20 May, 2018

সাবান বিক্রেতার ছেলে


অনেক, অনেকদিন আগে, পারস্যে এক পবিত্র শহর ছিল মেশেদ, যার সোনালি মিনারওয়ালা সুন্দর মসজিদ পারস্যের গর্ব ছিল। এই মেশেদে আব্দুল্লাহ নামে এক ভাল মানুষ থাকত। সে সাবান বেচে কোনমতে দিন গুজরান করত।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি , সে সারা শহর চষে বেড়াত, আর চিৎকার করতঃ

“ভাইসব, আমার এই সুন্দর সাবান নাও। এই শহরে এর থেকে ভাল সাবান আর নাই, আর সবাই সেটা জানে। ছোট্ট খোকারা কথা বলতে পারলে তারাও একই কথা বলত।”

কিন্তু তাও, তুমি যদি খুব কাছ থেকে ভাল করে দেখ, তোমার সেটাকে সাবান বলে মনে হবে না। সেটা ছিল কালো আর খসখসে, অনেকটা কাঠের মত দেখতে। যদি কোন দুর্ভাগা পথিক সেই সাবান নিজের হাতে বা মুখে মাখত, তাহলে তার চামড়া আগুনের মত জ্বলত। কিন্তু এটা খুব বেশি ঘটত না, কারণ পারস্যে লোকজন গায়ে বেশি সাবান মাখত না, বা কাপড়েও সাবান ঘষত না, আর বাসনকোসন মাজার জন্য বালিই যথেষ্ট ছিল। তাই অনেকদিনই এমন হত যে বেচারা আব্দুল্লাহ নিজের আর নিজের ছোট্ট ছেলে আহমেদের জন্য খাবার কেনার জন্য যথেষ্ট পয়সা যোগাড় করে উঠতে পারত না।

এইরকম সব সময়ে আব্দুল্লাহ তার ছোট্ট মাটির তৈরি কুঁড়েঘরে গুটিসুটি মেরে ঢুকে পড়ে, দুই হাতে মুখ ঢেকে রাখত, যাতে তাকে ক্ষিদেয় কাতর তার ছেলের চোখের জন দেখতে না হয়। তার দশ বছরের ছোট ছেলে, তার বাবাকে সান্ত্বনা দিত এই বলেঃ

“ইনশাআল্লাহ, তুমি গত কয়েক সপ্তাহের থেকে বেশি সাবান কালকে বিক্রি করতে পারবে।” তার বাবা, তার ছেলের উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে সাহস যোগাত, আর প্রার্থনা করত, তাই যেন হয়।

কিন্তু দিন কেটে যেতে লাগল আর অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকল, যখন একদিন একটা ঘটনা ঘটল। ছোট আহমেদ ইশকুলে যাচ্ছিল, আর সেদিন সূর্যের তেজ খুব প্রখর ছিল। সে তখন বড় রাস্তার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নালার দুইপাশে সাজানো খেজুর গাছের ছায়ার আশ্রয় নিল। সেখানে মহিলারা জলের পাত্র ভর্তি করছিল, কেউ বা কাপড় কাচছিল; এক সারি উট দাঁড়িয়ে জল খাচ্ছিল, পাড়ে দাঁড়িয়ে একপাল গাধা জল ছিটাচ্ছিল, কয়েকজন নতুন রঙ করা কাপড় নিংড়োচ্ছিল, সেই রঙিন জল নানা রঙা ঢেউ হয়ে বয়ে চলেছিল।

আহমেদ যখন এইসব দেখার জন্য দাঁড়াল, সেই সময়ে, একজন দরবেশ, শিকলে বাঁধা একটা সিংহ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হল। তার পেছনে পেছনে অদ্ভূত টুপি আর জামা পড়া কতগুলি লোক এসে দৌড়ে দৌড়ে বলতে লাগলঃ

“বাদশাহের জন্য পথ ছাড়! সবাই দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াও!” বলতে বলতেই একটা দারুণ সুন্দর সাজানো আরবী ঘোড়ার পিঠে চেপে বাদশাহ এগিয়ে এলেন, তাঁর চারিদিকে সশস্ত্র দেহরক্ষী। তারপরে চারজন বাহকের কাঁধে চেপে এল এক পালকি। এই শোভাযাত্রা এসে দাঁড়াল ঠিক যেখানে আহমেদ দাঁড়িয়ে ছিল। সেই পালকি থেকে নেমে এল ওড়নায় মুখ ঢাকা এক শাহজাদী। শাহজাদী পাশের বাজারের এক দোকানে রূপোর জিনিষ পছন্দ করতে এগিয়ে গেল। কিন্তু সে দোকানে পৌঁছানোর আগেই লোকজনের মধ্যে এক মহা কলরব সৃষ্টি হল। দরবেশের সিংহটা শিকল ছিঁড়ে পাগলের মত এদিক সেদিকে লাফ দিচ্ছিল, আর লোকজনকে তাড়া করছিল। মহিলারা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল, পুরুষেরা পালাল, ছোট বাচ্চারা ভয়ে কাঁদতে লাগল, কেউ কেউ নালায় ঝাঁপ দিল, ঘোড়াগুলি ভয় পেয়ে ভীড়ের মধ্যে দিয়ে দৌড়াতে লাগল। মহা হট্টগোল লেগে গেল।

সেই সময়ে এক লাফ দিয়ে সিংহটা শাহজাদীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মাটিতে ফেলে দিল; কিন্তু তাকে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলার আগেই, আহমেদ এক লাফ দিয়ে এগিয়ে এল, আর পাশের এক কামারের দোকান থেকে লাল গনগনে একটা লোহার টুকরো তুলে নিয়ে, সোজা সিংহের মুখের দিকে ছুঁড়ে দিল। প্রচন্ড যন্ত্রণায় আর রাগে সিংহটা শাহজাদীকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে দৌড় লাগাল।

ভয় একটু কমতেই, শাহজাদী আহমেদকে কাছে আসতে বললেন, আর নিজের মুখের ওড়ণা সরিয়ে তাকে বললেন সে একজন সাহসী ছোট্ট ছেলে, আর তাঁর একজন পরিচারক কে বললেন তাকে এক বটুয়াভর্তি সোনা দিতে। আহমেদ এত সুন্দরী আর কাউকে কোনদিন দেখেনি, আর এমন অবাক হয়েছিল, যে সে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল, ধন্যবাদ বলতে ভুলে গেলে, আর তার সামনে নিয়ে শোভাযাত্রা চলে গেল।

সেই টাকা ব্যয় করে কিছুদিন চলল, কিন্তু যখন সেই টাকা শেষ হয়ে গেল, আহমেদ আর তার বাবা আবার কষ্টে পড়ল। একজন ব্যবসায়ী তার বাবাকে বলল রাজ্যের রাজধানীরে ব্যবসা অনেক ভাল চলে। সেই শুনে তারা রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করল, যদিও সেই পথ ছিল অনেক দূর আর বিপদে ভরা। “শহরের মধ্যে মরার থেকে মরুভূমিতে মারা যাওয়া অনেক ভাল, ” বলল আহমেদ।

তাই তারা তাদের যাত্রা শুরু করল, কখনও পাহাড়ের পাকদন্ডী বেয়ে বেয়ে, কখনও মরুভূমির মধ্যে দিয়ে। তাদের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল, ক্ষিদে- তেষ্টায় প্রাণ শুকিয়ে গেল, তার মধ্যে সবসময়ই ছিল ডাকাতের ভয়।

প্রচন্ড গরমে এবং হিংস্র ডাকাতদের ভয়ে তারা রাত্রে পথ চলত। । চাঁদের আলোয় বড় পাথরের ছায়া দেখলেই তাদের মনে হত ঘোড়ায় চড়া এক ডাকাত। দিনের বেলা তারা পথের ধারে ছোট্ট ছোট্ট পান্থশালাগুলিতে ঘুমাত। আহমেদ অন্যান্য পথিক ব্যবসায়ীদের টুকটাক কাজ করে দিত, তার বদলে পেত রুটি অথবা একমুঠো ভাত, অথবা কিছু শুকনো ফল যা দিয়ে তারা পেট ভরাত।

এইরকম চলতে থাকল, তারপর এক রাতে, যখন তারা লবণে ভরা নদী পার হওয়ার জন্য সেতুটা খুঁজছিল, আকাশ হটাত করে কালো মেঘে ঢেকে গেল, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে লাগল, আর দ্রুত নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠল। চাঁদ ওঠার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া ওদের আর কিচ্ছু করার ছিল না। জোর হাওয়া ওদের আক্রমণ করতে লাগল, বৃষ্টি ওদের ভিজিয়ে দিল। চারিদিকে বন্য জন্তুর ডাক শোনা যেতে লাগল। ওরা পথ হারিয়ে ফেলেছিল।

একবার, যখন বাতাসের তেজ একটু কম হল, অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটা গোঙ্গানির আওয়াজ ভেসে এল। সেই শব্দ শুনে আব্দুল্লাহ আহমেদকে বলল, “একদম চুপ করে বসে থাক বাছা, কারণ এটা হল মরুভূমির বুড়োর আওয়াজ।”

এখন, আহমেদ কোন দিন মরুভূমির বুড়োর কথা শোনেনি, তাই তার মনে কোন ভয় ছিল না, তাই তার বাবা তাকে বারণ করা সত্বেও, সে উঠে আওয়াজটা যেদিক থেকে আসছিল সেইদিকে চলল। যখন সে সেইখানে পৌঁছাল, তখন মেঘের পেছন থেকে চাঁদ বেরিয়ে এল, আর আহমেদ দেখতে পেল এক গরীব দরবেশ বালির ওপর পড়ে আছে। তার কাঁধের ওপরে একটা চিতাবাঘের চামড়া ফেলা ছিল। তার পাশে রাখা ছিল বড় বড় পেরেক গাঁথা একটা লাঠি , আর দান গ্রহণ করার জন্য একটা কুমড়োর খোলের পাত্র।”

“আল্লাহর নামে আমাকে একটু জল দাও,” সেই দরবেশ আহমেদকে দেখে বল্লেন। আহমেদ তার জলের পাত্র ভরে নদী থেকে জল এনে দিল।

জল পান করে সেই দরবেশের যেন একটু স্বস্তি হল। তিনি বললেন, ” আমি আলি, আমাকে সারা পারস্যের সবাই চেনে। আমি দুই মাস আগে মেশেদ যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমি বুঝতে পারছি আমি আর বাঁচব না।

তুমি আমার সঙ্গেথাক। আমি একটু পরেই মারা যাব। আমি মারা গেলে, আমার গলায় ঝুলতে থাকা এই ছোট্ট চামড়ার থলেটা নিয়ে নিও, তার ভেতরে তুমি পাবে একটা ছোট্ট স্ফটিকের পাণপাত্র, যেটাকে তুমি সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে জীবনে অনেক শক্তি আর অর্থ পাবে।

প্রতি সকালে তুমি যখন ঘুম থেকে উঠবে, এই পাত্রের ভেতরে একফোঁটা পরিষ্কার জল ফেলবে, আর খুব ভাল করে তার দিকে লক্ষ্য রাখবে। যদি তোমার বা তোমার প্রিয়জনেদের কোন বিপদ আসে, তাহলে সেটা এই জলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে। আর যদি…” বলতে বলতে তাঁর শক্তি ফুরিয়ে এল, তাঁর মাথা হেলে পড়ল, তিনি মারা গেলেন। আহমেদ থলেটা আর স্ফটিকের পাত্রটা খুঁজে পেল, ঠিক যেমন দরবেশ বলেছিলেন, এবং তার বাবার কাছে ফিরে গিয়ে সব কথা খুলে বলল।

দরবেশ যেমন বলেছিলেন, আহমেদ ঠিক সেইরকম প্রতিদিন সকালে করতে থাকল, কিন্তু সে সেই স্ফটিকের পাত্রের ভেতর কিছুই দেখতে পেল না। তখন সে অভ্যাসটা ছেড়ে দিল। তারপরে একদিন এল, যেদিন এক হটাত ধূলোর ঝড়ে দিগবিদিক ছেয়ে গেল। ধূ ধূ বালির ওপর দিয়ে বাতাস উড়ে যেতে লাগল, আকাশ এবং সূর্য ঢেকে গেল, বাতাস ধূলোয় ভরে গেল, আর বাতাসে উড়ে আসা ছোট পাথরের টুকরোগুলি তাদের ক্ষতবিক্ষত করে দিল। চারিদিকে কোন আশ্রয় ছিল না।

ভয়ে আর যন্ত্রণায় তারা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগল, আর যখন অনেক ঘন্টা পরে, ঝড় থেমে গেছে, তখন তারা একে অপরকে দেখতে পেল না। তারা সেই নিষ্ঠুর মরুভূমিতে হারিয়ে গেছিল, তাদের কাছে খাদ্য তো দূর, জলই ছিল না। হতাশায় কাঁদতে কাঁদতে, আহমেদ এগিয়ে চলল, ঠিক যেন স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার মত। চলতে চলতে সে পাথর আর কাঁটাঝোপের ওপর পড়ে যেতে থাকল ,কিন্তু তাও সে এগিয়ে চলল। এইভাবে এক সময় এক যখন সে আর এগোতে পারল না, সে বালিতে পড়ে গেল, আর তার মনে হল সে মরেই যাবে।

অনেক্ষণ ধরে সে ঘুমিয়ে ছিল, তারপরে কে যেন তাকে নাড়িয়ে দিয়ে তার ঘুম ভাঙাল। চোখ খুলে , সে দেখতে পেল এক বুড়ো মানুষ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর বলছে, ” আরে, এ তো দেখছি আহমেদ, সাবানওয়ালা আব্দুল্লাহের ছেলে। তুমি আমাকে চেন না আহমেদ? আমি তোমার চাচা। পথ হারিয়ে ফেলেছ বলে কেঁদনা। এস, আমার হাত ধর আর আমরা তোমার বাবাকে খুঁজে বার করব চল।”

আহমেদ ভাবতে লাগল সে কেন কোনদিন এই চাচাকে দেখেনি বা তার আব্বার কাছে এর সম্পর্কে শোনেনি। তবুও সে আব্বাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় সেই বুড়োর সাথে চলল। অনেক অনেক পথ তারা পেরিয়ে গেল, কিন্তু তার আব্বাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন সে কেঁদে ফেলে বসে পড়ল, আর বললঃ”আমি এত ক্লান্ত, আমি আর চলতে পারব না।” আর সেই বুড়ো উত্তর দিলঃ “ঘুমাও বাছা, আমি সব দিকে নজর রাখছি।”

কিন্তু আহমেদ যখনি চোখ বুজতে গেল, সেই বুড়ো পিছু ফিরল, আর আহমেদ দেখল তার পা গুলো ভেড়ার মত সরু সরু। সে ভয়ের চোটে চিৎকার করে উঠল, “ঘুল, ঘুল” । ঘুল ছিল মরুভূমির রাক্ষস। আহমেদ অজ্ঞান হয়ে যেতে সে আহমেদের রক্ত খাওয়ার জন্য তার ওপর লাফিয়ে পড়ল।

কিন্তু আহমেদের চিতকারের জবাব এল আরেকটা চিতকারে, আর সেখানে এসে উপস্থিত হল এক সুন্দরী মেয়ে, গলায় তার সোনা -রূপোর পুঁতির মালা। সেই মালার দিকে চোখ পড়তেই সেই বুড়ো বিদ্যুতগতিতে উড়ে চলে গেল, কারণ ধাতু দেখলে তার খারাপ ক্ষমতাগুলি সব লুপ্ত হত।

এই মেয়েই ছিল সেই শাহজাদী যার জীবন আহমেদ মেশেদে বাঁচিয়েছিল। তার বাবা, সেই বাদশাহ, ধর্মস্থান দর্শন করে ফিরছিলেন, আর সঙ্গে আসা রক্ষীদের সাথে মজা করার জন্য শাহজাদী অন্য পথে চলে আসে, আর আহমেদের দেখা পেয়ে যায়। তার অনুরোধে, আহমেদ বাদশাহের সাথে চলতে থাক্ল। চলার পথে পরের দিন তারা আহমেদের আব্বাকেও খুঁজে পেল। সবাই মিলে তখন রাজধানীর দিকে চলতে থাকল।

রাজধানী থেকে তিন দিনের দূরত্বে, কাজবিনের কাছে পর্বতের উপরে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে থাকত পর্বতের বুড়ো, যে ঘাতকদের রাজা নামে পরিচিত ছিল। তার এতই ক্ষমতা ছিল যে তার এক হুকুমে তার অনুগতেরা দূর-দূরান্তে গিয়ে তার শত্রুদের মেরে আসতে পারত, সেই শত্রু যতই শক্তিশালী হোক না কেন।

যখন সে শুনল পারস্যের বাদশাহ তাকে এবং তার সঙ্গীসাথীদের ধ্বংস করার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করছে, সে তখন খুব রেগে গেল, আর নিজের একজন সংগীকে ডেকে বলল, “যাও, পারস্যের বাদশাহকে মেরে ফেল।” সেই লোকটা রুটি, জল আর এটা ধারালো ছোরা নিয়ে চলে গেল।

এদিকে, মরুভূমির বুড়োর হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার পর থেকে আহমেদ প্রতি সকালে সেই স্ফটিকের পাত্রে এক ফোঁটা করে জল ফেলে তার ভেতরে দেখত। এক সকালে সে সেই জলের ফোঁটার ভেতরে দেখতে পেল বাদশা ঘুমিয়ে আছেন, আর তাঁর পাশে এক ডাকাত দাঁড়িয়ে আছে, খোলা ছোরা উদ্যত করে। সে তাড়াতাড়ি বাদশাহের কাছে ছুটে গেল এবং তাঁকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করল, কিন্তু বাদশাহ ব্যাপারটা শুনে হেসেই উড়িয়ে দিলেন। তিনি তাঁর রক্ষীদের ভরসা করতেন।

কিন্তু তা সত্বেও, আহমেদ ঠিক করল সে খেয়াল রাখবে। অধকার নেমে এল, আর রক্ষীরা সব ঘুমিয়ে পড়ল। প্রাসাদ নিঃস্তব্ধ হয়ে গেল। প্রহর কাটতে লাগল, চেয়ে থাকতে থাকতে আহমেদ ক্লান্ত হয়ে পড়ল, এমন সময়ে সে দেখতে পেল একটা ঘন কালো ছায়ামূর্তি বাদশাহের ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সেই ছায়ামূর্তি যখন বাদশাহের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন আহমেদ তার ওপরে লাফ দিয়ে পড়ল, এবং চিৎকার করতে শুরু করল। সারা প্রাসাদ জেগে উঠল, এবং রক্ষীরা অপরাধীকে ধরে ফেলল।

যখন সেই লোকটা আর ফিরে গেল না, তখন পর্বতের বুড়ো আরেকজন কে পাঠাল, তারপরে আরেকজনকে এবং সবশেষে তার সবথেকে সেরা সহচরকে পাঠাল। কিন্তু আহমেদের স্ফটিকের পাত্রের জন্য, বাদশাহকে মারার সমস্ত মতলব বিফলে গেল।

বাদশাহ তখন আহমেদকে ডেকে পাঠালেন, আর বল্লেনঃ” তুমি এতবার আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ, কি পুরষ্কার চাও বল।” আহমেদ তখন মনে সাহস যুগিয়ে বলল-” অর্থ বা শক্তি কিছুই চাই না, আমি শাহজাদীকে শাদী করতে চাই।”

“তার যদি কোন আপত্তি না থাকে, তাহলে আমারও কোন আপত্তি নেই।” বললেন শাহজাদা।শাহজাদীর কোন আপত্তি ছিলনা, তাই আহমেদের সাথে তার শাদী হয়ে গেল, আর আহমেদ হয়ে গেল শাহজাদার প্রধাণ উজির।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন