৬৭৬ - সুলাইমান ইবনু হারব ও আবূ নু’মান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাঁদের ইমামতি করতেন।
৬৭৭ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকা কালে একবার বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে সালাত (নামায/নামাজ)-এর (সময় হয়েছে বলে) সংবাদ দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ বকরকে বল, যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। (আয়িশা (রাঃ) বললেন), আমি বললাম, আবূ বকর (রাঃ) কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাআত পড়তে পারবেন না। তিনি আবার বললেনঃ আবূ বকরকে বল, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে। আমি আবারও সে কথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বললেন, তোমরা তো ইউসুফের (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথী রমণীদেরই মত। আবূ বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আবূ বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জনের কাঁধে ভর করে বের হলেন। (আয়িশা (রাঃ) বললেন) আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি দু’পা মুবারাক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে দেখতে পেয়ে পেছনে সরে আসতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারায় তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বললেন, (তবুও) আবূ বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশে বসলেন, আবূ বকর (রাঃ) তাকবীর শোনাতে লাগলেন। মুহাযির (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু দাউদ (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
৬৭৮ - কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, বিলাল (রাঃ) এসে সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বকরকে বল, লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ বকর অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যাক্তি। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ) কে নির্দেশ দেন (তাহলে ভালো হয়)। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )আবার বললেনঃ লোকদের নিয়ে আবূ বকরকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আমি হাফসা (রাঃ) কে বললাম, তুমি তাঁকে একটু বল যে, আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যাক্তি। তিনি যখন আপনার পরিবর্তে সে স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ) কে নির্দেশ দেন (তাহলে ভালো হত)। এ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ইউসুফের সাথী রমণীদেরই মত। আবূ বকর (রাঃ) কে লোকদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আবূ বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় শুরু করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে একটু সুস্থ বোধ করলেন এবং দু’জন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মসজিদে গেলেন। তাঁর দু’পা মুবারক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। আবূ বকর (রাঃ) যখন তাঁর আগমন আঁচ করলেন, পেছনে সরে যেতে উদ্যত হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি ইশারা করলেন (পিছিয়ে না যাওয়ার জন্য)। তারপর তিনি এসে আবূ বকর (রাঃ) এর বাম পাশে গেলেন। অবশেষে আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আর সাহাবীগণ হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করছিল।
৬৭৯ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাআত আদায় করে সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ফেললেন। যুল-ইয়াদাইন তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সালাত (নামায/নামাজ) কি কম করা হয়েছে? না আপনি ভুলে গেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্যদের লক্ষ করে) বল্লেনঃ যুল-ইয়াদাইন কি ঠিকই বলছে? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আরও দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে স্বভাবিক সিজদার মত অথবা তার চাইতে দীর্ঘ সিজদা করলেন।
৬৮০ - আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) দু’রাকাআত পড়লেন। তাঁকে বলা হল আপনি দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তখন তিনি আরও দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং সালাম ফেরানোর পর দুটি সিজদা করলেন।
৬৮১ - ইসমাইল (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেনঃ আবূ বকর কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থলে দাঁড়াবেন, তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণ কিছুই শুনতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নির্দেশ দিন। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )আবার বললেনঃ আবূ বকরকে বল লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিতে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি হাফসা (রাঃ) কে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ) কে বলুন তিনি যেন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। হাফসা (রাঃ) তাই করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চুপ কর! তোমরা ইউসুফের সাথি নারীদেরই মত। আবূ বকরকে বল সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। এতে হাফসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) কে (অভিমান করে) বললেন, তোমার কাছ থেকে আমি কখনো আমার জন্য হিতকর কিছু পাইনি।
৬৮২ - আবদুল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদুল মালিক (রহঃ) নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তা’লা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।
৬৮৩ - আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কাতার সোজা করে নেবে। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।
৬৮৪ - আহমদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত হচ্ছে, এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমরা কাতার গুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাড়াও। কেননা, আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।
৬৮৫ আবূ আসিমের (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে এবং ভুমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তিরা শহীদ। যদি লোকেরা জানত যে, প্রথম ওয়াক্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে কি ফযিলত, তা হলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করত। আর ইশা ও ফজরের জামা’আতের কি মর্তবা তা যদি তারা জানত তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত এবং সামনের কাতারের কী ফযিলত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুরআ ব্যবহার করত।
৬৮৬ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই উমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তোমরাও তখন সিজদা করবে। তিনি যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। আর তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
৬৮৭ - আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের কাতার গুলো সোজা করে নেবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
৬৮৮ - মু’আয ইবনু আসা’দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি (আনাস) মদিনায় আসলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের তুলনায় আপনি আমাদের সময়ের অপছন্দনীয় কী দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, অন্য কোন কাজ তেমন অপছন্দনীয় মনে হচ্ছে না। তবে তোমরা (সালাত (নামায/নামাজ)) কাতার ঠিকমত সোজা কর না। উকবা ইবনু উবাইদ (রহঃ) বুশাইর ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদের কাছে মদিনায় এলেন বাকী অংশ অনুরূপ।
৬৮৯- আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। [আনাস (রাঃ) বলেন] আমাদের প্রত্যেকেই তার পাশ্ববর্তী ব্যাক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।
৬৯০- কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পেছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন্তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে শুয়ে পড়লেন। পড়ে তার কাছে মুয়াজ্জ্বীন এলো। তিনি উঠে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, কিন্তু (নতুনভাবে) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন নি।
৬৯১ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতিম ছেলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মে সুলাইম (রাঃ) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
৬৯২- মূসা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, আমার পেছনের দিক দিয়ে।
৬৯৩- মুহাম্মদ ইবনু সালাম) (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত (নামায/নামাজ) তাঁর নিজ কামরায় আদায় করতেন। কামরার দেয়ালটি ছিল নিচু। ফলে একদিন সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীর মুবারক দেখতে পেলেন এবং (দেয়ালের অপর পার্শ্বে) সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সহিত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সকালে তারা একথা বলাবলি করছিলেন। দ্বিতীয় রাতে তিনি (সালাত (নামায/নামাজ)) দাঁড়ালেন। সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। দু’ বা তিন রাত তারা এরূপ করলেন। এরপর (রাতে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে থাকলেন, আর বের হলেন না। ভোরে সাহাবীগণ এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, রাতের সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে।
৬৯৪- ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাঁর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ান এবং পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন।
৬৯৫- আবদুল আলা ইবনু হাম্মদ (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি (বুসর ইবনু সায়ীদ (রাঃ) বলেন, মনে হয়, (যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) কামরাটি চাটাই'র তৈরী ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আর তাঁর সাহাবীগনের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের কাছে এসে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা, ফরজ সালাত (নামায/নামাজ) ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তা-ই উত্তম। আফফান (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বলেছেন।
৬৯৬ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তাঁর ডান পাঁজরে আঁচড় লাগে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ সময় কোন এক সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের নিয়ে তিনি বসে আদায় করলেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। সালাম ফেরানোর পর তিনি বললেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্যই। তাই তিনি যখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। আর তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে।
৬৯৭- কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। তারপর তিনি ফিরে বললেনঃ ইমাম অনুসরণের জন্যই বা তিনি বলেছিলেন, ইমাম নির্ধারন করা হয় তাঁর অনুসরনের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। যখন তিনি উঠেন তখন তোমরাও উঠবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে এবং তিনি যখন সিজদাহ করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে।
৬৯৮- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম নির্ধারন করা হয় তাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন তিনি রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। আর তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। যখন তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৬৯৯ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ ও রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরূপ করতেন না।
৭০০- মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। তবে সিজদার সময় এরুপ করতেন না।
৭০১ - ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) আবূ কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়িরিস (রাঃ) কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত উঠাতেন। আর যখন রূকূ’ করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।
৭০২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাকবীর দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকূ’র তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলতেন, তখনও এরূপ করতেন এবং রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করতেন না। আর সিজদার থেকে মাথা উঠাবার সময়ও এরুপ করতেন না।
৭০৩ - আইয়্যাশ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’হাত উঠাতেন আর যখন রুকূ করতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এরপর যখন ‘ ’ বলতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন এবং দু’রাকাআত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এ সমস্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বলে ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন। এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালামা ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু তাহমান, আইউন ও মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে এ হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
৭০৪ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যে, সালাত (নামায/নামাজ) প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। আবূ হাফিম (রহঃ) বলেন, সাহল (রহঃ) এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমায়ীল (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করা হত। তবে তিনি এরূপ বলেন নি যে, সাহল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন।
৭০৫ - ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার কিবলা শুধুমাত্র এ দিকে? আল্লাহর শপথ, তোমাদের রুকূ’ তোমাদের খুশু’, কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকে না। আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের দেখি আমার পিছন দিক থেকেও।
৭০৬ - মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রুকূ’ও সিজদাগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আমার পিছনে থেকে বা রাবী বলেন, আমার পিঠের পিছনে থেকে তোমাদের দেখতে পাই, যখন তোমরা রুকূ’ ও সিজদা কর।
৭০৭ - হাফস্ ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) ‘ ’ দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন।
৭০৮ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুড় করে থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলি – ইয়া আল্লাহ্! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দুরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। ইয়া আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নিমল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানি, বরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন।
৭০৯ - ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আসমা বিনত্ আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাতুল (নামায) কুসূফ (সূর্য গ্রহণের সালাত (নামায/নামাজ)) আদায় করলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর রুকূ’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার রুকূ’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূ’তে থাকলেন। এরপর উঠলেন, পরে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। আবার রুকূ’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূ’তে দীর্ঘক্ষণ রুবূ’তে থাকলেন। এরপর রুকূ’ থেকে উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। তারপর উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ জান্নাত আমার খুবেই নিকটে এসে গিয়েছিল এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তা হলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, ইয়া রব! আমিও কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রী লোককে দেখতে পেলাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, একটি বিড়াল তাকে খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ স্ত্রী লোকটির এমন অবস্থা কেন? ফিরিশতাগণ জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রী লোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করতে পারে। নাফি’ (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয়, ইবনু আবূ মুলায়কা (রাঃ) বর্ণনা করেছিলেন, যাতে সে যমীনের পোকা মাকড় খেতে পারে।
৭১০ - মূসা (রহঃ) আবূ মা’মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খাব্বাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কি করে বুঝতে পারতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ির নড়াচড়া দেখে।
৭১১ - হাজ্জাজ (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আর তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন না, তাঁর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেছেন।
৭১২ - ইসমায়ীল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি এজন্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো অবস্থায় আপনাকে দেখলাম যেন কিছু একটা ধরতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু পরে দেখলাম, আবার পিছিয়ে এলেন। তিনি বললেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হয় এবং তারই একটি আঙ্গুরের ছড়া নিতে যাচ্ছিলাম। আমি যদি তা নিয়ে আসতাম, তা হলে দুনিয়ার স্থায়িত্বকাল পর্যন্ত তোমরা তা থেকে খেতে পারতে।
৭১৩ - মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং মসজিদের কিবলার দিকে ইশারা করে বললেন, এই মাত্র আমি যখন তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম তখন এ দেওয়ালের সামনের দিকে আমি জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। আজকের মতো এত মঙ্গল ও অমঙ্গল আমি আর দেখিনি, একথা তিনি তিনবার বললেন।
৭১৪ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকদের কি হল যে, তারা সালাত (নামায/নামাজ) আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যেই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হবে।
৭১৫ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ) এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ এটা এক ধরণের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত (নামায/নামাজ) থেকে অংশ বিশেষ কেড়ে নেয়।
৭১৬ - কুতায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশা করা চাঁদর পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরে তিনি বললেনঃ এ চাঁদরের কারুকারয আমার মনকে নিবিষ্ট করে রেখেছিল। এটি আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে একটি “আম্বজিানিয়্যাহ” নিয়ে এস।
৭১৭ - কুতাইবা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে তা পরিস্কার করে ফেললেন। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) থাকে, তখন আল্লাহ্ তার সামনে থাকেন। কাজেই সালাত (নামায/নামাজ) থাকা অবস্থায় কেউ সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। মূসা ইবনু ইকবা ও ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৭১৮ - ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমানগণ ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) রত এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর হুরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তাঁর কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন। তা দেখে তিনি মুচকী হাসলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর ইমামতির স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হওয়ার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতে চান। মুসলিমগণও সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইশারায় তাঁদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) পূরো করো। তারপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনেরই শেষভাগে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
৭১৯ - মূসা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুফাবাসীরা সা’দ (রাঃ)এর বিরুদ্ধে উমর (রাঃ) এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেন এবং আম্মার (রাঃ) কে তাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কূফার লোকেরা সা’দ (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে দিয়ে এ-ও বলে যে, তিনি ভালরূপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারেন না। উমর (রাঃ) তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, হে আবূ ইসহাক! তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, আপনি নাকি ভালরূপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারেন না। সা’দ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুরূপই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাকি। তাতে কোন ত্রুটি করি না। আমি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে প্রথম দু’রাকাআতে একটু দীর্ঘ ও শেষের দ’রাকাআতে সংক্ষেপ করতাম। উমর (রাঃ) বললেন, হে আবূ েইসহাক! আপনার সম্পর্কে আমার এ-ই ধারণা। তারপর উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে কূফায় পাঠান। সে ব্যাক্তি প্র্রতিটি মসজিদে গিয়ে সা’দ (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল এবং তাঁরা সকলেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করলেন। অবশেষে সে ব্যাক্তি বনূ আবস গোত্রের মসজিদে উপস্থিত হয়। এখানে উসামা ইবনু কাতাদাহ্ নামে এক ব্যাক্তি যাকে আবূ সাদাহ্ বলে ডাকা হত- দাঁড়িয়ে বলল, যেহেতু তুমি আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছ, সা’দ (রাঃ) কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যান না, গনীমতের মাল সমভাবে বন্টন করেন না এবং বিচারে ইনসাফ করেন না। তখন সা’দ (রাঃ) বললেন, মনে রেখো, আল্লাহর কসম! আমি নিটি দ’আ করছিঃ ইয়া আল্লাহ্! যদি তোমার এ বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, লোক দেখানো এবং আত্মপ্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে-1 তার হায়াত বাড়িয়ে দিন, 2 তার অভাব বাড়িয়ে দিন এবং 3 তাকে ফিতনার সম্মুখীন করুন। পরবর্তীকালে লোকটিকে (তার অবস্থা সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলত, আমি বয়সে বৃদ্ধ, ফিতনায় লিপ্ত। সা’দ (রাঃ)-এর দু’আ আমার উপর লেগে আছে। বর্ণনাকারী আবদুল মালিক (রহঃ) বলেন, পরে আমি সে লোকটিকে দেখেছি, অতি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার উভয় ভ্রু চোখের উপর ঝুলে পড়েছে এবং সে পথে মেয়েদের উত্যক্ত করত এবং তাদের চিমটি কাটতো।
৭২০ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) সূরা ফাতিহা পড়ল না তার সালাত (নামায/নামাজ) হল না।
৭২১ - মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন একজন সাহাবী এসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা, তুমি ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে আগের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করলেন। এভাবে তিনবার বললেনঃ ফিরে গিয়ে আবার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন। সাহাবী বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন- আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে জানিনা। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। তারপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে আদায় করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর এভাবেই পূরো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৭২২ - আবূ নু’মান (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা’দ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে নিয়ে বিকালের দু’সালাত (নামায/নামাজ) (যুহর ও আসর) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। এতে কোন ত্রুটি করতাম না। প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘায়িত এবং শেষ দু’রাকাআতে তা সংক্ষিপ্ত করাতাম। উমর (রাঃ) বলেন, তোমর সম্পর্কে এইরূপ ধারণা।
৭২৩ - আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সহিত আরও দু’টি সূরা পাঠ করতেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন। কখনো কোন আয়াত শুনিয়ে পড়তেন। আসরের সালাত (নামায/নামাজ)ও তিনি সূরা ফাতিহার সাথে অন্য দু’টি সূরা পড়তেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন। ফজরের প্রথম রাকাআতেও তিনি দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন।
৭২৪ - উমর ইবনু হাফস্ (রহঃ) আবূ মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনরা কি করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়র (মুবারকের) নড়াচড়ায়।
৭২৫ - মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ মা’মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি খাব্বাব ইবনু আরত্ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কি করে তাঁর কিরাআত বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি মুবারকের নড়াচড়ায়।
৭২৬ - মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে একটি সূরা পড়তেন। আর কখনো কখনো কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন।
৭২৭ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মুল ফায্ল (রাঃ) তাঁকে ‘ ’ সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনে বললেন, বেটা! তুমি এ সূরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) এ সূরাটি পড়তে শেষবারের মত শুনেছিলাম।
৭২৮ - আবূ আসিম (রহঃ) মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) আমাকে বললেন, কি ব্যপার, মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) তুমি যে কেবল ছোট ছোট সূরা তিলাওয়াত কর? অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দু’টি দীর্ঘ সূরার মধ্যে দীর্ঘতমটি থেকে পাঠ করতে শুনেছি।
৭২৯ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) জুবাইর ইবনু মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা তূর থেকে পড়তে শুনেছি।
৭৩০ - আবূ নু’মান (রহঃ) আবূ রাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সেদিন তিনি ‘ ’ সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আবূল কাসিম এর পিছনে এ সিজদা করেছি, তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সূরায় সিজদা করব।
৭৩১ - আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আদী ইবনু সাবিত) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারাআ (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম দু’রাকাআতের এক রাকাআতে সূরা ‘ ’ পাঠ করেন।
৭৩২- সূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ রাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ)- এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি “’ সুরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ সিজদা কেন? তিনি বলেন, আমি আবূল কাসিম এর পিছনে এ সূরায় সিজদা করেছি, তাই তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আাসম এতে সিজদা করব।
৭৩৩ - খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) ‘ ’ পড়তে শুনেছি। আমি কাউকে তাঁর চাইতে সুন্দর কন্ঠ অথবা কিরাআত শুনিনি।
৭৩৪ - সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ)সা’দ (রাঃ)-কে বললেন, আপনার বিরুদ্ধে তারা (কূফাবাসীরা) সর্ব বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কেও। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করে থাকি এবং শেষের দু’রাকাতে তা সংক্ষেপ করি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে যেরুপ আদায় করেছি, অনুরূপই সালাত (নামায/নামাজ) আদয়ের ব্যাপারে আমি ত্রুটি করিনি। উমর (রাঃ) বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন, আপনার ব্যাপারে ধারনা ত এরূপই ছিল, কিংবা (তিনি বলেছিলেন) আপনার সম্পর্কে আমার এরূপই ধারনা।
৭৩৫ - আদম (রহঃ) সাইয়ার ইবনু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) নিকট উপস্থিত হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) সমূহের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) সূর্য ঢলে গেলেই আদায় করতেন। আর আসর (এমন সময় যে, সালাত [নামায/নামাজ]-এর শেষে) কোন ব্যাক্তি সজীব থাকতে থাকতেই মদিনার প্রান্ত সীমায় ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি ইশা রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে কোন দ্বিধা করতেন না, এবং ইশার আগে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করতেন না। আর তিনি ফজর আদায় করতেন এমন সময় যে, সালাত (নামায/নামাজ) শেষে ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যাক্তিকে চিনতে পারত। এর দু’রাকাআতে অথবা রাবী বলেছেন, এক রাকাআতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত পড়তেন।
৭৩৬ - মসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)ই কিরাআত পড়া হয়। তবে যে সব সালাত (নামায/নামাজ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শুনিয়ে পড়েছেন, আমরাও তোমাদের শুনিয়ে পড়ব। আর যে সব সাাতে আমাদের না শুনিয়ে পড়েছেন, আমরাও তোমাদের না শুনিয়ে পড়ব। যদি তোমরা সূরা ফাতিহার চাইতে বেশী না পড়, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় হয়ে যাবে। আর যদি বেশী পড় তা উত্তম।
৭৩৭ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জ্বীনদের উর্ধলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিন্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ, কী কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহরে মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে অগ্রসর হল। তিনি তখন উকায বাজারের পথে নাখলা নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে মনোনিবেশ করল। তারপর তারা বলে উঠল, আল্লাহর শপথ! এটই তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহরে মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যকন তারা সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসল এবং বলল যে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। ফলে আমরা এতে ঈমান এনেছি এবং কখনো আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরীক স্থির করব না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ‘ ’ সূরা নাযিল করেন। মূলত তাঁর নিকট জ্বীনদের বক্তব্যই ওহীরূপে নাযিল করা হয়েছে।
৭৩৮ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে কিরাআত পড়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছেন, সেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ করতে থাকতে নির্দেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ করে থেকেছেন। (আল্লাহ্ তা’আলার বাণী) “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ। ”
৭৩৯ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বণিৃত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর নিকট এসে বলল, গতরাতে আমি মুফাসসাল সূরাগুলো এক রাকাইতেই তিলাওয়াত করেছি। তিনি বললেন, তাহলে নিশ্চয়েই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরস্পর সমতূল্য যে সব সূরা মিলিয়ে পড়তেন, সেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাসসাল সূরাসমূহের বিশটি সূরার কথা উল্লেখ করে বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাকাআতে এর দু’টি করে সূরা পড়তেন।
৭৪০ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষ দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন এবং তিনি কোন কোন আয়াত আমাদের শোনাতেন, আর তিনি রাকাআতে যতটুকু দীর্ঘ করতেন, দ্বিতীয় রাকাআতে ততটুকু দীর্ঘ করতেন না। এরূপ করতেন আসরে এবং ফজরেও।
৭৪১ - কুতাইবা (রহঃ) আবূ মা’মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কি করে বুঝলেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি মুবারক নড়াচড়া দেখে।
৭৪২। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে আরেকটি সূরা পড়তেন। কখনো কোন কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন এবং তিনি প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন।
৭৪৩ - আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণীত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন ও দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষিপ্ত করতেন এবং এরূপ করতেন ফযরের সালাত (নামায/নামাজ)ও।
৭৪৪ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমারও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যারা ‘আমীন’ (বলা) ও ফিরিশতাদের ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন।
৭৪৫ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যকন তোমাদের কেউ (সালাত (নামায/নামাজ)) ‘আমীন’ বলে, আর আসমানে ফিরিশতাগণ ‘আমীন’ বলেন এবং উভয়ের ‘আমীন’ একই সময় হলে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
৭৪৬ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম ‘গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ’ পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার এ (আমীন) বলা ফিরিশতাদের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং নু’আইম- মুজমির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুমাই (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
৭৪৭ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন অবস্থায় পৌঁছালেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন রুকূ’তে ছিলেন। তখন কাতার পর্যন্ত পৌঁছার আগেই তিনি রুকূ’তে চলে যান। এ ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ব্যক্ত করা হলে, তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে এরূপ আর করবে না।
৭৪৮ - ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বসরায় আলী (রাঃ) এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বললেন, ইনি (আলী (রাঃ) আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আদায়কৃত সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি উল্লেখ করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবার (মাথা) উঠাতে ও নামাতে তাকবীর বলতেন।
৭৪৯ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং প্রতিবার উঠা বসার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার সালাত (নামায/নামাজ) ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সাথে বেশী সা’দৃশ্যপূর্ণ।
৭৫০ - আবূ নু’মান (রহঃ) মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইবনু হুসাই (রাঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেন, সিজদা থেকে যখন মাথা উঠালেন তখনও তাকবীর বললেন, আবার দু’রাকাআতের পর যখন দাঁড়ালেন তখনও তাকবীর বললেন। তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন তখন ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেন, ইনি (আলী রা)আমাকে মুহাম্মদ এর সালাত (নামায/নামাজ) স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বা তিনি বলেছিলেন, আমাদের নিয়ে মুহাম্মদ এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।
৭৫১ - আমর ইবনু আওন (রহঃ) ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাকামে (ইবরাহীমের নিকট) এক ব্যাক্তিকে দেখলাম যে, প্রতিবার উঠা ও ঝুঁকার সময় এবং দাঁড়ানো ও বসার সময় তাকবীর বলছেন। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে একথা জানালে তিনি বললেন, তুমি মাতৃহীন হও, একি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) নয়?
৭৫৩ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ)ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কা শরীফে এক বৃদ্ধের পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি বাইশবার তাকবীর বললেন। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, লোকটি তো আহাম্মক। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। এ যে আবূল কাসিম এর সুন্নাত। মূসা (রহঃ) বলেন, আবান (রহঃ), কাতাদা (রহঃ) সূত্রেও ইাকরিমা (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি সরাসরি বর্ণনা করেছেন।
৭৫৩- ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন। এরপর রুকূ’তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন, আবার যখন রুকূ’ থেকে পিঠ সোজা করে উঠতেন তখন ‘সামিয়াল্লাহ হুলিমান হামিদা’ বলতেন, তারপর দাঁড়িয়ে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতেন। এরপর সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। এবং যখন মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। আবার (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতে তাকবীর বলতেন এবং পুনরায় মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। এভাবেই পুরো সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন। আর দ্বিতীয় রাকাআতের বৈঠক শেষে যখন (তৃতীয় রাকাআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও তাকবীর বলতেন। আবদুল্লাহ সালিহ্ (রহঃ) লাইস (রহঃ) সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করতে ‘ ’ উল্লেখ করেছেন।
৭৫৪ - আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। এবং (রুকু’র সময়) দু’হাত জোড় করে উভয় উরুর মাঝে রাখলাম। আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, পূর্বে আমরা এরূপ করতাম; পরে আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাত হাঁটুর উপর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৭৫৫ - হাফস ইবনু উমর (রহঃ) যায়িদ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযাইফা (রাঃ) এক ব্যাক্তিকে দেখলেন যে, সে রুকূ’ ও সিজদা ঠিকমত আদায় করছে না। তিনি বললেন, তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাও, তা হলে আল্লাহ্ কর্তৃক মুহাম্মদ কে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে।
৭৫৬-বাদাল ইবনু মুহাব্বার (রহঃ) বারা'আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুকূ’ সিজদা এবং দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় এবং রুকূ’ থেকে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমাণ ছিল।
৭৫৭ - মূসা দ্দাস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একসময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেন, তখন এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলো। তারপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর, কেননা, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদয় করনে। লোকটিবার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল এবং পুনরায় এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। তিনি বললেনঃ আবার গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর, কেননা, তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদয় করনি। এভাবে তিনবার ঘটনার পূনরাবৃত্তি। তারপর লোকটি বলল, সে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে জানিনা। কাজেই, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন বললেনঃ যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পড়বে। এরপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ আদায় করবে। তারপর রুকূ’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর পূর্ণ সালাত (নামায/নামাজ) এভাবে আদায় করবে।
৭৫৮ - হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ ও সিজদায় এ দু’আ পড়তেন ‘শুভানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুমাগফিরলি’ হে আমাদের রব আল্লাহ্! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
৭৫৯ - আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘সামিল্লাহ হুলিমান হামিদা ’ বলে (রুকূ’ থেকে উঠতেন) তখন ‘রাব্বানা অয়া লাকাল হামদ’ বলতেন, আর তিনি যখন রুকূ’তে যেতেন এবং রুকূ’থেকে মাথা উঠাতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং উভয় সিজদা থেকে যখন দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর’ বলতেন।
৭৬০ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা’ বলেন, তখন তোমরা ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। কেননা, যারা এ উক্তি ফিরিশতাগণের সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হয়, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
৭৬১ - মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি অবশ্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যুহর, ইশা ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষ রাকাআতে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা’ বলার পর কুনূত পড়তেন। এতে তিনি ম’মুনগণের জন্য দু’আ করতেন এবং কাফিরদের প্রতি লা’নত করতেন।
৭৬২ - আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে) কুনূত ফজর ও মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) পড়া হত।
৭৬৩ - আবূদুল্লাহ্ ইবনু মাসলামা (রহঃ) রিফা’আ ইবনু রিফি’ যুরাকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা’ বললেন, তখন পিছন থেকে এক সাহাবী ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ’ বললেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে এরূপ বলেছিল? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশী ফিরিশতা এর সাওয়াব কে আগে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন।
৭৬৪ - আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর বর্ণনা দিলেন। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন, তখন (এতক্ষণ) দাঁড়িয়ে রইলেন যে, আমরা মনে করলাম, তিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।
৭৬৫ - আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুকূ’ ও সিজদা এবং তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় সবই প্রায় সমান হত।
৭৬৬ - সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মালিক ইবনু হুওয়ইরিস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) কেমন ছিল তা আমাদের দেখালেন। তারপর রুকূ’তে গেলেন এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ আদায় করলেন; তারপর তাঁর মাথা উঠালেন এবং কিছুক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে আমাদের এই শায়খ বুরাইদ (রহঃ)-এর ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর আবূ বুরাইদ (রহঃ) দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসতেন, তারপর দাঁড়াতেন।
৭৬৭ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ বকর ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) ও আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রামযান মাসের সালাত (নামায/নামাজ) বা অন্য কোন সময়ের সালাত (নামায/নামাজ) ফরয হোক বা অন্য কোন সালাত (নামায/নামাজ) হোক, দাঁড়িয়ে শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন, আবার রুকূ’তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর (রুকূ’ থেকে উঠার সময়) ‘সামিয়াল্লাহু লেমান হামিদাহ’ বলতেন, সিজদায় যাওয়ার পূর্বে ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন। তারপর সিজদার জন্য অবনত হওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। আবার সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। এরপর (দ্বিতীয়) সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। দু’ রাকাআত আয়ায় করে দাঁড়ানোর সময় আবার তাকবীর বলতেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করা পর্যন্ত প্রতি রাকআতে এইরূপ করতেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি বলতেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমাদের মধ্য থেকে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সাথে অধিক সা’দৃশ্যপূর্ণ। দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) এরূপই ছিল। উভয় বর্ণনাকারী (আবূ বকর ইবনু আবদুর রহমান ও আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন ‘সামিয়াল্লাহু লেমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন। আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দু’আ করতেন। দু’আয় তিনি বলতেন, ইয়া আ্লাহ্! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদ, সালামা ইবনু হিশাম, আইয়্যাস ইবনু আবূ রাবী’আ (রাঃ) এবং অপরাপর দুর্বল মুসলমাদেরকে রক্ষা করুন। ইয়া আল্লাহ্! মুদার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াও কঠোর করুন, ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে যেমন খাদ্য সংকট ছিল তাদের জন্যও অনুরূপ খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে দিন। (রাবী বলেন) এ যুগে পূর্বাঞ্চলের অধিবাসী মুদার গোত্রের লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধী ছিল।
৭৬৮ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান। কোন কোন সময় সুফিয়ান (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করার সময় ‘ ’ শব্দের স্থলে ‘ ’ বলতেন। ফলে তাঁর ডান পাঁজর আহত হয়ে পড়ে। আমরা তাঁর শুশ্রুষা করার জন্য সেখানে গেলাম। এ সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হল। তিনি আমাদের নিয়ে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আমরাও বসেই আদায় করলাম। সুফিয়ান (রহঃ) আর একবার বলেছেন, আমরা বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইমান নির্ধারণ করা হয় তাঁকে ইকতিদা করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা ’ বলবে, তখন তোমরা ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে। তিনি যখন সিজদা করেন, তখন তোমরাও সিজদা করবে। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, মা’মারও কি এরূপ বর্ণনা করেছেন? (আলী (রহঃ) বলেন) আমি বললাম, হ্যাঁ। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, তিনি সঠিক স্মরণ রেখেছেন, এরূপই যুহরী (রহঃ) ‘ ’ বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, (যুহরীর কাছ থেকে) যান পাঁজর যখম হওয়ার কথা মুখস্থ করেছিলাম। কিন্তু যখন তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে আসলাম, তখন ইবনু জুরায়জ (রহঃ) আমিও তাঁর কাছে ছিলাম। (তিনি বলেছেন,)নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর ডান পায়ের নলা যখম হয়েছিল।
৭৬৯ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেনঃ মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেকার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে তোমারও আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যে যার উপাসনা করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র এ উম্মাহ, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেনঃ “আমি তোমাদের রব। ” তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পযন্ত আমাদের রবের শুভাগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন শুভাগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলা শাগমন করবেন এবং বলবেন, “আমি তোমাদের রব। ” তারা বলবে হ্যাঁ, আপনই আমাদের রব। আল্লাহ তা’আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতুপথ (পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের মধ্যে আমই সবার আগে আমার উম্মত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের কথা হবেঃ (আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) ইয়া আল্লাহ্ রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সাদান কাঁটার মতো। তোমরা কি স’দান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হ্যাঁ দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সাদান কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ জনানে না। সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু রোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিছু াৈকট কাঁটায় আক্রান্ত হবে, তারপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক রহমত করতে ইচ্ছা করেবন, তাদের ব্যাপারে ফিরিশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে যারার আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফিরিশতাগণ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ্ তা’আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেওয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যাক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এছাড়া আর কিছু চাইবেন না তো? সে বলবে, না আপনার ইজ্জতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ তা’আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ্ তা’আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক ফিরিয়ে দিবেন। এরপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৗন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। তারপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার কাছে পৌছে দিন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাতক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পুরন করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে না, আপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযাযী অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরযায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে। এরপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমলালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ হে আদম সন্তান, কি আশ্চয! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অীঙ্গকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ্ হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাংখা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ বলবেনঃ এ সবই তোমার, এ সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেওয়া হল)। আবূ সাঈদ (খুদরী (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনঃ এসবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেওয়া হল)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে, এ সবই তোমার এবং এর সাথে সমপরিমাণ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ।
৭৭০ - ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রহঃ) যিনি ইবনু বুহাইনা (রাঃ) তাঁর থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন উভয় হাত এরূপ করতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শ্রুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। লাইস (রহঃ) বলেন, জা’ফর ইবনু রাবী’আ (রহঃ) আমার কাছে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭৭১ - সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যাক্তিকে দেখলেন, সে রুকূ’ও সিজদা পূণরুপে আদায় করছে না। সে যখন তার সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করল, তখন হুযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করনি। আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছিলেন যে, এভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তুমি যদি মারা যাও, তা হলে মুহাম্মদ এর তরীকা থেকে বিচ্যুত হয়ে মারা যাবে।
৭৭২ - কাবসী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পা।
৭৭৩ - মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছি।
No comments:
Post a Comment