03 June, 2018

আযান পর্ব ৩


৭৭৪ - মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি অবশ্যই মিথ্যাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেন, আমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। তিনি ‘সামি আল্লাহু লেমান হামিদা ’ বলার পর যতক্ষণ না কপাল মাটিতে স্থাপন করতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ সিজদার জন্য পিঠ ঝুঁকাত না।

৭৭৫ - মু’য়াল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই।

৭৭৬ - মূসা (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদের খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালাম (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, লাইলাতুল কদর’ সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামযানের প্রথম দশ দিন ই’তিকাফ করলেন। আমারও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর রামযানের বিশ তারিখ সকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে লাইলাতুল কদর’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোন কিছুই (মেঘ) দেখিনি, এক খন্ড হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এমন কি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁধার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হল।

৭৭৭ - মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। কিন্তু ইযার বা লুঙ্গী ছোট হওয়ার করণে তা গলার সাথে বেঁধে নিতেন। আর মহিলাগণকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তোমরা সিজদা থেকে মাথা উঠাবে না যতক্ষণ পযন্ত পুরুষগণ ঠিকমত না বসবে।

৭৭৮ - আবূ নু’মান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সিজদা করতে এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে চুল একত্র না করতে এবং কাপড় টেনে না ধরতে আদিষ্ট হয়েছিলেন।

৭৭৯ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সাত অঙ্গে সিজদা করার, সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে চুল একত্র না করার এবং কাপড় টেনে না ধরার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।

৭৮০ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকূ’ ও সিজদায় অধিক পরিমাণে ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলি’ “হে আল্লাহ্! হে আমাদের রব! আপনার প্রশংসা সহ প্রবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন” পাঠ করতেন। এতে তিনি পবিত্র কুরআনের নির্দেশ পালন করতেন।

৭৮১ - আবূ ন’মান (রহঃ) আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) তাঁর সাথীদের বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে আমি কি তোমাদের অবহিত করব না? (রাবী) আবূ কিলাবা (রহঃ) বললেন, এ ছিল সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় ছাড়া অন্য সময়। তারপর তিনি (সালাত (নামায/নামাজ)) দাঁড়ালেন, তারপর রুকূ’ করলেন, এবং তাকবীর বলে মাথা উঠালেন আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর সিজদায় গেলেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসে পুনরায় সিজদা করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। এভাবে তিনি আমাদের শায়খ আমর ইবনু সালমোর সালাত (নামায/নামাজ)-এর মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। ইইয়ূব (রহঃ) বলেন, আমর ইবনু সালিমা (রহঃ) এমন কিছু করতেন যা অন্যদের করতে দেখিনি। তা হল তিনি তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাআতে বসতেন। মালিক ইবনু হুয়াইরিশ (রাঃ) বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে কিছু দিন অবস্থান করলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনদের মধ্যে ফিরে যাওয়ার পর অমুক সালাত (নামায/নামাজ) অমুক সময়, অমুক সালাত (নামায/নামাজ) অমুক সময় আদায় করবে। সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তি ইমামতী করবে।

৭৮২ - মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) বারাআ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিজদা ও রুকূ’ এবং দু’ সিজদার মধ্যে বসা প্রায় সমান হতো।

৭৮৩ - সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যেভাবে আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি, কম বেশী না করে আমি তোমাদের সে ভাবেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দেখাব। সাবিত (রহঃ) বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এমন কিছু করতেন যা তোমাদের করতে দেখিনা। তিনি রুকূ’ হতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এত বিলম্ব করতেন যে, কেউ বলত, তিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।

৭৮৪ - মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়।

৭৮৫ - মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) মালিক ইবনু হুয়াইরিস লাইসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর সালাত (নামায/নামাজ)-এর বেজোড় রাকাআতে (সিজদা থেকে) উঠে না বসে দাঁড়াতেন না।

৭৮৬ - মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) আবূ কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) এসে আমাদের এ মসজিদে আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। এখন আমার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কোন ইচ্ছা ছিল না, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি তা তোমাদের দেখাতে চাই। আইয়ূব (রহঃ) বলেন, আমি আবূ কিলাবা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁর (মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ)-এর সালাত (নামায/নামাজ) কিরূপ ছিল? তিনি (আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, আমাদের এ শায়খ অর্থাৎ আমর ইবনু সালিমা (রাঃ) এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর মত। আইয়ূব (রহঃ) বললেন, শায়খ তাকবীর পূর্ণ বলতেন এবং যখন দ্বিতয়ি সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন বসতেন, তারপর মটিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।

৭৮৭ - ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) সায়ীদ ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবূ সায়ীদ (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের ইমামতী করেন। তিনি প্রথম সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময়, দ্বিতীয় সিজদা করার সময়, দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাকাআত শেষে (তাশাহহুদের ঠৈকের পর) দাঁড়ানোর সময় স্বশব্দে তাকবীর বলেন। তিনি বলেন, আমি এভাবেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে) দেখেছি।

৭৮৮ - সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) মুতাররিফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও ইমরান (রাঃ) একবার আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। তিনি সিজদা করার সময় তাকবীর বলেছেন। উঠার সময় তাকবীর বলেন এবং দু’রাকাআত শেষে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর বলেছেন। সালাম ফিরানোর পর ইমরান (রহঃ) আমার হাত ধরে বললেন, ইনি তো (আলী) আমাকে মুহাম্মদ এর সালাত (নামায/নামাজ) স্মরণ করিয়ে দিলেন।

৭৮৯ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু ইমার (রাঃ) কে সালাত (নামায/নামাজ) আসন পিড়ি করে বসতে দেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি সে সময় অল্প বয়স্ক ছিলাম। আমিও সেরূপ করলাম। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে নিষেধ করলেন এবং তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ) (বসার) সুন্নাত তরীকা হল তুমি ডান পা খাড়া করবে এবং বাঁ পা বিছিয়ে রাখবে। তখন আমি বললাম, আপনি কি এরূপ করেন? তিনি বললেন, আমার দু’পা আমার ভার বহন করতে পারে না।

৭৯০ - ইয়হইয়া ইবনু বুকাইর এবং লায়স (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একদল সাহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন আবূ হুমাইদ সায়ীদী (রাঃ) বলেন, আমই তোমাদের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে বেশী স্মরণ রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি (সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করার সময়) তিনি তাকবীর বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ’ করতেন তখন দু’ হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। তারপর রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যাতে মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসত। এরপর যখন সিজদা করতেন তখন দু’ হাত সম্পূর্ণভাবে মাটির উপর বিছিয়ে দিতেন না, আবার গুটিয়েও রাখতেন না। এবং তাঁর উভয় পায়ের আঙ্গুলীর মাথা কেবলামুখী করে দিতেন এবং যখন শেষ রাকাআতে বসতেন তখন বাঁ পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন। লায়স (রহঃ) ইবনু আতা (রহঃ) থেকে হাদীসটি শুনেছেন। আবূ সালিহ (রহঃ) লায়স (রহঃ) থেকে -- বলেছেন। আর ইবনু মুবারক (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আমর (রহঃ) থেকে শুধু ‘ ’ বর্ণনা করেছেন।

৭৯১ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) বনূ আবদুল মুত্তালিবের আযাদকৃত দাস এবং রাবী কোন সময়ে বলেছেন রাবীয়া ইবনু হারিসের আযাদকৃত দাস, আবদুর রাহমান ইবনু হুরমুয (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বনূ আবদ মোনাফের বন্ধু গোত্র আযদ শানআর লোক আবদুল্লাহ ইবনু বুহাইনা (রাঃ) যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের অন্যতম। তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিয়ে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি প্রথম দু’ রাকাআত পড়ার পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুকতাদীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবে সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষভাগে মুকতাদীগণ সালামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসাবস্থায় তাকবীর বললেন এবং সালাম ফিরানের পূর্বে দু’বার সিজদা করলেন, পরে সালাম ফিরালেন।

৭৯২ - কুতাইবা ইন সায়ীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) যিনি ইবনু বুহাইনা, তাঁর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। দু’ রাকাআত পড়ার পর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন অথচ তাঁর বসা জরুরী ছিল। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষভাগে বসে তিনি দু’টো সিজদা করলেন।

৭৯৩ - আবূ নু’আইম (রহঃ) শাকীক ইবনু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) বলেন, আমরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন আমরা বলতাম, “আসসালামু আলা জিবরাঈল ওয়া মিকাইল এবং আসসালামু আলা ফুলান ও ফুলান। ” তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আল্লাহ্ নিজেই তো সালাম, তাই যখন তোমরা কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তখন সে যেন বলে ‘আত্তা হিয়াতু লিল্লাহি ওয়া সালাতু ওয়া তাইয়েবাতু ইবা দিল্লাহি সালেহিন’ কেননা, যখন তোমরা এ বলবে তখন আসমান ও যমীনের আল্লাহর সকল নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যাবে। এর সঙ্গে ‘আশহাদু আল্লাহ্‌ ইলাহা ইল্লাহ অয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু অয়া রাসুলুহু’ ও পড়বে।

৭৯৪ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বলে দু’আ করতেন ‘ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা বিকা মিন আজাবিল কাবার, অয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহ দাজ্জাল, অয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহিয়া অয়া ফিতনাতিল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনল মাসামি ওয়াল মাগরাম “কবরের আযাব থেকে, মসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে ইয় আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্থতা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। তখন এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্থতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন কোন ব্যাক্তি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) বলেন, খালফ ইবনু আমির (রহঃ) কে বলতে আমি শুনেছি যে --- ও --- এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় শব্দই সমার্থবোধক তবে একজন হলেন ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং অপর ব্যাক্তি হল দাজ্জাল। যুহরী (রহঃ) বলেছেন, উরওয়া ইবনু ‍যুবাইর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ) মধ্যে মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।

৭৯৫ - কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) আবূ বাকর সিদ্দীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলেন, আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করার জন্য একটি দু’আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু’আটি বলবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুল্মান কাসিরান, ওয়ালা ইয়াগফুরু জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা অয়ারহামনি ইন্নাকা আন্তাল গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ “ইয়া আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক যুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

৭৯৬ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল- ‘আত্তাহিয়াতু লিল্লাহে অয়াস সালাতু অয়া ইবাদিল্লাহি সালিহিন ’ অর্থাৎ (সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার কাছে তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ‘ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু অয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু অয়া রাসুলুহু’ অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ” তারপর যে দু’আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে।

৭৯৭ - মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি। এমন কি তাঁর (মুবারক) কপালে কাদামাটির চিহ্ন লেগে থাকতে দেখেছি।

৭৯৮ - মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন সালাম শেষ হলেই মহিলাগণ দাঁড়িয়ে পড়তেন। তিনি দাঁড়ানের পূর্বে কিছুক্ষণ বসে অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় (আল্লাহই ভালো জানেন), তাঁর এ অপেক্ষা এ কারণে যাতে মূসা ল্লীগণ থেকে যে সব পুরুষ ফিরে যান তাদের পূর্বেই মহিলাগণ নিজ অবস্থানে পৌঁছে যান।

৭৯৯ - হিব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি যখন সালাম ফিরান তখন আমরাও সালাম ফিরাই।

৮০০ - অবদান (রহঃ) মহমূদ ইবনু রাবী’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, যে তাঁদের বাড়ীতে রাখা একটি বালতির (পানি নিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুল্লি করছেন। তিনি বলেছেন, আমি ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) যিনি বনূ সালিম গোত্রের একজন, তাঁকে শুনেছি, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললাম, আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে এবং আমার বাড়ী থেকে আমার কাওমের মসজিদ পযন্ত পানি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি আমার বাড়ীতে এসে এক যায়গায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন সে যায়গাটুকু আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনশা আল্লাহ্, আমি ত করব। পরদিন রোদের তেজ বৃদ্ধি পাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) আমার বাড়ীতে এলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে দিলাম। তিনি না বসেই বললেনঃ তোমার ঘরের কোন স্থানে তুমি আমার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় পছন্দ কর? তিনি পছন্দ মত একটি জায়গা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য ইশারা করে দেখালেন। তারপর তিনি দাঁড়ালেন আমরাও তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলাম। অবশেষে তিনি সালাম ফিরালেন, আমরাও তাঁর সালামের সময় সালাম ফিরালাম।

৮০১ - ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) –ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় মুসল্লিগণ ফরয সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হলে উচ্চস্বরে যিকর করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি এরূপ শুনে বুঝলাম, মুসল্লিগণ সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ফিরছেন।

৮০২ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)---ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হয়েছে। আলী (রাঃ) বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবূ মা’বাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাস সমূহের মধ্যে অধিক সত্যবাদী দাস ছিলেন। আলী (রাঃ) বলেন, তার নাম ছিল নাফিয।

৮০৩ - মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্রলোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব‍্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তারা আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ্ব, উমরা, জিহাদ ও সাদাকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চাইতে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছে , তাদের সমপর্যায়ে পৌছাতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ)তাহ মীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হল। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব, তেত্রিশ বার তাহ মীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, “ সুবহানাল্লাহি ওআলহামদু লিল্লাহি ওল্লাহু আকবার” বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশ বার করে হয়ে যায়।

৮০৪ - মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)--- মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ)-এর কাতিব ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) আমাকে দিয়ে মু’আবিয়া (রাঃ)-কে (এ মর্মে) একখানা পত্র লেখালেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর বলতেন – লা ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াদাহু লা সারিকা লাহু, লাহুল মূলক অয়া লাহুল হামদ, আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির; আল্লাহুম্মা লা মানাজালিমা আতাইতা অয়া লা মু'তিয়া লিমা মানাতা অয়া লা ইয়ানফাউ দালা জাদ্দি মিনকালাজাদ্দু। অর্থাৎ এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, সার্বভোমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আপনার কাছে (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না। ” শু’বা (রাঃ) আবদুল মালিক (রহঃ) থেকে অনুরূপ বলেছেন , আপনার কাছে (সৎকাজ ছাড়া) এবং হাছান (রহঃ) বলেন, অর্থ সম্পদ এবং শু’বা (রহঃ) --- ওয়াররাদ (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৮০৫ - মূসা ইবনু ইস মায়ীল (রহঃ) --- সামুরা ইবনু জুনদব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন, তখন আমাদের দিকে মুখ ফিরাতেন।

৮০৬ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) --- যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ তোমরা কি জানো , তোমাদের পরাক্রমশালী ও মইমাময় প্রতিপালক কী বলেছেন? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই উত্তম জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (রব) বলেন, আমার বান্দাদের মধ্য কেউ আমার প্রতি মু’মিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছে, আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হল আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে , অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়েছে।

৮০৭ - আবদুল্লাহ ইবনু মুনির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্ধ রাত পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) বিলম্ব করলেন। এরপর তিনি আমাদের সামনে বের হয়ে এলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরায়ে বললেন, লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ তোমরা যেন সালাত (নামায/নামাজ) রত থাকবে।

৮০৮ - আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদুল মালিক (রহঃ)--- উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ যায়গায় কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকার কারণ আমার মনে হয় সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর মহিলাগন যাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। তবে আল্লাহই তা অধিক জ্ঞাত। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) --- হিন্দ বিনত হারিস ফিরাসিয়াহ (রাঃ) যিনি উম্মে সালামা (রাঃ) –এর বান্ধবী তাঁর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী ঊম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেন, তারপর মহিলাগণ ফিরে গি য়ে তাঁদের ঘরে প্রবেশ করতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফিরবার আগেই। ইবনু ওহাব (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) সূত্রে শিহাব (রহঃ) থেকে বলেন যে, আমাকে হিন্দ ফিরাসিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এবং উসমান ইবনু উমর (রহঃ) বলেন, আমাকে ইউনুস (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বলেন যে , আমাকে হিন্দ ফিরাসিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আর যূবাইদী (রহঃ) বলেন, আমাকে যুহরী (রহঃ)বর্ণনা করেছেন যে, হিন্দ বিনত হারিস কুরাশিয়াহ (রাঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি মা’বাদ ইবনু মিকদাদ (রহঃ)-এর স্ত্রী। আর মা’বদ বনূ যুহরার সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন এবং তিনি (হিন্দ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহধর্মিণীগণের নিকট যাতায়াত করতেন। শু’আইব (রহঃ) যূহরী (রহঃ) থেকে বলেন যে, আমাকে হিন্দ কুরাশিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। আর ইবনু আবূ আতীক (রহঃ) যুহরী সূত্রে হিন্দ ফিরাসিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাইস (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) সূত্রে ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কুরাইশের এক মহিলা তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

৮০৯ - মুহাম্মদ ইবনু উবাইদ (রহঃ) --- উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং মুসল্লিগণকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর সহধর্মিণীগণের কোন একজনের কক্ষে গেলেন। তাঁর এই দ্রুততায় মুসল্লীগণ ঘাবড়িয়ে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে ফিরে এলেন এবং দেখলেন যে, তাঁর দ্রুততার কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি বললেনঃ আমার কাছে রক্ষিত কিছু স্বর্ণের কথা মনে পড়ে যায়। তা আমার প্রতিবন্ধক হোক , তা আমি পছন্দ করি না। তাই তা বণ্টন করার নির্দেশ দিয়ে দিলাম।

৮১০ - আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) --- আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেঊ যেন তার সালাত (নামায/নামাজ)-এর কোন কিছু শয়তানের জন্য না করে। তা হল, শুধুমাত্র ডান দিকে ফিরানো জরুরী মনে করা। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে অধিকাংশ সময়ই বাম দিকে ফিরতে দেখেছি।

৮১১ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) --- জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি এ জাতীয় গাছ থেকে খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। (রাবী আতা (রহঃ) বলেন) আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারা কি বুঝিয়েছেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমার ধারনা যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারা কাঁচা রসুন বুঝিয়েছেন এবং মাখলাদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

৮১২ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ)--- ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যাক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ থেকে অর্থাৎ কাচা রসুন ভক্ষন করবে সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদের কাছে না আসে।

৮১৩ - সায়ীদ ইবনু উফাইর (রহঃ)---জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রসুন অথবা পিয়াজ খায় সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে। (উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে,)নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে একটি পাত্র যার মধ্যে শাক-সব্জী ছিল আনা হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাঁকে সে পাত্রে রক্ষিত শাক-সব্জী সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন একজন সাহাবী আবূ আইয়ূব (রাঃ) –কে উদ্দেশ্য করে বললেন, তাঁর কাছে এগুলো পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ মনে করলেন, এ দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি খাও। আমি যার সাথে গোপন আলাপ করি তাঁর সাথে তুমি আলাপ কর না (ফিরিশতার সাথে আমার আলাপ হয় তাঁরা দুর্গন্ধ অপছন্দ করেন)। আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) থেকে বলেছেন, -- ইবনু ওয়াহব-এর অর্থ বলেছেন, খাঞ্চা যার মধ্যে শাক-সব্জী ছিল। আর লায়স ও আবূ সাফওয়ান (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে রিওওায়াত বর্ণনায় ---এর বর্ণনা উল্লেখ করেন নি। (ইমাম বুখারি (রহঃ) বলেন) এর বর্ণনা যুহরী (রহঃ)-এর উক্তি , না হাদীসের অংশ তা আমি বলতে পারছি না।

৮১৪ - আবূ মা’মার (রহঃ)--- আবদুল আযীয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রসুন খাওয়া সম্পর্কে কি বলতে শুনেছেন? তখন আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি এ জাতীয় গাছ থেকে খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের কাছে না আসে এবং আমাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে।

৮১৫ - মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ)--- শা’বী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক ব্যাক্তি আমাকে খবর দিয়েছেন, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে একটি পৃথক কবরের কাছে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে লোকদের ইমামতি করেন। লোকজন কাতারবন্দী হয়ে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ আমর! কে আপনাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)।

৮১৬ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) --- আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুম্মার দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক (মুসলমানের) গোসল করা কর্তব্য।

৮১৭ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) --- ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা (উম্মুল মু’মিনীন) মাইমূনা (রাঃ) এর কাছে রাত্র কাটালাম। সে রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –ও সেখানে নিদ্রা যান। রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হলে তিনি উঠলেন এবং একটি ঝুলন্ত মশক থেকে পানি নিয়ে হাল্কা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমর (বর্ণনাকারী) এটাকে হালকা এবং অতি কম বুঝলেন। এরপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি উঠে তাঁর মতই সংক্ষিপ্ত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম, এরপর এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বামপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমাকে ঘুরিয়ে তাঁর ডানপাশে করে দিলেন। এরপর যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এরপর বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি শ্বাস- প্রশ্বাসের আওয়াজ হতে লাগল , এরপর মুয়াযযীন এসে সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা জানালে তিনি উঠে তাঁর সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য চলে গেলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিন্তু (নতুন) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না। সূফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমি আমর (রহঃ) –কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লোকজন বলে থাকেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর চোখ নিদ্রায় যেত কিন্তু তাঁর কালব (হৃদয়) জাগ্রত থাকত। আমর (রহঃ) বললেন, উবাইদ ইবনু উমাইর (রহঃ) –কে আমি বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের স্বপ্ন অহী। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন -(ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), ইসমাইল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললেন)আমি স্বপ্নে দেখলাম, তোমাকে কুরবানী করছি---(৩৭:১০২)।

৮১৮ - ইসমায়ীল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইসহাক (রহঃ)-এর দাদী মুলাইকা (রাঃ) খাদ্য তৈরী করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলেন। তিনি তার তৈরী খাবার খেলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা উঠে দাঁড়াও , আমি তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি একটি চাটাইয়ে দাঁড়ালাম যা অধিক ব্যবহারের কারনে কালো হয়ে গিয়েছিল। আমি এতে পানি ছিটিয়ে দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন , আমার সঙ্গে একটি ইয়াতীম বাচ্চাও দাঁড়াল এবং বৃদ্ধা আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। আমাদের নিয়ে তিনি দু’ রাকায়াত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৮১৯ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি গাধার উপর আরোহণ করে অগ্রসর হলাম। তখন আমি প্রায় সাবালক। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় প্রাচীর ব্যতীত অন্য কিছু সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি কোন এক কাতারের সম্মুখ দিয়ে অগ্রসর হয়ে এক জায়গায় নেমে পড়লাম এবং গাধাটিকে চরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দিলাম। এরপর আমি কাতারে প্রবেশ করলাম। আমার এ কাজে কেউ আপত্তি করলেন না।

৮২০ - আবূল ইয়ামান ও আইয়াশ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে অনেক বিলম্ব করলেন। অবশেষে উমর (রাঃ) তাঁকে আহবান করে বললেন, নারী ও শিশুরু া ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন , তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে বললেনঃ তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে না। (রাবী বলেন ,)মদিনাবাসী ব্যতীত আর কেউ সে সময় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না।

৮২১ - আমর ইবনু আলী (রহঃ)--- ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে কখনো ঈদের মাঠে গমন করেছেন? তিনি বললেন , হ্যাঁ, গিয়েছি। তবে তাঁর কাছে আমার যে মর্যাদা ছিল তা না থাকলে আমি অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে সেখানে যেতে পারতাম না। তিনি কাসীর ইবনু সালতের বাড়ীর কাছে যে নিশানা ছিল সেখানে আসলেন (সালাতান্তে (নামাজের পর)) পরে খুতবা দিলেন। এরপর মহিলাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের ওয়ায ও নসীহত করেন। এবং তাদের সাদাকা করতে নির্দেশ দেন। ফলে মহিলারা তাঁদের হাতের আংটি খুলে বিলাল (রাঃ) –এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিলাল (রাঃ) বাড়ী চলে এলেন।

৮২২ - আবূল ইয়ামান (রহঃ)--- আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে অনেক বিলম্ব করলেন। ফলে উমর (রাঃ) তাঁকে আহবান করে বললেন, মহিলা ও শিশুরু া ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে বললেনঃ এ সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য পৃথিবীতে অন্য কেউ অপেক্ষারত নেই। সে সময় মদিনাবাসী ব্যতীত অন্য কোথাও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা হত না। মদিনাবাসীরা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দৃশ্যমান লালিমা অদৃশ্য হওয়ার সময় থেকে রাতের প্রথম ততীয়াংশ সময় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৮২৩ - উবাঈদুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ)--- ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের স্ত্রীগণ রাতে মসজিদে আসার জন্য তোমাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে, তাহলে তাদের অনুমতি দিবে। শু’বা (রহঃ)--- ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় উবাঈদুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ)-এর অনুসরন করেছেন।

৮২৪ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হিন্দ বিনত হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহধর্মিণী সালামা (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, মহিলাগন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী পুরুষগণ , আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন , (তথায়) অবস্থান করতেন। তারপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন , তখন পুরুষগণও উঠে যেতেন।

৮২৫ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)---আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন তখন মহিলাগণ চাঁদরে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে ঘরে ফিরতেন। অন্ধকারের কারনে তখন তাঁদেরকে চেনা যেতো না।

৮২৬ - মুহাম্মদ ইবনু মিসকীন (রহঃ) --- আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘায়িত করব বলে ইচ্ছা করি, এরপর শিশুরু কান্না শুনতে পেয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করি এ আশংকায় যে, তার মায়ের কষ্ট হবে।

৮২৭ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)---আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে, মহিলারা কি অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা হলে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন। (রাবী) ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) বলেন, আমি আমরাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

৮২৮ - ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ’ (রহঃ)--- উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন মহিলাগন তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানোর আগে নিজ জায়গায় কিছুক্ষন অবস্থান করতেন। রাবী যুহরী (রহঃ) বলেন, আমাদের মনে হয় , তা এ জন্য যে, অবশ্য আল্লাহ ভাল জানেন, যাতে মহিলাগণ চলে যেতে পারেন, পুরুষগন তাদের যাওয়ার আগেই।

৮২৯ - আবূ নু’আইম (রহঃ)--- আনাস ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইম (রাঃ)-এর ঘরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমি এবং একটি ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মে সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।

৮৩০ - ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ)--- আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর মু’মিনের স্ত্রীগণ চলে যেতেন, অন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেত না অথবা বলেছেন, অন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না।

৮৩১ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ)--- আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, তোমাদের কারো স্ত্রী যদি (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মসজিদে যাওয়ার)অনুমতি চায় তা হলে স্বামী যেন তাকে বাঁধা না দেয়।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন