20 May, 2018

টুনটুনি আর রাজার কথা


রাজার বাগানের কোণে টুনটুনির বাসা ছিল। রাজার সিন্দুকের টাকা রোদে শুকোতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তার একটি টাকা ঘরে তুলতে ভুলে গেল।

টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় এসে রেখে দিলে, আর ভাবলে, `ঈস্! আমি কত বড়োলোক হয়ে গেছি। রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘরে সেই ধন আছে!’ তারপর থেকে সে কেবলি এই কথাই ভাবে, আর বলে—

রাজার ঘরে যে ধন আছে

টুনির ঘরে সে ধন আছে!

রাজা সভায় বসে সে কথা শুনতে পেয়ে জিগগেস করলেন, `হ্যাঁরে! পাখিটা কি বলছে রে?’

সকলে হাত জোড় করে বললে, `মহারাজ, পাখি বলছে, `আপনার ঘরে যে ধন আছে, ওর ঘরেও নাকি সেই ধন আছে!’ শুনে রাজা খিল্‌খিল্ করে হেসে বললেন, `দেখ তো ওর বাসায় কি আছে।’

তারা দেখে এসে বললে, `মহারাজ, বাসায় একটি টাকা আছে।’

শুনে রাজা বললেন, `সে তো আমারই টাকা, নিয়ে আয় সেটা।’

তখুনি লোক গিয়ে টুনটুনির বাসা থেকে টাকাটি নিয়ে এল। সে বেচারা আর কি করে, সে মনের দূঃখে বলতে লাগল—

রাজা বড় ধনে কাতর

টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর!

শুনে রাজা আবার হেসে বললেন, `পাখিটা বড় ঠ্যাঁটা রে! যা, ওর টাকা ওকে ফিরিয়ে দিয়ে আয়।’

টাকা ফিরে পেয়ে টুনির বড় আনন্দ হয়েছে। তখন সে বলছে—

রাজা ভারি ভয় পেল

টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল

রাজা জিগগেস করলেন, `আবার কি বলছে রে?’

সভার লোকেরা বললে, `বলছে মহারাজ নাকি বড্ড ভয় পেয়েছেন, তাই ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।’

শুনে তো রাজামশাই রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, `কি এত বড় কথা! আন তো ধরে, বেটাকে ভেজে খাই!’

যেই বলা অমনি লোক গিয়ে টুনটুনি বেচারাকে ধরে আনলে! রাজা তাকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে রানীদের বললেন, `এই ভেজে আজ আমাকে খেতে দিতে হবে!’

বলে তো রাজা চলে এসেছেন, আর রানিরা সাতজনে মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।

একজন বললেন, `কি সুন্দর পাখি! আমার হাতে দাও তে একবার দেখি।’ বলে তিনি তাকে হাতে নিলেন। তা দেখে আবার আর একজন দেখতে চাইলেন। তাঁর হাত থেকে যখন আর একজন নিতে গেলেন, তখন টুনটুনি ফস্কে উড়ে পালাল!

কি সর্ব্বনাশ! এখন উপায় কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো রক্ষা থাকবে ন!

এমনি করে তারা দুঃখ করছেন, এমন সময় একটা ব্যাঙ সেইখান দিয়ে থ্প-থ্প করে যাচ্ছে। সাত রানী তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেললেন, আর বললেন, `চুপ-চুপ! কেউ যেন জানতে না পারে! এইটেকে ভেজে দি, আর রাজামশায় খেয়ে ভাববেন টুনটুনিই খেয়েছেন।’

সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে ভেজে রাজামশাইকে দিলে তিনি ভারি খুশি হলেন।

তারপর সবে তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, `এবারে পাখির বাছাকে জব্দ করেছি।’

অমনি টুনি বলছে—

বড় মজা, বড় মজা,

রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!

শুনেই তো রাজামশাই লাফিয়ে উঠেছেন! তখন তিনি থুতু ফেলেন, ওয়াক তোলেন, মুখ ধোন, আর কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, `সাত রানীর নাক কেটে ফেল।’

অমনি জল্লাদ গিয়ে সাত রানীর নাক কেটে ফেললে।

তা দেখে টুনটুনি বললে—

এক টুনিতে টুনটুনাল

সাত রানীর নাক কাটাল!

তখ্ন রাজা বললেন, `আন বেটাকে ধরে! এবার গিলে খাব! দেখি কেমন করে পালায়!’

টুনটুনিকে ধরে আনলে।

রাজা বললেন, `আন জল!’

জল এল। রাজা মুখ ভরে জল নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরেই চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেললেন।

সবাই বলে, `এবার পাখি জব্দ!’

বলতে বলতেই রাজামশাই ভোক্ করে একটা ঢেকুর তুললেন।

সভার লোক চমকে উঠল, আর টুনটুনি সেই ঢেকুরের সঙ্গে বেরিয়ে এসে উড়ে পালাল।

রাজা বললেন, `গেল, গেল! ধর, ধর!’ অমনি দুশো লোক ছুটে গিয়ে আবার বেচারাকে ধরে আনল।

তারপর আবার জল নিয়ে এল, আর সিপাই এসে তলোয়ার নিয়ে রাজামশায়ের কাছে দাঁড়াল, টুনটুনি বেরুলেই তাকে দু টুকরো করে ফেলবে।

এবার টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ চেপে বসে থাকলেন, যাতে টুনটুনি আর বেরুতে না পারে। সে বেচারা পেটের ভেতর গিয়ে ভয়ানক ছটপট করতে লাগল!

খানিক বাদে রাজামশাই নাক সিঁটকিয়ে বললেন, `ওয়াক!’ অমনি টুনটুনিকে সুদ্ধ তার পেটের ভিতরেও সকল জিনিস বেরিয়ে এল।

সবাই বললে, `সিপাই, সিপাই! মারো, মারো! পালালো!’

সিপাই তাতে থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে গিয়ে পড়্ল।

রাজামশাই তো ভয়ানক চ্যাঁচালেন, সঙ্গে-সঙ্গে সভার সকল লোক চ্যাঁচাতে লাগল। তখন ডাক্তার এসে পটি বেঁধে অনেক কষ্টে রাজামশাইকে বাঁচাল।

টুনটুনি তা দেখে বলতে লাগল—

নাক কাটা রাজা রে

দেখ তো কেমন সাজা রে!

বলেই সে উড়ে সে দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক ছুটে এসে দেখল, খালি বাসা পড়ে আছে।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন