03 June, 2018

সালাত পর্ব ২


৪৪১। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার ঘরের দরজায় দেখলাম। তখন হাবশার লোকেরা মসজিদে (বর্শা দ্বারা) অনুশীলন করছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাঁদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রাখছিলেন। আমি ওদের অনুশীলন দেখছিলাম। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে। তিনি বলেছেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম এমতাবস্থায় হাবশীরাা তাদের বর্শা নিয়ে অনুশীলন করছিল।

৪৪২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ) তাঁর কাছে এসে কিতাবের দেনা শোধের জন্য সাহায্য চাইলেন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি চাইলে আমি (তোমার মূল্য) তোমার মালিককে দিয়ে দিব এ শর্তে যে, উত্তরাধিকার-স্বত্ব থাকবে আমার। তাঁর মালিক আয়িশা (রাঃ) কে বললোঃ আপনি চাইলে বাকী মূল্য বারীরাকে দিতে পারেন। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) আর একবার বলেছেন: আপনি চাইলে তাকে আযাদ করতে পারেন, তবে উত্তরাধিকার-স্বত্ব থাকবে আমাদের। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আমি তাঁর কাছে ব্যাপারটি বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কারণ উত্তরাধিকার-স্বত্ব থাকেই তারই, যে আযাদ করে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। সুফিয়ান (রহঃ) আর একবার বলেন: এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করে বললেনঃ লোকদের কি হল? তারা এমন সব শর্ত করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। কেউ যদি এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তাঁর সে শর্তের কোন মূল্য নেই। এমনকি এরূপ শর্ত একশবার আরোপ করলেও। মালিক (রহঃ) আমরা (রহঃ) থেকে রাবী’য়া (রাঃ) এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। , তবে মিম্বরে আরোহণের কথা উল্লেখ করেন নি। আলী (রাঃ) আমরা (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। জাফর ইবনু আওন (রহঃ) ইয়াহইয়া (রহঃ) এর মাধ্যমে আমরা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেছি।

৪৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদের ভিতরে ইবনু আবূ হাদরাদ (রাঃ) এর কাছে তাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চস্বরে কথাবার্তা হল। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকেই তাদের কথার আওয়াজ শুনলেন এবং তিন পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কা’ব! কা’ব (রাঃ) উত্তর দিলেন, লাব্বাইক ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমর পাওনা ঋণ থেকে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইশারা করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আমি তাই করলাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি ইবনু আবূ হাদরাদকে বললেনঃ উঠ আর বাকীটা দিয়ে দাও।

৪৪৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কাল বর্ণের মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে ইন্তেকাল করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সাহাবীগণ বললেন, সে ইন্তেকাল করেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। তারপর তিনি তার কবরের কাছে গেলেন এবং তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৪৪৫। আবদান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মদ সম্পর্কীয় সূরা বাকারার আয়াতসমূহ নাযিল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে সে সব আয়াত সাহাবীগণকে পাঠ করে শোনালেন। তারপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম ঘোষনা করলেন।

৪৪৬। আহমদ ইবনু ওয়াফিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন পুরুষ অথবা বলেছেন একজন মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিতেন। [রাবী সাবিত (রহঃ) বলেন:] আমার মনে হয় তিনি বলেছেন একজন মহিলা। তারপর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হদীস বর্ণনা করে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবরে জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।

৪৪৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; গত রাতে একটা অবাধ্য জ্বীন হঠাৎ করে আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যেন সে আমার সালাত (নামায/নামাজ) বাধা সৃষ্টি করতে করে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছা করে করেছিলাম যে, তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোরবেলা তোমরা সবাই তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উক্তি আমার স্মরণ হল, “হে রব! আমাকে দান কর এমন রাজত্ব যার অধিকারী আমার পরে কেউ না হয়। ”(৩৮:৩৫) (বর্ণনাকারী) রাওহ (রহঃ) বলেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই শয়তানটিকে অপমানিত অবস্থায় তাড়িয়ে দিলেন।

৪৪৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন অশ্বারোহী মুজাহিদকে নজদের দিকে পাঠালেন। তারা বানূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসালা নামক এক ব্যাক্তিকে নিয়ে এসে তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গেলেন এবং বললেনঃ সুমামাকে ছেড়ে দাও। (ছাড়া পেয়ে) তিনি মসজিদে নববী নিকটে এক খেজুর বাগানে গিয়ে সেখানে গোসল করলেন, এরপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেনঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ”।

৪৪৯। যাকারিয়্যা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: খন্দকের যুদ্ধে সা’দ (রাঃ) এর হাতের শিরা যখম হয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (তাঁর জন্য) একটা তাঁবু স্থাপন করলেন। যাতে কাছে থেকে তাঁর দেখাশোনা করতে পারেন। মসজিদে বানূ গিফারেরও একটা তাঁবু ছিল। সা’দ (রাঃ) এর প্রচুর রক্ত তাদের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: হে তাঁবুর লোকেরা! তোমাদের তাঁবু থেকে আমাদের দিকে কি প্রবাহিত হচ্ছে? তখন দেখা গেল যে, সা’দের যখম থেকে প্রচুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অবশেষে এতেই তিনি ইন্তেকাল করলেন।

৪৫০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (বিদায় হাজ্জে (হজ্জ)) আমার অসুস্থতার কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ সওয়ার হয়ে লোকদের হতে বাইরে থেকে তওয়াফ করে নাও। তখন আমি (সেভাবে) তাওয়াফ করলাম। আর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন, তিনি “সূরা ওয়াত-তুরি ওয়া কিতাবিম-মাসতূর” তিলাওয়াত করছিলেন।

৪৫১। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’জন সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অন্ধকার রাতে বের হলেন। তাঁদের একজন আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ) আর সাহাবী দ্বিতীয় জন সম্পর্কে আমার ধারণা যে, তিনি ছিলেন উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ), আর উভয়ের সাথে চেরাগ সদৃশ কিছু ছিল, যা তাঁদের সামনের দিকটাকে আলোকিত করছিল। তাঁরা উভয়ে যখন পৃথক হয়ে গেলেন, তখন প্রত্যেকের সাথে একটা করে রয়ে গেল। অবশেষে এভাবে তাঁরা নিজেদের বাড়ীতে পৌছলেন।

৪৫২। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে বললেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে যা আছে-এ দুয়ের মধ্যে একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে, তা গ্রহণ করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই বৃদ্ধ কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে রয়েছে, এ দুয়ের একটা গ্রহণ করার এখতিয়ার দিলে তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে তা গ্রহণ করেছেন (এতে কাঁধার কি আছে?)। মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ছিলেন সেই বান্দা। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন আমাদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আবূ বকর, তুমি কাঁধবে না। নিজের সাহচর্য ও সম্পদ দিয়ে আমাকে যিনি সবচাইতে বেশী ইহসান করেছেন তিনি আবূ বকর। আমার কোন উম্মতকে যদি আমি খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) রূপে গ্রহণ করতাম, তবে তিনি হতেন আবূ বকর। কিন্তু তাঁর সাথে রয়েছে ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। আবূ বকরের দরজা ব্যতীত মসজিদের কোন দরজাই রাখা হবে না, সবই বন্ধ করা হবে।

৪৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ জু’ফী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগের সময় এক টুকরা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে বাইরে এসে মিম্বরে বসলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা সিফাত বর্ণনার পর বললেনঃ জানো-মাল দিয়ে আবূ বকর ইবনু আবূ কুহাফার চাইতে অধিক কেউ আমার প্রতি ইহসান করেনি। আমি কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে অবশ্যই আবূ বকরকে গ্রহণ করতাম। তবে ইসলামের বন্ধুত্বই উত্তম। আবূ বকরের দরজা ব্যতীত এই মসজিদের সকল দরজা বন্ধ করে দাও।

৪৫৪। আবূ নু’মান ও কুতায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসেন তখন উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) কে ডাকলেন। তিনি দরজা খুলে দিলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , বিলাল, উসামা ইবনু যায়েদ ও উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) ভিতরে গেলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ থাকলেন। তারপর সবাই বের হলেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন: আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বিলাল (রাঃ) কে (সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কোন স্থানে? তিনি বলেন: দুই স্তম্ভের মাঝামাঝি। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন: কয় রাকা’আত আদায় করেছেন তা জিজ্ঞাসা করতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

৪৫৫। কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় অশ্বারোহী সৈন্য নজদ অভিমুখে পাঠালেন। তারা বানূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসাল নামক এক ব্যাক্তিকে নিয়ে এলেন। তারপর তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন।

৪৫৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করলো। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। তিনি বললেনঃ যাও, এ দু’জনকে আমার কাছে নিয়ে এস। আমি তাদের নিয়ে তাঁর কাছে এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেনঃ তোমরা কোন স্থানের লোক? তারা বললোঃ আমরা তায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেনঃ তোমরা যদি মদিনার লোক হতে, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা দু’জনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছ!

৪৫৭। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তিনি ইবনু আবূ হাদরাদের কাছে তাঁর প্রাপ্য সম্পর্কে মসজিদে নববীতে তাগাদা করেন। এতে উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। এমন কি সে আওয়াজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকে শুনতে পেলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে বের হয়ে এলেন এবং কা’ব ইবনু মালিককে ডেকে বললেনঃ হে কা’ব! উত্তরে কা’ব বললেনঃ লাব্বায়কা ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে ইশারা করলেন যে, তোমার প্রাপ্য থেকে অর্ধেক ছেড়ে দাও। কা’ব (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তাই করলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু আবূ হাদরাদ (রাঃ) কে বললেনঃ উঠ এবার (বাকী) ঋণ পরিশোধ কর।

৪৫৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, তখন তিনি মিম্বরে ছিলেন: আপনি রাতের সালাত (নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করতে বলেন? তিনি বললেনঃ দু-দু’রাকা’আত করে আদায় করবে। যখন তোমাদের কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা হয় তখন সে আরো এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। আর এইটি তার পূর্ববর্তী সালাত (নামায/নামাজ)কে বিতর করে দেবে। [ নাফি (রহঃ) বলেন] ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন: তোমরা বিতরকে রাতের শেষ সালাত (নামায/নামাজ) হিসাবে আদায় কর। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নির্দেশ দিয়েছেন।

৪৫৯। আবূ নু’মান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন সময় আসলেন যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: রাতের সালাত (নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করতে হয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু’রাকা’আত দু’রাকা’আত করে আদায় করবে। আর যখন ভোর হওয়ার আশংকা করবে, তখন আরো এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। সে সালাত (নামায/নামাজ) তোমার আগের সালাত (নামায/নামাজ)কে বিতর করে দিবে। ওয়ালীদ ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমার কাছে বলেছেন যে, ইবনু উমর (রাঃ) তাঁদের বলেছেন: এক সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্বোধন করে বললেন, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন।

৪৬০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ছিলেন। এমন সময় তিনজন লোক এলেন। তাঁদের দু’জন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এগিয়ে এলেন আর একজন চলে গেলেন। এ দু’জনের একজন হালকায় খালি স্থান পেয়ে সেখানে বসে পড়লেন। দ্বিতীয় ব্যাক্তি মজলিসের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যাক্তি পিঠটান দিয়ে সরে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাবার্তা থেকে অবসর হয়ে বললেনঃ আমি কি তোমাদের ঐ তিন ব্যাক্তি সম্পর্কে খবর দেব? এক ব্যাক্তি তো আল্লাহর দিকে অগ্রসর হল। আল্লাহও তাকে আশ্রয় দিলেন। দ্বিতীয় ব্যাক্তি লজ্জা করলো, আর আল্লাহ তা’আলাও তাকে (বঞ্চিত করতে) লজ্জাবোধ করলেন। তৃতীয় ব্যাক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, কাজেই আল্লাহও তাঁর থেকে ফিরে থাকলেন।

৪৬১। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলাম (রহঃ) আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (তাঁর চাচা) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু মূসা য়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর ও উসমান (রাঃ) এরূপ করতেন।

৪৬২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমার জ্ঞানমতে আমি আমার পিতা মাতাকে সব সময় দ্বীনের অনুসরণ করতে দেখেছি। আর আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিনের উভয় প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আমাদের কাছে আসেন নি। তারপর আবূ বকর (রাঃ) এর মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তাঁর ঘরের আঙ্গিনায় একটি মসজিদ তৈরী করলেন। তিনি এতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন ও কুরান তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সেখানে দাঁড়াত এবং তারা বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন একজন অধিক রোদনকারী ব্যাক্তি। তিনি কুরআন পড়া শুরু করলে অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। তাঁর এ অবস্থা নেতৃস্থানীয় মুশরিক কুরাইশদের শঙ্কিত করে তুলল।

৪৬৩। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জামা’আতের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে ঘর বা বাইরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার চাইতে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে কেবল সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ তাকে সালাত (নামায/নামাজ)ই গণ্য করা হয়। আর সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দুয়া করেন: ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, ইয়া আল্লাহ! তাকে রহম করুন, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, সেখানে উযূ (ওজু/অজু/অযু) ভঙ্গের কাজ না করে।

৪৬৪। হামিদ ইবনু উমর (রহঃ) ইবনু উমর বা ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাতের আঙুল অন্য এক হাতের আঙুলে প্রবেশ করান। আসিম ইবনু আলী (রহঃ) থাকে বর্ণিত, আসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন: আমি এ হদীস আমার পিতা থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। এরপর এ হাদীসটি আমাকে ঠিকভাবে বর্ণনা করেন ওয়াকিদ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন: আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের সাথে অবস্থান করবে, তখন তোমার অবস্থা কি হবে?

হুমায়দী (র) তাঁর আল আজম’উ বাইনাস সাহিহাইন গ্রন্তে ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হদীস এরূপ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) এক হাতের আঙুল অর এক হাতের আঙুলে প্রবেশ করান এবং বলেন: হে আবদুল্লাহ! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের মধ্যে অবস্থান করবে তখন তোমার অবস্থা কি হবে? তাদের অঙ্গীকার পূরণ করা হবে না ও আমানতে খেয়ানত করা হবে এবং তাদের মতানৈক্য দেখা দিবে। আরে তার এরূপ হয়ে যাবে এবং তিনি এক হাতের আঙুল আরেক হাতে প্রবেশ করান। আবদুল্লাহ (রা) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তখন আমি কি করব? তিনি বললেন, যা তুমি শরী’আত সম্মত বলে জান তা গ্রহণ কর, আর যা শরী’আত বিরোধী বলে মনে করবে তা বর্জন করবে। -উমাদাতুল ক্বারী, ৪খ,পৃ-২২৬

৪৬৫। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একজন মু’মিন আরেকজন মু’মিনের জন্য ইমারততুল্য, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন।

৪৬৬। ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের বিকালে সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করলেন। ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেন: তিনি আমাদের নিয়ে দু’রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সালাম ফিরালেন। তারপর মসজিদে রাখা এক টুকরা কাঠের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁকে রাগান্বিত মনে হচ্ছিল। তিনি তাঁর হাত বাঁ হাতের উপর রেখে এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন। আর তাঁর ডান গাল বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাঁদের তাড়া ছিল তাঁরা মসজিদের দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। সাহাবীগণ বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) কি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে? উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। কিন্তু তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলেন। আর লোকজনের মধ্যে লম্বা হাত বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি ছিলেন, যাকে “যুল-ইয়াদাইন” বলা হতো, তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলিনি এবং সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপও করা হয়নি। এরপর (অন্যদের) জিজ্ঞাসা করলেন: যুল-ইয়াদাইনের কথা কি ঠিক? তাঁরা বললেন হাঁ। তারপর তিনি এগিয়ে এলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর বাদপড়া অংশটুকু আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন ও তাকবীর বললেন এবং স্বভাবিক ভাবে সিজদার মতো বা একটু দীর্ঘ সিজদা করলেন। তারপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। পরে আবার তাকবীর বললেন এবং স্বভাবিক ভাবে সিজদার মতো বা একটু দীর্ঘ সিজদা করলেন। তারপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। লোকেরা প্রায়ই ইবনু সীরীন (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করতো “পরে কি তিনি সালাম ফিরিয়েছিলেন?” তখন ইবনু সীরীন (রহঃ) বলতেন: আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ইমরান ইবনু হোসাইন (রাঃ) বলেছেন: তারপর তিনি সালাম ফিরিয়েছিলেন।

৪৬৭। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে রাস্তার বিশেষ স্থান অনুসন্ধান করে সে সব স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি এবং তিনি বর্ণনা করতেন যে, তাঁর পিতাও এসব স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর তিনিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এসব স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) বলেন: নাফি (রহঃ)-ও আমার কাছে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সেসব স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর আমি সালিম (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করি। আমার জানামতে তিনিও সেসব স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ব্যাপারে নাফী (রহঃ)এর সাথে একমত পোষণ করেছেন; তবে ‘শারাফুর-এরাওহা’ নামক স্থানের মসজিদের ব্যাপারে তাঁরা ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।

৪৬৮। ইবরাহীম ইবনু মুনযির আল-হিযামী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) জন্য রওয়ানা হলে ‘যুল-হুলায়ফায়’ অবতরণ করতেন, বাবলা গাছের নীচে যুল-হুলায়ফার মসজিদের স্থানে। আর যখন কোন যুদ্ধ থেকে অথবা হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরা করে সেই পথে ফিরতেন, তখন উপত্যকার মাঝখানে অবতরণ করতেন। যখন উপত্যকার মাঝখান থেকে উপরের দিকে আসতেন, তখন উপত্যকার তীরে অবস্থিত পূর্ব নিম্নভূমিতে উট বসাতেন। সেখানে তিনি শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করতেন। এ স্থানটি পাথরের উপর নির্মিত মসজিদের কাছে নয় এবং যে মসজিদ টিলার উপর, তার নিকটেও নয়। এখানে ছিল একটি ঝিল, যার পাশে আবদুল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এর ভিতরে কতগুলো বালির স্তূপ ছিল। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর নিম্নভূমিতে পানির প্রবাহ হয়ে আবদুল্লাহ (রাঃ) যে স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তা সমান করে দিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) [নাফি (রহঃ) কে] বলেছেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারাফুর-এরাওহা’ (রহঃ) মসজিদের কাছে ছোট মসজিদের স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) সে স্থানের পরিচয় দিতেন এই বলে যে, যখন তুমি মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে তখন তা তোমার ডানদিকে। আর সেই মসজিদটি হল যখন তুমি (মদিনা থেকে) মক্কা যাবে তখন তা ডানদিকের রাস্তার এক পাশে থাকবে। সে স্থান ও বড় মসজিদের মাঝখানে ব্যবধান হল একটি ঢিল নিক্ষেপ পরিমাণ অথবা তার কাছাকাছি। আর ইবনু ওমর (রাঃ) রাওহার শেষ মাথায় ‘ইরক’(ছোট পাহাড়) এর কাছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। সেই ‘ইরক’ এর শেষ প্রান্ত হল রাস্তার পাশে মসজিদের কাছাকাছি মক্কা যাওয়ার পথে রাওহা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখনে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এই মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ) করতেন না, বরং সেটাকে তিনি বামদিকে ও পেছনে ফেলে অগ্রসর হয়ে ‘ইরক’ এর নিকটে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাওহা থেকে বেরিয়ে ঐ স্থানে পৌছার আগে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। সেখানে পৌঁছে যোহর আদায় করতেন। মক্কা থেকে আসার সময় এ পথে ভোরের এক ঘণ্টা আগে বা শেষ রাতে আসলে তথায় অবস্থান করে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুওয়ায়ছার নিকটে রাস্তার ডানদিকে রাস্তা সংলগ্ন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে একটা বিরাট গাছের নীচে অবস্থান করতেন। তারপর তিনি রুওয়ায়ছার ডাকঘরের দু’মাইল দূরে টিলার পাশ দিয়ে রওয়ান হতেন। বর্তমানে গাছটির উপরের অংশ ভেঙ্গে গিয়ে মাঝখানে ঝুঁকে গেছে। গাছের কাণ্ড এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আর তার আশেপাশে অনেকগুলো বালির স্তূপ বিস্তৃত রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন: আরজ গ্রামের পরে পাহাড়ের দিকে যেতে যে উচ্চভূমি রয়েছে, তার পাশে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এই মসজিদের পাশে দু’তিনটি কবর আছে। এসব কবরে পাথরের বড় বড় খণ্ড পড়ে আছে। রাস্তার ডান পাশে গাছের নিকটেই তা অবস্থিত। দুপুরের পর সূর্য ঢলে পড়লে আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘আরজ’ এর দিকে থেকে এসে গাছের মধ্য দিয়ে যেতেন এবং ঐ মসজিদে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাস্তার বাঁ দিকে বিরাট গাছগুলির কাছে অবতরণ করেন যা ‘হারশা’ পাহাড়ের নিকটবর্তী নিম্নভূমির দিকে চলে গেছে। সেই নিম্নভূমিটি ‘হারশা’-এর এক প্রান্তের সাথে মিলিত। এখানে থেকে সাধারণ সড়কের দূরত্ব প্রায় এক তীর নিক্ষেপের পরিমাণ। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সেই গাছগুলির মধ্যে একটির কাছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, যা ছিল রাস্তার নিকটবর্তী এবং সবচাইতে উঁচু। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করতেন ‘মাররুয যাহরান’ উপত্যকার শেষ প্রান্তে নিম্নভূমিতে, যা মদিনার দিকে যেতে ছোট পাহাড়গুলোর নীচে অবস্থিত। তিনি সে নিম্নভূমির মাঝখানে অবতরণ করতেন। এটা মক্কা যাওয়ার পথে বাম পাশে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনযিল ও রাস্তার মাঝে দূরত্ব এক পাথর নিক্ষেপ পরিমাণ। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘যূ-তুওয়া’ ইয়াহইয়া অবতরণ করতেন এবং এখানেই রাত যাপন করতেন আর মক্কায় আসার পথে এখানেই ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সেই স্থানটা ছিল একটা বড় টিলার উপরে। যেখানে মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেখানে নয় বরং তার নীচে একটা বড় টিলার উপর। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তাদের কাছে আরো বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহাড়ের দু’টো প্রবেশপথ সামনে রাখতেন যা তার ও দীর্ঘ পাহাড়ের মাঝখানে কাবার দিকে রয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে মসজিদ নির্মিত করা হয়েছে, সেটিকে তিনি [ ইবনু উমর (রহঃ)] টিলার প্রান্তের মসজিদের বাম পাশে রাখতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান ছিল এর নীচে কাল টিলার উপরে। টিলা থেকে প্রায় দশ হাত দূরে দু’টো পাহাড়ের প্রবেশপথ যা তোমার ও কাবার মাঝখানে রয়েছে-সামনে রেখে তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।

৪৬৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি একটা মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম, তখন আমি ছিলাম সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে দেওয়াল ব্যতীত অন্যকিছুকে সুতরা বানিয়ে মিনায় লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। কাতারের কিছু অতিক্রম করে আমি সওয়ারী থেকে অবতরণ করলাম। গাধীটিকে চরাতে দিয়ে আমি কাতারের শামিল হয়ে গেলাম। আমাকে কেউই এ কাজে বাধা দেয়নি।

৪৭০। ইসহাক (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন যখন বের হতেন তখন তাঁর সামনে ছোট নেযা (বল্লম) পুঁতে রাখতে নির্দেশ দিতেন। সেদিকে মুখ করে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর লোকজন তাঁর পেছনে দাঁড়াত। সফরেও তিনি তাই করতেন। এ থেকে শাসকগণও এটা অবলম্বন করেছেন।

৪৭১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আওন ইবনু জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে ‘বাতহা’ নামক স্থানে যোহরের দু’রাকা’আত ও আসরের দু’রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তখন তাঁর সামনে ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তাঁর সম্মুখ দিয়ে (সুতরার বাইরে) মহিলা ও গাধা চলাচল করতো।

৪৭২। আমর ইবনু যূহারা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান ও দেওয়ালের মাঝখানে একটা বকরী চলার মত ব্যবধান ছিল।

৪৭৩। মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মসজিদের দেওয়াল ছিল মিম্বরের এত কাছে যে, মাঝখান দিয়ে একটা বকরীরও চলাচল কঠিন ছিল।

৪৭৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে বর্শা পুঁতে রাখা হতো, আর তিনি সেদিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৪৭৫। আদম (রহঃ) আওন ইবনু আবূ জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন: একদিন দুপুরে আমাদের সামনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন। তাঁকে উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি দেওয়া হল। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং আমাদের নিয়ে যোহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় তাঁর সামনে ছিল লৌহযুক্ত ছড়ি, যার বাইরের দিক দিয়ে মহিলা ও গাধা চলাচল করতো।

৪৭৬। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু বযী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হতেন, তখন আমি ও একজন বালক তাঁর পিছনে যেতাম। আর আমাদের সাথে থাকতো একটা লাঠি বা একটা ছড়ি অথবা একটা ছোট নেযা, আরো থাকতো একটা পানির পাত্র। তিনি তাঁর প্রয়োজনে সেরে নিলে আমরা তাঁকে ঐ পাত্রটি দিতাম।

৪৭৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন দুপুরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন। তিনি ‘বাতহা’ নামক স্থানে যোহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) দু’রাকা’আত করে আদায় করলেন। তখন তাঁর সামনে একটা লোহযুক্ত ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তিনি যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাঁর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নিজেদের শরীরে (বরকতের জন্য) মাসেহ করতে লাগলো।

৪৭৮। মক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াযিদ ইবনু আবূ উবায়দা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) এর কাছে আসতাম। তিনি সর্বদা মসজিদে নববীর সেই স্তম্ভের কাছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যা ছিল মাসাহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললাম হে আবূ মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুজে বের করে সামনে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখি (এর কারণ কি?) তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এটি খুঁজে বের করে এর কাছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেত দেখেছি।

৪৭৯। কাবীসা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশিষ্ট সাহাবীদের পেয়েছি। তারা মাগরিবের সময় দ্রুত স্তম্ভের কাছে যেতেন। শু’বা (রহঃ) আমর (রহঃ) সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে (এ হাদীসে) অতিরিক্ত বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসা পর্যন্ত।

৪৮০। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ-এ প্রবেশ করেছিলেন। আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ), উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) এবং বিলাল (রাঃ)। তিনি অনেকক্ষণ ভিতরে ছিলেন। তারপর বের হলেন। আর আমই প্রথম ব্যাক্তি যে তাঁর পরে প্রবেশ করেছে। আমি বিলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? তিনি জবাব দিলেন: সামনের দুই স্তম্ভের মাঝে।

৪৮১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর উসামা ইবনু যায়েদ, বিলাল এবং উসমান ইবনু তালহা হাজাবী (রাঃ) কা’বা শরীফে প্রবেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রবেশের সাথে সাথে উসমান (রাঃ) কাবার দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ ভিতরে ছিলেন। বিলাল (রাঃ) বের হলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করলেন? তিনি জওয়াব দিলেন: একটা স্তম্ভ বামদিকে, আর স্তম্ভ ডানদিকে আর তিনটা স্তম্ভ পেছনে রাখলেন। আর তখন বায়তুল্লাহ ছিল ছয় স্তম্ভ বিশিষ্ট। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। [ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] ইসমাঈল (রহঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন যে, তাঁর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র) ডান পাশে দুটো স্তম্ভ ছিল।

৪৮২। ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন কা’বা শরীফে প্রবেশ করতেন তখন সামনের দিকে চলতে থাকতেন এবং দরজা পেছনে রাখতেন। এভাবে এগিয়ে গিয়ে যেখানে তাঁর ও দেয়ালের মাঝে প্রায় তিন হাত পরিমাণ ব্যবধান থাকতো, সেখানে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি সে স্থানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে চাইতেন, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করিয়েছিলেন বলে বিলাল (রাঃ) তাঁকে খবর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন: কা’বা ঘরের যে-কোন প্রান্তে ইচ্ছা, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করায় আমাদের কারো কোন দোষ নেই।

৪৮৩। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী বসরী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীকে সামনে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (রাবী রাফি (রহঃ) বলেন:)আমি (আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে) জিজ্ঞাসা করলাম: যখন সওয়ারী নড়াচড়া করতো তখন (তিনি কি করতেন)? তিনি বলেন: তিনি তখন হাওদা নিয়ে সোজা করে নিজের সামনে রাখতেন, আর তার শেষাংশের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (নাফি (রহঃ) বলেন:) ইবনু উমর (রাঃ)-ও এরূপ করতেন।

৪৮৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা আমাদেরকে কুকুর, গাধার সমান করে ফেলেছ! আমি নিজে এ অবস্থায় ছিলাম যে, আমি চৌকির উপর শুয়ে থাকতাম আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে চৌকির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এভাবে আমি সামনে থাকা পছন্দ করতাম না। তাই আমি চৌকির পায়ের দিকে সরে গিয়ে চুপি চুপি নিজের থেকে বেরিয়ে পড়তাম।

৪৮৫। আবূ মা’মার (রহঃ) ও আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবূ সালেহ সম্মান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) কে দেখেছি। তিনি জুম্মার দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসাবে কোন কিছু সামনে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আবূ মু’আইত গোত্রের এক যুবক তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখলো যে তাঁর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। এজন্য সে পুনরায় তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবার আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) প্রথম বারের চাইতে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিরস্কার করে সে মারওয়ানের কাছে গিয়ে আবূ সা’ঈদ (রাঃ)-এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। এদিকে তার পরপরই আবূ সা’ঈদ (রাঃ)-ও মারওয়ানের কাছে গেলেন। মারওয়ান তাঁকে বললেনঃ হে আবূ সা’ঈদ! তোমার এই ভাতিজার কি ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেন: আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেন সে তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যাক্তি (মুসল্লী) যেন তার সাথে মুকাবিলা করে, কারণ সে শয়তান।

৪৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) বুসর ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়েদ ইবনু খালিদ (রাঃ) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন, যেন তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি শুনেছেন। তখন আবূ জুহায়ম (রাঃ) বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি মুসল্লীর সামনে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় অপরাধ, তাহলে সে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ দিন/মাস/বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো। আবূন-নাযর (রহঃ) বলেন: আমার জানানেই তিনি কি চল্লিশ দিন বা চল্লিশ মাস বা চল্লিশ বছর বলেছেন।

৪৮৭। ইসমা’ঈল ইবনু খলীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তাঁর সামনে সালাত (নামায/নামাজ) নষ্টকারী জিনিসের আলোচনা করা হল। লোকেরা বললোঃ কুকুর, গাধা ও মহিলা সালাত (নামায/নামাজ) নষ্ট করে দেয়। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা আমাদের কুকুরের সমান করে দিয়েছ! আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন আর আমি তাঁর ও কিবলার মাঝে চৌকির উপর কাত হয়ে শুয়ে থাকতাম। কোন কোন সময় আমার বের হওয়ার দরকার হতো এবং তাঁর সামনের দিকে যাওয়া অপছন্দ করতাম। এজন্য আমি চুপি চুপি সরে পড়তাম। আ’মাশ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৪৮৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি তখন তাঁর বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে থাকতাম। বিতর পড়ার সময় তিনি আমাকেও জাগাতেন, তখন আমিও বিতর পড়তাম।

৪৮৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে শুয়ে থাকতাম আর আমার পা দুটো থাকত তাঁর কিবলার দিকে। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন আমাকে টোকা দিতেন, আর আমি আমার পা সরিয়ে নিতাম। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে পুনরায় পা দুটো প্রসারিত করে দিতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন তখন ঘরে কোন বাতি ছিল না।

৪৯০। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁর সামনে সালাত (নামায/নামাজ) নষ্টকারী, কুকুর, গাধা ও মহিলা সম্বন্ধে আলোচনা চলছিল। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা আমাদেরকে গাধা ও কুকুরের সাথে তুলনা করছ? আল্লাহর কসম! আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তখন আমি চৌকির উপরে তাঁর ও কিবলার মাঝখানে শায়িত ছিলাম। আমার প্রয়োজন হলে আমি উঠে বসা পছন্দ করতাম না। কেননা, তাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কষ্ট হতে পারে। আমি তাঁর পায়ের পাশ দিয়ে চুপে চুপে বের হয়ে পড়তাম।

৪৯১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে উঠে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন আর আমি তাঁর ও কিবলার মাঝখানে আড়াআড়ি ভাবে তাঁর পারিবারিক বিছানায় শুয়ে থাকতাম।

৪৯২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবূল আস ইবনু রাবী’য়া ইবনু আবদে শামস (রহঃ) এর ঔরসজাত কন্যা উমামা (রাঃ) কে কাঁধে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন।

৪৯৩। আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) মায়মুনা বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার বিছানা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুসল্লার বরাবর ছিল। আর আমি আমার বিছানায় থাকা অবস্থায় কোন কোন সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ের উপর এসে পড়তো।

৪৯৪। আবূ নু’মান (রহঃ) মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি তাঁর পাশে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর কাপড় আমার গায়ের উপর পড়তো। সে সময় আমি হায়েয অবস্থায় ছিলাম।

৪৯৫। আমর ইবনু আলী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা আমাদেরকে কুকুর ও গাধার সমান করে বড়ই খারাপ করেছ। অথচ আমি নিজেকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সময় আমি তাঁর ও কিবলার মাঝখানে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করার ইচ্ছা করতেন তখন আমার পা দু’টোতে টোকা দিতেন। আমি তখন আমার পা দু’টো গুটিয়ে নিতাম।

৪৯৬। আহমদ ইবনু ইসহাক সারমারী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ))থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার নিকটে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আর কুরাইশের একদল তাদের মজলিসে ছিল। এমন সময় তাদের একজন বলল: তোমরা কি এই রিয়াকারকে দেখনি? তোমাদের এমন কে আছে, যে অমুক গোত্রের উট যবেহ করার স্থান পর্যন্ত যেতে রাযী? সেখানে থেকে গোবর , রক্ত ও গর্ভাশয় নিয়ে এসে অপেক্ষায় থাকবে যখন এ ব্যাক্তি সিজদায় যাবে, তখন এগুলো তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিবে। এ কাজের জন্য চরম হতভাগ্য ব্যাক্তি (উকবা ইবনু আবূ মু’আইত) উঠে দাঁড়াল (এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় স্থির রয়ে গেলেন। এতে তারা হাসাহাসি করতে লাগলো। একজন আরেক জনের উপর লুটিয়ে পড়তে লাগল। (এই অবস্থা দেখে) এক ব্যাক্তি ফাতিমা (রাঃ) এর কাছে গেল। তিনি তখন ছোট বালিকা ছিলেন। তিনি দৌড়ে চলে আসলেন। তখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদারত ছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) সেগুলো তাঁর উপর থেকে ফেলে দিলেন এবং মুশরিকদের লক্ষ্য করে গালমন্দ করতে লাগলেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের ধ্বংস কর”। তারপর তিনি নাম ধরে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমর ইবনু হিশাম, উতবা ইবনু রাবী’য়া, শায়বা ইবনু রাবী’য়া, ওয়ালীদ ইবনু উতবা, উমাইয়া ইবনু খালাফ, উকবা ইবনু আবূ মু’আইত এবং উমারা ইবনু ওয়ালিদকে ধ্বংশ কর”। আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ)) বলেন: আল্লাহর কসম! আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধের দিন নিহত লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। তারপর তাদের হিঁচড়ে বদরের কুয়ায় নিক্ষেপ করা হয়। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: এই কুয়াবাসীদের উপর চিরকালের জন্য অভিশাপ।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন