22 May, 2018

ময়মনসিংহ জেলার ইতিহাস


১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল জেলা পৃথক জেলার স্বীকৃতি পাবার
পরও ময়মনসিংহ ছিল পাক ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। টাঙ্গাইলের পর
পর্যায়ক্রমে জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা পৃথক জেলার
মর্যাদা পাবার পরও আয়তনের দিক থেকে বর্তমান ময়মনসিংহ জেলা
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৪ সালে আলাদা হিসেবে।
স্বীকৃতি পায়।
২. নামকরণ : মোগল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার
নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী, ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার
স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির
উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন,
সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম
পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে । অন্যমতে পরগনা
মুমিনশাহীকে কেন্দ্র করে জেলাটি গঠিত হওয়ায় ইংরেজ আমলে এর নাম
মমিনশাহী জেলা রাখা হয় এবং পর্যায়ক্রমে ‘মাইমেনসিংহ' পরে ময়মনসিংহ ।
নাম হয় । ‘আকবর নামাইতিহাস গ্রন্থে দিল্লীর বাদশাহ জালাল উদ্দীন
মুহম্মদ আকবরের নিযুক্ত বঙ্গ সুবেদার মানসিংহ দ্বারা ঈসায়ী ১৬০১ সালের
১২ ফেব্রুয়ারিতে ভাটির ভূইয়া বাহিনীকে শেরপুর আতিয়ার লড়াইয়ে
বিপর্যস্ত করে দেওয়ার যে ঘটনা আছে সে লড়াই উত্তর জামালপুরের দশ।
কাহনিয়া বা বুগড়ার মচা শেরপুর আটিয়া ও টাঙ্গাইল জেলার দক্ষিণ প্রান্তস্থ।
আতিয়ার মধ্যস্থলে হয়েছিল বলে তাকে শেরপুর আটিয়ার যুদ্ধ বলে।
মানসিংহ কর্তৃক এই যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল বলে মানসিংহের নামানুসারে।
এই জেলার নামকরণ করা হয় মানসিংহ তথা ময়মনসিংহ।
৩. আয়তন : (প্রায়) ৪৩৬৩.৪৮ বৰ্গ কি:মি:।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ৫১১০,২৭২ জন। পুরুষ- ২৫,৩৯,১২৪ ও
মহিলা- ২৫,৭১,১৪৮। বৃদ্ধির হার : ১.২৮% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) ;
১১৬৩ ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ১২টি। ইশ্বরগঞ্জ, গফরগাঁও, গৌরীপুর, ত্রিশাল,
ধোবাউড়ানান্দাইল, ফুলপুর, ফুলবাড়ীয়া, ভালুকা, ময়মনসিংহ সদর,
মুক্তাগাছা ও হালুয়াঘাট ।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ১২টি । ময়মনসিংহ সদর, ত্রিশাল, গৌরীপুর,
মুক্তাগাছা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ভালুকা, ফুলবাড়ীয়া, গফরগাঁও, ইশ্বরগঞ্জ,
নান্দাইল ও ধোবাউড়া ।
৭. সংসদীয় আসন। : ১১টি। (১) হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা। (২)
বিসকা ইউনিয়ন ব্যতীত ফুলপুর উপজেলা। (৩) গৌরিপুর, ফুলপুর
উপজেলার বিসকা ইউনিয়ন ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নিম্নবর্ণিত
ইউনিয়নসমূহ : চর-নিলক্ষিয়াচর-ঈশ্বদিয়াপরানগঞ্জ, বোররচর ও
সিরতা। (৪) নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমুহ ব্যতীত ময়মনসিংহ সদর উপজেলা :
চরনিলক্ষিয়াচর-ঈশ্বদিয়াপরানগঞ্জ, বোররচর ও সিরতা। (৫) মুক্তাগাছা
উপজেলা। (৬) ফুলবাড়ীয়া উপজেলা। (৭) ত্রিশাল উপজেলা । (৮)
ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা। (৯) নান্দাইল উপজেলা । (১০) গফরগাও উপজেলা।
(১১) ভালুকা উপজেলা।
৮. হানাদার মুক্ত দিবস : ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকা।
উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।
৯. বিশিষ্ট ব্যক্তি : আনন্দ মোহন বসু, আন্দুল জবক্ষার, আন্দুল জব্বার শেখ,
খান সাহেব আন্দুল্লাহ, আবুল কালাম সামসুদ্দিন, আবুল মনসুর আহম্মদ,
মো: আলতাব আলীকলম আলী উকিল, গোলাম সামদানী কোরায়শী
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, মোস্তফা এম এ মতিন, মনোরঞ্চন, মুজিবুর
রহমান খান ফুলপুরী, ড: জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতানলিনীরঞ্জন সরকার,
সামসুল হুদ, পাচবাগী, রফিক উদ্দিন হুইয়া, গোপীনাথ দত্ত, আন্দুল হাই
আল হাদী, হারুন অর রশিদ, মোতাহার হোসেন বাদু, নুরুল আনোয়ার,
ইউনুস আহমদ, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা মো: আশরাফ আলী
এডএম জোবেদ আলীমৌলানা আলতাফ হোসেন, ডা: কে জামান,
বিচারপতি আন্দুর রউফ, বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী প্রমূখ।
১০. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-১৯৩ কি. মি. ও রেলপথে-১২৪ কি. মি.।
১১. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস । : ঢাকা-মহাখালী-ময়মনসিংহ বাস স্টেশন,
ময়মনসিংহ-ঢাকা বাস স্টেশন। রেল : ঢাকা-ময়সনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন
ইত্যাদি । এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৯১ ও পোস্ট কোড-২২০০।

১২. পত্রপত্রিকা : দৈনিক জাহান, স্বজন, সবুজ, আজকের ময়মনসিংহ, স্বদেশ
সংবাদ, দেশের খবর, মাটি ও মানুষ, পরিচয়, সাপ্তাহিক আলোড়ন বার্তা,
পরিধি, আলাপসিংহ, চরকাত্রিশাল বার্তা, রাতদিন, আলোর ছোয়া ইত্যাদি
১৩. পৌরসভা-১০টি ও ইউনিয়ন-১৪৬টি।
১৪. উপজেলা ভূমি অফিস-১২ টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস-১৪৪টি।
১৫. মৌজার সংখ্যা-২২০১টি ও গ্রামের সংখ্যা-২৭০৯টি।
১৬. মোট জমি- ৪,৩৬,৩৪৮ হেক্টর, আদর্শ গ্রাম-০৮টি ও শিক্ষার হার
৩৯.১০% ।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-১,৯৫৩টি, কিন্ডার গার্টেন-১২৬টি, নিম্ন
মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১৭৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৪০৪টি, উচ্চ মাধ্যমিক
বিদ্যালয়-৩১টি, কলেজ-২৯টি, বিশ্ববিদ্যালয়-০৪টি, ক্যাডেট কলেজ-০১টি
ও মাদ্রাসা৮৬৫টি।
১৮. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-১০,৪৯০টি, মন্দির-৪১৫টি ও গীর্জা-৭৯টি।
১৯. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-০৪টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-১১টি,
কমিউনিটি ক্লিনিক-৪১২টি এবং ইউ. স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র-৮৬টি।
২০. নদনদীর নাম : ব্রহ্মপুত্র, সুতিয়া, ক্ষিরু, সাচালিয়া, পাগারিয়ানাগেশ্বর,
কাচামাটিয়াআয়মন, বানার, নরসুন্দা, বোরাঘাট, দর্শনা, রামখালী, বৈলারি,
নিতাই, কংশ, ঘুঘুটিয়াসাতারখালী, আকালিয়া, জলবুরুঙ্গাচৌকা মরানদী
রাংসা নদী ইত্যাদি।
২১. দর্শনীয় স্থান : শশী লজ, গৌরিপুর লজ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, জয়নুল
আবেদীনের সংগ্রহশালাস্বাধীনতা স্তম্ভ, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী পার্ক,
ময়মনসিংহ যাদুঘর, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র,
গৌরিপুর রাজবাড়ী, চীনা মাটির টিলা, কুমিরের খামার, তেপান্তর ফিল
সিটি, রামগোপাল জমিদার বাড়ি ও নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার মাজার।
২২. জেলার ঐতিহ্য : এ জেলার রয়েছে এক বিশাল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সমাজ
ঘনিষ্ঠ এবং সংস্কৃতি-মনষ্ক ময়মনসিংহ অঞ্চলের রাজা জমিদারদের নানান
কীর্তিতে সমৃদ্ধ ময়মনসিংহের লোকালয় । পৌষ মাসের শেষের দিন গুডি
খেলা, মোঘল আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।
নানান স্থাপনা । মাথা ভাঙ্গা মঠ, শিব মন্দির, আলেকজান্ডার ক্যাসেল ইত্যাদি
তারই ঐতিহ্য বহন করে আছে।

No comments:

Post a Comment

ইসমাইল হোসেন