02 June, 2018

লো ব্লাড প্রেসার হলে…


নানাবিধ কারণে মানুষের শরীরে নিম্নরক্তচাপ হয়ে থাকে। সাধারণত ডায়াস্টলিক রক্তচাপ ৬০ বা ৫৫-এর নিচে থাকলে আমরা নিম্নরক্তচাপ বলি। আবার সিস্টলিক চাপ ৯০ বা ৮০-এর নিচে থাকলেও নিম্নরক্তচাপ বুঝে থাকি।
খুব নিম্নরক্তচাপের দরুন শরীরে প্রতিটি শিরা ও কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিমাণমত সরবরাহ হয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্ক (Brain), রেচনতন্ত্র (Kidney) বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। বেশি মোটা বা বেশি পাতলা লোকও নিম্নরক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারে।
কারণ
দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভোগা এবং কিছু কিছু ঔষধের ব্যবহার। মারাত্মক রক্তশূন্যতা এবং ক্রিমি, যক্ষ্মা, মৃদুজ্বর, পেটের অসুখ বা অরুচির জন্যও এ রোগে দেখা যায় পুষ্টির অভাব, চর্বি, প্রোটিন ও ভিটামিনযুক্ত খাদ্যের অভাব। দীর্ঘদিন বিষণ্নতা বা মানসিক রোগে ভোগা। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভোগা। অতিরিক্ত নিদ্রা হরণ বা রাত্রি জাগরণ। বেশি শারীরিক পরিশ্রম ও বিশ্রামহীন জীবনযাপন।
লক্ষণ
শরীর দুর্বল ও মাথা ঘোরা থাকে এবং ঘুম কম হয়। রোগী অস্থির বোধ করে। মাথা ব্যথা করে, স্মরণশক্তি লোপ পায় এবং চেহারা ফ্যাকাশে দেখায়। কোনো কাজে মন বসে না এবং একটু খাটা-খাটুনিতে হাঁপিয়ে পড়ে এবং নাড়ির গতি দ্রুত হয়। হজমশক্তি, ক্ষুধাহীনতা এবং প্রায়ই জ্বর ও সর্দি-কাশি লেগে থাকে। অনেকক্ষণ কাজ করা বা বসা থেকে হঠাত্ উঠে দাঁড়ালে চোখে অন্ধকার দেখে, চোখ-মুখ উল্টিয়ে ফেলে। রক্তচাপ মাপলে দেখা যাবে সিস্টোলিক ৯০-এর নিচে এবং ডায়াস্টোলিক ৫৫-এর নিচে নেমে গেছে। অতিরিক্ত রক্তচাপের দরুন মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কম হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় এবং ঘামতে থাকে।
চিকিৎসা
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত (Balance diet) খাদ্য গ্রহণ এবং শরীরের আহার, শ্রম, নিদ্রা ও বিশ্রামের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
পরামর্শ: অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর প্রভাব শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতি হতে পারে। তবে মস্তিষ্ক, হার্ট ও কিডনি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি সাতগুণ বেড়ে যায়, হার্ট ফেইলুরের ঝুঁকি ছয়গুণ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তিনগুণ বাড়ে। আমাদের দেশে ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ লোক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। যদি কোনো লোকের ৫০ বছর বয়সেও স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে এবং সে যদি ৮০ বছর বাঁচে; তবে তার উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ।
সাধারণত আমরা বলে থাকি ১১৫/৭৫ mm.Hg রক্তচাপ থাকা ভালো। তার ওপরে যদি রক্তচাপ থাকে তবে তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের এই ঝুঁকি আরও বেশি। রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ mm.Hg-এর ওপরে থাকে তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়। রক্তচাপের ঠিকমত চিকিৎসা না করলে সেটা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের পর্যায়ে পড়ে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের ঠিকমত চিকিৎসা করা উচিত।
আমাদের জানা ভালো
১. স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ mm.Hg বা এর কম।
২. যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ রয়েছে তাদের চিকিৎসার পর রক্তচাপ ১৩০/৮৫ mm.Hg থাকা উচিত।
৩. চিকিৎসার পরও যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগ আছে তাদের রক্তচাপ ১৩০/৮০ mm.Hg থাকা উচিত।
যেসব কারণে আমাদের দেশে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়-
সাধারণ রোগীর জন্য
১. রোগীর শিক্ষার মান না থাকায় তারা রক্তচাপ সম্পর্কে অজ্ঞ।
২. আমাদের দেশে অধিকাংশ লোকের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় তারা চিকিৎসা নিতে পারে না।
৩. উচ্চ রক্তচাপের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নানা ধরনের শঙ্কা কাজ করে।
৪. স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতি-নির্ধারকদের এগিয়ে না আসা।
৫. উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় প্রয়োজনে সারা জীবন ঔষধ খেতে হয়। এই দীর্ঘমেয়াদি ঔষধ না খাওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন