যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন
সেই খানে যে চরণ তোমার রাজে
সবার পিছে, সবার নীচে, সব হারাদের মাঝে।
যখন তোমায় প্রণাম করি আমি
প্রণাম আমার কোনখানে যায় থামি
তোমার চরণ যেথায় নামে অপমানের তলে
সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে।
অহঙ্কার তো পায় না নাগাল যেথায় তুমি ফের
রক্তভূষণ দীনদরিদ্র সাজে
সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে।
ধনে মানে যেথায় আছে ভরি
সেথায় আমার সঙ্গ আশা করি
সঙ্গী হয়ে আছে যেথায় সঙ্গীহীনের ঘরে
সেথায় তোমার হৃদয় নামে, না যে
সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে।
সারমর্ম: বিধাতা নিরহংকার, অবহেলিত ও দীন-দুঃখীদের মাঝেই বিরাজ করেন। অহংকারী ও ঐশ্বর্যের মাঝে তাঁকে খুজে পাওয়া যায় না। সুতরাং প্রভুর সান্নিধ্য পেতে হলে আগে সর্বহারা দুঃখী মানুষদের এবং তাঁর সকল সৃষ্টিকে ভালবাসতে হবে।
যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে
সহস্র শৈবাল দাম বাঁধে আসি তারে।
যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড়
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।
সর্বজন সর্বক্ষণ চলে সেই পথে
তৃণ গুল্ম সেথা নাহি জন্মে কোন মতে।
যে জাতি চলে না কভু, তারি পথ পরে
তন্ত্র-মন্ত্র-সংহিতায় চরণ না সরে।
সারমর্ম: গতিই জীবনের মূলকথা। স্রোতহীন নদী যেমন শৈবালের কারণে আরো মন্থর হয়ে যায় তেমনিভাবে গতিহীন জাতির হৃদয়ে নানা লোকাচার বাসা বাঁধে। এর ফলে সে জাতির উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং গতিময়তার মধ্যেই সভ্যতার উৎকর্ষ নিহিত।
রংহীন মিলহীন ভাষা এবং রাষ্ট্রে
বিভক্ত এ মানুষ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত
যুদ্ধ মারামারি হানাহানি সবই আছে জানি
তারপরও এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ
এতো প্রগতির পদক্ষেপ সভ্যতার
পদচিহ্ন এঁকে দিচ্ছে সারা বিশ্বময়
ওরা বলছে আমরা মানুষ আছি এভাবে
জগত জুড়ে প্রীতির বন্ধন আর স্বভাবে।
সারমর্ম: ভাষা, বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবনাচারের দিক থেকে পৃথিবীর এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্র থেকে পৃথক। নানা কারণে একদেশ অন্য দেশের সাথে যুদ্ধ সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এই মানুষই আবার সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে যে প্রীতির বন্ধন সেই বন্ধনই সভ্যতার উৎকর্ষের মূলমন্ত্র।
লক্ষ লক্ষ হা-ঘরে দুর্গত
ঘৃণ্য যম-দূত-সেনা এড়িয়ে সীমান্তপারে ছোটে,
পথে পথে অনশনে অন্তিম যন্ত্রণা রোগে ত্রাসে
সহস্রের অবসান, হন্তারক বারুদে বন্দুকে
মূর্ছিত-মৃতের দেহ বিদ্ধ করে, হত্যাব্যবসায়ী
বাংলাদেশ ধ্বংস-কাব্যে জানে না পৌঁছল জাহান্নামে
এ জন্মেই;
বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে।
সারমর্ম: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিল। সে অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। একদিকে নির্মম অত্যাচার অন্যদিকে অনাহার, রোগের যন্ত্রণায় মানুষের জীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বিষহ। কষ্টসহিষ্ণু বাংলার এসব অগণিত মানুষের আত্মত্যাগেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে।
শুধু গাফলতে, শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া-অথই ভ্রান্তি নিয়াছি তুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
সারমর্ম: নানা ভুল-ভ্রান্তি, দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলার কারণে জাতীয় জীবন আজ সংকটাপূর্ণ। জাতীয় নেতৃত্বের ভুলের কারণে সমগ্র জাতির জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন জাতীয় নেতৃত্বের
শ্বেত, পীত, কালো করিয়া, সৃজিলে মানবে, সে তব সাধ।
আমরা যে কালো, তুমি ভালো জান, নহে তাহা অপরাধ।
তুমি বলো নাই। শুধু শ্বেত দ্বীপে
জোগাইবে আলো রবি-শশী-দীপে
সাদা র’বে সবাকার টুটি টিপে, এ নহে তব বিধান।
সন্তান তব করিতেছে আজ তোমার অসম্মান।
সারমর্ম: নানা বর্ণে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করলেও মর্যাদার দিক থেকে সবাই সমান। কিন্তু মানুষ নিজেদের স¦ার্থে বর্ণবাদ নামক বিভেদের দেয়াল তৈরি করে ¯্রষ্টাকে অপমান করছে।
শৈশবে সদুপদেশ যাহার না রোচে,
জীবনে তাহার কভু মূর্খতা না ঘোচে।
চৈত্র মাসে চাষ দিয়া না বোনে বৈশাখে,
কবে সেই হৈমন্তিক ধান্য পেয়ে থাকে?
সময় ছাড়িয়া দিয়া করে পন্ড শ্রম,
ফল চাহে, সেও অতি নির্বোধ অধম।
খেয়াতরী চলে গেলে বসে থাকে তীরে।
কিসে পার হবে, তরী না আসিলে ফিরে?
সারমর্ম: জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো শৈশবকাল। এ সময় সদুপদেশ মেনে না চললে ভবিষ্যতে সাফল্য আসে না। সময়ের কাজ সময়ে করাও সফলতা অর্জনের অন্যতম চাবিকাঠি। সময়মত কোনো কাজ না করলে পরবর্তীতে অধিক পরিশ্রম করেও সে কাজে সাফল্য অর্জন করা যায়না।
সকাল বিকাল ইসটিশনে আসি,
চেয়ে চেয়ে দেখতে ভালবাসি।
ব্যস্ত হয়ে ওরা টিকেট কিনে,
ভাটির ট্রেনে কেউবা চড়ে, কেউবা উজান ট্রেনে।
সকাল বেলা কেউবা থাকে বসে,
কেউবা গাড়ি ফেল করে তার শেষ মিনিটের দোষে।
দিনরাত গড় গড় ঘড় ঘড়।
গাড়িভরা মানুষের ছোটে ঝড়।
ঘন ঘন গতি তার ঘুরবে
কভু পশ্চিমে কভু পুবে।
সারমর্ম: রেল স্টেশনে সব সময়ই মানুষের ভিড়। যাত্রীরা টিকিট কিনছে, ট্রেনে উঠছে, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে আবার কেউ একটুর জন্য ট্রেন মিস করছে, এসব রেল স্টেশনের চির পরিচিত দৃশ্য। এ দৃশ্যই কবির চোখে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে
সবচেয়ে দুর্গম যে মানুষ আপন অন্তরালে
তার কোনো পরিমাপ নাই বাহিরের দেশে কালে
সে অন্তরময়।
অন্তর মিলালে পরে তার অন্তরের পরিচয়।
পাইনে সর্বত্র তার প্রবেশের দ্বার,
বাধা হয়ে আছে মোর বেড়াগুলি জীবনযাত্রার।
চাষী ক্ষেত্রে চালাইছে হাল,
তাঁতী বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল,
বহুদুর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।
প্রতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।
মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে,
ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে।
জীবনে জীবন যোগ করা
না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।
সারমর্ম: মানুষের মনকে বুঝতে হলে থাকতে হয় অনুভূতিশীল হৃদয়। যারা সমাজের উঁচু স্তরে বাস করে তারা সাধারণ মানুষের হৃদয়কে উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু এই মানুষেরাই সমাজ সভ্যতার নিপুণ কারিগর। এই সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কবির কাব্যরচনা সার্থকতা লাভ করে।
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ-মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।
দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়?
পুণ্য অত হবে না’ক সব করিলেও জড়।
মুক্তিকামী মহাসাধক, মুক্ত কর দেশ,
সবারই সে অন্ন যোগায়, নেইকো গর্ব লেশ।
ব্রত তাহার পরের হিত সুখ নাহি চায় নিজে
রৌদ্র-দাহে তপ্ত তনু শুকায় মেঘে ভিজে।
আমার দেশের মাটির ছেলে, করি নমস্কার,
তোমায় দেখে চূর্ণ হউক সকল অহংকার।
সারমর্ম: কৃষকরাই আমাদের দেশের প্রাণ। তাদের চেয়ে বড় সাধক আর কেউ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠোর পরিশ্রম করে তারা আমাদের অন্নের যোগান দেয়। তাদের উদ্দেশ্য দেশ ও দশের কল্যাণসাধন। শ্রম, সাধনা, আর ত্যাগ-তিতিক্ষার মহান আদর্শকে ধারণ করে সকলের ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান।
সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি
সেই ঘর মরি খুঁজিয়া
দেশে দেশে মোর দেশ আছে, আমি
সেই দেশ লব বুঝিয়া।
পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই
তার মাঝে মোর আছে যেই ঠাঁই,
কোথা দিয়া সেথা প্রবেশিতে পাই,
সন্ধান লব বুঝিয়া;
ঘরে ঘরে আছে পরম আত্মীয়,
তারে আমি ফিরি খুঁজিয়া।
সারমর্ম: বিশ্বমানবের চেতনা যার মধ্যে আছে তার কাছে কেবল নিজ দেশ নয় গোটা বিশ্বটাই যেন আপন। বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধে উদ্দীপ্ত ব্যক্তির কাছে পৃথিবীর সব মানুষই আত্মার আত্মীয়, সব ঘরই তার আপন ঘর। তাই তাকে দেশে দেশে আ
সবারে বাসরে ভাল
নইলে মনের কালি মুছবে না রে।
আজ তোর যাহা ভাল
ফুলের মত দে সবারে।
করে তুই আপন আসন,
হারালি যা ছিল আপন,
এবার তোর ভরা আপন
বিলিয়ে দে তুই যারে তারে।
যারে তুই ভাবিস ফণী
তারো মাথায় আছে মণি
বাজা তোর প্রেমের বাঁশি
ভবের বনে ভয় বা কারে?
সবাই যে তোর মায়ের ছেলে
রাখবি কারে, কারে ফেলে?
একই নায়ে সকল ভায়ে
যেতে হবে রে ওপারে।
সারমর্ম: মনের ক্ষুদ্রতা দূর করতে হলে সব মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষ হিসেবে সবাই সমান। প্রেম দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে মানুষের সাথে গড়ে তুলতে হবে মৈত্রীর বন্ধন। কোনো মানুষকে অবহেলা, অবজ্ঞা করা যাবে না।
সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ
সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ।
মানুষের সাথে কভু মানুষের রবে না বিচ্ছেদ-
সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ।
দেশে দেশে যুগে যুগে কত যুদ্ধ কত না সংঘাত
মানুষে মানুষে হলো কত হানাহানি।
এবার মোদের পুণ্যে সমুদিবে প্রেমের প্রভাত
সোল্লাসে গাহিবে সবে সৌহার্দ্যরে বাণী।
সারমর্ম: মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, বিচ্ছেদ, বিভেদের কারণেই যত যুদ্ধ, যত সংঘাত। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয় তবে যুদ্ধ হানাহানি, রক্তপাত সব বন্ধ হবে। গোটা পৃথিবীর মানুষ বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলেই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সন্ধ্যার আলো লেগেছে নয়নে, স্পন্দিত প্রাণমন,
চলিতে দীঘির কিনারে কাঁপিছে জানু গিরি তৃণবন।
ঘুমের নিভৃতে নিঃশ্বাস পড়ে, হংস ফিরিছে ঘরে।
শাবকেরা তার ঘিরিয়া চলেছে, ডানা হতে জল ঝরে।
সহসা শুনিনু কর্ণ তুলিয়া হংস কহিছে ডাকি,
‘চক্ষুতে ধরা রেখেছে যে ধরি, আমারি মত সে পাখি,
মরাল সেজন মরণ রহিত রহে সে গগন পরে
পাখা ঝাড়িলে সে বৃষ্টি পড়ে গো, চাহিতে জ্যোৎ ঝরে।’
আগু বাড়ি যাই, শুনিবারে পাই- পদ্ম কহিছে সরে।
‘সৃজন পালন করে যে, আপনি আছে সে বৃন্ত ভরে।
আপনার ছাচে মোরে সে গড়েছে, ‘জগৎ’ যাহারে বলে
সে তো সেই মহাপদ্মের দলে হিমকণা টলটলে।’
সারমর্ম: প্রতিটি সৃষ্টিই নিজস্ব অনুভূতি দ্বারা স্রষ্টাকে কল্পনা করে থাকে। হাঁস ভাবে স্রষ্টাতার মতো পাখি, তিঁনি ঠোট দিয়ে পৃথিবীতে ধরে রাখেন। পদ্ম ভাবে স্রষ্টা তার মতো ফুল, এবং তাঁর পাপড়িতে বিশ্বজগতকে টলটলে হিমকণার মতো আটকে রাখেন। মূলত প্রত্যেকেই নিজস্ব ধারণায় স্রষ্টাকে মূল্যায়ন করে।
সন্ধ্যা যদি নামে পথে, চন্দ্র পূর্বাচল কোণে
না হয় উদয়,
তারকার পুঞ্জ যদি নিভে যায় প্রলয় জলদে
না করিব ভয়।
হিংস্র ঊর্মি ফণা তুলি, বিভীষিকা-মূর্তি ধরি যদি
গ্রাসিবারে আসে,
সে মৃত্যু লঙ্ঘিয়া যাব সিন্ধুপারে নবজীবনের
নবীন আশ্বাসে।
সারমর্ম: জীবনে অবিরত সংগ্রাম করে লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়। নবজীবনের পথে আসে নানা প্রতিকূলতা। তবে যে প্রকৃত অর্থেই জীবনপিপাসু সে কখনো তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না। সকল বাধা অতিক্রম করে সে ঠিকই তার লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
সাগর পাড়ি দেব আমি নবীন সদাগর-
সাত সাগরে ভাসবে আমার সপ্ত মধুকর।
আমার ঘাটের সওদা নিয়ে যাবে দূরের ঘাটে,
চলবে আমার বেচাকেনা বিশ্ব জোড়া হাটে,
ময়ুরপঙ্খি বজরা আমার সাতখানা পাল তুলে
ঢেউয়ের দোলায় মরাল-সম চলবে দুলে দুলে।
সিন্ধু আমার বন্ধু হবে, রতন মানিক তার
আমার তরী বোঝাই দিতে আনবে উপহার।
দ্বীপে দ্বীপে আমার আশায় জাগবে বাতিঘর,
শুক্তি দিবে মুক্তা মালা, প্রবাল দেবে কর।
আমায় ঘিরে সিন্ধু শকুন করবে এসে ভিড়,
হাতছানিতে ডাকবে আমার নতুন দেশের তীর।
সারমর্ম: নবীন জীবনপথিক তার জীবন সাধনার ক্ষেত্রকে নিজ দেশেই সীমাবদ্ধ রাখে না। নিজ দেশকে উন্নত করার জন্য সে বিশ্বের সাথে স্বদেশের যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কৌশলে সে দেশের জন্য ঐশ্বর্যের সন্ধান করে।
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালবেসে।
জানি না তোর ধন-রতন আছে কিনা রাণীর মতন
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।
কোন বনেতে জানিনে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল.
কোন গগনে উঠেরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,
ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।
সারমর্ম: প্রতিটি মানুষের কাছেই তার জন্মভূমি অত্যন্ত প্রিয়। আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য, অসীম ঐশ্বর্য আমাদের চোখ জুড়ায়, মন ভোলায়। এই অপরূপ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমাদের জীবন ধন্য। তাই এদেশের মাটির স্নেহের স্পর্শেই আমরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
স্বাধীনতা স্পর্শমণি সবাই ভালবাসে,
সুখের আলো জ্বলে বুকে দুঃখের ছায়া নাশে।
স্বাধীনতা সোনার কাঠি খোদার সুধা দান,
স্পর্শে তাহার নেচে উঠে শূন্য দেহে প্রাণ।
মনুষ্যত্বের বান ডেকে যায় যাহার হৃদয়তলে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় ভীরু স্বাধীনতার বলে।
সারমর্ম: স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের কাছেই অাকাঙ্ক্ষার বস্তু। স্বাধীনতার স্পর্শমণি মানুষের জীবন থেকে দুঃখ দূর করে তাকে সুখের সুধা দান করে, জীবনকে করে তোলে আনন্দময়। স্বাধীনতাই মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে তোলে। স্বাধীনতার বলেই ভীরু মানুষ বীরের মর্যাদা লাভ করে।
সিন্ধুতীরে খেলে শিশু বালি নিয়ে খেলা,
রচি গৃহ হাসি মুখে ফিরে সন্ধ্যাবেলা।
জননীর অঙ্কোপরে প্রাতে ফিরে আসি,
হেরে- তার গৃহখানি কোথা গেছে ভাসি।
আবার গাড়িতে বসে- সেই তার খেলা,
ভাঙা আর গড়া নিয়ে কাটে তার বেলা।
এই সে খেলা- হায়, এর আছে কিছু মানে?
যে জন খেলায় খেলে- সেই বুঝি জানে।
সারমর্ম: ভাঙা আর গড়ার খেলা পৃথিবীর সর্বত্রই লক্ষণীয়, তবে এই খেলার রহস্য মানুষের কাছে অজ্ঞাত। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা প্রতিনিয়ত ভাঙা-গড়ার এই খেলা খেলছেন। কেবল তিনিই জানেন এই খেলার মানে।
সৃজন লীলার প্রথম হতে প্রভু
ভাঙাগড়া চলছে অনুক্ষণ,
পাখি জনম, শাখি জনম হতে,
রাখছ কথা, শুনছ নিবেদন।
আজ কি হঠাৎ নিষ্ঠুর তুমি হবে?
কান্না শুনে নীরব হয়ে রবে?
এমন কভু হয় না, তোমার ভবে
মনে-মনে বলছে আমার মন।
সারমর্ম: সৃষ্টিজগতের শুরু থেকেই ভাঙা গড়ার খেলা চলে আসছে। স্রষ্টা তার সৃষ্ট ছোট-বড় সবার আবেদন, নিবেদন, প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে থাকেন। দয়াময় প্রভু কাউকেই হতাশ করেন না।
Post By Md.Ripon Mia
No comments:
Post a Comment