানত, কুরআহর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া সে সুযোগ না পেত, তাহলে কুরআহর মাধ্যমে হলেও তারা সে সুযোগ গ্রহণ করত আর আওয়াল ওয়াক্ত (যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) যাওয়ার) কী ফযিলত তা যদি মানুষ জানত, তাহলে এর জন্য তারা অবশ্যই সর্বাগ্রে যেত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) (জামা’আতে) আদায়ে কী ফযিলত, তা যদি তারা জানত তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো।

৬২৩- মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে বনী সালিমা! তোমরা কি (স্বীয় আবাস স্থল থেকে মসজিদে আসার পথে) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সাওয়াবের কামনা কর না? ইবনু মারিয়াম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বনী সালিমা গোত্রের লোকেরা নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বসতি স্থাপন করতে চেয়েছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু মদিনার কোন এলাকা একেবারে শূন্য হওয়াটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেন নাই। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা কি (মসজিদে আসা যাওয়ায়) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সাওয়াব কামনা কর না? কুরআনে উল্লেখিত ‘আসার’ শব্দের ব্যাখ্যা সম্পর্কে মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘আসার’ অর্থ পদক্ষেপ। অর্থাৎ যমীনে পায়ে চলার চিহ্নসমূহ।

৬২৪- উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপস ফজর ও ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর চাইতে অধিক ভারী সালাত (নামায/নামাজ) আর নেই। এ দু’ সালাত (নামায/নামাজ)-এর কি ফযিলত, তা যদি তারা জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি সংকল্প করছিলাম যে, মুয়াজ্জ্বীন কে ইকামত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে এরপর ও যারা সালাত (নামায/নামাজ) আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই।

৬২৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়, তখন তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে ও ইকামত বলবে। তারপর তোমাদের দু’জনের মধ্যে যে অধিক বয়স্ক সে ইমামতি করবে।

৬২৬ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থানে থাকে তার উযূ (ওজু/অজু/অযু) ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফিরিশতা গণ এ বলে দোয়া করতে থাকে যে, ইয়া আল্লাহ! আপনি তাঁকে মাফ করে দিন, ইয়া আল্লাহ! আপনি তার উপর রহম করুণ। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)ই তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে, সে সালাত (নামায/নামাজ) রত আছে বলে গণ্য হবে।

৬২৭ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যাক্তিকে আল্লাহ তা’লা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১ ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২ সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার রবের ইবাদাতের মধ্যে, ৩ সে ব্যাক্তি যার কলব মসজিদের সাথে লেগে রয়েছে, ৪ সে দু’ব্যাক্তি যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫ সে ব্যাক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬ সে ব্যাক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জাননা , ৭ সে ব্যাক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।

৬২৮- কুতাইবা (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। একরাতে তিনি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্বে আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলে বলে গণ্য করা হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন। এ সময় আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটির চমক দেখতে পাচ্ছিলাম।

৬২৯- আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি সকাল বা বিকালে যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তা’লা তার জন্য ততবার মেহমানদারীর আয়োজন করেন।

৬৩০ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহাইনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির পাশ দিয়ে গেলেন। (অন্য সুত্রে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আব্দুর রাহমান (রহঃ) হাফস ইবনু আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মালিক ইবনু বুহাইনা নামক আযদ গোত্রীয় এক ব্যাক্তিকে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখলেন। তখন ইকামত হয়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, লোকেরা সে লোকটিকে ঘিরে ফেলল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) কি চার রাকাআত? ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) কি চার রাকাআত? গুনদার ও মুয়াজ (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। (এ বর্ণনাটই সঠিক) তবে হাম্মাদ (রহঃ) ও সা’দ (রহঃ) এর মধ্যে সে হাফস (রহঃ) থেকে হাদীসটি বর্ননা করতে গিয়ে মালিক ইবনু বুহাইনা (রহঃ) থেকে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন।

৬৩১- উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে নিলাম এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর পাবন্দী ও উহার তা’যীম সম্বন্ধে আলোচনা করছিলাম। আয়িশা (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন, তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হলে আযান দেওয়া হল। তখন তিনি বললেন, আবূ বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। তাঁকে বলা হল যে, আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন তখন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো সে কথা বললেন এবং তারা আবারো তা-ই বললেন। তৃতীয়বারও তিনি সে কথা বললেন। তিনি আরো বললেনঃ তোমরা ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথী মহিলাদের মত। আবূ বকরকেই বল, যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। আবূ বকর (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় শুরু করলেন। এদিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে একটু হালকাবোধ করলেন। দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার চোখে এখনও স্পষ্ট ভাসছে। অসুস্থতার কারণে তাঁর দু’পা মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। তখন আবূ বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিত করলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটু সামনে আনা হল, তিনি আবূ বকর (রাঃ) এর পাশে বসলেন। আ’মাশকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামতি করছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন এবং লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুকরন করছিল। আ’মাশ (রাঃ) মাথার ইশারায় বললেন, হ্যাঁ। আবূ দাউদ (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সূত্রে আ’মাশ (রাঃ) থেকে হাদীসের কতকাংশ উল্লেখ করেছেন। আবূ মু’আবিয়া (রহঃ) অতিরিক্ত বলেছেন, তিনি আবূ বকর (রাঃ) এর বাঁ দিকে বসেছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন।

৬৩২ ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একেবারে কাতর হয়ে গেলেন এবং তাঁর রোগ বেড়ে গেল, তখন তিনি আমার ঘরে সেবা-শুশ্রূষার জন্য তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণের কাছে সম্মতি চাইলেন। তাঁরা সম্মতি দিলেন। সে সময় দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) তিনি বের হলেন, তাঁর দু’পা মাটিতে হেঁচড়িয়ে যাচ্ছিলো। তিনি ছিলেন আব্বাসা (রাঃ) ও অপর এক সাহাবীর মাঝখানে। (বর্ননাকারী) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর বর্ণিত এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট ব্যক্ত করি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো, তিনি কে ছিলেন, যার নাম আয়িশা (রাঃ) বলেন নি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)।

৬৩৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) একবার প্রচন্ড শীত ও বাতাসের রাতে সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিলেন। তারপর ঘোষণা দিলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও, এরপর তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচণ্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুয়াজ্জ্বীনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন - প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও।

৬৩৪- ইসমাইল (রহঃ) মাহমুদ ইবনু রাবী’ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) তাঁর নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। তিনি ছিলেন অন্ধ। একদিন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কখনো কখনো ঘোর অন্ধকার ও বর্ষণ প্রবাহ হয়ে পড়ে। অথচ আমি একজন অন্ধ ব্যাক্তি। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমার ঘরে কোন একস্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করুণ, যে স্থানটিকে আমার সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান হিসেবে নির্ধারন করবো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে এলেন এবং বললেনঃ আমার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য কোন জায়গাটি তুমি ভালো মনে কর? তিনি ইশারা করে ঘরের জায়গা দেখিয়ে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে সালার আদায় করলেন।

৬৩৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বৃষ্টির দিনে ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিচ্ছিলেন। মুয়াজ্জ্বীন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ পর্যন্ত পৌছলো, তখন তিনি তাঁকে বললেন, ঘোষণা করে দাও যে, সালাত (নামায/নামাজ) যার যার আবাসে। এ শুনে লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল – যেন তারা বিষয়টিকে অপছন্দ করল। তিনি তাদের লক্ষ করে বললেন, মনে হয় তোমরা বিষয়টি অপছন্দ করছ। তবে, আমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনই এরূপ করেছেন। একথা সত্য যে জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) ওয়াজিব। তবে তোমাদের অসুবিধায় ফেলা আমি পছন্দ করি না। হাম্মাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে এ সূত্রে এরূপ উল্লেখ আছে, আমি তোমাদের গুনাহর অভিযোগে ফেলতে পছন্দ করি না যে, তোমরা হাঁটু পর্যন্ত কাদা মাড়িয়ে আসবে।

৬৩৬ মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) কে (শবে-কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা) করলাম, তিনি বললেন, একখন্ড মেঘ এসে এমন ভাবে বর্ষণ শুরু করল যে, যার ফলে (মসজিদে নববীর) ছাদ দিয়ে পানি পড়া শুরু হল। কেননা, (তখন মসজিদের) ছাদ ছিল খেজুরের ডালের তৈরী। এমন সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দেওয়া হল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পানি ও কাদার উপর সিজদা করতে দেখলাম, এমন কি আমি তাঁর কপালেও কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।

৬৩৭ আদম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, এক আনসারী (সাহাবী) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন আমি আপনার সাথে মসজিদে এসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে অক্ষম। তিনি ছিলেন মোটা। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু খাবার তৈরি করলেন এবং তাঁকে বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে গেলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এর জন্য এর জন্য একটি চাটাই পেতে দিলেন এবং চাটাইয়ের একপ্রান্তে কিছু পানি ছিটিয়ে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে চাটাইয়ের উপর দু’ রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। জারুদ গোত্রীয় একব্যাক্তি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন নাকি? তিনি বললেন, সে দিন ব্যতীত আর কোন দিন তাঁকে তা আদায় করতে দেখিনি।

৬৩৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর সে সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত হয়ে যায়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও।

৬৩৯- ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিকেলের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে তা খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাত (নামায/নামাজ) তাড়াহুড়া করবে না।

৬৪০ উবায়দুল্লাহ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, অপর দিকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত হয়ে যায়, তখন আগে খাবার খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাত (নামায/নামাজ) তাড়াহুড়া করবে না। (নাফি’ (রহঃ) বলেন) ইবনু উমর (রাঃ) এর জন্য খাবার পরিবেশন করা হত, সে সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দেয়া হত, তিনি খাবার শেষ না করে সালাত (নামায/নামাজ) আসতেন না। অথচ তিনি ইমামের কিরাআত শুনতে পেতেন। যুহাইর (রহঃ) ও ওয়াহব ইবনু উসমান (রহঃ) মূসা ইবনু ওকবা (রহঃ) সূত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে থাক, তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত হয়ে গেলেও খাওয়া শেষ না করে তাড়াহুড়া করবে না। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আমাকে ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) এ হাদিসটি ওয়াহাব ইবনু উসমান (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন এবং ওয়াহাব হলেন মদিনাবাসী।

৬৪১ আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমর ইবনু উমাইয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বকরির) সামনের রানের গোশত কেটে খাচ্ছেন, এমন সময় তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ডাকা হল। তিনি তখনই ছুরি রেখে দিয়ে উঠে গেলেন ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, কিন্তু এজন্য নতুন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন নি।

৬৪২ আদম (রহঃ) আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে থাকা অবস্থায় কি করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন। আর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় এতে সালাত (নামায/নামাজ) চলে যেতেন।

৬৪৩ মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) কিলাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) আমাদের এ মসজিদে এলেন। তিনি বললেন, আমি অবশ্যই তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবো, বস্তুত আমার উদ্দেশ্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা নয় বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি যেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি, তা তোমাদের দেখানোই আমাদের উদ্দেশ্য। (আইয়ুব (রহঃ) বলেন) আমি আবূ কিলাবা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি ভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন? তিনি বললেন, আমাদের এর শাইখের মত আর শাইখ প্রথম রাকা’আতের সিজদা শেষ করে যখন মাথা উঠাতেন, তখন দাড়াবার আগে একটু বসে নিতেন।

৬৪৪ - ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন, ক্রমে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, আবূ বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) বললেন তিনি তো কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন, আবূ বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আয়িশা (রাঃ) আবার সে কথা বললেন। তখন তিনি আবার বললেন, আবূ বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। তোমরা ইউসুফের (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথী রমণীদেরই মত। তারপর একজন সংবাদ দাতা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট সংবাদ নিয়ে আসলেন এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায়ই লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৬৪৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেন, আবূ বকর (রাঃ) কে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তাঁর কান্নার দরুন লোকেরা তাঁর কিছুই শুনতে পাবেনা। কাজেই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের নির্দেশ দিন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি হাফসা (রাঃ) কে বললাম, তুমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বল যে, আবূ বকর (রাঃ) আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার দরুন লোকেরা তাঁর কিছুই শুনতে পাবেনা। তাই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের নির্দেশ দিন। হাফসা (রাঃ)ও তাই করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, থাম, তোমরা তোমরা ইউসুফের (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথী রমণীদেরই ন্যায়। আবূ বকর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। হাফসা (রাঃ) তখন আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে কখনও কল্যাণকর কিছু পাইনি।

৬৪৬- আবূ ইয়ামান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারী, খাদিম ও সাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ননা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অবশেষে যখন সোমবার এবং লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য কাতারে দাঁড়ালো, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরীফের পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর চেহারা যেন কোরআনে ের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেয়ে আমরা খুশিতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়ে ছিলাম এবং আবূ বকর (রাঃ) কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো সালাত (নামায/নামাজ) আসবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইশারায় বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ণ করে নাও। এরপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনই তিনি ইন্তেকাল করেন।

৬৪৭ - আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রোগশয্যায় থাকার কারণে) তিনি দিন পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে আসেন নি। এ সময় একবার সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দেওয়া হল। আবূ বকর (রাঃ) ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় আবূ বকর (রাঃ) কে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে যেতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দেন। তারপর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

৬৪৮ - ইয়াহিয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন খুব বেড়ে গেল, তখন তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জামা’আত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, আবূ বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক। কিরা’আতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। তিনি বললেন, তাকেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) সে কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি আবারো বললেন, তাঁকেও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। তোমরা ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথী রমণীদের মত। এ হাদীসটি যুহরীর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করার ব্যাপারে যুবাইদী যুহরীর ভাতিজা ও ইসহাক ইবনু ইয়াহইয়া কালবী (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন এবং মা’মার ও উকায়ল (রহঃ) যুহরী (রহঃ) এর মাধ্যমে হামযা (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিসটি (মুরসাল হিসাবে) বর্ণনা করেন।

৬৪৯ - যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। উরওয়া (রাঃ) বর্ননা করেন, ইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু সুস্থতা বোধ করলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বেরিয়ে আসলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইশারা করলেন যে, যেভাবে আছ সেভাবেই থাক। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) এর বরাবর তাঁর পাশে বসে গেলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুসরণ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন আর লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) কে অনুসরণ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিল।

৬৫০- আবূদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সায়িদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতিমধ্যে (আসরের) সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেলে, মুয়াজ্জ্বীন আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেবেন? তা হলে ইকামত দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) থাকতে থাকতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ১ তখন সাহাবীগন হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগন বেশী করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি ইশারা করলেন – নিজের জায়গায় থাক। তখন আবূ বকর (রাঃ) দু’হাত উঠিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি বললেন, হে আবূ বকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কি সে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আবূ কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা শোভা পায় না। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের এত হাতে তালি দিতে দেখলাম। ব্যাপার কি? শোন! সালাত (নামায/নামাজ) কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তাঁর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হবে। আর হাতে তালি দেওয়া তো মহিলাদের জন্য।

৬৫১- সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদল যুবক একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হলাম এবং প্রায় বিশ দিন আমরা সেখানে থাকলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা যখন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের দ্বীন শিক্ষা দিবে, তখন তাদের এ সময়ে অমুক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বলবে। এবং ওই সময়ে অমুক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বলবে। তারপর যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ইমামতি করবে।

৬৫২ - মু’আয ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি বল্লেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গাটি আমার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য তুমি পছন্দ কর? আমি আমার পছন্দ মত একটি স্থান ইশারা করে দেখালাম। তিনি সেখানে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়ালেন, আমরা তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। এরপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আমরা সালাম ফিরালাম।

৬৫৩ - আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (অন্তিম কালের) অসুস্থতা সম্পর্কে কি আপনি আমাকে কিছু শোনাবেন? তিনি বললেন, অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গসলের পাত্রে পানি দাও। আয়িশা (রাঃ) বলেন আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। তারপর একটু উঠতে চাইলেন। কিন্তু বেহুঁশ পয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর একটু হুঁশ ফিরে পেলে আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি নিয়ে রাখ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। আবার উঠতে চাইলেন, কিন্তু বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর আবার হুঁশ ফিরে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি নিয়ে রাখ। তারপর তিনি উঠে বসলেন, এবং গোসল করলেন এবং উঠতে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর আবার হুঁশ ফিরে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। ওদিকে সাহাবীগণ ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপেক্ষায় মসজিদে বসে ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকরের নিকট এ মর্মে লোক পাঠান যে, তিনি যেন লোকদের হিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক ছিলেন, তাই তিনি উমর (রাঃ) কে বললেন, হে উমর! আপনি সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিন। উমর (রাঃ) বললেন, আপনই এর জন্য বেশি হকদার। তাই আবূ বকর সে কদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু নিজে হালকাবোধ করলেন এবং দু’জন লোকের কাঁধে ভর করে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হলেন। সে দু’জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) তখন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তিনি যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলেন, পিছনে সরে আসতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পিছিয়ে না আসার জন্য ইশারা করলেন এবং বললেন তোমরা আমাকে তাঁর পাশে বসিয়ে দাও। তারা তাঁকে আবূ বকর (রাঃ) এর পাশে বসিয়ে দিলেন। বর্ননাকারী বলেন, তারপর আবূ বকর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইক্তিদা করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। আর সাহাবীগণ আবূ বকর (রাঃ) এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইক্তিদা করতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উপবিষ্ট ছিলেন। উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তিম কালের অসুস্থতা সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) আমাকে যে হাদীস বর্ননা করেছেন, তা কি আমি আপনার নিকট বর্ননা করব না? তিনি বললেন, করুণ। তাই আমি তাঁকে সে হাদীস শোনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশেই আপত্তি করলেন না, তবে তাঁকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, আব্বাস (রাঃ) এর সাথে যে অপর সাহাবী ছিলেন, আয়িশা (রাঃ) কি আপনার নিকট তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি হলেন, আলী (রাঃ)।

৬৫৪- আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা অসুস্থতার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ গৃহে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন, একদল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইশারা করলেন যে, বসে যাও। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করার পর তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই সে যখন রুকু করে তোমরা ও তখন রুকু করবে, এবং সে যখন রুকু থেকে মাথা উঠায় তখন তোমরাও মাথা উঠাবে, আর সে যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, তখন তোমরা সকলেই বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।

৬৫৫- আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সাওয়ার হন এরপর তিনি তা থেকে পড়ে যান, এতে তাঁর ডান পাশে একটু আঘাত লাগে। তিনি কোন এক ওয়াক্তের সালাত (নামায/নামাজ) বসে আদায় করেছিলেন, আমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করার পর তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণই করা হয় তাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, সে যখন রুকু করে তখন তোমরাও রুকু করবে, সে যখন উঠে, তখন তোমরাও উঠবে, আরা সে যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে তোমরাও তখন ‘রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলবে। আর সে যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তখন তোমরা সবাই বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। আবূ আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, হুমাইদী (রহঃ) বলেছেন যে, যখন ইমাম বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তখন তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ ছিল পূর্বে অসুস্থকালীন। এরপর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং সাহাবীগণ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন, কিন্তু তিনি তাদের বসতে নির্দেশ দেননি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলের মধ্যে সর্বশেষ আমলই গ্রহণীয়।

৬৫৬ - মূসা দ্দার (রহঃ) বারা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মিথ্যাবাদী নন (১) তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদায় না যেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করতেন না। তিনি সিজদায় যাওয়ার পর আমরা সিজদায় যেতাম। ১ ‘তিনি মিথ্যাবাদী নন’ একথা বলে হযরত বারা’আ (রাঃ) এর সত্যবাদীতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।

৬৫৮ - হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তহন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’লা তাঁর মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তাঁর আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন।

৬৫৯ - ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনের পূর্বে মুহাজিরগণের প্রথম দল যখন কুবা এলাকার কোন এক স্থানে এলেন, তখন আবূ হুযাইফা (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাঃ) তাঁদের ইমামতি করতেন। তাঁদের মধ্যে তিনি কোরআন সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন।

৬৬০ - মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শোন ও আনুগত্য প্রকাশ কর, যদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে আমীর নিযুক্ত করা হয় – যার মাথা কিসমিসের মতো।

৬৬১ - ফাযল ইবনু সাহল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারা তোমাদের ইমামতি করে। যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে তা হলে তার সাওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি তারা ত্রুটি করে, তাহলে তোমাদের জন্য সাওয়াব রয়েছে, আর ত্রুটি তাদের (ইমামের) উপরই বর্তাবে।

৬৬২- মুহাম্মদ ইবনু আবান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার (রাঃ) কে বলেন, শোন এবং আনুগত্য কর, যদিও কোন হাবশী আমীর হয়- যার মাথা কিসমিসের মতো।

৬৬৩ - সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে রাত যাপন করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আসলেন এবং চার রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর আরো দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিদ্রায় গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনলাম। তারপর তিনি (উঠে ফজরের) সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বেরিয়ে গেলেন।

৬৬৪- আহমদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে ঘুমালাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতে তাঁর কেছে ছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। আর তিনি তের রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, এমনকি তাঁর নাক ডাকতে শুরু করল। এবং তিনি যখন ঘুমাতেন তাঁর নাক ডাকত। তারপর তাঁর কাছে মুয়াজ্জ্বীন এলেন, তিনি বেরিয়ে গিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং নতুন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেননি। আমর (রাঃ) বলেন, এ হাদিস আমি বুকাইর (রাঃ) কে শোনালে তিনি বলেন, কুরাইব (রহঃ) ও এ হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

৬৬৫- মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালার (মায়মুনা) (রাঃ) এর কাছে রাত যাপন করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন।

৬৬৬- মুসলিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পর ফিরে গিয়ে আপন গোত্রের ইমামতি করতেন। এই হাদিস মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রাঃ) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। একদিন তিনি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) সুরা বাকারা পাঠ করেন, এতে এক ব্যাক্তি জামা’আত থেকে বেরিয়ে যায়। এ জন্য মু’আয (রাঃ) তার সমালোচনা করেন, এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছালে তিনি তিনবার ‘ফুতান’ অথবা ‘ফাতিনান’ (বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী) শব্দটি বললেন। এবং তিনি তাকে আওসাতে মুফাসসালের দুটি সুরা পাঠের নির্দেশ দেন। আমর (রাঃ) বলেন, কোন দুটি সুরার কথা বলেছিলেন, তা আমার মনে নেই।

৬৬৭- আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর শপথ! আমি অমুকের কারণে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) অনুপস্থিত থাকি। তিনি জামা’আতে সালাত (নামায/নামাজ)কে খুব দীর্ঘ করেন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নসীহত করতে গিয়ে সেদিনের ন্যায় এত বেশি রাগান্বিত আর কোন দিন দেখিনি। তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ অন্য লোক নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাঁদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে।

৬৬৮- আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা তাঁদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।

৬৬৯ - মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক ব্যাক্তির জন্য আমি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) অনুপস্থিত থাকি। কেননা তিনি আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) খুব দীর্ঘ করেন। এ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নসীহত করতে গিয়ে সেদিনের ন্যায় এত বেশি রাগান্বিত আর কোন দিন দেখিনি। তারপর তিনি বলেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামতি করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাঁদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে।

৬৭০ আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী দু’টি পানি বহনকারী উট নিয়ে আসছিলেন। রাতের অন্ধকার তখন ঘনীভূত হয়ে এসেছে। এ সময় তিনি মু’আয (রাঃ) কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত পান, তিনি তার উট দুটি বসিয়ে দিয়ে মু’আয (রাঃ) এর দিকে (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে) এগিয়ে এলেন, মু’আয (রাঃ) সুরা বাকারা বাঁ সুরা নিসা পড়তে শুরু করেন। এতে সাহাবী (জামা’আত ছেড়ে) চলে যান। পরে তিনি জানতে পারেন যে, মু’আয (রাঃ) এর জন্য তার সমালোচনা করেছেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে মু’আয (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মু’আয! তুমি কি লোকদের ফিতনায় ফেলতে চাও? বা তিনি বলেছিলেন তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তিনি একথা তিনবার বলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি ‘সাব্বিহিস্মি রাব্বিকা, ওয়াশশামসি ওয়াদুহা হা’ এবং ওয়াল্লাইলি ইজা ইয়াগশা (সুরা) দ্বারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেনা কেন? কারন তোমার পিছনে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। (শু’বা (রহঃ) বলেন) আমার ধারণা শেষোক্ত বাক্যটি হাদিসের অংশ। সায়ীদ ইবনু মাসরুক, মিসওয়ার এবং শাইবানী (রহঃ) – ও অনুরূপ রেওয়ায়াত করেছেন। আমর, উবাঈদুল্লাহ ইবনু মিকসাম আবূ যুবাইর (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মু’আয (রাঃ) ইশার সালাত (নামায/নামাজ) সুরা বাকারা পাঠ করেছিলেন। আ’মাশ (রহঃ) ও মুহারিব (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ রিওয়ায়েত করেন।

৬৭১ - আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপে এবং পুর্ণভাবে আদায় করতেন।

৬৭২ ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুরু কান্নাকাটি শুনে সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করি। কারন আমি পছন্দ করি না যে, শিশুরু মাকে কষ্টে ফেলি। বিশর ইবনু বাকর, বাকিয়্যা ও ইবনু মোবারক আওযারী (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।

৬৭৩ - খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পুর্ণাঙ্গ সালাত (নামায/নামাজ) কোন ইমামের পেছনে কখনো পড়িনি। আর তা ে জন্য যে, তিনি শিশুরু কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সংক্ষেপ করতেন।

৬৭৪ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুরু কান্না শুনে আমার সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁধলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে তা আমি জানি।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন