ভূতে আমি কখনোই ভয় পাই নি। তবে একদিনের কথা আমার বেশ মনে আছে। জানেন? ভূত আমাকে তাড়া করেছিল! শুনে হয়তবা অবাক হতে পারেন! ঘটনা কিন্তু সত্যি। সেই দিন পৌষ মাসের মিশি কাল রাত। সময় তখন রাত ১২টা বেজে ৩০ মিনিট।
রাজশাহী শহর থেকে আমার বাড়ির দূরুত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার। সেদিন মঙ্গলবার বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী থেকে ক্রীড়াঙ্গন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। পুঠিয়াতে আসতে প্রায় রাত ১২টা বেজে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তখন রাত ১২টা বেজে ১০ মিনিট। এতো সময় বেজে গেছে দেখেই মনের ভিতর ভয়ের একটি শিহরণ জেগে উঠল। বাড়িতে যাওয়ার জন্য তখন কোন যানবাহন পাচ্ছিলাম না। প্রকৃতিতে ব্যপক শীত আর ঘন কুয়াশায় ১০ হাত দূরুত্বেই কিছু দেখা যাচ্ছিল না। এখন কিভাবে বাড়িতে যাই ভিষম চিন্তা। ওহ! টেনশনে ভুলেই গিয়েছিলাম গ্যারেজে তো আমার সাইকেল আছে। বাড়িতে যাওয়ার টেনশন একটু কমলেও কেন যেন অচেনা এক ভয় আমার ভিতরে ঘর বানাচ্ছিল। সাইকেল গ্যারেজে গিয়ে দেখি গ্যারেজ বন্ধ তবে গ্যারেজ মালিকের বাড়ি খুব দূরে না। দু’মিনিট হেঁটে গিয়ে সাইকেল টা নিয়ে আসলাম।
রাস্তায় বের হয়ে দেখি ভিষম অন্ধকার। হাতে আগুণ থাকলে নাকি ভূত পেত্নী কিছুই ভর করতে পারে না। দোকান খুঁজতে লাগলাম কিন্তু সিগারেটের কোন দোকান খোলা পেলাম না। ভয় তখন আরো বাড়তে শুরু করল। কি আর করা বিসমিল্লাহ বলে সাইকেল চালানো শুরু করলাম। একটু সামনে এগুতেই মনে হল কিছু একটা আমার পিছু নিয়েছে। পেছন দিকে ভয়ংকার ধরনের একটি শব্দ হচ্ছে। আমার সাইকেল ভারী হয়ে গেল, যত জোরেই পেডেল মারি না কেন সাইকেল জোরে গড়ে না। মনে হচ্ছিল আমার সাইকেলের কেরিয়ারে কেউ একজন বসে আছে যার ওজন প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ হবে। ভয়ে তো পেছন দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। তার পরেও ভয়ে ভয়ে পিছন দিকে তাকালাম দেখি সাদা ধবধবে কাপুড় পরা এক বুড়ি মহিলা আমার সাইকেলের কেরিয়ারে বসে আছে আর কি যেন খাচ্ছে। আমার তো ভয়ে কাম সারা। গা বেয়ে ঘাম ঝরে ততক্ষণে শার্ট প্যান্ট সব ভিজে গেছে। পেছন থেকে মহিলাটি আমাকে বলছে কিরে খাবি না কি? তখণ আমি পুরোই দিশেহারা। আমার মুখ থেকে কোন আওয়াজ ই বের হচ্ছিল না। যত জোরেই চিৎকার করি না কেন কেউ যেন আমার চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না। পেছন দিকে তাকিয়ে দেখি ধবধবে সাদা কাপড় পড়া মহিলাটি ছোট শিশু বাচ্চাদের ধরে চিবিয়ে খাচ্ছে। হাড় চিবিয়ে খাওয়ার মট মট শব্দ পেছন থেকে শোনা যাচ্ছে। ভয়ে তখন আমার প্রাণ যায় যায় ভাব। হঠাৎ বিকট জোরে একটি শব্দ হল! তখন আর আমার হুশ নাই। জ্ঞান ফেরার পরে দেখি আমি একটি বাড়িতে। জিজ্ঞেস করলাম আমি এখানে কেন? বাড়ির মহিলাটি বললো বাবা গত রাতে তুমি আমাদের ভ্যান গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছিল। তারপর আহত অবস্থায় তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। হাফ ছেড়ে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম আল্লাহ তুমি মেহেরবান তুমিই আমাকে আজ ভুতের হাত থেকে বাঁচিয়েছো। সেই যে ভূতের ভয় আমার ভিতর ঘুকেছে তা এখনো বিরাজমান। এখনো ঐ ঘটনা মনে পড়লে গা, হাত-পা শিউরিয়ে ওঠে।
No comments:
Post a Comment