তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নাবী! হে নেক সন্তান! আমি জিবরাঈল (‘আ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইনি কে? তিনি বললেনঃ ইনি আদম (‘আ)। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরাঈল (‘আ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরুপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরযা খুলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) আসমানসমূহে আদম (‘আ), ঈদরীস (‘আ), মূসা (‘আ), ‘ঈসা (‘আ), ও ইবরাহীম (‘আ)-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম (‘আ)-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (‘আ)-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরাঈল (‘আ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে ইদরীস (‘আ) এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস (‘আ) বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল (‘আ) বললেনঃ ইনি ঈদরীস (‘আ)। তারপর আমি মূসা (‘আ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মূসা (‘আ)। তারপর আমি ঈসা (‘আ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইনি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তারপর ইবরাহীম (‘আ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইনি ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনু হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী (রহঃ) উভয়ে বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না।
আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আবার গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোন পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বলললেনঃ আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললামঃ আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।
৩৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মু’ল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মুকীম অবস্থায় ও সফরে দুই রাক’আত করে সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছিলেন। পরে সফরে সালাত (নামায/নামাজ) পূর্বের মত রাখা হল আর মুকীম অবস্থায় সালাত (নামায/নামাজ) বৃদ্ধি করা হল।
৩৪৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উম্মে ;আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে ঋতুবতী এবং পর্দানশীন মহিলাদের বের করে আনার নির্দেশ দিলেন, যাতে তাঁরা মুসলমানদের জামা’আত ও দু’আয় শরীক হতে পারে। অবশ্য ঋতুবতী মহিলারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান থেকে দূরে থাকবে। এক মহিলা বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তাঁর সাথীর উচিত তাঁকে নিজের ওড়না থেকে পরিয়ে দেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) সুত্রে উম্মে ‘আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরুপ বলতে শুনেছি।
৩৪৫। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা জাবির (রাঃ) কাঁধে তহবন্দ বেঁধে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আর তাঁর কাপড় (জামা) আলনায় রক্ষিত ছিল। তখন তাঁকে এক ব্যাক্তি বললঃ আপনি যে এক তহবন্দ পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমার মত আহাম্মকদের দেখানর জন্য আমি এরুপ করেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর যুগে আমাদের মধ্যে কারই বা দু’টো কাপড় ছিল?
৩৪৬। মুতাররিফ আবূ মূসা’আব (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)-কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
৩৪৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ’উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর তাঁর উভয় প্রান্ত বিপরীত দিকে রাখলেন।
৩৪৮। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] সে কাপড়ের উভয় প্রান্ত নিজের উভয় কাঁধে রেখেছিলেন।
৩৪৯। উবায়দ ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে এক কাপড় জড়িয়ে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি, যার উভয় প্রান্ত তাঁর উভয় কাঁধের উপর রেখেছিলেন।
৩৫০। ইসমা’ঈল ইবনু আবূ উওয়ায়স (রহঃ) উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমি বিজয়ের বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ কে? আমি উত্তর দিলামঃ আমি উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পরে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলে তাঁকে আমি বললামঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার সহোদর ভাই [‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি সে লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাঁকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেনঃ তখন ছিল চাশতের সময়।
৩৫১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের হুকুম জিজ্ঞাসা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’টি করে কাপড় আছে?
৩৫২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড়ে পরে এমনভাবে যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে যে, তার উভয় কাঁধে এর কোন অংশ নেই।
৩৫৩। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, সে যেন কাপড়ের দু’প্রান্ত বিপরীত পার্শ্বে রাখে।
৩৫৪। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) –কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে কোন সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন প্রয়োজনে তাঁর কাছে গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাত (নামায/নামাজ) রত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাঁর পার্শ্বে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে জিজ্ঞাসা করলেনঃ জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কি? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ এ কিরুপ জড়ান অবস্থায় তোমকে দেখলাম? আমি বললামঃ কাপড় একটই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয়, তাহলে তহবন্দরুপে ব্যাবহার করবে।
৩৫৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা বাচ্চাঁদের মত নিজেদের তহবন্দ কাঁধে বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর মহিলাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, তাঁরা যেন পুরুষদের ঠিকমত বসে যাওয়ার পূর্বে সিজদা থেকে মাথা না উঠায়।
৩৫৬। ইয়াহইয়া (রহঃ) মুগীর ইবনু শু’বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি কোন এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে মুগীরা! লোটাটি লও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির বাইরে গিয়ে প্রয়োজন সমাধা করলেন। তখন তাঁর দেহে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হওয়ায় তিনি নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আর তাঁর উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন ও পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৩৫৭। মাতার ইবনু ফযল (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কাবার (মেরামতের) জন্য পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গী। তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন; ভাতিজা! তুমি লুঙ্গী খুলে কাঁধে পাথরের নীচে রাখলে ভাল হত। জাবির (রাঃ) বলেনঃ তিনি লুঙ্গী খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাত বেহুশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাঁকে আর কখনও বিবস্ত্র অবস্থাই দেখা যায়নি।
৩৫৮। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে দাড়িয়ে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের হুকুম জিজ্ঞাসা করল। তিনি বল্ললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কি দু’খানা করে কাপড় আছে? এরপর এক ব্যাক্তি ‘উমর (রাঃ) –কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ যখন তোমাদের সামর্থ্য তখন তোমরাও নিজেদের সামর্থ্য প্রকাশ কর। লোকেরা যেন পুরো পোশাক একত্রে পরিধান করে অর্থাৎ মানুষ তহবন্দ ও চাঁদর, তহবন্দ ও জামা, তহবন্দ ও কাবা, পায়জামা ও চাঁদর, পায়জামা ও জামা, পায়জামা ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও জামা পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমার মনে হয় ‘উমর (রাঃ) জাঙ্গিয়া ও চাঁদরের কথাও বলেছিলেন। *কাবাঃ সাধারনত জামার উপরিভাগে যে ঢিলাঢালা জোব্বা আচকান পরা হয়।
৩৫৯। আসিম ইবনু ‘আলী (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে জিজ্ঞাসা করলো, ইহরামকারী কি পরিধান করবে? তিনি বললেনঃ সে জামা পরবে না, পায়জামা পরবে না, টুপি পরবে না, যাফরান বা ওয়ারস রঙে রঞ্জিত কাপড় পরবে না। আর জুতা না পেলে মোজা পরবে। তবে তা পায়ের গিরার নীচে পর্যন্ত কেটে নেবে। নাফি’ (রহঃ)। ইবনু ‘উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। *ওয়ারসঃ এক প্রকার হলুদ রঙের তৃণ জাতীয় সুগন্ধি।
৩৬০। কুতায়বা (রহঃ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশতিমালে সাম্মা (১) এবং কাপড়ে ইহতিবা (২) করতে নিষেধ করেছেন যাতে তাঁর লজ্জাস্থানে কাপড়ের কোন অংশ না থাকে। ১ সাম্মাঃ একই কাপড়ে সমস্ত শরীর এমনভাবে জড়ানো যাতে হাত-পা নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হয়। ২ ইহতিবাঃ পা ও হাঁটু দাড় করিয়ে বাহু বা কাপড় দিয়ে তা এমন ভাবে বেষ্টন করে নিতম্বের উপর বসা যাতে লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে।
৩৬১। কাবীসা ইবনু ‘উকবা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। তা হল লিমাস ও নিবায* আর ইশ্তিমালে সাম্মা এবং এক কাপড়ে ইহতিবা করতে নিষেধ করেছেন। *জাহিলী যুগের ক্রয়-বিক্রয়ের দু’টি পদ্ধতি। লিমাস বলতে ক্রেতা কতৃক কোন বস্তুকে স্পর্শ করামত্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া বুঝায়। আর নিবায বলতে ক্রেতা বা বিক্রেতা কতৃক কোন বস্তুর উপর পাথর ছুড়ে মারামাত্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া বুঝায় (বুখারী ১ম খণ্ড, হাশিয়া নং৪ পৃ ৫৬)। বিস্তারিত জানার জন্য ক্রয়-বিক্রয় (بيع)অধ্যায় দেখুন।
৩৬২। ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে আবূ বকর (রাঃ) [যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তাঁকে হাজ্জের (হজ্জ) আমীর বানানো হয়েছিল] কুরবানীর দিন ঘোষককদের সাথে মিনায় এ ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে, এ বছরের পরে কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না। আর কোন উলঙ্গ লোকও বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) –কে আবূ বকর (রাঃ) –এর পেছনে প্রেরণ করেন আর তাঁকে সুরা বারাআতের (প্রথম অংশের) ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমাদের সঙ্গে ‘আলী (রাঃ) কুরবানীর দিন মিনায় ঘোষণা দেন যে, এ বছরের পর থেকে আর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না এবং কোন উলঙ্গ ব্যাক্তিও তাওয়াফ করতে পারবে না।
৩৬৩। আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর কাছে গিয়ে দেখি তিনি একটি মাত্র কাপড় নিজের শরীরে জড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন অথচ তাঁর একটা চাঁদর সেখানে রাখা ছিল। সালতের পর আমার বললামঃ হে আবূ আবদুল্লাহ। আপনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন, অথচ আপনার চাঁদর তুলে রেখেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, তোমাদের মত নির্বোধদের দেখানোর জন্য আমি এরুপ করেছি। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
৩৬৪। ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়রব যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) খুব ভোরে আদায় করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন। আবূ তালহা (রাঃ)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবূ তালহার পেছনে বসা ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীকে খায়বরের পথে চালিত করলেন। আমার হাঁটু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঊরুতে লাগছিল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর ঊরু থেকে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর ঊরু উজ্জলতা এখনও আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করলেন তখন বললেনঃ আল্লাহ আকবার। খায়বর ধ্বংস হউক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গনে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারন করলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ খায়বরের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মদ! ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পূর্ণ বাহিনীসহ” (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করেছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হল। দিহরা (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! বন্দীদের থেকে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বললেনঃ যাও তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ)-কে নিলেন। তখন এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে আপনি দিহয়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনার এ যোগ্য। তিনি বললেনঃ দিহয়াকে সাফিয়্যাসহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে দেখলেন তখন (দিহয়াকে) বললেনঃ তুমি বন্দীদের থেকে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। রাবী সাবিত (রহঃ) আবূ হামযা (আনাস) (রাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস (রাঃ) জওয়াব দিলেন তাঁকে আযাদ করায় তাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেছেন। এরপর পথে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে সাজিয়ে রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর খিদমতে পেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার কাছে খানার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রাঃ) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। তারপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করলেন। এ-ই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ালীমা।
৩৬৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মু’মিন মহিলা চাঁদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হতো। তারপর তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতো। আর তাঁদের কেউ চিনতে পারত না।
৩৬৬। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি কারুকার্য খচিত চাঁদর গায়ে দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর সালাত (নামায/নামাজ) সে চাঁদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি বললেনঃ এ চাঁদরখানা আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও, আর তাঁর কাছ থেকে আমবিজানিয়্যা (কারুকার্য ছাড়া মোটা চাঁদর) নিয়ে আস। এটা তো আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) থেকে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল। হিশাম ইবনু ‘উরওয়া (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।
৩৬৭। আবূ মা’মার ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যাবহার করছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় এর ছবিগুল আমার সামনে ভেসে ওঠে।
৩৬৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে একটা রেশমি জুব্বা হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিন্তু সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপছন্দ করছিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ মুত্তাকীদের জন্য এই পোশাক সমীচীন নয়।
৩৬৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আর’আর (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে চামড়ার একটা লাল তাঁবুতে দেখলাম এবং তাঁর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নিয়ে বিলাল (রাঃ) –কে উপস্থিত দেখলাম। আর লোকেরা তাঁর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। কেউ সামান্য পানি পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তাঁর সাথীর ভেজা হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছে। তারপর বিলাল (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর একটি লৌহফলকযুক্ত ছড়ি নিয়ে এসে তা মাটিতে পুতে দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা লাল ডোরাযুক্ত পোশাক পরে বের হলেন, তাঁর তহবন্দ কিঞ্চিত উঁচু করে পরা ছিল। সে চরিটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর মানুষ ও জন্তু -জানোয়ার ঐ ছড়িটির বাইরে চলাফেরা করছিল।
৩৭০। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলঃ (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর)মিম্বর কিসের তৈরি ছিল? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে আমার চাইতে জ্ঞাত আর কেউ নেই। তা ছিল গাবা নামক স্থানের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে তৈরী। অমুক মহিলার আযাদকৃত দাস অমুক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জন্য তা তৈরী করেছিলেন। তা পুরোপুরি তৈরী ও স্থাপিত হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর দাড়িয়ে কিবলার দিকে মুখ করে তাকবীর বললেন। লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি কিরাআর পড়লেন ও রুকূতে গেলেন। সকলেই তাঁর পেছনে রুকূতে গেলেন। তারপর তিনি মাথা তুলে পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করলেন। এ হল মিম্বরের ইতিহাস। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন যে, আমাকে আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আমার ধারনা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে উঁচু স্থানে ছিলেন। সুতরাং ইমামের মুক্তাদীরের চাইতে উঁচু স্থানে দাঁড়ানোতে কোন দোষ নেই। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ আমি আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে বললামঃ সুফিয়ান ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ)-কে এ বিষয়ে বহুবার প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি তাঁর কাছে এ বিষয়ে কিছু শোনেন নি? তিনি জবাব দিলেনঃ না।
৩৭১। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ঘোড়া থেকে পরে গেলেন, এতে তাঁর পায়ের ‘গোছায়’ অথবা (রাবী বলেছেন) ‘কাঁধে’ আঘাত পান। তিনি তাঁর স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে থাকেন। তখন তিনি ঘরের উপরের কক্ষে অবস্থান করেন যার সিড়ি ছিল খেজুর গাছের কান্ডের তৈরী। সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে এলেন, তিনি তাঁদের নিয়ে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর তাঁর ছিল দাঁড়ানো। সালাম ফিরিয়ে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্য যে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। সুতরাং ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি সিজদা দিলে তোমরাও করবে। ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তারপর ঊনত্রিশ দিন পূর্ণ হলে তিনি নেমে আসলেন। তখন লোকেরা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ এ মাস ঊনত্রিশ দিনের।
৩৭২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন হায়েয অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমি তাঁর বরাবর বসে থাকতাম। কখনো কখনো তিনি সিজদা করার সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ে লাগতো। আর তিনি ছোট চাটায়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৩৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী মুলায়কাহ (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরী করেছিলেন। তিনি তা থেকে খেলেন, এরপর বললেনঃ উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যাবহার এ কাল হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়ালেন। আমি ও একজন ইয়াতীম বালক (যুমায়রা) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমার পেছনে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন।
৩৭৪। আবূল ওলীদ (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট চাটায়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৩৭৫। ইসমা’ঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু’খানা সঙ্কুচিত করতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা সপ্রসারিত করতাম। তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না।
৩৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) ‘উরওয়া (রাঃ)-কে বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর তিনি [আয়িশা (রাঃ)] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কিবলার মধ্যে পারিবারিক বিছানায় জানাযার মত আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতেন।
৩৭৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর ;আয়িশা (রাঃ) তাঁর ও তাঁর কিবলার মাঝাখানে তাঁদের বিছানায় শুয়ে থাকতেন।
৩৭৮। আবূল অলীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ সিজদার সময় অধিক গরমের কারণে কাপড়ের প্রান্ত সিজদার স্থানে রাখতো।
৩৭৯। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবূ মাসলামা সা'ঈদ ইবনু ইয়াজীদ আল-আযদী (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর না'ইলন (চপ্পল) পরে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৩৮০। আদম (রহঃ) হাম্মাম ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসেহ করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কেউ এরুপ করতে দেখেছি। ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীস মুহাদ্দিসীনের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ জারীর (রাঃ) ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর শেষ যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।
৩৮১। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) মুগীর ইবনু শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করিয়েছি। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু)র সময় মোজা দু’টির উপর মাসেহ করলেন ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৩৮২। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি তাঁর রুকু-সিজদা পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলো তখন তাকে হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) ঠিক হয়নি। রাবী বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি (হুযায়ফা) এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মদ এর তরীকা অনুযায়ী হবে না।
৩৮৩। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উভয় বাহু পৃথক রাখতেন। এমনকি তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেতো। লাইস (রহঃ) বলেনঃ জা’ফর ইবনু রবী’আহ (রহঃ) আমার কাছে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৩৮৪। আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, সে-ই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে খিয়ানত করো না।
৩৮৫। নু’আইম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’’ স্বীকার করবে। যখন তারা তা স্বীকার করে নেয়, আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, , আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, তখন তাদের জানো-মালসমূহ আমাদের জন্য হারাম হয়ে যায়। অবশ্য রক্তের বা সম্পদের দাবীর কথা ভিন্ন। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আবূ হামযাহ, কিসে কিসে মানুষের জানো-মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর সাক্ষ্য দেয়, আমাদের কেবলামূখী হয়, , আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, সে-ই মুসলিম। অন্য মুসলমানদের মতই তার অধিকার রয়েছে। আর অন্য মুসলমানদের মতই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ইবনু আবূ মাররাম, ইয়াহইয়া ইবনু আয়ূব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (অনুরুপ) বর্ণনা করেন।
৩৮৬। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠ ও দিবে না, বরং তোমরা পূর্বদিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তা’লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। যুহরী (রহঃ) ‘আতা (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আবূ আয়্যূব (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অনুরুপ বর্ণনা করতে শুনেছি।
৩৮৭। হুমায়দী (রহঃ) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) বলেনঃ আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ) কে এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম—যে ব্যাক্তি উমরার জন্য বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন কিন্তু সাফা-মারওয়া সা’ঈ করে নি, সে কি তাঁর স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন, মাকামে ইবরাহীমের কাছে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন আর সাফা-মারওয়া সা’ঈ করেছেন। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেনঃ সাফা-মারুওয়া সা’ঈ করার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর কাছে যাবে না।
৩৮৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট এলেন, এবং বললেনঃ ইনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি কাবা ঘরে প্রবেশ করেছেন। ইবনু ‘উমর বলেন; আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম এবং দেখলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা থেকে বেরিয়ে পরেছেন। আমি বিলাল (রাঃ)কে উভয় কপাটের মাঝখানে দাঁড়ানো দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা’বা ঘরের অভ্যন্তরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ, কা’বায় প্রবেশ করার সময় তোমার বা দিকের দুই স্তম্ভের মধ্যখানে দুই রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তাঁর পর তিনি বের হলেন এবং কাবার সামনে দুই রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে
৩৮৯। ইসহাক ইবনু নসর (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর সকল দিকে দুয়া করেছেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করেই বেরিয়ে এসেছেন এবং বের হওয়ার পর কাবার সামনে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন, আর বলেছেন, এই কিবলা।
৩৯০। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা’ (রহঃ) বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে কিবলা করা পছন্দ করতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করেছি। (২:১৪৪) তারপর তিনি কাবার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা –তারা ইয়াহুদী, বলতো, "তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিলো, তা থেকে কিসে তাঁদের কে ফিরিয়ে দিল"? বলুনঃ (হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (২:১৪২) তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আনসারগনের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন, আর তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )কাবার দিকে মুখ করেছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কাবার দিকে মুখ করলেন।
৩৯১। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাওয়ারীর উপর (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন—সওয়ারী তাঁকে নিয়ে যে দিকেই মুখ করত না কেন। কিন্তু যখন ফরয সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা করতেন, তখন নেমে পড়তেন এবং কিবলার দিকে মুখ করতেন।
৩৯২। উসমান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাবী ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ আমার জানানেই, তিনি বেশী করেছেন বা কম করেছেন। সালাত (নামায/নামাজ) ফিরানোর পর তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরুপ এরূপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুয়িয়ে কিবলামুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। এরপর সালাম ফিরালেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যায়। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহে হওয়ার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ণ করে। তারপর সে সালাম ফিরিয়ে সিজদা আদায় করে।
৩৯৩। আমার ইবনু ‘আওন (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর অহির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীম কে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান বানাও” (২:১২৫) (দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি যদি আপনার সহদধর্মিনীগনকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়। আর একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের তালাক দেয়, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। (৬৬:৫) তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
৩৯৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক সময় লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁদের নিকট এক ব্যাক্তি এসে বললেন যে, এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহি নাযিল হয়েছে। আর তাঁকে কাবামুখী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা কাবার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে। একথা শুনে তাঁরা কাবার দিকে মুখ করে নিলেন।
৩৯৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরেরে সালাত (নামায/নামাজ) পাঁচ রাক’আত আদায় করেন। তখন মুসল্লীগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) কি কিছু বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ তা কি? তাঁরা বললেনঃ আপনি যে পাঁচ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। রাবী বলেন, তিনি নিজের পা ঘুরিয়ে (কিবলামুখী হয়ে) দুই সিজদা (সিজদা সাহু) করে নিলেন।
৩৯৬। কুতায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর কাছে কষ্টদায়ক মনে হল। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে দিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ায় তখন সে তাঁর রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তাঁর ও কিবলার মাঝখানে তাঁর রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যখন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তাঁর বাম দিকে বা পায়ের নীচে তা ফেলে। তারপর চাঁদরের আঁচল দিয়ে তিনি তাতে থুথু ফেললেন এবং তাঁর এক অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এরুপ থাকবে।
৩৯৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে দেওয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। তারপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সে যেন তাঁর সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন তাঁর সামনের দিকে আল্লাহ তা’আলা থাকেন।
৩৯৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকের দেয়ালের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করলেন।
৩৯৯। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও আবূ সা’ইদ (খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেওয়ালে কফ দেখে কাঁকর দিয়ে তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তাঁর বাম দিকে অথবা তাঁর পায়ের নীচে ফেলে।
৪০০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও আবূ সা’ঈদ (খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেয়ালে কফ দেখলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু কাঁকর নিলেন এবং তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ কফ ফেললে তা যেন সামনে অথবা ডানে না ফেলে বরং (প্রয়োজনে) সে বাঁ দিকে অথবা বাঁ পায়ের নিচে ফেলবে।
৪০১। হাফসা ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থুথু না ফেলে; বরং তার বাঁয়ে বা পায়ের নীচে ফেলে।
৪০২। আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "মু'মিন যখন সালাত (নামায/নামাজ) থাকে, তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে। " বরং তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে।
৪০৩। আলী (রহঃ) আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। তারপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে বললেন। যুহরী (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) এর মাধ্যমে আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৪০৪। আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ, আর তার কাফফারা (প্রতিকার) হল তা পুঁতে ফেলা।
৪০৫। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে সে যতক্ষণ তার মূসা ল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে।
৪০৬। মালিক ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) কফ দেখে তা নিজ হাতে মুছে ফেললেন আর তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল। বা সে কারণে তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল এবং এর প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেল। তিনি বললেন “যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ায়, তখন তার রবের সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। অথবা (বলেছেন) তখন তার রব কিবলা ও তার মাঝখানে থাকেন। কাজেই সে সে যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। ” তারপর তিনি চাঁদরের কোণ ধরে তাতে থুথু ফেলে এক অংশের উপর অপর অংশ ভাঁজ করে দিলেন এবং বললেন “অথবা এরূপ করবে। ”
৪০৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি মনে কর যে, আল্লাহর দৃষ্টি কেবল কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার কাছে তোমাদের খুশূ (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখি। ”
৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে উঠলেন এবং ইরশাদ করলেন, “তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) রুকুতে আমি অবশ্যই তোমাদের আমার পেছন থেকে দেখি, যেমন এখন তোমাদের দেখছি”।
৪০৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের জন্য তৈরী ঘোড়াকে ‘হাফয়া’ (নামক স্থান) থেকে ‘সানিয়াতুল ওয়াদা’ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর যে ঘোড়া যুদ্ধের জন্য তৈরী নয়, সে ঘোড়াকে ‘সানিয়া’ থেকে যুরাইক গোত্রের মসজিদ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর এই প্রতিযোগিতায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর অগ্রগামী ছিলেন। ইব্রাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বাহরাইন থেকে কিছু মাল এলো। তিনি বললেনঃ এগুলো মসজিদে রেখে দাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ যাবত যত মাল আনা হয়েছে তার মধ্যে এ মালই ছিল পরিমাণে সবচে বেশী। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) চলে গেলেন এবং এর দিকে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি এসে মালের কাছে গিয়ে বসলেন। তিনি যাকেই দেখলেন, কিছু মাল তাকে দিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকেও কিছু দিন। কারণ আমি নিজে ও আকিলের (এ দু’জন বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের কয়েদি ছিলেন) পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ নিয়ে যান তিনি তা কাপড়ে ভরে নিলেন। তারপর তা উঠাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কাউকে বলুন, যেন আমাকে এটি উঠিয়ে দেয়। তিনি বললেনঃ না। আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তাহলে আপনি নিজেই তুলে দিন তিনি বললেনঃ না। তারপর আব্বাস (রাঃ) তা থেকে কিছু মাল রেখে দিলেন। তারপর আবার তা তুলতে চেষ্টা করলেন। (এবারও তুলতে না পেরে) তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কাউকে আদেশ করুন যেন আমাকে তুলে দেয়। তিনি বললেনঃ না। তাহলে আপনই আমাকে তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। তারপর আব্বাস (রাঃ) আরো কিছু মাল নামিয়ে রাখলেন। এবার তিনি উঠাতে পারলেন এবং তা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লোভ দেখে এতই অবাক হয়েছিলেন যে, তিনি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত আব্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দিরহাম বাকী থাকা পর্যন্ত উঠলেন না।
৪১০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে পেলাম আর তার সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সাহাবী। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছেন? আমি বললাম জী হাঁ। তিনি বললেনঃ খাবারের জন্য? আমি বললাম: জী হাঁ তখন তার আশেপাশে যারা ছিলেন, তাঁদেরকে বললেনঃ উঠ। তারপর তিনি চলতে শুরু করলেন। (রাবী বলেন) আমি তাঁদের সামনে সামনে চললাম।
৪১১। ইয়াহইয়া (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বলল: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য ব্যাক্তিকে দেখতে পেলে কি সে তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তার স্ত্রী একে অন্যকে লি’য়ান করল। তখন আমি উপস্থিত ছিলাম।
৪১২। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে এলেন এবং বললেনঃ তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: তখন আমি তাঁকে একটি স্থানের দিকে ইশারা করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন। আমরা তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম তিনি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৪১৩। সা’ঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) মাহমুদ ইবনু রাবী আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ), যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হয়ে আরজ করলেন: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরিফ নিয়ে কোন এক স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য নির্দিষ্ট করে নই। রাবি বলেন: তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনশা আল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ইতবান (রাঃ) বলেন: পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) আমার ঘরে তাশরিফ আনেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইংগিত করলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। তিনি (ইতবান) বলেন: আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর তৈরী ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেন: এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তিকে বলে উঠলেন, ‘মালিক ইবনু দু’খাইশিন’ কোথায়? অথবা বললেন ‘ইবনু দুখশুন’ কোথায়? তখন একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল কে ভালবাসে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে? তখন সে ব্যাক্তি বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল) ই ভাল জানেন। আমরা তো তাঁর সম্পর্ক ও হিত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’য়াল তো এমন ব্যাক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তোষটি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। রাবী ইবনু শিহাব বলেন: তারপর আমি মাহমুদ ইবনু রাবী (রাঃ) এর হদীস সম্পর্কে হোসাইন ইবনু মুহম্মদ আনসারী (রহঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম, যিনি বানূ সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি এ হদীস সমর্থন করলেন।
৪১৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। পবিত্রতা হাসিলের সময়, মাথা আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরিধানের সময়ও।
৪১৫। মুহম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালমা (রাঃ) হাবশায় তাঁদের দেখা একটি গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করলেন: তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরী করে রাখতো। কিয়ামতের দিন তারাই আল্লাহর কাছে সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে গণ্য হবে।
৪১৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমে মদিনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বানূ ‘আমর ইবনু আউফ’ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। তারপর তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হল। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তার বাহনের উপর, আবূ বকর (রাঃ) সে বাহনেই তাঁর পেছনে আর বানূ নাজ্জারের দল তাঁর আশেপাশে। অবশেষে তিনি আবূ আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) এর ঘরে সামনে অবতরণ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হয় সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এখন তিনি মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেন। তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বানূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ আল্লাহর কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশা করি। আনাস (রাঃ) বলেন: আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলা হল। তারপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হল, খেজুরের গাছ গুলো কেটে ফেলা হল এবং এর দুই পাশে পাথর বসানো হল। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেন: “ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া (প্রকৃতপক্ষে) আর কোন কল্যাণ নেই। আপনি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা করে দিন।
৪১৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগল থাকার স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। রাবী বলেন, তারপর আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মসজিদ নির্মাণের আগে তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )ছাগল থাকার স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।
৪১৮। সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে তাঁর উটের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখছি। আর ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন: আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা করতে দেখেছি।
৪১৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার সূর্য গ্রহণ হল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য আমি আর দেখিনি।
৪২০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবরে পরিণত করবে না।
৪২১। ইসমা’ঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। কান্না না আসিলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তোমাদের প্রতিও এমন আযাব না আসে যা তাদের উপর আপতিত হয়েছিল।
৪২২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মে সালমা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে তাঁর হাবশায় দেখা মারিয়া নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব প্রতিচ্ছবি দেখে ছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ বানিয়ে নিত। আর তাতে ঐ সব ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।
৪২৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর একটা চাঁদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল, তখন মুখ থেকে চাঁদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা থেকে তিনি সতর্ক করলেন।
৪২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’য়ালা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।
৪২৫। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোন নাবী কে দেয়া হয়নি। ১। আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। ২। সমস্ত জমিন আমার জন্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। ৩। আমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে। ৪। অন্যান্য নাবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। ৫। আমাকে (ব্যাপক) শাফা’য়াতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
৪২৬। উবাইদ ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন আরব গোত্রের একটি কাল দাসী ছিল। তারা তাকে আযাদ করে দিল। সে তাদেরই সাথে থেকে গেল। সে বলেছে যে, তাদের একটি মেয়ে গলায় লাল চামড়ার ওপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। দাসী বলেছে, সে হারটা হয়তো নিজে কোথাও রেখে দিয়েছিল, অথবা কোথায় পড়ে গিয়েছিল। তখন চিল তা পড়ে থাকা অবস্থায় গোশতের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। দাসী বলেছে: তারপর গোত্রের লোকেরা বেশ খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। কিন্তু তারা তা পেল না। তখন তারা আমার উপর এর দোষ চাপাল। সে বলেছে: তারা আমার উপর তল্লাশী শুরু করলো, এমন কি আমার লজ্জা-স্থানেও তল্লাশী চালাল। দাসীটি বলেছে: আল্লাহর কসম! আমি তাদের সাথে সে অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলাম, এমন সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি ফেলে দিল। সে বলেছে তাদের সামনেই তা পড়লো। তখন আমি বললাম: তোমরা তো এর জন্যই আমার উপর দোষ চাপিয়ে ছিলে! তোমরা আমার উপর সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই তো সেই হার! সে বলেছে: তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো। আয়িশা (রাঃ) বলেন: তাঁর জন্য মসজিদে (নববীতে) একটা তাঁবু অথবা ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন (দাসীটি) আমার কাছে আসতো আর মার সঙ্গে কথা বার্তা বলতো। সে আমার কাছে যখনই বসত তখনই বলতো: “সেই হারের দিনটি আমার রবের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ। যেনে রাখুন সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর থেকে মুক্তি দিয়েছে”। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম: কি ব্যাপার, তুমি আমার কাছে বসলেই যে এ কথাটা বলে থাক? আয়িশা (রাঃ) বলেন: সে তখন আমার কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল।
৪২৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর কোন পরিবার-পরিজন ছিল না।
৪২৮। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে এলেন, কিন্তু আলী (রাঃ) কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে কিছু ঘটেছে। তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেন নি। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যাক্তি খোঁজে এসে বললোঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন, তখন আলী (রাঃ) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাঁদর পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব!
৪২৯। ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাঁদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল তহবন্দ কিংবা ছোট চাঁদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিসফে সাক বা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জা-স্থান দেখা যাওয়ার ভয়ে কাপড় হাতে ধরে একত্র করে রাখতেন।
৪৩০। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি তখন মসজিদে ছিলেন। তখন মিস’আর (রহঃ) বলেন: আমার মনে পড়ে রাবী মুহারিব (রহঃ) চাশতের সময়ের কথা বলেছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। জাবির বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি তা দিয়ে দিলেন এবং কিছু বেশীও দিলেন।
৪৩১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ কাতাদা সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়।
৪৩২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত যেখানে সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। তাঁরা বলেন: হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন! হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন।
৪৩৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর (রাঃ) এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর (রাঃ) বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান (রাঃ) তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে।
৪৩৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইকরিমা (রহঃ) বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে ও তার ছেলে আলী (রাঃ) কে বললেনঃ তোমরা উভয়ই আবূ সা’ঈদ (রাঃ) কাছে যাও এবং তাঁর থেকে হদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে চাঁদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদিস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেনঃ আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার (রাঃ) দুটো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাঁর দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন: তখন আম্মার (রাঃ) বললেনঃ আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
৪৩৫। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার বসার জন্য কাঠের মিম্বর তৈরী করে দেয়।
৪৩৬। খাল্লাদ (রহঃ) ইবনু ইয়াহইয়া জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি আপনার বসার জন্য কিছু তৈরী করে দিব? আমার এক কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। তিনি বললেনঃ যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তারপর তিনি একটি মিম্বর তৈরী করিয়ে দিলেন।
৪৩৭। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) উবায়দুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তিনি যখন মসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন: তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র (রহঃ) বলেন: আমার মনে হয় রাবী ‘আসিম’ (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তা’য়ালা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন।
৪৩৮। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যাক্তি তীর সাথে করে মসজিদে নববী অতিক্রম করছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এর ফলকগুলো হাতে ধরে রাখ।
৪৩৯। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আবূ বুরদা (রহঃ) এর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যাক্তি তীর নিয়ে আমাদের মসজিদ অথবা বাজার দিয়ে চলে সে যেন তার ফলক হাতে ধরে রাখে, যাতে করে তার হাতে কোন মুসলমান আঘাত না পায়।
৪৪০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হাসসান ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর কসম দিয়ে এ কথার সাক্ষ্য চেয়ে বলেন: আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন, হে হসসান! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে (কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের) জওয়াব দাও। হে আল্লাহ! হাসসানকে রূহুল কুদুস (জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বারা সাহায্য করুন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) জওয়াবে বললেনঃ হাঁ।
No comments:
Post a Comment