আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা
মানুষ সামাজিক জীব। তাকে সমাজে বসবাস করতে হয়। কোনো মানুষই অপরের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। মানুষ সমাজ থেকেই প্রাথমিকভাবে এই সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে। কেউ কেউ পরের কল্যাণে আত্মতৃপ্তি লাভ করে সুখী হয়। কেউবা নিজের স্বার্থলাভে আত্মতৃপ্তি পেয়ে থাকে। এই শ্রেণির লোক সব সময় নিজের সুখের কথা ভাবে।অন্যের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের থাকে না। এভাবে তারা নিজের সুখের কথা ভাবতে ভাবতে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা সমাজের কোনো কাজে আসে না। তাদের মনে স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসা থাকে না বলে তাদের হৃদয় পাথরের মতো। এই ধরণের মানুষেরা মৃত্যুর পর পরই পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়। সমাজে আবার কিছু লোক আছেন, যারা অন্যের উপকারের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
তারা সমাজের যেকোনো বিপদ-আপদে এগিয়ে আসে। সমাজের মানুষের সাথে তাদের সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই শ্রেণির লোকেরা শুধু সমাজের উন্নয়নই নয় জাতীয় উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তারা মৃত্যুর পর যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকেন। ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় এবং মানুষকে আনন্দ দেয়; নিজের জন্য কিছু করে না।
তেমনি পৃথিবীতে এমন কিছু মহৎ ব্যক্তি আছেন যারা ফুলের মতোই মানব কল্যাণে কাজ করে অমর হয়ে আছেন। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন তার বিশাল সম্পদ মানবকল্যাণে দান করেছিলেন। আবার মাদার তেরেসা সারাজীবন মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। যে সমাজে সাহায্য সহযোগিতা থাকে না সে সমাজে নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। পৃথিবীতে যত দিন বাঁচা যায় ততদিন সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে বেঁচে থাকা প্রয়োজন। আমরা যদি পরস্পরর সুখ-দুঃখ ভাগ করে চলি, তাহলে পৃথিবীকে অনেক সুন্দর ও মনোরম মনে হবে। তাই প্রত্যেকের অবস্থান থেকে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ প্রয়োজন।
শিক্ষা: আত্মসুখের পিছনে ছুটে কোনো লাভ নেই। বরং এতে নিজের দুঃখই আরো বাড়ে। তাই মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করা প্রয়োজন।
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই, যে মোরে করেছে পর
পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। মানুষের পরিচায়ক হচ্ছে মনুষ্যত্ব। কারো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার ক্ষতি সাধন করলে এই মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় না। মন্দকর্মের বিপরীতে মন্দকর্ম কখনোই সমর্থণযোগ্য নয়। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। ক্ষমার দৃষ্টিতে বিচার করে অপকারীর উপকার করলে একদিকে যেমন তার শিক্ষা হয়ে যায় অন্যদিকে আবার পরোপকারের মতো একটি মহৎ কাজও করা হয়ে যায়।শত্রুর অনিষ্টের প্রতিশোধ নেওয়ার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। আমার ঘর ভেঙ্গেছে বলে শত্রুর ঘরও না ভেঙ্গে যদি উল্টো তার ঘর বেঁধে দেওয়া যায় তাহলে তাতে ক্ষমাশীলতা ও পরোপকারের বিকাশ ঘটে। কোনো অসৎ ব্যক্তি ক্ষতিকর কাজ করলেও তার প্রতিদান ক্ষতিকর কাজ দিয়ে করতে নেই। সুন্দর আচরণ ও ক্ষমার আদর্শ স্থাপনের মাধ্যমে তার বিনিময় দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, প্রতিশোধপরায়ণতা কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।
এটি বরং নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। অতএব ক্ষতিকর কাজের বিনিময়ে কল্যাণের কাজ করলে তাতে মনুষ্যত্ব ফুটে উঠে। তাই শত্রুকে পর না ভেবে কাছে টেনে নিলে সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরোপকারের মধ্যে মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। একে অপরের মাঝে প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসা আদান-প্রদানের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন করা সম্ভব। হিংসা-প্রতিহিংসা সমাজে কেবল অশান্তির সৃষ্টি করে। তাই কেউ হিংসা করলে তাকে ভালোবাসা উপহার দেওয়া এবং কেউ ক্ষতি করলে বিনিময়ে তার উপকার করা উচিত। তবেই জীবন হয়ে উঠবে সার্থক ও আনন্দময়।
শিক্ষা: মানব সমাজের প্রত্যেক সদস্যই পৃথিবীতে আগমন করেছে একে অপরের জন্য। প্রতিশোধপরায়ণতা ত্যাগ করে ক্ষমা ও পরোপকারের মাধ্যমেই অক্ষুন্ন রাখা যায় মনুষ্যত্বের মর্যাদা।
আভিজাত্যের অহংকারের মতো অন্যায়বোধ হয় আর একটিও নাই
অঢেল সম্পদের অধিকারী হলেই প্রকৃত ধনী হওয়া যায় না। প্রকৃত ধনী হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি উদার মন। আমাদের সমাজে বহু অভিজাত ব্যক্তি আছে যারা সম্পদেও মোহে পড়ে অন্যকে যথাযথ সম্মান দেয় না। এতে তাদের সংকীর্ণ ও অহংকারী মনের পরিচয় পাওয়া যায়। অহংকার সমাজের চোখে সব সময় একটি গর্হিত অন্যায়।আর আভিজাত্যের অহংকার আরো বড় অন্যায়। কারণ আভিজাত্য মানুষে মানুষে বিবাদ সৃষ্টি করে। একই সমাজে মানুষ পরস্পরের শত্রু হয়ে যায়। সম্পদের অহংকার সমাজে নানা ধরণের শ্রেণিভেদ তৈরি করে। আভিজাত্য মানুষকে অনেক সময় পশুর পর্যায়ে নিয়ে যায়।
তাদের মধ্যে তখন মানবিক গুণ বলতে কিছুই থাকে না। যেকোনো উপায়ে তারা তখন সমাজের কর্তৃত্ব দখল করার চেষ্টা করে। আভিজাত্যের অহংকার সামাজিক বন্ধন নষ্ট করে দেয়। তাই নিজের ধন-সম্পদ নিয়ে যারা অহংকারে লিপ্ত থাকে তারা সমাজের বিচারে সবচেয়ে বড় অন্যায়কারী। আভিজাত্যের অহংকার মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় যখন সে অপরের অধিকার সম্পর্কে একটুও চিন্তা করে না। সম্পদের দাম্ভিকতা তাকে সামাজিকভাবে অন্ধ করে দেয়। সে যেন তার চেয়ে কম সম্পদশালীদের দেখতেও পায় না। যারা আভিজাত্যের অহংকার করে তাদের কাছে অন্যের অধিকারের কোনো মূল্য থাকে না। অথচ সমাজ চায় ধনী গরীব সবাই একই কাতারে থাকুক। মানবিক মূল্যবোধের চেয়ে সম্পদের মোহ অনেক বড় হয়ে যায় বলে আভিজাত্যের অহংকারী সমাজের চোখে একজন ঘৃণ্য ব্যক্তি। সাময়িক আভিজাত্য নিয়ে অহংকার করা সমাজের সবচেয়ে গর্হিত অন্যায় বলে বিবেচনা করা হয়।
শিক্ষা: ধনসম্পদের আভিজাত্য একজন মানুষের আসল পরিচয় বহন করে না। আভিজাত্যের অহংকার মানুষকে নিশ্চিত পতনের দিকে ঠেলে দেয়।
কীর্তিমানের মৃত্যু নাই
মানুষ মাত্রই মরণশীল অর্থাৎ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে তাকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর মৃত্যুর মাধ্যমেই পৃথিবীর সাথে মানুষের চির বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তি মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন মানুষের মধ্যে, তাদের অমর কীর্তির জন্য।মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ), ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, যীশু খ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ এঁরা সকলেই মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে এক সময় মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু তাঁরা আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তাঁদের মহান কীর্তির জন্য।
সক্রেটিস, এরিস্টটল নেই, রয়েছে তাঁদের দর্শন; শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ নেই, রয়ে গেছে তাঁদের কাব্য। নিউটন, আইনস্টাইন চলে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও মতবাদ, যা আধুনিক বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি রূপে আজও ব্যবহৃত হচ্ছে; পিকাসো, ভিঞ্চি আজ আর নেই আজও অম্লান আছে তাঁদের চিত্রকর্ম; বিটোফেন, মোজার্ট নেই, রয়েছে তাঁদের সুরসৃষ্টি।
এভাবেই মানুষ বেঁচে থাকে তাদের মহান কর্মের মাধ্যমে। কীর্তিমান মানুষের মৃত্যু হয় না, পৃথিবীতে তাঁরা কৃতকর্মের মহিমায় লাভ করেন অমরত্ব। জগৎ এবং জীবনের জন্য কল্যাণকর কাজ করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন, তাঁদের অম্লান কীর্তিই তাঁদেরকে বাঁচিয়ে রাখে পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে, মননে। ক্ষণস্থায়ী জীবনে যে ব্যক্তি মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে জীবনকে উৎসর্গ করেন, গৌরবময় কীর্তির স্বাক্ষর রেখে জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারেন, তাঁর দেহের বিনাশ সাধন হলেও তাঁর স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন। গৌরবময় কীর্তিই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে।
শিক্ষা: মানুষের দেহের বিনাশ ঘটে কিন্তু জগতের জন্য তার কল্যাণকর কর্মগুলো অবিনশ্বর এবং এই মহৎ কর্মের দ্বারা সে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকেন মানুষের মাঝে। তার কীর্তি হয়ে ওঠে স্মরণীয় অনুকরণীয়।
কাক কোকিলের এক বর্ণ, স্বরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন
কাক ও কোকিল দেখতে একই রকম। উভয়ের গায়ের বর্ণ কালো। কিন্তু পাখি দুটি আমাদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত হয় না। কণ্ঠস্বরের কারণে তাদের মান আলাদা। কোকিলের কণ্ঠস্বর অত্যন্ত সুমধুর। কোকিল তার গানে মানুষের মন আনন্দে ভরিয়ে দেয়। অন্যদিকে কাক মানুষের কাছে অত্যন্ত অপ্রিয় একটি পাখি। কাকের কণ্ঠস্বর খুবই কর্কশ।কাকের ডাকাডাকিতে মানুষ বিরক্ত হয়। অনুরূপভাবে আমাদের সমাজেও অনেক মানুষ দেখা যায় যারা শুধু দৈহিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ। তাদের ভেতরটা মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। তাদের মনটা থেকে গেছে পশুর মতো। ত্যাগ, পরোপকার মহত্ত্ব প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলীর সাথে তারা পরিচিত নয়। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করাই এদের মূল উদ্দেশ্য।
এরা সমাজ ও জাতির কোনো উপকারেই আসে না। ফলে সমাজের কাছে এদের মান, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই। সমাজ সবসময় এদের হীন দৃষ্টিতে দেখে।
পক্ষান্তরে আমাদের সমাজে এমন মানুষও আছে যাদের অন্তর ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। তাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে প্রকাশিত হয় তাদের মনুষ্যত্ব। মানবজাতির বৃহৎ কল্যাণের কাছে তারা জলাঞ্জলি দেয় নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ। লোভ-লালসা তাদের স্পর্শ করতে পারে না। সমাজে এসব মানুষদের স্থান তাই সবার উপরে। মৃত্যুর পরও তারা তাদের কর্মের মধ্য দিয়ে অম্লান থাকে মানুষের মনে।
শিক্ষা: বাহ্যিক চেহারা ও গুণাবলী পরিমাপের মাপকাঠি নয়। মানুষ হিসাবে জন্ম নিলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। উৎকৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে ‘মানুষ’ পরিচয় অর্জন করে নিতে হয়।
আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি
ব্যাধি মানুষের আয়ু কমিয়ে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। অলসতাও ভয়ানক ব্যাধির মতো মানুষের জীবনকে গ্রাস করে। যে ব্যক্তি আলস্যভরে কাজ-কর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখে তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। আমাদের সমাজে যে যত বেশি পরিশ্রম করে সে ততবেশি উন্নত জীবনযাপন করে।অলস ব্যক্তিরা পরিশ্রমের ভয়ে নিজেকে ঘরের কোণে আবদ্ধ রাখে যা তার শরীর ও মনকে বিষিয়ে তোলে। অলস ব্যক্তি সুস্থ চিন্তা করতে পারেন না, সে নানা রকম অকল্যাণকর কাজের চিন্তা করে। জ্ঞানীরা বলেন-‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা।’অন্যদিকে কর্মঠ ব্যক্তিরা তাদের জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে উপভোগ করে এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করে জগতে অমর হয়।
অলস ব্যক্তি সব সময় হতাশা ও হীনমন্যতায় ভোগে। তারা পরিবার, সমাজ-রাষ্ট্রের উন্নতির অন্তরায়। অলস ব্যক্তি সমাজের বোঝা। আর কর্মঠ ব্যক্তিরা তাদের শ্রম দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনে।
শিক্ষা: অলসতা ব্যাধির মতোই ভয়াবহ। অলসতা দূর করে পরিশ্রম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। এতে জাতির কল্যাণ ও উন্নতি নিশ্চিত হয়।
আপনারে কভু ভেবোনা ক্ষুদ্র, ভাবিওনা দীন তুমি তুমি নিতে পার জয় করিয়া এ বিপুল বিশ্বভূমি
পৃথিবীতে সব মানুষেরই মর্যাদা সমান। সামাজিক স্তর বিন্যাসের দিক থেকে ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু, ব্রাহ্মণ, শুদ্র ইত্যাদি ভাগ রয়েছে। তবে প্রতটি মানুষের মর্যাদা তার অবস্থানে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সকল মানুষের মর্যাদা সমান। মানুষকে ক্ষুদ্র ও দীন-ভাবার কোনো সুযোগ নেই। সমাজ পরিচালনায় সকল মানুষের প্রয়োজন পড়ে।আমাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে, মেথর, মুচি, দিনমজুর সবারই প্রয়োজন আছে। কাউকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আজ যদি মেথর সম্প্রদায় তাদের কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। সামাজিক স্তর বিন্যাসে যারা নিম্ন, তাদের নিজেদের ছোট ভাবার কোনো কারণ নেই।
সবার মাঝেই সুপ্ত প্রতিভা আছে। সে সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করতে হবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন অতি সাধারণ লোক ছিলেন। তিনি প্রমাণ করে গেছেন যে, একজন সাধারণ লোক হয়েও এ বিশ্বজগতকে জয় করা যায়। নিজেকে ক্ষুদ্র না ভেবে, সৃষ্টিশীল কাজে মগ্ন থাকতে হবে। নিজ অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব আর্ত-মানবতার জন্য কাজ করতে হবে।
পৃথিবীতে সবাই সমান মেধা নিয়ে জন্মায় না। মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। পৃথিবীকে জয় করতে হলে কাজের বিকল্প নেই। এ পৃথিবীতে অনেক দরিদ্র ঘরেও অনেক শ্রেষ্ঠ মানুষের জন্ম হয়েছে। তাই যেকোনো সমাজেই মানুষ জন্মগ্রহণ করুক না কেন, তার নিজেকে ছোট ভাবা উচিত নয়। বরং আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করতে হবে।
যে সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারবে, সে তত তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে তার একটা অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এ পৃথিবী উঁচু-নিচু সমাজের স্তরভেদ চেনে না। চেনে মানুষের কর্মকে। তাই যেকোনো ব্যক্তিরই এ বিপুল বিশ্বভূমি জয় করার অধিকার আছে।
শিক্ষা: শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব গুণ দুটি নির্দিষ্ট কোনো সমাজের নয়। কর্মের মাধ্যমে এ গুণ অর্জন করতে হয়। আর তা সবার জন্য উন্মুক্ত।
গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না
তিনিই গুণী, যিনি মানবীয় গুণাবলীর ধারক ও বাহক। তার মধ্যে মানব চরিত্রের এমন কিছু গুণ প্রতিফলিত হয়, যা দ্বারা তিনি অন্য সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা সম্মান পান। গুণী ব্যক্তি তার মেধা, প্রজ্ঞা দ্বারা মানুষের, সমাজ তথা রাষ্ট্রের বিকাশ সাধন করেন। পৃথিবীর মহান কবি, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক তারা সবাই তাদের নিজ নিজ গুণের দ্বারা মানব সম্প্রদায়ের উপকার করেছেন।তারা সবাই সম্মানের পাত্র। একটা বিষয় পরিলক্ষিত যে, এসব গুণী ব্যক্তিরা তাদের সমসাময়িক সময়ে খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি। মানুষ গুণী ব্যক্তিদের কদর করতে শুরু করে যখন তারা জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে আসেন, নতুবা মারা যান। মহাকবি ফেরদৌসী মহাকাব্য ‘শাহনামা’ রচনার প্রতিটি শ্লোকের জন্য স্বর্ণ মুদ্রা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুলতান মাহমুদ তাকে স্বর্ণ মুদ্রার পরিবর্তে রৌপ্য মুদ্রা দেন।
ফেরদৌসী রৌপ্য মুদ্রা নিতে অস্বীকার করে রাগ করে চলে যান। সুলতান যখন তাঁর ভুল বুঝতে পারেন, তখন ফেরদৌসী আর জীবিত ছিলেন না। গুণী ব্যক্তিরা যখন আমাদের সাথে সমাজে চলাফেরা করেন, তখন আমরা তাকে সমাদর করি না। তাদেরকে অবহেলা করি। তাদের গুণকে আমরা সম্মানের চোখে দেখি না। তাদের সামাজিক স্বীকৃতি ও সামাজিক মর্যাদা দিতে আমরা দ্বিধাবোধ করি।
অথচ তারা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতা দ্বারা মানুষের উপকার করে থাকেন। তাই তাদের যথাযথ সম্মান করা উচিত। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- “যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।” তাই সমাজে তথা রাষ্ট্রে যেসব গুণী ব্যক্তি বাস করেন তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া আমাদের কর্তব্য।
শিক্ষা: মানবীয় গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি শ্রদ্ধার পাত্র। তাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে সমাজে স্থান করে দিতে হবে। তার গুণের কদর করতে হবে।
জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে জাতির নাম মানুষ জাতি; একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত, একই রবি-শশী মোদের সাথী
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষ “আশরাফুল মাখলুকাত” অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা। অন্যদিকে, বাইবেলে আছে, "God made man after His own image." প্রতিটি ধর্মেই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। স্রষ্টার সৃষ্টিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই।তিনি প্রত্যেক মানুষকেই মেধা, মনন ও হৃদয় এর সমন্বয়ে অনন্য সাধারণ করে সৃষ্টি করেছেন। সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানুষ প্রতিটি পর্যায়ে তার এই শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে। মূলত মানবগোষ্ঠীর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আলাদা আলাদা কোনো পরিচয় নেই। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের একমাত্র পরিচয় হলো সে মানুষ। সে পৃথিবীর যেকোনো দেশের অধিবাসী হোক, যেকোনো ধর্মাবলম্বী হোক, সাদা-কালো-তামাটে যে বর্ণের হোক, ধনী-গরীব যে শ্রেণীরই হোক, নারী হোক কিংবা পুরুষ এগুলো তার প্রকৃত পরিচয় নয়।
তার সত্যিকার পরিচয় হচ্ছে মানব পরিচয়। বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস তাই যথার্থই বলেছেন- “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।” কিন্তু নিচু মনের অধিকারী মানুষেরা এই সত্যকে মানতে চায় না। তারা নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীতে জাতভেদ, বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য প্রভৃতি কুপ্রথা তৈরি করেছে।
এ ধরণের স্বার্থপর মানুষেরা নিজেদের অর্থ-বিত্তের দম্ভে দরিদ্র, অসহায় মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সমাজে কৃত্রিম শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করতে সচেষ্ট। সকল মানুষ একই পৃথিবী হতে উৎপন্ন খাদ্য গ্রহণ করে, একই চন্দ্র, সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে মানুষের আলাদা কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ পরিচয় নেই; মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এটিই তার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র পরিচয়।
শিক্ষা: পৃথিবীর সকল ধর্ম-কর্ম, মত ও পথের ঊর্ধ্বে মানুষের স্থান। সামান্য অর্থ-সম্পদ কিংবা জাতি, ধর্ম, বর্ণের মাপকাঠিতে মানুষকে উঁচু-নিচু শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় না। সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ, যে হৃদয়ধর্মে উদার এবং মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ না রেখে মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যাক্ত করে ধ্বনির কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে
ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি বলে প্রতিধ্বনি ধ্বনির কাছে ঋণী। ধ্বনি সৃষ্টি না হলে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো না। কিন্তু প্রতিধ্বনি এ উপকার স্বীকার না করে নিজেকে গোপন রেখে নকলটিকে আসল বলে প্রচার করতে চায়। প্রতিধ্বনি মনে করে সে নিজে নিজেই উৎপত্তি লাভ করেছে; কেউই তাকে জন্ম দেয়নি।সে ধ্বনির উপকারের কথা স্বীকারই করতে চায় না। আমাদের মানব সমাজে প্রতিধ্বনির মতো অকৃতজ্ঞ লোকের অভাব নেই। যেসব মানুষদের কারণে তাদের উপকার হয়েছে, যাদের কারণে তাদের স্বার্থরক্ষা হয়েছে, সেসব মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে তাদের বিবেকে বাধে।
তারা মহৎ মানুষদের মহত্ত্বকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না। তারা সর্বদা অপরের মহত্ত্বকে খাটো করে দেখে। অপরের দ্বারা উপকৃত হয়ে তার প্রতি সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধও প্রকাশ করে না। এ জগতে যারা পরের কল্যাণের জন্য কাজ করেন, অপরের উদ্দেশ্যে নিজের স্বার্থ উৎসর্গ করেন, তারা অকৃতজ্ঞ লোকের নানা অপমান, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ, অবজ্ঞা-অবহেলা পাওয়া সত্ত্বেও নিজেদের আদর্শ থেকে পিছপা হয় না।
শ্রম, শক্তি ও মেধা দ্বারা কল্যাণে রত এসব মহৎ লোক পৃথিবীতে পরম পূজনীয়। যে মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, তার মধ্যে মানবীয় গুণাবলীর ঘাটতি আছে। যার দ্বারা উপকৃত হবে, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই মহৎ মানুষের বৈশিষ্ট্য।
শিক্ষা: পৃথিবীতে মহৎ ব্যক্তিরা জীবন বাজি রেখে হলেও মানুষের উপকার সাধন করেন। এসব পরহিতব্রতী লোকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর
আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বিজ্ঞানের। আজ বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলে পৃথিবীর সাথে সাথে মানুষের মনও বদলে গেছে। বিজ্ঞান মানুষকে যন্ত্রে পরিণত করছে। শহরের চার দেয়ালে বন্দি হয়ে মানুষ হারিয়ে ফেলছে গ্রামীণ জীবনের নিসর্গ রূপ। যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষকে আরাম আয়েশ ও প্রাচুর্য দিয়েছে।এছাড়াও ভোগ-বিলাস ও লালসার অবারিত দ্বার উম্মোচন করে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সুখ এসবের মাঝে নেই। আজ সভ্যতার নামে মানুষ বন উজাড় করে গড়ে তুলছে শহর। নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য। সভ্যতার সর্বনাশা স্রোত আমাদেরকে আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। মানব সভ্যতা আজ এক ভয়ানক সংকটের মুখোমুখি।
শহরের কৃত্রিম জীবন মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছে, মানুষকে বন্দি করেছে কৃত্রিমতার শৃঙ্খলে। এ পরাধীনতা থেকে মানুষ এখন মুক্তি চায়। বর্তমান শহুরে জীবনে মানুষ আজ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। অতি আধুনিকতার মোড়কে আবৃত জনজীবনের প্রতি মানুষ আজ বিমুখ। তারা ফিরে পেতে চায় প্রকৃতি প্রদত্ত নির্মল আলো বাতাস।
মানুষ পেতে চায় অতীতের সেই জীবন যেখানে কোনো ব্যস্ততা আর কোলাহল নেই, আছে প্রকৃতির দানে পরিপূর্ণ খোলা মাঠ, মুক্ত বাতাস আর পাখির কলকাকলি।
শিক্ষা: প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপন্ন করে যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশ কখনোই কাম্য নয়। সুতরাং আমরা ফিরে পেতে চাই সেই জীবন, যেখানে কৃত্রিম হৃদয়হীনতা নয়, প্রাকৃতিক আরণ্যক প্রশান্তি বিরাজমান।
দন্ডিতের সাথে দন্ড-দাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার
পাপ-পূণ্য নিয়েই মানুষের জীবন। যিনি ন্যায়বান তাকে সবাই পছন্দ করেন। অপরদিকে অন্যায়কারী ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। তাকে শাস্তি পেতে হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায় বিচার সঠিক হয় না। আবার একজনের অপরাধে অন্যজন দন্ড প্রাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে বিচারককে সুকঠিন ও অত্যন্ত বিচক্ষণ হতে হয়।তিনি তার প্রজ্ঞা ও মেধার সাথে সহানুভূতি ও মমত্ববোধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দন্ড দান করবেন। দন্ডের ভয়ে অনেক সময় অপরাধী পাপকর্ম থেকে দূরে থাকে কিন্তু তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। এ জন্য বিচারককে দয়া প্রদর্শন ও সহানুভূতির মাধ্যমে অপরাধীর বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং তাকে দন্ড দিতে হবে। বিচারক মানবিক বিবেচনা ও সাক্ষ্য প্রমাণের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচারকার্য করবেন। এতেই অপরাধীর অন্তরে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ জন্মাবে। অপরাধীকে শাস্তি নয় বরং তাকে সঠিক পথে আনাই বিচারকের মূল লক্ষ্য। এতে সমাজে অপরাধ কমে আসবে। শুধুমাত্র কঠোরতা নয় দয়া, মমত্ববোধ, নমনীয়তা প্রভৃতি বিষয়ের নিশ্চবয়তাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারের নিদর্শন।
শিক্ষা: পবিত্র বাইবেলে রয়েছে ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়’। তাই অপরাধীকে শুধু শাস্তি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং তার ভেতরের মানুষটাকে সজাগ করে তার মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলাই সমাজ ও জাতির কর্তব্য।
যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন
জগতের কোনো বস্তুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়। কারণ অতি সাধারণ বস্তুর মধ্যেই অসাধারণ বস্তু লুকিয়ে থাকে। যেমন-কয়লা খনির মধ্যেই মহামূল্যবান হীরক পাওয়া যায়। দেখতে অসুন্দর ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা পাওয়া যায়। আমরা মানুষের বাইরের অবস্থা ও অর্থ-সম্পদ দেখে মানুষকে মূল্যায়ন করি। ধনী-গরিবের পার্থক্য করি। প্রকৃত পক্ষে তা করা উচিত নয়। অতি সাধারণ থেকেও অনেকে বিশ্বের সেরা ধনী হয়েছেন।নিতান্তই সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণ করেও অনেকে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, পন্ডিত, রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। যে বাইরের সৌন্দর্য দেখে, সবকিছু বিচার করতে চায় সে মানুষের প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা বুঝতে পারে না। তুচ্ছ বস্তুর মধ্যেই অসাধারণ জিনিস পাওয়া যেতে পারে এটা তাদের ধারণাতেও থাকে না। অনেক মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বাহ্যিক অবয়ব দেখে সাধারণ মনে হলেও, তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে অসাধারণ মানুষ।
সমাজের অনেক মানুষকে আমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি, অথচ তারা আমাদের চেয়ে জ্ঞান গরীমায় অতুলনীয় এবং অনুসরণীয়। অনেক সাধারণ মানুষই অসাধারণ গুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকে। কিন্তু সেসব গুণাবলী সঠিক পরিচর্যার অভাবে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় না। এ ধরণের সুপ্ত প্রতিভা উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জ্বলে উঠতে পারে যেকোনো সময়। প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো দিক থেকে মেধাবী হয়। তাই কাউকেই উপেক্ষা-অবহেলা করা উচিত নয়।
শিক্ষা: তুচ্ছ বলে কোনো বস্তুকে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ তুচ্ছ বস্তুতেও মহামূল্যবান রত্ন থাকতে পারে। মানব সমাজে গরিব-নীচ জাত বলে কাউকে তুচ্ছ করা ঠিক নয়। কারণ, তাদের মধ্য থেকেও মহামানবের আগমন ঘটতে পারে।
সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা
প্রতিনিয়ত মানুষ পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে চায়। চায় মায়া মমতার বন্ধনে আবদ্ধ সুখের সংসার। কিন্তু মানবজীবন পুষ্পশয্যা নয়। সংসারে আছে জটিলতা, নানা সমস্যা আর চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্ব। কখনো দুঃখ এসে তছনছ করে দেয় সুখের সাজানো সংসার। স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নানা প্রতিবন্ধকতা।জীবনের চরম বিপর্যয়ের দিনগুলোতেও মানুষ আশায় বুক বাঁধে। সংসার সাগরে একদিকে দুঃখ খেলা করে অন্যদিকে সে খেলায় টিকে থাকার জন্য মানুষের অবলম্বন আশা। মানুষ আশাকে ভরসা করেই জীবনতরীর হাল ধরে শক্ত করে। উত্তাল সাগরের বুকে জাহাজ চালানো খুবই কঠিন। তারপরও নাবিক বেঁচে থাকার আশায় তীরে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে।
তেমনি সংসাররূপ উত্তাল দুঃখের সাগর মানুষ পাড়ি দেয় আশার তরণী ভাসিয়ে। মানুষ রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, তাই জীবনকে সামনের দিকে নিয়ে যায় এই আশাতে যে,্আগামী দিনগুলো সুন্দর হবে। কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না। স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে, ধরা দিবে বাস্তবে এসে। তাই মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হলো আশা। সাফল্যের পথে আশা মানুষকে দেয় প্রেরণা। কেননা, পৃথিবীর সব ছোট-বড় সৃষ্টির পেছনে কাজ করেছে আশা। শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে যারা আশা নিয়ে পরিশ্রম করে গেছেন তারাই হয়েছেন স্মরণীয়-বরণীয়। কখনো দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে হয়তো দুরাশা এসে মন দখল করতে পারে।
কিন্তু সেটা ক্ষণস্থায়ী। দুরাশার দুঃসময়েও মানুষ নতুন করে আশায় উদ্দীপ্ত হয়। চায় নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে। আশাই মানুষের জীবনীশক্তি। তাইতো বলা হয়- ‘আশায় বসতি।’ আশা ভাগ্যহতকে শোনায় জেগে উঠার গান। আশার ভেলায় ভর করেই চলছে পৃথিবী, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সমাজব্যবস্থা। আশা আছে বলেই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রতিটি মানুষ বাঁচতে শেখে।
শিক্ষা: এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষকে নানা বাধা বিঘ্ন পার হতে হয়, পুড়তে হয় দুঃখের আগুনে। কিন্তু আশা মানুষকে পথ দেখায় কীভাবে দুঃখের আগুনে পুড়ে সুখ লাভ করা যায়, প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন
প্রত্যেক মানুষের কাছেই স্বাধীনতা একান্ত কাম্য। কেউ পরাধীন থাকতে চায় না। তবে পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়া অনেক কঠিন। আবার স্বাধীন হওয়ার চেয়ে স্বাধীনতা ধরে রাখা আরো কঠিন। কারণ তখন স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি অনেক সোচ্চার থাকে। তাই স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম আরো বড় হয়ে সামনে আসে।শক্তিশালী শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে বহুকষ্টের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলেও নানা কারণে তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রথমদিকে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল থাকে। আর তখন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নানাভাবে এসব দুর্বলতার সুযোগ নিতে চায়। এসময় তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
তাই নতুন স্বাধীন হওয়া দেশকে প্রথমে সুগঠিত করতে হয়। দেশের প্রতিটি মানুষকে তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে অর্থনীতি, শিল্প, কৃষিসহ সকল অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হয়। ফ্রান্সের বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ রোঁমা রোঁলা বলেছেন- “কোনো দেশ বা জাতিকে শুধু তার সীমান্ত রক্ষা করলেই চলবে না তার শুভ বুদ্ধিকেও রক্ষা করতে হবে।
জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে, পাশাপাশি রক্ষা করবে তার চিন্তা ও আত্মার স্বাধীনতা।” স্বাধীনতা অর্জন করতে যেমন সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয় তেমনি রক্ষার জন্যও আরো দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ও সংগ্রামী হতে হবে। স্বাধীনতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সকলকে সচেতন ও সংঘবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হবে এবং স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে সমস্ত বিরোধী শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য দায়িত্ব সচেতন ও নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক হতে হবে।
শিক্ষা: স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একটি জাতিকে বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আবার এই অর্জিত স্বাধীনতাকে ধরে রেখে নিজেদের অবস্থান আরো উন্নত করার জন্য দেশের সকলকে আরো বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
মৃত্যুই কেবল উৎকোচ গ্রহণ করে না
লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিরাজমান। প্রবাহমান সময়ের সাথে প্রতিটি প্রাণকেই একদিন মৃত্যুর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে হয়। মহাকালের স্রোতে ভেসে একদিন আমাদেরকেও একদিন বিদায় নিতে হবে পৃথিবী থেকে। কারণ মৃত্যুই একমাত্র সত্য যা বিশ্বাস না করলেও মেনে নিতে হবে। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ তার স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে আসছে।সেই সূত্র ধরেই সমাজে উৎকোচ বা ঘুষ প্রথার প্রচলন। বর্তমান সময়ের এক মারাতœক ব্যাধির নাম উৎকোচ, যা সমাজের ক্ষয়িষ্ণুতার এক অনন্য প্রতীক। উৎকেচের সাহায্যে আজকাল বহু অসাধ্য সাধন হয়ে যাচ্ছে। নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মানুষ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মরিয়া। কিন্তু উৎকোচ গ্রহণ করে না বা উৎকোচ দিয়েও কার্যসিদ্ধি করা না এমন অনেক কিছু আছে।
মৃত্যু এমন এক অনিবার্য ঘটনা যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় নেই। মৃত্যুকে তাই উৎকোচ দিয়েও নিবারণ করা সম্ভব নয়। কারণ মৃত্যু উৎকোচ গ্রহণ করে না। তাই উৎকেচের মাধ্যমে নয় বরং সততা ও সাহসিকতা দিয়েই অনিবার্য সত্যকে আলিঙ্গন করতে হয়, তবেই আসে মানবজীবনের পূর্ণতা।
শিক্ষা: সত্যকে সাহসের সাথে গ্রহণ করাই শ্রেষ্ঠ পথ।
হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে করব মোরা পরিহাস
চলার পথ বাধাহীন, সাবলীল নয়। তাই বলে নিজেকে দুঃখী-হতভাগা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আনন্দকে জয় করে চারপাশে ছড়িয়ে দিতে হবে। অদৃষ্টকে পাশ কাটিয়ে না গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ভয়কে জয় করার মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে।নিজেকে বিশ্বাস করাতে হবে যে, আমিও পারব, থাকতে হবে আনন্দ সৃষ্টির নিরন্তর প্রয়াস। আপন কর্মের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হবে অদৃষ্টকে। সে যাত্রায় হয়তো মুখ থুবড়ে পড়তে হবে বারবার। হয়তো ভাগ্যের হাতে বড় নির্মমভাবে নিপীড়িত, নিগৃহীতও হতে হবে।
তবুও উঠে দাঁড়াতে হবে আশায় বুক বেঁধে তা অর্জন করার সাহস নিয়ে। আর যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন- ‘আল্লাহ, কোনো জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।’ তাই কোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টা করাই একমাত্র উপায়।
যিনি জানেন, জীবন হলো সুখ-দুঃখময় এক অনিবার্য পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র, তিনি দুঃখের দিনে হতাশায় ভেঙে পড়েন না। দুঃখ-বিপাককে জীবনের অমোঘ পাথেয় হিসেবে মেনে নিয়ে দিনবদলের সংগ্রামে নামেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন- ‘সাহস মানে ভয়ের অনুপস্থিতি নয় বরং ভয়কে জয় করা। সে সাহসী নয়, যে ভীতি অনুভব করে না বরং সে-ই সাহসী যে ভীতিকে জয় করে।’ যদিও এই ভয় বা আতংকই কিছু মানুষের জীবনের সব সুখ শান্তি কেড়ে নেয়। কিন্তু ভয়ের মুখোমুখি হয়ে জয় করার মাধ্যমে অর্জিত হয় আত্মতুষ্টি ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রশান্তি যা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
শিক্ষা: মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই, ইচ্ছাই তার প্রধান চালিকা শক্তি। যার মাধ্যমে সে তার কাক্সিক্ষত স্বপ্নচূড়ায় আরোহণ করতে পারে।
সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ
মানুষ সামাজিক জীব। সে চাইলেই একা থাকতে পারে না। সমাজে বসবাস করতে হলে সব ধরণের মানুষের সাথে চলাফেরা করতে হয়। সেখানে ভালো মানুষ যেমন আছে তেমনি খারাপ মানুষও আছে। তবে জন্মগত ভাবে মানুষ খারাপ হয় না। পরিবেশ, পরিস্থিতি, আর সঙ্গী সাথীর কারণে মানুষের চরিত্র কলঙ্কিত হয়।তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। সৎ বন্ধু ভালো পরামর্শ দিয়ে, সহযোগিতা করে জীবনের লক্ষ্যে পৗঁছাতে সাহায্য করে। জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারে সৎ সঙ্গ। তাই সৎ সঙ্গ সবাই কামনা করে। সৎ সঙ্গের বিপরীত হচ্ছে অসৎ সঙ্গ। যাদের মাধ্যমে কখনই ভালো কিছু আশা করা যায় না।
সৎ সঙ্গীর পরামর্শ অনেক সাফল্য এনে দিতে পারলেও অসৎ সঙ্গীর পরামর্শ জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। একজন মানুষ ভালো কি মন্দ তা বোঝা যায় তার বন্ধু নির্বাচনের মাধ্যমে। কোনো মানুষের বন্ধু বা সঙ্গী যদি ভালো না হয় তবে তাকে সবাই খারাপ মনে করে। অসৎ সঙ্গীর কারণে ভালো মানুষও একসময় বিপথে চলে যায়। অন্যদিকে সৎ সঙ্গ জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলে।
মানুষ যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তখন একজন ভালো বন্ধু সৎ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারে। কোনো মানুষের আচরণ, চরিত্র কেমন হবে সেটা বোঝা যায় তার সঙ্গী-সাথী দেখে। মানুষ তার সঙ্গী দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত হয়। ভালো মানুষের সঙ্গ খারাপ ব্যক্তিকেও ভালো করে, আবার খারাপ মানুষের সংস্পর্শে ভালো মানুষও ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে উঠে।
শিক্ষা: ভালো সঙ্গীর অভাবে অনেক সময় মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেকের জীবন সফল হয়ে ওঠে শুধু সৎ সঙ্গে চলার কারণে। তাই জীবনকে সুন্দর করতে চাইলে সৎ সঙ্গী গ্রহণ, আর অসৎ সঙ্গী বর্জন করতে হবে।
সুকঠিন গার্হস্থ্য ব্যাপার কে পারে চালাতে রাজ্য শাসনের রীতিনীতি সূক্ষ্মভাবে রয়েছে ইহাতে
পরিবার হলো সামাজিক কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। শৈশবকাল থেকে পরিবার শিশুকে সামাজিকভাবে চলার জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলে। কার সঙ্গে কী ধরণের আচার-ব্যবহার করতে হবে, অবস্থান ভেদে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কী হবে এসব পরিবারই আমাদেরকে শিখিয়েছে। পরিবার হলো একটি বিশাল ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্র। এই ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু মূলত মা-ই হয়ে থাকেন। তিনি অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পরিবারের সকল কাজ সম্পাদন করেন।পরিবারের সদস্যদের নৈতিক শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভিত্তি তার হাতেই রচিত। অসুস্থ সদস্যকে সেবাদান করে সুস্থ করে তোলার জন্য তিনিই অনান্য ভূমিকা পালন করেন। বাবা আর্থিক যোগান দিলেও পরিবারের বাজেট প্রণয়ন ও ব্যয় নির্বাহ তিনিই করে থাকেন। তবে বর্তমানে মায়েরা আর্থিকভাবেও পরিবারে বিশাল অবদান রেখে চলেছেন। সর্বোপরি একজন সুগৃহিনী মা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পরিবার পরিচালনা করে থাকেন। এই পরিবার পরিচালনার বিষয়টি অনেকাংশেই রাষ্ট্র পরিচালনার মতো।
নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য রাষ্ট্র যেমন বিবিধ কার্য সম্পাদন করেন তেমনি পরিবার পরিচালনার জন্য একজন গৃহিনীও বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকেন। বলতে গেলে রাষ্ট্রেরই ছোট একটি অবয়ব হলো পরিবার। রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে পরিবার পরিচালনার অনেক মিল রয়েছে। রাষ্ট্র শাসন করার যে রীতিনীতিগুলো রয়েছে তা অনেকাংশেই পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
শিক্ষা: সুন্দরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যা যা প্রয়োজন পরিবার পরিচালনার জন্যও তা প্রয়োজন। আমাদেরকে সুন্দরভাবে পরিবার পরিচালনা শিখতে হবে যাতে দেশের প্রয়োজনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আসলে তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়।
Post Md.Ripon.Mia
No comments:
Post a Comment