একদিন শিয়াল নদির ধারে একটা মাদুর দেখতে পেয়ে, সেটাকে তার বাড়িতে নিয়ে এল। এনে, সেই কুয়োর মুখের উপর তাকে বেশ করে বিছিয়ে বাঘকে গিয়ে বললে,’মামা, আমার নতুন বাড়ি দেখতে গেলে না?’ শুনে বাঘ তখুনি তার নতুন বাড়ি দেখতে এল। শিয়াল তাকে সেই কুয়োর মুখে বিছানো মাদুরটা দেখিয়ে বললে, `মামা, একটু বস, জলখাবার খাবে।’
জলখাবারের কথা শুনে বাঘ ভরি খুশি হয়ে, লাফিয়ে সেই মাদুরের উপর বসতে গেল, আর অমনি সে কুয়োর ভিতরে পড়ে গেল। তখন শিয়াল বললে, `মামা, খুব করে জল খাও, একটুও রেখ না যেন!’
সেই কুয়োর ভিতরে কিন্তু বেশি জল ছিল না, তাই বাঘ তাতে ডুবে মারা যায়নি। সে আগে খুবই ভয় পেয়েছিল, কিন্তু শেষে অনেক কষ্টে উঠে এল। উঠেই সে বললে, `কোথায় গেলি রে শিয়ালের বাচ্চা? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।’ কিন্তু শিয়াল তার আগেই পালিয়ে গিয়েছিল, তাকে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া গেল না।
তারপর থেকে বাঘের ভয়ে শিয়াল তার বাড়িতেও আসতে পারে না, খাবার খুঁজতেও যেতে পারে না। দুর থেকে দেখতে পেলেই বাঘ তাকে মারতে আসে। বেচারা না-খেয়ে না-খেয়ে শেষে আধমরা হয়ে গেল।
তখন সে ভাবলে, `এমন হলে তো মরেই যাব। তার চেয়ে বাঘ মামার কাছে যাই না কেন? দেখি যদি তাকে খুশি করতে পারি।’
এই মনে করে সে বাঘের সাথে দেখা করতে গেল। বাঘের বাড়ি থেকে অনেক দুরে থাকতেই সে নমস্কার করছে আর বলছে, `মামা, মামা!’
শুনে বাঘ আশ্চর্য হয়ে বললে, `তাই তো, শিয়াল যে!’
শিয়াল অমনি ছুটে এসে, তার পায়ের ধুলো নিয়ে বললে, `মামা, আমাকে খুঁজতে গিয়ে তোমার বড় কষ্ট হচ্ছিল, দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। মামা, আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি তাই এসেছি। আর কষ্ট করে খুঁজতে হবে না, ঘরে বসেই আমাকে মার।’
শিয়ালের কথায় বাঘ তো ভারি থতমত খেয়ে গেল। সে তাকে মারলে না, খালি ধমকিয়ে বললে, `হতভাগা পাজি, আমাকে কুয়োয় ফেলে দিয়েছিলি কেন?’
শিয়াল জিভ কেটে কানে হাত দিয়ে বললে, `রাম-রাম। তোমাকে আমি কুয়োয় ফেলতে পারি? সেখানকার মাটি বড্ড নরম ছিল, তার উপর তুমি লাফিয়ে পড়েছিলে, তাই গর্ত হয়ে গিয়েছিল। তোমার মত বীর কি মামা আর কেউ আছে?’
তা শুনে বোকা বাঘ হেসে বললে, `হ্যাঁ-হ্যাঁ ভাগ্নে সে কথা ঠিক। আমি তখন বুঝ্তে পারিনি।’
এমনি করে তাদের আবার ভাব হয়ে গেল।
তারপর একদিন শিয়াল নদীর ধারে গিয়ে দেখল যে, বিশ হাত লম্বা একটা কুমির ডাঙায় উঠে রোদ পোয়াচ্ছে। তখন সে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে বাঘকে বললে, `মামা, মামা একটা নৌকা কিনেছি, দেখবে এসো।’
বোকা বাঘ এসে সেই কুমিরটাকে সত্যি-সত্যি নৌকা মনে করে লাফিয়ে তার উপর উঠতে গেল, আর অমনি কুমির তাকে কামড়ে ধরে জলে গিয়ে নামল। তা দেখে শিয়াল নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল।
No comments:
Post a Comment